একরাতেরবউ পর্ব_৭
Written by Avantika Anha
আমি আরাভ এর কাছ থেকে চলে এলাম। কারণ আমার এখনো আরাভ এর সাথে থাকতে বা কথা ভালো লাগছে না। ও নিজেও জানে কারণ কি? আরাভের থেকে যতোই দূরে থাকতে চাই ওর চোখের দিকে তাকালে তাকিয়ে থাকতেই ভালো লাগে। কেন যেন ওর চোখের দিকে তাকালে মানতে ইচ্ছে করে না যে সে আমার সাথে এতোকিছু করেছে।
.
আশা- কি রে কই ছিলি? অদ্রির কথা শুনলি?
আমি- কি?
আশা- ওর নাকি সামনে বিয়ে।
আমি- এ্যা আমরা জানিও না।
আশা- আরে হ। তার উপর এতো কিছু আমাদের কে তাও বলে নি। বলতোও না।
আমি- তাইলে কেমনে জানলি তোরা?
আশা- আরে কথা বলছিলো তার উনির সাথে ধরা খাইছে।
আমি- তাই নাকি কই রে ওয়?
আশা- রিয়া পিটাচ্ছে মে বি।
আমি- খাড়া আমিও মারমু তারে।
.
অদ্রির কাছে গিয়াই ওরে কাতুকুতু দেওয়া শুরু করলাম। তারপর আরো কিছু আজব থেরাপি মারলাম। কিছু সময় পর,
অদ্রি- থাম দোস্ত। তুই না আমার জানে জিগার আমারে মারবি?
আমি- তা মনু আমারে কও নাই কেন?
অদ্রি- না মানে এই আর কি।
আমি- জিজুর নাম কি?
অদ্রি- ফয়সাল।
আমি- আহা আমাদের ফয়সালের বউ রে। পরিচয় করায় দিবি ওকে?
অদ্রি- ওকে।
আমি- চলো মামি ট্রিট মারো এবার। আমরা এখন করবো তোমার ব্যাগ ফাঁকা।
.
অদ্রির সাথে আড্ডা দিলাম। সব ফ্রেন্ডরা ট্রিট নিলাম। কিছু সময় সেভাবেই চললো। আমি যতোটা পারছিলাম আরাভের থেকে দূরুত্ব বজায় রাখছিলাম। কারণ কেন যেন যতোই ভুলার চেষ্টা করি ও যা করছে ভুলতে পারি না। আবার তার চোখের দিকে তাকিয়েই সব ভুলে যাই। রান্নার সময় কোনো এক জিনিস রেখে যাওয়ার সময় আরাভের সাথে ঢাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে লাগলাম। যদিও সেদিন বেশি মানুষ ছিলো না। তবুও আজব লাগছিলো। সেই সাথে আরাভের স্পর্শ আমার কান্না আনছিলো। স্থির থাকতে পারলাম না। কিছুটা ধাক্কা দিয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।
.
আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা কেনো তার ছোয়া এতোটা মারাত্তক লাগে। ভিতরের সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
তার প্রতিটা ছোয়াই একেকটা আগুনের কুন্ডলি মনে হয়।
কাছে আসলেই ছেকা লেগে যায়।
কেনো যেনো পারিনা তাকে নিতে। তার স্পর্শগুলা ভালো লাগে নাকি খারাপ লাগে সেটাও জানিনা।
শুধু এটুকু জানি আমি তার থেকে দুরে থাকতে চাই।
তার কাছে থাকলে হয়তো অনেক কিছু বদলে যাবে।
আমি চাইনা সেসব হোক। আমি আমার মতো থাকতে চাই।
নিজের মতোন করে। যা হইছে বাদ দিয়ে আবার শুরু করতে চাই। যদিও ভোলা সম্ভব না তবুও আড়ালে রাখতে চাই। এতোটা আড়াল করতে চাই যতটা করলে নিজের ও খুব একটা মনে পড়বেনা।
তবে ছেলেটা কেনো বারবার আমার কাছে আসছে।
তার যা পাওয়ার ছিলো সেটা তো পেয়েই গেছে।
আমার মধ্যে আর বাকি কী আছে? যার কারনে সে আমার পিছনে ঘুরছে।
হয়তো আরো অনেক কিছু বাকি। যেটাও তার লাগবে।
অস্ফুট হাসিটার সাথে গড়িয়ে পড়লো কয়েকফোটা জল।
.
হঠাৎ কেউ আমার হাতটা ধরলো,
কিছুটা চমকে উঠলাম। আরাভ নয়তো?
