একরাতেরবউ পর্ব শেষ
Written by Avantika Anha
সেদিনের পর আরাভের সাথে আর দেখা হলো না। কোনো ভাবেই না। আমি বুঝে নিলাম যে সে তার কথা রাখছে। আমি আরাভের প্রতি কিছুটা দূর্বল আমিও জানি। কিন্তু আমি ওকে ঘৃণা করি অনেক এটাও আমি জানি। তাই আর কিছু না ভেবে আমি ভেবে নিয়েছিলাম নিজের পায়ে দাড়িয়েই সারাজীবন কাটিয়ে নিবো। কিন্তু সমস্যা ঘটলো আরেক জায়গায়। বাড়ির অনেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। কোনো মতেই বিয়ে আটকানো যাচ্ছিলো না। এক দিন হঠাৎ নিজের মাথায়ই এলো। “আমি কেনো লুকিয়ে বাচঁতেছি? আরাভ কি তার ভুলের শাস্তি পাবে না?” এসবই আমার মাথায় ঘুরতেছিলো। এমন সময়ই মিমির কল আসলো,
.
আমি- বল।
মিমি- কই আছিস?
আমি- বাড়িতে কেন?
মিমি- একটু ক্যাফেতে আয় এখনি।
আমি- পারবো না এখন।
মিমি- আয় প্লিজ। একটা জরুরী জিনিস দেখাবো আয়।
আমি- ওকে আসছি।
.
তাড়াতাড়ি কোনোমতে স্কার্ফ বেঁধে ক্যাফেতে গেলাম। ঢুকতেই সামনের দিকে আরাভকে দেখলাম। একটা মেয়ের সাথে বসে আছে। আমাকে লক্ষ্য করলো আরাভ। একবার তাকিয়ে আবারো চোখ ফিরিয়ে নিলো। আমি আশেপাশে কোথাও মিমিকে পেলাম না। রাগ উঠতে লাগলো। তাই ফিরে যেতে লাগলাম। কারণ আমার জানা আছে আরাভ কোনোদিন ভালো হবে না। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন আমাকে ডাক দিলো। দেখলাম সে আর কেউ নয় রিয়াদ। (সম্পর্কে মিমির কেমন জানি কাজিন। সে আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু আমি তো তাকে আগেই না বলে দিয়েছিলাম। তাহলে আমাকে এখানে সে-ই ডেকেছে।)
.
আমি এগিয়ে গেলাম। লক্ষ্য করলাম আরাভ এবার আমার দিকেএকবার ঘুরলো। আমি তাকাতেই চোখ সামনে নিলো।
.
আমি- জ্বী বলুন কি দরকারে?
রিয়াদ- না মানে। চিন্তা করো না ভালোবাসার দাবি নিয়ে না অন্য কারণে তোমাকে ডাকা।
আমি- ব্যাপার না বলুন কি দরকার?
রিয়াদ- আসলে একটা প্রোগ্রাম আছে। আমাদের ব্যাচ করবে। তো কিছু স্থানীয় লাগবে স্টুডেন্ট হেল্প এর জন্য। প্লিজ হেল্প করো। আমি জানি তুমি এসব পারো ভালো। তাই ডাকা।
আমি- কিন্তু ভাইয়া।
রিয়াদ- কোনো কিন্তু না প্লিজ।
আমি- আচ্ছা আমি রাজী।
রিয়াদ- থেংকু। অনেক বেশি।
.
আমি আর রিয়াদ ভাইয়া আরো কথা বললাম। কিন্তু বুঝলাম না এতোক্ষণ আরাভ আর তার গার্লফ্রেন্ড এর এতো কথা হচ্ছিলো, হাসি-ঠাট্টা হচ্ছিলো তা থেমে গেছে। আরাভ বারবার ঘুরছে। এক মুহূর্তে আরাভ উঠে আমার দিকে এলো। আর তার গার্লফ্রেন্ড তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আমি তাকিয়েও তাকালাম না।
.
আরাভ- আনহা।
আমি- জ্বী বলুন। (কথা না বললে রিয়াদ ভাইয়া খারাপ ভাববে তাই জবাব দিলাম)
আরাভ- একটু কথা ছিলো তোমার সাথে।
আমি- কি কথা?
আরাভ- ওই যে প্রজেক্ট এর ব্যাপারে।
আমি- কোন প্রজেক্ট?
আরাভ- ধর্ষণের উপর যেটা।
আমি- ধর্ষণ শুনেই বুঝে গেলাম ও কি বোঝাতে চাচ্ছে।
.
আমি- পরে কথা হবে প্রোগ্রাম নিয়ে তাহলে আপনার সাথে আজ আসি। (রিয়াদকে উদ্দেশ্য করে বললাম)
রিয়াদ- আচ্ছা।
.
.
আমি উঠে আরাভের সাথে হাটতে লাগলাম।
.
আমি- বলুন কি দরকার?
আরাভ- গাড়িতে উঠো।
আমি- নাহ।
আরাভ- কেন?
আমি- আমার গাড়িতে বমি পায়।
আরাভ- আগে তো পাইতো না।
আমি- এখন পায়।
আরাভ- প্রেগনেন্ট নাকি?
