হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পর্ব-২৭
#আরিশা অনু
-ভয়ে ভয়ে আমি মাথা নিচু করে মামির সামনে দাঁড়িয়ে আছি তখন উনি শুর পালটে বলে উঠলেন অনন্যা আই এম স্যরি। প্লিজ মাফ করে দাও আমায়।আমি ভুত দেখার মত খানিক ক্ষন ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলাম।কি বলে এই মহিলা।আমায় স্যরি বলছে যে কিনা কোনো কালে আমায় দুচোখে সহ্য ই করতে পারতো না সে আজ যেচে এসে স্যরি বলছে।হিসাবটা ঠিক মিলছে না যেন। কিছু তো ঘাপলা আছে বাট সেটা কি ঠিক ধরতে পারছিনা আমি তাই চুপচাপ আগের মত হা করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
-আমার চুপ থাকা দেখে উনি আবার কথা বলা শুরু করলেন।দেখ অনন্যা আমি যানি আমি অনেক খারাপ একজন মানুষ।আমি এটাও জানি যে আমি তোমার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছি কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছা করে কখনো এসব করিনি।কথাটা বলে মামি একটু থামলেন তারপর আবার বলা শুরু করলেন।
– অনন্যা তুমি তো যানো আমার মেয়েটা রোহান বলতে পাগল।তোমার আর রোহানের যখন বিয়ে হল আমার মেয়েটা কত পাগলামি ই না করেছে তখন।এসব কিছু তোমার অজানা নয়।তারপর তুমি যখন চলে গেলে রোহান কতটা ভেঙে পড়েছিল তা বলে বোঝাতে পারবোনা আমি তোমায়।ছেলেটা রুমের সবকিছু ভাংচুর করতো।ঠিকমত খেতনা ঘুমাতো না এবনরমার এর মত আচারন করত সবসময়।ওর এই অবস্থায় তৃধা ওকে জোর করে কানাডা নিয়ে যায়।ওর খারাপ সময় গুলোতে আমার মেয়েটা ছায়ার মত পাশে থেকেছে।অনেক সময় লেগেছে রোহানের নরমাল হতে।ওদের দুজনের এই লং টাইম একসাথে থাকাটা আস্তে আস্তে রোহানের মনে জায়গা করে নিয়েছে তৃধা।আর সেজন্য রোহান তৃধাকে বিয়ে করবে বলে শিদ্ধান্ত ও নিয়েছে।তাইতো সুদূর কানাডা থেকে এখনা ছুটে এসেছি আমরা।কথাগুলো বলে মামি কিছুক্ষণ থামলেন।
-রোহান তৃধাকে বিয়ে করবে কথাটা শোনার সাথে সাথে মাথার ভিতর চক্কর দিয়ে উঠলো আমার।দু পা পিছিয়ে গেলাম সাথে সাথে আমি।এটা হতে পারেনা রোহান এতবড় অন্যায় কিছুতেই করতে পারেনা।আর তৃধাকে যদি বিয়ে ই করবে তাহলে আমায় কেন নতুন করে আবার ফিরিয়ে আনলো। মাথাটা কেমন শুন্য শুন্য লাগছে এখন আমার।দুচোখ দিয়ে নিজের অজান্তে জল গড়িয়ে পড়ছে।এই সাতটা দিন যে পাগলামি গুলো ও করেছে তা কিছুতেই মিথ্যা হতে পারেনা।ও যতবার ই আমার কাছে এসেছে ততবার ই আমার প্রতি ওর ভালোবাসার গভীরতা আমি উপোলদ্ধি করেছি।আমার প্রতি ওর অনুভূতি গুলো এভাবে মিথ্যা হতে পারেনা।উফ্ শ্বাস নিতে এত কষ্ট কেন হচ্ছে আমার।মনে হচ্ছে গলাটা খুব শক্ত করে কেউ চেপে ধরেছে আমার।মনে মনে কথাগুলো ভাবছিলাম তখন মামি আবার বলতে শুরু করলো।
-দেখ অনন্যা আমি জানি তোমার এগুলো মানতে হয়ত কষ্ট হবে। কিন্তু তাই বলে তো সত্যিটা মিথ্যা হতে পারেনা।কানাডা থাকতে রোহান তৃধাকে চোখে হারাতো।আমি নিজে দেখেছি ওরা দুজন দুজনকে কতটা বোঝে তা।আর তাই আমি আর তোমার মামা ওদের চার হাত এক করে দেওয়ার জন্যই কানাডা থেকে এখানে এসেছি।এবাড়িতে এসে প্রথমে তোমায় দেখে আমার মাথার ঠিক ছিলনা। তাই তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করে ফেলেছি।এর জন্য তোমায় স্যরি ও তো বলেছি আশা করছি তুমি খুব দ্রুত রোহানের জীবন থেকে দূরে চলে যাবা।আমার বিশ্বাস তুমি তৃধার জন্য না হোক অন্তত রোহানের সুখের কথা ভেবে ওকে এবার মুক্তি দেবে।ছেলেটা ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছে এখন একটু সুখে থাকতে দাও ওদের তুমি।
