Dont forget me পর্ব-০৯

0
197

#Dont_forget_me (পর্ব – ৯)

সকালে ছাদে এসে আলো দেখল বারি-৪ আম গাছটা খালি! গাছে তো বেশ কিছু আম ছিল গেল কোথায়? সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল আমের খোসা আর আঁটি এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। তার ভীষণ রাগ হলো। এই গাছের আমগুলো কাঁচা খেতে খুব মিষ্টি ওর খুব পছন্দের। মাঝে মাঝে ছাদে এসে পেড়ে খায়। গাছ খালি দেখে ওর শুধু রাগই হলো না খুব মন খারাপও হলো। নিচে নেমে হালিমাকে জিজ্ঞেস করল, আম কে খেয়েছে? হালিমা বলল-

-আম তো সব জাওয়াদ খাইছে। কালকে সন্ধ্যায় ছাদে গিয়া সব ছিঁড়া খায়া ফেলছে। আমি নিষেধ করছি সেইটা শুইনা তার মা আমারে অনেক বকা দিল। আমি আর কী বলব?

-তুই আমাকে এসে বললি না কেন?

-আপনি তখন নিচে আপনার মা’র বাসায় গেছিলেন। ভাবছিলাম আসলে বলব কিন্তু রান্না করতে করতে ভুইলা গেছি।

-এত বড় একটা বিষয় আর তুই ভুলে গেলি! ইচ্ছে করছে ওই মোটকাটার সাথে তোরও খাওয়া বন্ধ করে দেই। এরপর যা কিছুই হোক এসে সোজা বলবি আমাকে, যা এখন।

হালিমা “আচ্ছা” বলে চলে গেল। আলো ভাবতে লাগল মোটকাটাকে কী করে শাস্তি দেয়া যায়??? এমন সময় জাসিয়া এসে বলল-

-ভাবি, তূর্য ভাইয়া কোথায়?

আলো চোখ সরু করে বলল- তূর্য ভাইয়াকে কী দরকার?

-আমার একটু কেনাকাটা আছে ভাইয়াকে সাথে নিয়ে যাব।

-তোমার কেনাকাটায় তূর্য কেন যাবে?

-আমি ঢাকায় আগে কখনও আসিনি। যদিও একা যেতে পারব তবু মা চাইছে তাই ভাইয়া যাবে।

আলো কড়া গলায় বলল- তূর্য অবশ্যই তোমার সাথে যাবে না।

জাসিয়া তখন চিৎকার করে তার মাকে ডেকে বলল- মা, ভাবি ভাইয়াকে যেতে দিচ্ছে না। কী করব?

জুলি তখনই ঘর থেকে বের হয়ে এসে বলল- এসব কী আলো? জাসিয়া কী বলছে শুনতে পাচ্ছ না? তুমি কী ভেবেছ তুমি যা চাইবে তাই হবে?

-যদি বলি হ্যাঁ?

-ok look… তুর্যওওওও…

তুর্য ঘরেই ছিল, এসে বলল- কী হলো এত চিৎকার করছেন কেন? আমাদের এলাকায় তো কোনো কাক নেই।

-কাক তোমার বউ খুঁজছে, আমি তোমাকে জরুরি কাজে ডেকেছি।

-আপনার সাথে আমার কোনো কাজ থাকতে পারে না। সরি… বলে তূর্য চলে যেতে পা বাড়াতেই জুলি বলল-

-তোমার কাজ আছে কিনা সেটা জানতে চাইনি। আমি বলেছি আমার কাজ আছে। জাসিয়ার একটু শপিং আছে তুমি ওকে নিয়ে যাও।

-আমি কেন নিয়ে যাব? আপনি যান?

-আমি এত কিছু শুনতে চাইনি। আর আলোর সাথে পাঠানোর কথা আমি ভাবছি না কারণ জাসিয়ার সাথে আলোর বিহেভ ফ্রেন্ডলি না। আমার মেয়েটা খুব সরল একা অভ্যস্ত না বাইরে তাই ওর সাথে তোমাকেই যেতে হবে।

“জাসিয়া সরল” এটা শুনে আলো খুব চেষ্টা করল হাসি চাপতে কিন্তু পারল না খুক খুক করে কেশে ফেলল তারপর হা হা করে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে তার চোখে পানি এসে গেল। জুলি চোখে আগুন জ্বালিয়ে বলল- আমার কিন্তু ধৈর্যের সীমা আছে একটা, ওটা অতিক্রম করার চেষ্টা করো না। খুব বড় ভুল করবে।

-কী করবেন আপনি? কিচ্ছু করতে পারবেন না।

-তাই মনে করো? তুমি বা তোমরা কী ভেবেছ, আমি ঘরে বসে আছি বলে ঘরেই বসে থাকব? এবাড়ির অন্য কোনো ফ্ল্যাটে যাব না? তোমার মায়ের ফ্ল্যাটে যাব না? গিয়ে কী কী বলতে পারি তাও কী বুঝতে পারো না?

আলো তখন পুরোপুরি নিভে গেল। আলোর দমে যাওয়া মুখটা দেখে জুলি হেসে বলল- তোমার এই ফেসটা খুবই কিউট, লাভেবল। তারপর তূর্যর দিকে ফিরে বলল- আমাকে কী আরও কিছু বলতে হবে?