বা হাত দিয়ে চোখটা মুছে নিলাম। অন্ধকারে দেখতে পাবেনা আমার কান্না।চোখটা মুছে পিছনে তাকিয়ে দেখি আরাভ।
যা ভাবছিলাম তাই,
ও কেনো বারবার আমার কাছে আসছে। আমিতো পারছিনা আর।
– আনহা। (আরাভ)
– হুমম বলুন।(আমি)
– তোমার জন্য একটা জিনিস আছে।(আরাভ)
– অনেক বড় জিনিসই তো কেড়ে নিছেন, দিয়ে কি হবে? (আমি
– এসব বিষয় বাদ। (আরাভ)
– ওকে। (আমি)
– জিনিসটা নিবা? (আরাভ)
– আমি নিবোনা।(আমি)
– সিওর নিবেনা?(আরাভ)
– হুমম damn sure..(আমি)
– তুমি নিবেই।(আরাভ)
– যদি না নেই?(আমি)
– বাজি?(আরাভ)
– হুমম বাজি।(আমি)
– আমি জিতলে কি পাবো?(আরাভ)
– যা চাইবেন তাই।(আমি)
– যা চাইবো তাই??(আরাভ)
– হ্যা। (আমি)
– আর যদি হেরেরে যাই?(আরাভ)
– তাহলে কালকেই চলে যাবেন এখান থেকে।(আমি)
– ঠিক আছে।(আরাভ)
.
আরাভ পকেট থেকে দুইটা কিটক্যাট বের করলো।
হেতে তো দেহি মাইন্ড কিলার। হেতে কেমনে জানলো কিটক্যাট আমার ফেবারিট। সে এটাও জানে বাকি সব ফেরত দিতে পারি বাট কিটক্যাট না।
তবুও নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু চেষ্টা বৃথা।
এটা লাগবেই আমার। তার হাত থেকে কিছুটা কেড়ে নেওয়ার মতো করেই নিয়ে নিলাম। কারণ যতোই চুপ থাকি কিটক্যাট আমার জান। জান যায়ে পার কিটক্যাট নাহি যায়ে।
.
– কি বলছিলাম না না নিয়ে পারবেনা?(আরাভ)
– আপনি কেম্নে জানলেন এটা আমার প্রিয়?(আমি)
– সেটা নাহয় অন্য একদিন বলবো এখন আমি যা চাই তা দেন।(আরাভ)
– কি চান আপনি?(আমি)
– যা চাইবো তাই কিন্তু দিবেন বলছেন?(আরাভ)
.
এইরে কি বলে ফেলছি। এখন সে কি চাইবে আল্লাহই
ভালো জানে। আল্লাহ এবারের মতো বাচিয়ে দাও।
.
– হুম কি চান বলেন।(আমি)
– তোমাকে চাই। দু ঘন্টার জন্য।(আরাভ)
– মানে??(ভয়ে ভয়ে)
– মানে আজকে রাতে দু ঘন্টার জন্য তোমাকে চাই আমার।(আরাভ)
– আমাকে দিয়ে কি করবেন তাও আবার রাতের বেলা?(আমি)
আরাভ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
– যা ভাবছো তাই করবো। দু ঘন্টা তুমি আমার সাথে থাকবে আর আড্ডা দিবে। আর এই দু ঘন্টা আমি তোমান কোলে মাথা রেখে তোমার হাত ধরে গল্প করবো।(আরাভ)
– এ্যা?(আমি)
– হ্যা।(আরাভ)
.
যাক তবুও অন্যকিছু তো চায়নি।
বেচে গেছি। তবে দু ঘন্টা তার মাথা আমার মাথা সরি আমার কোল।
আমার হাত তার হাত। তবুও আমার কেলম থুরি কেমন লাগছে। আমি তার কাছে দূরে থাকতে চাচ্ছি সে আরো কাছে টানছে। এতোটা ঘৃণা জমিয়েছি যে ভুলে ঘৃণা না সরি ভালোবেসে না ফেলি।
.
ধুরো সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রাত তখন ৮.৪০ মানে ১০.৪০ পর্যন্ত তার সাথে আমাকে থাকতে হবে।
বুঝলাম না আসলে তার মতলব কি?
সে কি আমার প্রেমে ট্রেমে পড়ে গেছে নাকি?
প্রেমে পড়ার কি আছে? আর সে তো এমনিও প্রেমে পড়ে না। সে তো শুধু…. চায়। আমার সবতো সে পেয়েই গেছে।
বুঝিনা এই ছেলেটাকে। কখন কি করে সে। কখন কি চায়। সেটা নিজেও বুঝতে পারেনা।
আর আমিতো নিজেকেই বুঝতে পারিনা তাকে কি বুঝবো।
.
সেদিন রাতে, সবাই যে যার রুমে। আমার আর মিমির এক রুম ছিলো।ও না আসায় পুরো রুম আমার। আরাভের ঘরে গেলাম।
.
আরাভ- আসছো। তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম।
আমি- (নিশ্চুপ)
আরাভ- বেবি এই দুই ঘন্টা আমার।
আমি- কেন আবারো কি?
আরাভ- নাহ যাস্ট তোমার কোলে মাথা রাখবো এর বেশি না ডোন্ট ওয়ারি। বিলিভ রাখো।
আমি- হাহা আর বিলিভ নাই।
আরাভ- যাই হোক।
.
সে আমাকে বসালো এরপর,
সে আমার কোলে মাথা রাখতেই। শিউরে উঠলাম।
শরিরের সব লোম দাড়িয়ে উঠলো।
সে আমার হাত ধরতেই কেমন জানি অস্থির হয়ে পড়লাম।
কিছুতেই স্থির থাকতে পারছিলাম না।
নিজেকে কেমন জানি আওতার বাইরে মনে হচ্ছিলো।
তবুও নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছিলাম।
বুঝিনা এই ছেলেটা কেনো এমন করতেছে।
কি চায় সে এখন?
এতোকিছু করার কোনো মানেই হয়না।
.
– আনহা?(আরাভ)
– হুমম বলুন।(আমি)
– আমার মাথা ব্যাথা করতেছে। মাথাটা একটু টিপে দিবেন?(আরাভ)
– কিভাবে দিবো? হাত তো ধরে রেখেছেন।(আমি)
– ওহ সরি।(আরাভ)
.
আরাভ হাত ছেড়ে দিলো। আমিও কেনো জানি তার কথা শুনতেছি। জাদু টাদু করলো নাকি আবার??
তার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলাম। তার চুলগুলা সেই সফট। হাতে সুরসুরি লাগতেছে। সাধারনত ছেলেদের চুল হার্ড হয়। কিন্তু হেতের উল্টা।
আরাভ প্রশ্ন করলো,
– কিটক্যাট প্রিয় কেনো?(আরাভ)
– ভালোবাসি তাই।(আমি)
– ওহ আচ্ছা আমার প্রিয় চানাচুর।(আরাভ)
– চানাচুর আবার মানুষ খায় নাকি?(আমি)
– কি জানি? মানুষ না খেলেও আমিতো খাই। হয়তো আমি মানুষের কাতারেই পড়িনা।(আরাভ)
একটা দির্ঘশ্বাস ফেললো সে।
ইমোশনাল কথাবার্তা।
লাভ নেই আনহা পটবেনা।
এতোটাও সহজ নয়।
.
– আমিতো একাই বকবক করতেছি তুমিও কিছু বলুন।(আরাভ)
– আমাকে কি ছাড়া যাবে এখন? সময় কিন্তু শেষ (আমি ঘোর কাটানোর চেষ্টায়ই কথাটা বললাম)
– ওহ আচ্ছা।(আরাভ)
.
আরাভ উঠে দাড়ালো। আমিও দুরে গিয়ে দাড়ালাম।
উফফ বাচলাম। কেমন একটা ভিন্ন জগতে ছিলাম এতোক্ষন। অনেকটা মোহের মতো।
.
রিয়া আমার রুমের বাইরে দাড়িয়ে আছে।
– তোকে সেই কখন থেকে খুজছি।
– কেনো?
– ফয়সাল ভিডিও কল দিছে তোর সাথেও কথা বলবে।
– আচ্ছা চল।
.
আরাভকে রেখে চলে আসলাম। তবুও আমি ঘোরে আছি। কেমন একটা আকর্ষণ এখনো টানছে আরাভের দিকে। কিন্তু আমি এটা বুঝছি না আরাভ কেন এমন করছে? অজানা অনেক কিছু।
.
পরেরদিন,
.
খাবার টেবিল থেকে শুরু করে সব জায়গায় আমি ইগনোর করছিলাম। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় আরাভও ইগনোর করছে আমাকে। ভালোই হলো। আর জ্বালাবে না। এটাই ভাবছিলাম। কিন্তু কেমন লাগছিলো আমার।
.
চলবে??