-তোমার মামা আর আমি ভেবেছিলাম এবার ই আল্লার নাম নিয়ে বিয়েটা পড়িয়ে দেব। কিন্তু তুমি তো এখনো আইনত রোহানের স্ত্রী তাই ভাবছি আগে তোমাদের ডিভোর্স টা হোক তারপর বিয়ে দেব ।এখন আপাতত এংগেজমেন্ট টা করিয়ে রাখতে চাইছি।আমি কি বলতে চাইছি তুমি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো?এখন যাও অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পড় কেমন।একটানা কথাগুলো বলে মামি নিচের দিকে রওনা হলেন।
-ডিভোর্স, এংগেজমেন্ট, বিয়ে মনে মনে কয়েকবার কথাগুলো উচ্চারণ করলাম।আর দাঁড়িয়ে থাকার মত শক্তি নেই আমার মাঝে।ধপ করে ছাদের উপর বসে পড়লাম।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে এখন আমার।রোহান তৃধাকে ভালোবাসে না এটা কিছুতেই হতে পারেনা।এই মহিলা আমাকে আর রোহান কে আবার আলাদা করার জন্য এসব বলছে।এ সবকিছু মিথ্যা মানিনা আমি কিছুতেই মানিনা।কিন্তু রোহান তো এই সাতদিনে একবার ও বলিনি যে অনন্যা তুমি একেবারে থেকে যাও।আবার আগের মত সংসার বসাবো আমরা। শুধু বলেছে সুস্থ হও তারপর যেও।তারমানে রোহান ও চাইনা আমি থাকি এখানে।আমার সাথে কেন এমন হয় সবসময়। আর কিছু ভাবতে পারছিনা আমি মুখ চেপে ধরে অনেক সময় ছাদে বসে কাঁদলাম।
-রাত অনেকটা গভীর হলে রুমের দিকে এগোলাম।রুমে এসে দেখি রুহিকে বুকের মধ্যে নিয়ে রোহান ঘুমিয়ে পড়েছে সাথে রুহি ঘুমিয়ে আছে।রুহির অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহান আজকাল।মেয়েটা বাবা ছাড়া যেন কিছুই বুঝেনা। তার সব আবদার বাবাইয়ের কাছে।পাগলি মেয়ে একটা হয়েছে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখে পানি এসে গেল আবার।
-সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি আমি।শেষ রাতের দিকে চোখটা লেগে এসেছিল তাও বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারিনি।রোহানের সাথে কথা বলা দরকার ও মনেহয় ওয়াশরুমে। আমাদের ফিরে যাওয়ার কথাটা আজ বলতেই হবে আমার।
-একটু পর রোহান শাওয়ার নিয়ে রুমে আসলো।আরে অনন্যা তুমি উঠে গেছো আর একটু ঘুমালে তো পারতে।আমি রুহিকে রেডি করে দেব তুমি বরং আর একটু ঘুমাও কথাগুলো বলে থামলো রোহান।
-রোহানের কেয়ারিং দেখে আবার আমার চোখে জল এসে গেল।কি করে থাকবো এই মানুষটাকে ছাড়া আমি।চোখের জল গুলো দ্রুত মুছে নিয়ে বললাম এখন আর ঘুম আসবেনা আমি বরং রুহিকে রেডি করে দি।তুমি ও রেডি হয়ে নাও।আচ্ছা তাহলে যাও রুহিকে রেডি করে দাও ওকে স্কুল এ দিয়েই আমি অফিসে যাব।তারপর রোহান রেডি হতে গেল আর আমি রুহিকে তৈরি করতে নিয়ে গেলাম।
-বুঝতে পারছিনা কিভাবে কথাটা তুলবো। একটু ভয় ভয় করছে আবার যদি রোহান আমায় ভুল বুঝে ।নাহ্ ভয় পেলে চলবেনা তৃধাকে যখন রোহান ভালোই বাসে তখন আমার কোনো অধিকার নেই ওদেরকে আলাদা করার।
-রেডি হয়ে রোহান বের হবে তখন বললাম শোনো।
-হুম বলো।কিছু আনতে হবে?
-না!!
-তাহলে…?
– বলছিলাম যে এখনতো আমি একেবারেই সুস্থ তাই ওবাড়িতে ফিরতে চাইছিলাম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কথাগুলো বলে থামল অনন্যা।
-করুন দৃষ্টিতে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। কেনো যেন চোখটা ঝাঁপসা হয়ে উঠছে ও দেখে ফেলবে তাই দ্রুত চোখটা সরিয়ে নিলাম।তারপর কিছু না বলে রুহিকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম।
.
.
.
.
.
Continue….