আমি- হুমম কোনো সমস্যা ? (আন্দাজি বললাম)
আরাভ- মজা ভালোই শিখেছো। আচ্ছা চলো হাটি।
আমি- যা বলার জ্বলদি বলুন।
আরাভ- ছেলেটা কে?
আমি- হয় কেউ।
আরাভ- মিশিও না ভালো না মনে হয়।
আমি- আমার ব্যাপার আপনার গফকে নিয়ে কি আমি কিছু বলেছি?
আরাভ- বেশি কথা না। যা বলছি তাই।
আমি- শুনেন আমি আপনার কথা মানতে বাধ্য নই।
আরাভ- বাধ্য।
আমি- অধিকার নাই আপনার ওকে?
আরাভ- অধিকারের প্রশ্ন আসছে কেন?
আমি- সো আমি আপনার কথা শুনবো কেনো? কে আপনি? আমার কে হন? যাস্ট এ্যা ব্লাডি বডি লাভার।
আরাভ- yahhh i am that.
আমি- get away okay? u are not related with me. n i don’t wanna see your face again.
আরাভ- বেশি বলিও না আনহা আমার রাগ বেড়ে যাচ্ছে।
আমি- তো আমি কি করবো? বাই আমার লেট হচ্ছে।
.
.
এই বলে কয়েক পা এগোতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। আরাভ তাড়াতাড়ি আমাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো। রিপোর্টে জানা গেলো আমি প্রেগনেন্ট। আরাভ ভালো করেই বুঝলো বাচ্চাটা ওর। রিপোর্ট শুনে আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেলো। আর যাই হোক আমি আমার সন্তানকে মারতে পারবো না এটা আমি ভালো করেই জানি। তাই ভাবতে লাগলাম কি করবো সামনে। হসপিতালের বেডে বসেই আমি এসব ভাবছিলাম।
.
আরাভ- আনহা।
আমি- আমাকে কিছু বলতে হবে না।
আরাভ- আনহা বিয়ে করবা?
আমি- (আরাভের এই কথা শুনে আমি অবাক)
আরাভ- কি হলো বলো।
আমি- হঠাৎ বিয়ে?
আরাভ- আর যাই হোক আমি আমার সন্তানকে তো অস্বীকার করতে পারবো না। আর আমি চাই না আমার সন্তান মা অথবা বাবা কাউকে ছাড়া থাকুক।
আমি- আচ্ছা ভাবা যাবে।
.
সেদিন কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়েই আমি চলে আসলাম। কারণ আমাকে ভাবতে হবে কি করবো সামনে। রাতে ঠিক করলাম আরাভকে আমি বুঝায় ছাড়বো সঠিক কি আর ভুল কি? সোজা রাস্তা বুঝবে না। তাই উল্টা রাস্তা।
.
পরেরদিন সকালে কলেজ যাচ্ছিলাম। এমন সময় আরাভ কার নিয়ে আমার সামনে এলো। আসতেই,
আমি- সমস্যা কি আপনার?
আরাভ- না মানে এই অবস্থায় হেটে যাওয়ার কি দরকার?
আমি- অহ হুমমম। চলেন আজ আর কলেজ করবো না আপনার সাথে ঘুরবো।
আরাভ- সিরিয়াস?
আমি- জ্বী। বিয়ে কবে করছেন?
আরাভ- তুমি বলো এখনি রাজী আমি।
আমি- না আগে প্রস্তাব দেন।
.
গাড়িতে ওর পাশে বসতেই, আরাভের হাত ধরলাম। আরাভ অবাক কারণ আমি এরকম করি না।
আমি- (হাতটা পেটে রাখলাম) এখানে আপনার বেবি আছে।
আরাভ- (বেশ কিছু সময় হাত দিয়ে রাখলো)
.
এভাবে আরো কিছু কাজ করতে লাগলাম কিছুদিন। যেমন প্রতি রাতে কথা বলা। বাচ্চাটাকে নিয়েই বেশি কথা বলতাম। আরাভ আগেই আমার প্রতি দূর্বল ছিলো। ভালোবেসে ফেলেছিলো। কিন্তু এখন আরো বেশি দূর্বল হয়ে পড়তে লাগলো। আমার চাওয়া মতোই সবকিছু হচ্ছিলো। আরাভকে আমি বাচ্চাটার প্রতি ইমোশনাল করতে লাগলাম।
প্রায় ১০ দিন পর, আরাভ এখন আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না। প্রায় টাইমে একা পেলে আমার পেটে মাথা রাখে বা হাত রেখে বাচ্চাটাকে ফিল করে।
.
একদিন,
আরাভ- আনহা কাল কখন দেখা করবা?
আমি- কেন?
আরাভ- শুনো ভাবছি কাল প্রস্তাব পাঠাবো।
আমি- কীসের?
আরাভ- কীসের মানে আমাদের বিয়ের।
আমি- আমি কেন আপনাকে বিয়ে করবো? আর কাল আমি বিজি থাকবো।
আরাভ- কেন? আর কি বলো এসব?
