হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১০
#আরিশা অনু
–অনন্যার সাথে আমার পরিচয়টা হয় ভার্সিটি তে।ও তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ার এ পড়তো আর আমি মাস্টার্স এ ছিলাম।একদিন ও তাড়াহুড়া করে ক্লাসে যেতে যেয়ে আমার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যাচ্ছিল তখন আমি ওকে ধরে ফেলি।ও প্রচুর ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আর আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি।একদম বাচ্চাদের মত করে চোখ কুঁচকে ছিল ও।কিউটের ডিব্বা লাগছিল একদম ওকে।তারপর থেকেই অনন্যাকে দেখলে অদ্ভুত এক ফিলিংস কাজ করতো আমার ভিতরে।একদিন হুট করেই ওকে প্রপোজ করে বসি।ও কিছুদিন সময় চাই।ভেবেছিলাম ও না করে দেবে কিন্ত আমাকে অবাক করে দিয়ে ও হ্যাঁ বলে দিল।তারপর কিছুদিন পর দুই পরিবারের সম্মতি নিয়ে আমাদের বিয়ে হল….!!!
–খুব সুখেই কাটছিল আমাদের দিন গুলো।বিয়ের আগে প্রেম করার তেমন সময় হয়নি তাই বিয়ের পরেই প্রেম করতাম দুইটা মিলে।অদ্ভুত ভাবে বুঝে ফেলতাম ও আমার আসে পাশে থাকলে।সারাদিন ও বাসায় সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতো আর আমি অফিস নিয়ে ব্যস্ত। তবে একটু পর পর পাগলি টা ফোন দিয়ে জিঙ্গেস করতো কি করছি, খেয়েছি কিনা।কি এক বাইনা ওর সকালে, দুপুরে, রাতে একসাথে খাবে বলে বাইনা ধরে বসে থাকতো মেয়েটা।আমার হাজার লেট হলেও না খেয়ে বসে থাকতো যখন আমি খেতে বসতাম ও ঠিক তখন ই খেতে বসতো।মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যেতাম ওর অদ্ভুত অদ্ভুত সব পাগলামি দেখে।
তবে অনন্যার এক কথা বাসায় কোনো কাজ করা যাবেনা।যা কাজ সব অফিসে বসে করতে হবে আর বাসায় পুরো সময়টা শুধু ওর। পাগলিটা পারেও পাগলামি করতে।
–সুখের স্মৃতি গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোনের শব্দে হুস ফিরলো আমার। ফোনের স্কিন এ তাকিয়ে মাথায় আবার রক্ত উঠে গেল…..!!!
.
.
.
.
–তমালের সাথে আড্ডা দিতে দিতে প্রায় সন্ধা হয়ে গিছিল তাই ও আমাকে আর রুহিকে নামিয়ে দিয়ে গেল।ওকে বললাম একদিন ভাবিকে নিয়ে বেড়াতে আসতে।তারপর বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আসার সময় আম্মুর জন্য ও খাবার এনেছিলাম সেগুলো ফ্রিজে উঠালাম….!!!
–সারাদিন রুহিকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বলে রোহানের কথা একদম ভুলে গিয়েছিলাম।ওর কথা মনে হতেই ফোন হাতে নিলাম।ফোন হাতে নিয়ে আমার চোখ কপালে উঠার অবস্থা এখন।রোহান ৪২ বার কল দিয়েছে।ও মাই গড আমার ফোন সাইলেন্ট ছিল বলে কিছু বুঝতে পারিনি।এত বার কল দিল ওর আবার কিছু হলোনা তো।ভাবতেই বুকটা ধরে এলো তাড়াতাড়ি করে ফোন দিলাম ওকে….!!!
–অনন্যা ফোন দিয়েছে মাথা আগুন হয়ে আছে এমনিতে তারপর আবার ওর ফোন রাগে রাগে ফোন কেটে দিলাম।একটু পর আবার ফোন দিলো ও।এবার রাগে রাগে আমার ফোনটাই আঁছাড় দিয়ে ভেঙে ফেললাম।কাল থেকে তোমার জীবনের নরকিয় দিন শুরু অনন্যা….!!!
–উফ্ বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে অনেক রেগে গেছে ও। অবশ্য রেগে যাওয়ারি কথা এতবার ফোন দিয়েছে বেচারা আর আমি একবারো রিসিভ করলাম না।বাট আমি তো যানতাম না যে ফোন সাইলেন্ট হয়ে আছে তাহলে এখানে আমার ই বা কি দোষ….!!!
