ঝরা ফুল পর্ব ১
__ “ আমি এখানে এলাম কিভাবে! আর কি করেছেন আপনি আমার সাথে? ” অবাক হয়ে রিমন এর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে মৌরী।
রিমন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মুখ টা ঘুরিয়ে নেয়।
মাথাটা এখনো ঝিম ধরে আছে, সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা। কিছুই বুঝতে পারছেনা মৌরী, কিন্তু রিমন তো কিছুই বলছেনা মৌরীকে। চোখ টা বন্ধ করে মৌরী, মনে করার চেষ্টা করে কি হয়েছিলো ওর সাথে। “ উফফফফ! কি আশ্চর্য ! কিছুই মনে পড়ছেনা কেনো? ” বিড়বিড় করে বলে মৌরী।
অনেক কষ্ট করে বেড থেকে উঠে দাঁড়ায় মৌরী, রিমনের কলার ধরে চিৎকার দিয়ে বলে,
__ “ আমি এখানে কিভাবে আসলাম, কিছু বলছেন না কেনো? চুপ করে থাকবেন না আর। ” সামনে থাকা ড্রেসিং টেবিলের আয়না তে নিজেকে দেখে আরোও জোরে চিৎকার দেয় মৌরী।
__ “ এই পোশাক তো আমি পড়ে ছিলাম না, এই পোশাক তো আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডকে দিবেন বলে কিনেছিলেন? এটা আমাকে কে পড়িয়ে দিলো? ”
রিমন মৌরীর কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,
__ “ কে আবার দিবে বলো, তোমাকে আদর শেষে আমিই পড়িয়ে দিয়েছি। বাসায় সবাই খুব টেনশন করছে, এখন ঘরে চলো ডার্লিং। ”
মৌরী নিজেকে রিমনের থেকে সরিয়ে নেয়, মেঝেতে বসে পড়ে। এতক্ষণে বুঝতে পারে সারা শরীরে এতো ব্যথার কারণ। মেঝেতে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। “ জীবনে তো কারোও কোন ক্ষতি করিনি, আমার কেনো এমন ক্ষতি হলো। ”
রিমন মৌরীর পাশে গিয়ে বসে বলে,
__ “ যা হবার হয়ে গেছে, পাস্ট ভুলে যাও, এখন বাসায় ফিরে চলো । ভদ্র ভাবে বলছি বাসায় ফিরে চলো, নইলে তোমার পরিনতি আরোও বেশি খারাপ হয়ে যাবে। ”
মৌরী রিমনের গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,
__ “ শকুনের বাচ্চা, আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে বলিস আরোও ক্ষতি করবি তুই। কি করতে পারিস করে নে। আমি তোর শেষ দেখে ছাড়বো। ”
মৌরী খুব রাগী এটা রিমন বুঝতে পেরেছিলো কিন্তু এতো টা রাগী আর জেদী আগে বুঝতে পারেনি। তাই ভয় দেখানোর জন্য বলে,
__ “ ভদ্র মেয়ের মতো বাসায় যাবে নাকি হোটেল বয় দিয়ে লোক ভাড়া করে রেপ করাবো। ”
কথা টা শুনে খুব ঘৃণা আসে রিমনের প্রতি। থুতু দিয়ে উঠে পড়ে, যদিও উঠতে, হাটতে, চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপর ও হেটে দরজা খুলতে যাবে, তার আগেই রিমন মৌরীকে টেনে ধরে। বেডে নিয়ে এনে ফেলে দেয় মৌরীকে। এরপর নিজের সমস্ত ভর ছেড়ে দেয় মৌরীর উপর।
__ “ কাল রাতে তো ঘুমিয়ে ছিলে, রেপ করার মজা পাইনি। এখন খুব মজা করে তোমায় আগে উপভোগ করবো। এরপর না হয় বাসায় ফিরে যেও। স্মৃতি গুলো আমার একার না হয়ে তোমার ও কিছু থাক। ”
খুব ঘৃণা আর কষ্টে চিৎকার করতে থাকে মৌরী, তখন রিমন আবার বলে,
__ “ কোন লাভ নেই, এই রুম সাউন্ড প্রুফ, কেউ বাঁচাতে আসবেনা। অবশ্য যত চিৎকার করবে ততই আমি মজা নিবো। ”
প্রথমে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় মৌরী।
মৌরী নিজেকে সব’চে হতভাগী মনে করে, চোখ বন্ধ করে গত রাতের কথা মনে করতে থাকে, আর রিমন নিজের ইচ্ছে মতো মৌরীকে নিয়ে মেতে ওঠে।
→→→ মৌরী কাঁচা হলুদ রঙের লেহেঙ্গা পড়ে খালাতো বোন মৌসুমীর বিয়েতে গিয়েছিলো। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এ রিমনের চোখ আটকে যায় মৌরীর উপর। কথা বলার অনেক সুযোগ খুঁজতে থাকে রিমন। রিমন অবশ্য মৌরীর মামাতো ভাই। তবে সৎ মামার ছেলে রিমন। রিমনের বাবা যখন ২ বছরের ছিলো তখনই রিমনের দাদী মারা যায় সেকেন্ড প্রেগন্যান্সির সময় সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে। এরপর রিমনের দাদা আরেকটি বিয়ে করে । এই ঘরে তিন জন সন্তান হয়, দুই মেয়ে আর এক ছেলে। রিমনের দাদার চার ছেলে মেয়ের মাঝে রিমনের বাবার নাম রিসাদ আহমেদ, এরপর পরের স্ত্রীর ছেলে রিয়াদ আহমেদ, এরপর মৌসুমীর আম্মু রাবেয়া, আর মৌরীর আম্মু ছোট মেয়ে, নাম রামিজা।
রিসাদের একমাত্র ছেলে রিমন, রিয়াদের এক ছেলে শাওন আর মেয়ে শ্যামলী সবাই শ্যামা বলেই ডাকে। রাবেয়ার একমাত্র মেয়ে মৌসুমী যার বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। আর রামিজার বড় ছেলে শিপন আর মেয়ে মৌরী ।
মৌরীর নানা মারা যাবার পর সব ভাইবোন দের এক সাথে দেখার জন্য রাবেয়া মেয়ের বিয়ের এতো বড় আয়োজন করে। মৌসুমী স্টেজে বসে আছে, একে একে সবাই এসে মৌসুমীর গায়ে হলুদের ছোঁয়া দিয়ে মিষ্টি মুখ করাচ্ছে, যে যাকে পারছে হলুদ মাখাতে ব্যস্ত। মৌরীইই একমাত্র মেয়ে যাকে এখনো কেউ হলুদ মাখাতে পারেনি, খুব পালিয়ে বেড়াচ্ছে। হটাৎ করেই লোডশেডিং হয়ে যায়, বিয়ে বাড়িতে হটাৎ করে লোড শেডিং হবার কথা নয় কারণ পাওয়ার হাউসে আগে থেকেই বলা ছিলো । এদিকে জেনারেটর ও ওপেন করতে সময় লাগছে।
হটাৎ করেই মৌরীর হাতে হ্যাচকা টান লাগে, মৌরীকে একদম বাসার বাইরে নিয়ে আসে রিমন। মৌরী বলে,
__ “ আপনি এখানে নিয়ে এলেন কেনো? বাসাতে তো সবাই খুঁজবে আমাকে। ”
__ “ তার মানে তুমি আমায় চিনো, তাই ভয় পাওনি তাইনা। ”
__ “ না চিনার কি আছে, আপনি আমার বড় মামার ছেলে, দ্যাটস এনাফ। ”
__ “ চিনোই যখন তাহলে একটা হেল্প করবে? ”
__ “ আমি আপনাকে কিভাবে হেল্প করতে পারি বলুন? ”
__ “ আসলে আমি তো এই প্রথম আমার দাদুর বাসায় এসেছি। কাউকে তো চিনিইই না ঠিক ভাবে। আশেপাশে কি কোন শপিংমল আছে? ”
__ “ হুমম আছে। কেনো বলুন তো? ”
__ “ আসলে কি হয়েছে জানো! মানে! ”
__ “ আমি ডাইরেক্ট কথা বলা পছন্দ করি, এতো মানে মানে করছেন কেনো। ”
__ “ আমি তো এই প্রথম রাজশাহী এসেছি, তাও বাবার অনুরোধ এ। দুইদিন পর আমার গার্লফ্রেন্ড এর জন্মদিন। এখন যদি কোন গিফট না দিই তাহলে তো আমাদের ব্রেক আপ হয়ে যাবে। যদি তুমি আমার সাথে গিয়ে কিছু চয়েস করে কিনে দিতে, আমি ধন্য হয়ে যেতাম। ”
মৌরী ভেবেছিলো রিমন হয়তো মৌরীকে প্রপোজ করবে, কারণ রিমন হ্যান্ডসাম, গায়ের রঙ ফরসা, জিম করা বডি, ৬ ফিট লম্বা ছেলে। হাজবেন্ড হিসেবে পাবে ভেবে মনে মনে খুশি হয়েই এতক্ষণ রিমনের সাথে কথা বলছে মৌরী কিন্তু গার্লফ্রেন্ড এর কথা শুনেই মৌরীর গায়ে আগুন জ্বলে যায়।
__ “ আমি পারবোনা এসব, হয় শ্যামা কে বলুন না হয় অন্য কাউকে বলুন। ”
রিমন কাকুতি করে বলে,
