হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৫
#আরিশা অনু
–খাবারটা মুখে দিয়ে রোহান এমন ভাবে আমার দিকে তাকালো ভয়ে আমার আত্মা কেঁপে উঠল।চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে ওর তারপর ও খেয়ে চলেছে।বুঝতে পারছিনা খাবারে কি কোনো প্রবলেম হল কিনা।তখন তাড়াহুড়ায় খাবার কেমন হয়েছে চেক করতে ভুলে গিয়েছিলাম আমি।তারপর ভয়ে ভয়ে রোহান কে জিজ্ঞেস করলাম স্যার খাবার কেমন হয়েছে….?
–এখনও কিছু বলছে না চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে ও এদিকে নাক মুখ লাল হয়ে গেছে ওর তবেকি খাবারে ঝাল বেশি হল।উফ্ আমার নিজের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে এখন কেন যে খাবার গুল চেক করলাম না তখন।কি করব বুঝতে পারছিনা তাই চেয়ার টেনে বসে একটা প্লেট এগিয়ে নিয়ে এক পিচ মাংশ উঠিয়ে নিলাম।মাংশটা একটু মুখে দিতেই বুঝলাম যে প্রবলেম টা কোথায়।আমার পুরো মুখ জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে এখন আর রোহান জেদ ধরে পুরো খাবার টা খেয়ে যাচ্ছে…..
–বেচারা এমনিতে ঝাল সহ্য করতে পারেনা তার উপর আজ অসম্ভব ঝাল হয়েছে তরকারিতে তাও আমার উপর রাগ করে খেয়েই চলেছে তখন থেকে।ঝালের চোটে মুখ, নাক, কান সব টমেটোর মত লাল হয়ে গেছে ওর।কি করবো বুঝতে পারছিনা তারপর বললাম রোহান প্লিজ আর খেওনা। আমার কথা না শুনে আবার খেতে শুরু করলো রোহান।এই ছেলে কথা শুনবেনা আমার তাই বাধ্য হয়ে খাবারে পানি ঢেলে দিলাম না যানি এবার কোন শনি আছে আমার কপালে……,,,
–ভেবেছিলাম অনেক বছর পর অনন্যার হাতের খাবার খাব। খুব আশা নিয়ে ওকে বলে ও ছিলাম রান্না করতে বাট ও যে এমনটা করবে আমার সাথে কখনো ভাবতেই পারিনি আমি।অনন্যাকে দেখিয়ে দেয়ার জন্য খাবারে ঝাল হওয়ার সত্ত্বেও এতখন খেয়ে যাচ্ছিলাম। ও বারন করার পর ও ওর কথা না শুনে খেয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু ও খাবারে পানি ঢেলে দিল। এবার আমার রাগটা চরম পর্যায়ে উঠে গেল চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় বসিয়ে দিলাম অনন্যার গালে।কি ভেবেছো কি তুমি হ্যা যা মন চাইবে তাই করবা আর আমি কিছু বলবোনা তোমায়।অনেক আশা নিয়ে এতবছর পর তোমার হাতের খাবার খেতে চেয়েছিলাম আর তুমি কি করলে রিভেঞ্জ নিলে…..?
–বাহ্ অনন্যা বাহ্ জবাব নেই তোমার আসলে আমিতো এটা ভুলেই গিয়েছিলাম যে তুমি সেই মেয়ে যাকে কিনা আমি নিজের সবকিছু দিয়ে ভালোবেসে ও মন পাইনি। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ভালোবেসেছিলাম আর তুমি তার প্রতিদান স্বরুপ আমার সাথে দিনের পর দিন প্রতারনা করে গেছ।এতটাই নিচে নেমে গিয়েছিলে যে অবৈধ সম্পর্কে ও জড়িয়ে ছিলে।আমি তো এটা ভুলেই গিয়েছিলাম যে তুমি একটা নষ্টা মেয়ে।আর আজ আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর ও কি করে তোমার কাছে ভালো কিছু আশা করি।তুমি যে ঝালের পরিবর্তে আমার খাবারে বিষ মিশাও নাই এটাই তো আমার সৌভাগ্য…..,,,,,,
–তবে একটা কথা মনে রেখো অনন্যা আজ যেটা করলে তুমি এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে তোমায় আর সেটা খুব শিগ্রই।তারপর অনন্যা কে রেখে উপরে চলে আসলাম।ঝালে পুরো মুখে আগুন ধরে গেছে আমার চিৎকার করতে মন চাইছে এখন।কি করে এমন করলো আমার সাথে যেখানে ও যানে আমি ঝাল একদম সহ্য করতে পারিনা।ঝালের জ্বালায় মাথা ঘুরছে আমার এখন তাই দ্রুত ওয়াশরুমে যেয়ে শাওয়ার ছেড়ে শাওয়ার এর নিচে দাড়িয়ে পড়লাম….!!!
–রোহান একটা বার আমার কথা শুনতেও চাইলো না আমি তো ইচ্ছা করে ওর খাবারে ঝাল মিশায়নি। কি করে এত ঝাল হল তাও বুঝতে পারছিনা আমি। আর ও এতটাই নিচে নেমে গেছে আজ যে আমার গায়ে হাত তুলতে ও একটা বার বাধলোনা ওর।আর কি বললো আমি নষ্টা মেয়ে উফ্ আর কত নোংরা কথা শুনতে হবে আমায় আর কত ধর্যের পরিক্ষা নেবে আল্লাহ…?