তূর্য কপাল কুঁচকে বলল- জাসিয়া তোমার হাতে ১০ মিনিট সময়, তৈরি হয়ে এসো। আমার জরুরি কাজ আছে শপিং এ এক ঘন্টার বেশি সময় দিব না।

জাসিয়া হেসে বলল- ok, my cute handsome bro… বলে আলোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে জাসিয়া রুমে চলে গেল। আর ওর সেই হাসি দেখে আলোর গা জ্বলে গেল। চিবিয়ে চিবিয়ে তূর্যকে বলল- এই মেয়ে কিন্তু ডেঞ্জারাস।

তূর্য তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল- এই পুচকি মেয়ে আমার কী করবে? এক চড় মারলে ২য় চড় দেবার যার জায়গা নেই!

-একে মোটেও আন্ডার এস্টিমেট করো না। ইন্টারে পড়া মেয়ে এমনিতেই ফালতু হয় তার উপর এ ভয়ংকর একটা পরিবারে বেড়ে উঠেছে।

-এই পুচকি ইন্টারে পড়ে!

-হুম, সেকেন্ড ইয়ার। সামনের বছর পরীক্ষা দেবে। সারাক্ষণ ফোন হাতে ম্যাসেজিং করে আর মুচকি মুচকি হাসে। নির্ঘাত প্রেম করে বেড়ায়। কয়টা করে কে জানে!

-যা খুশি করুক তাতে আমাদের কী? শোনো, জাসিয়ার শপিং শেষ হলে আমি ফাতিম ভাইয়ের বাসায় যাব। ওর মায়ের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে। আজ যেতে বলেছে দুপুরের আগে। বাবার বিষয়টা নিয়ে আলাপ করব।

-ঠিক আছে যাও। তবে জাসিয়ার থেকে সাবধানে থেকো।

-ওই ইন্টারের পুচকিকে আমি মোটেও ভয় পাই না। আসি…

-ইয়ে… আজ একটু জলদি এসো।

-জলদি কেন?

-আছে।

তূর্য কথা বাড়াল না। ও জানে আজ আলোর জন্মদিন। বিয়ের পর আলোর প্রথম জন্মদিন। কোথায় তূর্য স্পেশাল কিছু করবে তা নয় পরিবার নিয়ে সে হিমশিম খাচ্ছে! এর মধ্যেও আলোর জন্য কিছু করতে হবে। দেখা যাক কী হয়…?

শপিং সেন্টারে গিয়ে জাসিয়ার ভোল পাল্টে গেল পুরোপুরি। সে খুব দ্রুতই বেশ কিছু কেনাকাটা সেরে ফেলল। এত দ্রুত যেন ট্রেন মিস হয়ে যাবে। কয়েকটা ড্রেসের সাথে শাড়িও কিনল। বেশ কিছু প্রসাধন নিল। শাড়ির সাথে ম্যাচ করে গহনা কিনল। তখন তূর্যও সুযোগ বুঝে আলোর জন্য একসেট গহনা নিল। জাসিয়া তূর্যর মাপে একটা পাঞ্জাবিও কিনল। তূর্য বুঝতে পারল না ওর মাপে কেন পাঞ্জাবি নিল? আর একটা মানুষ এত শপিং কী করতে করে! তবু কিছু বলল না। করুক যা খুশি, তাতে তূর্যর কী? কেনাকাটার শেষ পর্যায়ে জাসিয়ার ফোনে একটা কল এলো, কল রিসিভ করে জাসিয়া একটু দূরে গিয়ে কথা বলল। তারপর কাছে এসে বলল- ভাইয়া আপনার না কী জরুরি কাজ আছে? আপনার দেরি হচ্ছে না? আপনি চলে যেতে পারেন। আমার তো কেনাকাটা প্রায় শেষ, আমি চলে যেতে পারব।

-তুমি একা যেতে পারবে?

-হ্যাঁ পারব। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। বাসায় গিয়ে আপনাকে ফোন করে দিব।

-তোমার জন্য আমি এতটাও চিন্তায় থাকব না। তাছাড়া ফোন করতে হলে নাম্বার লাগে তোমার কাছে সেটা নেই।

জাসিয়া সাথে সাথে মিষ্টি হাসি দিয়ে তূর্যর নাম্বারে কল দিয়ে বলল- ওই যে ওটা আমার নাম্বার।

তূর্য আশ্চর্য হয়ে বলল- আমার নাম্বার তোমাকে কে দিল?

-কে দিল সেটা ম্যাটার নয়। শুধু আপনার নাম্বারই নয় আপনার ফেসবুক একাউন্টও আমি জানি।

তূর্য কিছু না বলে উল্টো হাঁটতে লাগল। এই মেয়ের সামনে আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে হয়ত ওর সম্পর্কে আরও অনেক কিছু বলে ফেলবে। তখনই জাসিয়া পেছন থেকে চিৎকার করে বলল- তূর্য ভাইয়া, খুব শীঘ্রই আপনি টেনশনে পড়তে যাচ্ছেন… তবে চিন্তা করবেন না রাতের মধ্যে আপনার সকল চিন্তা আমি দূর করে দিব।

জাসিয়ার কথা শুনে তূর্য থমকে দাঁড়িয়ে গেল। পেছন ফিরে তাকাতেই জাসিয়া তার স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি দিয়ে হাত নেড়ে ভীড়ের ভেতর হাওয়া হয়ে গেল! তূর্য বিমূঢ়ের মত দাঁড়িয়ে থেকে ভাবতে লাগল জাসিয়া এগুলো কেন বলে গেল? তার গলা শুকিয়ে এলো… সামনে কী তবে নতুন কোনো বিপদ হানা দিতে চাইছে?

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে