হৃদয়ের রক্তক্ষরণ
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
২০১০সালে ঢাকা ইউনিভার্সিতে ভর্তি হয়েছিলাম অনেক আশা নিয়ে।
শিক্ষক, বাবা মায়ের কারণে, অনেকটা রক্ষণশীল পরিবেশে বড় হবার কারণে হল জীবনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম।
একদিন পরিচয় হয় মারুফের সাথে। মারুফের সাথে পরিচয়টা মূলত বান্ধবী শিখার মাধ্যমেই হয়। শিখার খুব ভালো বন্ধ মারুফ। মারুফ ছিল একজন সুন্দর ও সুদর্শন যুবক। যাকে দেখলে যেকোনো মেয়ে প্রেমে পরার স্বপ্ন দেখবে। একদিন সেই মারুফ একটু সময় চাইল আমার কাছে। সময় দিলাম। এরপর থেকে দেখা হতো প্রতিদিন।
মারুফের পরিবর্তিত আচরণ আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিল আমাদের সম্পর্কের অনিবার্য পরিণতি। কিন্তু প্রেম ভালোবাসার ব্যাপারে আমার সাহসটা বরাবরই একটু কম ছিল। যার কারণে সম্পর্কটা বন্ধুত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত, যদি না মারুফ ভালোবাসার প্রস্তাব দিত।
শুরু হলো এক নতুন জীবন, যেখানে সম্ভব সুন্দর আগামীর স্বপ্ন, সীমাহীন প্রত্যাশা, বর্ণিল আনন্দময় প্রতিটি দিন। খুব বেশী স্বপ্ন দেখতাম আমি। আমাদের থাকবে একটা ছোট্ট সংসার, দুটি ছোট কচি হাত।
আমি মাস্টার্সে উঠে গেলাম। কিন্তু তখনো জানতাম না আমার জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে।
একদিন আমার সেই স্বপ্নের ইতি ঘটল, আমি তাকে বিয়ের কথা বললাম। “বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি আর পারছি না। এবার তো কিছু একটা করো।”
মারুফের স্পষ্ট জবাব, আমায় তুমি ভুলে যাও অন্তরা। আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। আমি এনগেজড।
সাজানো স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠলাম, সবকিছু মিথ্যে হয়ে গেল আমার। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে কয়েক মাস মনোরোগ বিভাগে থাকতে হয়েছিল। অন্য দিকে মারুফ বিয়ে করে বউ নিয়ে বিদেশ চলে গেল।
খুব কষ্ট পেলাম, অথচ আমি তার অযোগ্য ছিলাম না।
প্রবাদ আছে, যে বেশী ঠেকে, সে বেশী শেখে। আমিও শিখলাম আমাকে দিয়ে ভালোবাসা হবে না। তখন উল্টো চিন্তা করলাম, তার দেওয়া কষ্টগুলো চার্লস ডিকেন্সের মত ব্যবহার করব।
চার্লস ডিকেন্সের প্রথম ভালোবাসার দুঃখজনক পরিণতি ঘটেছিল। তখন তিনি তার ভালোবাসাকে লেখার মধ্যে সঞ্চার করলেন। ফলে তার ভাঙা হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা ডেভিড কপারফিল্ড উপন্যাসটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
আমি তখন আমার লেখালেখি আর পড়াশুনাতে মন দিলাম। প্রচুর বই পড়তে শুরু করলাম। ইদুর যেমন সামনে যা পায় তাতেই মুখ দেয়, আমিও সামনে যে বই পেতাম তাই পড়তাম। তার জায়গা দখল করল বই।
শিক্ষকতা শুরু করলাম। আমার সময় কাটত শিক্ষকতা আর লেখালেখি করে। অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে দেশের সাহিত্যের পাতায় নাম উঠল। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হাজারো পাঠক/পাঠিকার মন জয় করে নিলাম। সাহিত্য সম্মাননার মুকুট উঠল আমার মাথায়।
জীবন বহতা নদীর মতো। কারো জন্য থেমে থাকে না। সৃষ্টির অনাদিকাল থেকে এ নিয়মই চলছে বিরামহীনভাবে। ভালোই আছি। মাঝে মধ্যে মনে হয় কি যেন নেই।
তখন ডেল কার্নেগীর কথা মনে হয়। তিনি লিখেছেন, একজন বিশেষ লোকের ভালোবাসা হয়তো তুমি হারিয়ে ফেলতে পারো কিন্তু মন থেকে ভালোবাসা নামক বস্তুটি কখনো হারায় না। সেটা আরেকজনকে খুঁজে নেয়। একজনের প্রতি ভালোবাসা আরেকজনে সঞ্চার হয়ে যায়। জেনে রেখো- আরেকজন আছে।
তাই নষ্ট হলাম না, ধ্বংস করলাম না নিজেকে।
# হৃদয়ের রক্তক্ষরণ
লেখা- অনামিকা ইসলাম “অন্তরা”