__ “ শ্যামাও তোমার মতো বিহেইভিয়ার করেছে, আসলে তোমরা আমার বোন হও, আমি তো বোন ই ভেবেছিলাম কিন্তু সৎ তো আর আপন হয় না তোমরা দুই বোনেই প্রমাণ করে দিলে। যাই হোক মেয়েদের জিনিস তো আর আমরা ছেলেরা চয়েস করতে পারবোনা। তাই তোমাকে এভাবে বলেছিলাম। এখন তো সবাই বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত। কেউ তোমাকে খুঁজবেনা। আমরা যাবো আর অল্প কিছু শপিং করেই চলে আসবো। কিন্তু কেউ রাজি হলোনা, কি আর করার । ”
রিমন মন খারাপ করে পিছনে ফিরে যায়,
মৌরী বুঝতে পারেনি, রিমন ইমোশনাল ব্লাকমেইল করেছে। মৌরী রিমন কে ডাকে,
__ “ রিমন ভাইয়া, আমি যাবো, মন খারাপ করবেন না প্লিজ। ”
রিমন পিছনে ফিরেই হাসিমুখে বলে,
__ “ থ্যাংকস এ লট, চলো যাওয়া যাক। ”
রিমন কে নিয়ে মৌরী শপিং মলে ঢুকে, মৌরী একটা ড্রেস চুজ করে,
__ “ ওয়াও মৌরী! তোমার চয়েস কিন্তু জোস। আমার গার্ল্ফ্রেন্ড ও কিন্তু তোমার মতো ফরসা, ছিপছিপে, সুন্দরী। এই ড্রেস টা তোমাদের দুইজন কেই ভালো মানাবে। ”
__ “ আমি আমার সৌন্দর্যের বর্ণনা চাইনি। ওকে এই ড্রেস টা নিয়ে নেন। আর শুনুন, কথা কম বলে কাজ বেশি করবেন। ”
রিমন মাথা ঝাকিয়ে মৌরীর কথাতে সায় দেয়, এরপর একটা জুয়েলারির দোকানে যায়, রিং দেখাতে বলে রিমন।
কিছু রিং বের করে রিমনের সামনে রাখতে মৌরী বলে,
__ “ তিনটা ছোটো ছোটো ফুল করা, মাঝে হোয়াইট পাথর আর দুইপাশে দুইটা পাতার মতো রিং চুজ করে দেয়। ”
রিমন তখন বলে,
__ “ What a great ছইচে. ”
মৌরীর হাত ধরে আঙ্গুল এ রিং টা পড়িয়ে দেয় রিমন।
__ “ বাহহ! খুব দারুন লাগছে তো। ”
__ “ আমার চয়েস কখনো খারাপ হয়না। ” বলেই মৌরী রিং খুলতে নিলে রিমন আবার বলে,
__ “ আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি। পরে খুলিও তো, এখন আমার সাথে একটু চলো। ”
__ “ আরোও কি কিনবেন! অনেক দেরি হয়ে গেছে, বাসায় যেতে হবে তো। ”
মৌরী বাসার দিকে পা বাড়াচ্ছিলো। তখন রিমন হাত টা টেনে ধরে বলে,
__ “ অনেক সহ্য করলে, আর ১ টা ঘন্টা থাকো প্লিজ। আমরা ডিনার সেরে যায়। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। ”
রিমনের এমন আবদার মৌরী ফেলতে পারেনা।
__ “ ওকে ভাইয়া। ”
এমন সময় রিমনের ফোনে রিং বাজে, রিমন একটু সাইডে সরে আসে কিছু কথা বলার পর মৌরীর কাছে এসে বলে,
__ “ সরি, আসলে গার্লফ্রেন্ড কল দিয়েছিলো। তাই ধরতে বাধ্য।”
__ “ ইটস ওকে, লেটস গো। ”
লেখিকা : জামিয়া পারভীন তানি
চলবে……………
বিঃদ্রঃ
আপনারা শুধু শুধু নেক্সট পার্ট কখন দিবো এই টাইপ কমেন্ট করবেন না, আমি প্রায়ই সময় অসুস্থ থাকি তাই নিয়মিত লিখতে পারিনা। আমার লিখা হলেই নেক্সট পার্ট দিয়ে দিই। আমি গত চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছি। তবুও কষ্ট করে লিখলাম, কিন্তু কষ্ট করে লিখার পরও ঠিক টাইম মতো না দিতে পারলে অনেকেই কটু কথা বলেন। যেই কারণ এ কষ্ট লাগে। আশা করি বুঝতে পারবেন, আর কমেন্ট করলে গল্প সংক্রান্ত কমেন্ট দিবেন। আর আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলে সেগুলো কোথায় যেনো হারিয়ে যায়, সহজে খুঁজে পাইনা। রিকুয়েস্ট দিলে ইনবক্সে না নক দিয়ে কমেন্ট এ বলে দিবেন। তাহলে এক্সেপ্ট করি, কিন্তু ইনবক্স প্রতিদিন চেক করিনা। সেইজন্য ইনবক্সে নক দিলেও দেখতে পাইনা। ধন্যবাদ সবাইকে, এতো কষ্ট করে গল্প পড়ে পাশে থাকার জন্য।