–রোহান চড় মারাতে যতটা না আঘাত পেয়েছি আমি ওর মুখে নষ্টা শব্দ টা শুনে তার থেকে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি আজ আমি।আর কত অপমান বঞ্চনা সহ্য করবো আমি।সত্যি আর এগুলো নিতে পারছিনা বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার এখন।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে ছিহ্ এতটা নোংরা মানুষিকতা তৈরি হয়েছে রোহানের আমার প্রতি। এতক্ষণ অনন্যা দাড়িয়ে দাড়িয়ে উপরের কথা গুলো ভাবছিল হঠাৎ পেছন থেকে কার ডাকের আওয়াজ আসলো যেন তাই দ্রুত চোখ মুছে পিছনে তাকিয়ে দেখে তৃধা দাড়িয়ে আছে আর হাসছে…..!!!
–আরে অনন্যা তোমার গালে এটা কিসের দাগ..?
ইশ্ পুরো পাঁচ আঙুলের দাগ পড়ে আছে গালের উপর রোহান কিন্তু এটা একদম ঠিক করেনি আজ।অবশ্য তোমার গালের নকশা বদলে দেওয়ার পিছনে আমার ভূমিকাটা কিন্তু অন্যতম ছিল আর রোহান তো আমার কাজটাই সামান্য একটু হেল্প করল মাএ। সো তুমি চাইলে আমাকে থ্যাংকস দিতে পারো অনন্যা কথাগুলো বলে থামলো তৃধা…..!!!
–কি বলছে এই মেয়ে আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছেনা তাই তৃধাকে বললাম কি বলতে চাও সোজাসুজি বলো তৃধা এত নাটকিয়তার কোনো প্রয়োজন নেই…..,,,,
–আরে বেবি কুল ডাউন এত অল্পতে ধৈর্য হারা হলে চলবে নাকি এখনো তো আসল টুইস্ট বাকি আছে…..,,,
–টুইস্ট কিসের টুইস্ট তৃধা নেকামি না করে কি বলবে সরাসরি বলো কথাটা বলে থামলো অনন্যা….,,,
–আরে অনন্যা বেবি এত উতলা হওয়ার কি আছে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো তৃধা…..!!!
–রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে এখন আমার তারপর ও চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম তৃধার মুখ থেকে সত্যিটা শোনার জন্য। কারন আমার বোঝা হয়ে গেছে এই সব ঘটনার পেছনে এই মেয়ে ছাড়া আর কারো হাত থাকতে পারেনা। কথাগুলো ভাবছিলাম হঠাৎ তৃধার কথায় ধ্যান ভাঙল আমার….,,,,
–আরে অনন্যা বেবি তুমি একদম ঠিক ধরেছ খাবারে ঝাল মেশানোর পুরো ক্রেডিট টা তো আমারি কথাটা বলে একটা শয়তানি হাসি দিল তৃধা…..,,,
–শুনতে চাওনা কিভাবে এই ম্যাজিক টা করলাম আমি?হুম অবশ্যই শোনাব তোমায় বেবি….
–তুমি যখন ফ্রেশ হতে গিয়েছিল তখন ই আমি কিচেনে আসি এসে দেখি রুমকি ও নেই সেই ফাকে রেড চিলি পাওডার আচ্ছা মত মিশিয়ে দিলাম।আহ্ কি শান্তি যে লাগছিল যখন রোহান তোমায় ঠাটিয়ে দুইটা দিল ।উফ্ তখনতো আমার মন চাইছিল আনন্দে রোহানকে জড়িয়ে ধরে দুইটা পাপ্পি দি। এই অনন্যা বেবি তোমার রাগ হচ্ছে না? আমায় কাঁচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছা করছে এখন তোমার তাইনা?হা হা আমার কিন্তু খুব মজা লাগছে তোমার এই ফেসটা দেখতে এখন…..,,
–হঠাৎ তৃধা শুর পাল্টে বললো বলেছিলাম না রোহানের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করলে ও তোমার খবর আছে আজ শুধু সাবধান করলাম নেক্সট টাইম এক ভুল দ্বিতীয় বার করলে তোমার এমন অবস্থা করবো যে আয়নায় নিজের মুখ দেখতে ও ভয় পাবা তারপর তৃধা ওখান থেকে চলে গেল……,,,
–খুব রাগ উঠছে এখন আমার কেন আমি এই কাল নাগীনির কথা ভুলে গেলাম।আমার আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল।আমার বোকামির জন্য রোহান আবার আমায় ভুল বুঝলো অনন্যা নিজেকে বকতে বকতে কথা গুলো বললো….,,,
–দিনগুলো এভাবে চড়াই উতরাই করে পেরিয়ে যাচ্ছিল।যখনি অনন্যা রোহান কাছাকাছি আসে মাঝখানে তৃধা এসে রোহানের মন বিষিয়ে দেয়। তারপর ও অনন্যা রোহানকে কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছে এটাই ওর জন্য শান্তি…..,,,
.
.
.
.
Continue…
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)