–চিন্তায় চিন্তায় সারা রাত ঘুমাতে পারিনি আমি। পরদিন খুব সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে নিলাম।আর রুহিকে ও রেডি করে দিলাম…..!!!
–কি রে মা আজ এত তাড়াহুড়া করছিস যে কিছু হয়েছে কি….?
–না আম্মু কিছু হয়নি আজ একটা মিটিং আছে তাই এত জলদি করছি।আম্মুকে মিথ্যা বললাম নয়তো রোহানের কথা শুনলে আবার কি ভাববে কে যানে…..!!!
–ও তোর মিটিং আছে এটা আগে বলবি না। আচ্ছা সাবধানে যাস মা….!!!
–ঠিক আছে আম্মু আল্লাহ হাফেজ।
–তারপর রুহিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে।মনটা পড়ে আছে রোহানের কাছে। কেনো যেন মনটা বড় অস্থির লাগছে আজ। ও ঠিক আছে তো..?
–উফ্ ঠিক কেন থাকবে না অবশ্যয় ঠিক আছে কি সব উল্টা পাল্টা ভাবছি আমি….!!!
–রোহানের চিন্তায় রুহি কি কি যেন বলছিল আমায় কিচ্ছু মাথায় ঢুকলোনা আমার।তারপর রুহিকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি ছুটলাম অফিসে…!!!
–অফিসে ঢুকে আগে রোহানের কেবিনে ছুটলাম কে যেন পেছন থেকে ডাকছিল আমায় বাট সেদিকে কোনো খেয়াল ছিলনা আমার।রোহানের কেবিনের দরজা খোলার পর আমার মাথায় যেন বাঁচ পড়লো।অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলাম তৃধা…!!
–তৃধা রোহানের গলা জড়িয়ে ধরে কি কি যেন বলছিল ওকে।আমায় দেখে ওরা আমার দিকে তাকিয়ে পড়লো।তৃধা রোহানের গলা ছেড়ে আমার সামনে এসে বলতে শুরু করলো….!!!
–এই মেয়ে তুমি এখানে কেনো? একবার রোহানের লাইফ হেল করে শান্তি হয়নি তোমার? আবার এসছো বেয়াদব, বেহায়া মেয়ে একটা।তোমার মত থার্ডক্লাস মেয়ে আর দুইটা দেখিনি আমি।বেরিয়ে যাও এখনি এই অফিস ছেড়ে।আর কখনো যেন রোহানের ত্রিসিমানায় তোমায় না দেখি….!!!
–তৃধা কুল ডাউন বেবি এত উত্তেজিত হয়োনা তো।আর মিসেস অনন্যা আপনার কোনো কমন সেন্স নাই?বসের কেবিনে ঢুকলে গেলে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয় এটা কি ভুলে গেছেন আপনি?
–আর মিস নিপা আপনাই আমি বলেছিলাম না আমি না বলা পর্যন্ত মিসেস অনন্যা কে আমার কেবিনে ঢুকতে দেবেন না…..?
–স্যরি স্যার আমি কিছু বলার আগেই ম্যাম কেবিনে ঢুকে পড়েছে আমি বার বার করে ওনাকে ডাকলাম কিন্ত উনি কিছু না শুনেই….!!!
–মিসেস অনন্যা নেক্সট টাইম আমার কেবিনে আসার আগে ভদ্রতার সহিত অনুমতি নিয়ে তারপর আসবেন। নাউ গেট লস্ট……!!!
–মনেহচ্ছে পা দুটো যেনো কেউ আঁকড়ে ধরে রেখেছে বুঝতে পাছিনা পা নাড়াতে কেন পারিনা।শ্বাস নিতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে এখন আমার। তৃধার কথায় যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার তিনগুন বেশি ব্যাথা পেয়েছি রোহান কে আর তৃধাকে ঐ অবস্থায় দেখে। আর রোহানের বলা প্রতিটা কথা তো তীরের মত আমার বুকে যেয়ে বিধেছে…!!!
–কেনো যানি মাথাটা ঝিমঝিম করছে। শ্বাস নিতে ও প্রচুর কষ্ট হচ্ছে,হাজার চেষ্টা করেও ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিনা আমি।কেউ যেন গলাটা খুব জোরে চেপে ধরেছে। বুকের ভেতরে ও প্রচুর যন্ত্রনা হচ্ছে আমার। চোখের সামনে সবকিছু ঝাঁপসা হয়ে আসছে । যেনো অন্ধকার হয়ে আসছে আমার পুরো পৃথিবী।অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে এখন।মনে হচ্ছে যেনো এখনি মারা যাব। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলাম।আর কিছু মনে নেই আমার….!!!
.
.
.
.
Continue….
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)