আমি- কাল এপোয়েন্টমেন্ট আছে। আমি বাচ্চাটা নষ্ট করবো।
আরাভ- আনহা পাগল হয়েছো?
আমি- না তো। একটা ধর্ষকের পাপের ফলকে আমি আমার পেটে রাখবো কেন? (কথাগুলো বলতে কষ্ট হচ্ছিলো)
আরাভ- আনহা এভাবে বলো না। বাচ্চাটার কি দোষ?
আমি- আমার কি দোষ ছিলো?
আরাভ- আমি তো বিয়ে করছি। আর আমি ভুল করছি আগেই তো সরি বলছি।
আমি- সরি বললে সব মিটে?
আরাভ- না কিন্তু।
আমি- আচ্ছা আমারটা মানলাম। ওই মেয়েগুলো কি করেছে আগের গুলো?
আরাভ- ওরা একটাও ভালো না। ওদের শাস্তি দিয়েছি।
আমি- অধিকার কে দিলো আপনাকে?
আরাভ- (নিশ্চুপ)
আমি- জানি জবাব নাই। ওদের শাস্তি আপনি দিয়েছেন। আর আপনাকে শাস্তি আমি দিবো। কাল আমি বাচ্চাটা নষ্ট করবো। আর সামনে আমার বিয়ে আপনার দাওয়াত রইলো।
.
কথাটা বলে চলে এলাম। তারপর রাতে আরাভের মাথা গরম হয়ে ছিলো। ও পাগল প্রায় হতে লাগলো। কিন্তু ও নিজের ভুল বুঝে গেলো। এক রাতেই। সে ঠিক করলো বাচ্চাটাকে সে নষ্ট হতে দিবে না। সবগুলো মেয়েকে ফোন করে মাফ চাইলো। কেউ কেউ মাফ করলো কেউ কেউ গালি দিলো। আরাভ কিছু বললো না। নামাযে দাড়ালো। ক্ষমা চাইলো আল্লাহ এর দরবারে।
.
পরেরদিন সকালেই আনহাদের বাড়ির বাইরে গেলো। কিন্তু তালা পেলো। প্রায় ৩দিন পর আমি বাড়ি ফিরলাম। পুরো পরিবার গ্রামে গিয়েছিলাম। বাড়ির সামনে যেতেই দেখলাম রাস্তার এক কোণে আরাভ দাড়িয়ে চোখে পানি। লাল হয়ে আছে। ভালো করেই বুঝলাম চিন্তায় ছিলো সে। আরাভ এগোতে গিয়েও এগোলো না বাবা মাকে দেখে। আম্মু আব্বু ঢুকতেই,
.
আমি- কি হয়েছে এই অবস্থা যে?
আরাভ- আনহা আমাকে ক্ষমা করে দেও। (পায়ে পড়ে)
.
আরো অনেক কথা বলে মাফ চাইলো।
আমি- উঠুন।
আরাভ- মাফ করো।
আমি- বাদ দেন।
আরাভ- প্লিজ ক্ষমা করো।
আমি- মাফ করেছি।
আরাভ- সত্যি?
আমি- হুমম। ওই মেয়েগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়ে ভালোই করলেন।
আরাভ- তুমি ওদের খোঁজ কীভাবে পেলে?
আমি- এইতো এমনি চিনে রাখছিলাম। আচ্ছা বাদ দেন বাড়ি ফিরুন।
আরাভ- না আমি যাবো না।
আমি- ওহো। তাহলে তো বিয়েটা মে বি হবে না।
আরাভ- মানে কার বিয়ে?
আমি- আপনার আর আমার। না মানে এই অবস্থায় পরিচয় করালে আম্মু তো ঝাটা পিটা করবে আপনাকেও আমাকে।
আরাভ- আনহা। (চোখ দেখেই বুঝলাম প্রশ্ন করছে সত্যি কি তাই?)
আমি- সত্যিই তা। জ্বলদি আসেন আরো দেরি করলে পেটের পুচকু বড় হতে লাগবে। তখন মানুষও জেনে যাবে।
আরাভ- বাচ্চাটা নষ্ট করো নি?
আমি- বাহ রে আমার বাচ্চাকে নষ্ট করবো কিনু হু? আমার বাবু এটা।
আরাভ- আই লাভ ইউ।
আমি- ওই ওই নোংরা মানুষ গোসল কইরা আয়। হনুমান কোনেকার।
আরাভ- এই হনুমানটাকেই পাবা।
আমি- উহু। পরিষ্কার করে নিবো।
.
সেদিন আরাভ তার বাবাকে নিয়ে আসে। পরিবারের সবাই রাজী হয়। অনেক চেষ্টার ফলে। বিয়ের পরে সব জানায় দিয়েছিলাম কেন এমন হলো? এই সেই। ধীরে ধীরে আরাভ ভালো মানুষে পরিণত হলো। হয়তো শাস্তি কম হলো। কিন্তু ওকে ভালো মানুষ করে তুললাম। আরাভ আর আনহার মেয়ে হলো। নাম রাখা হলো আরোভি।
.
#সমাপ্ত#