Dont forget me পর্ব-০৮

0
56

#Dont_forget_me (পর্ব – ৮)

আজকের বিকেলটা বেশ ঝলমলে। ছাদে বসে চায়ের সাথে দারুণ একটা আড্ডা জমে যেত। কিন্তু বাসার পরিস্থিতির কারণে ঝলমলে বিকেলটাকেও ভালো লাগছে না কারো। পুরো বাসা জুড়ে মনে হচ্ছে কারফিউ চলছে। কেমন থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। তারান্নুম হোসেন বিছানায় এলিয়ে আছেন স্বামীর সাথে কথা বলা বন্ধ। মোতাহার উদ্দিন আছেন পুরোপুরি বিবর্ণ অবস্থায়। চুপচাপ ঘরে বসে তিনি ভাবনার জালে জড়িয়ে আছেন। জুলি আর জামাল যেদিন জোর করে তাদের কাবিন করল সেদিন কাবিন করার পর মোতাহার উদ্দিনের কী হলো হঠাৎ সাহস সঞ্চার করে বললেন- অফিসে তার খুব জরুরি মিটিং আছে না গেলেই নয়, এক্ষুনি যেতে হবে। কাজটা সেরেই ফিরে আসবে। কাবিন হয়ে গেছে বলে জামাল ব্যাপারটাকে একটু শিথিল ভেবেছিল। তাছাড়া মোতাহার উদ্দিন খুবই সরল মানুষ তার উপর শকে আছেন। তাই উল্টা পাল্টা কিছু করতে পারেন বলে ভাবেনি জামাল। তবে সাথে করে দুজন লোক সে ঠিকই পাঠিয়েছিল। মোতাহার উদ্দিন অফিসে গিয়ে ওই মূর্খ গাধা দুটোকে মিটিং এর কথা বলে খুব সহজেই বোকা বানিয়ে ঢাকা ফিরে এসেছিলেন। তবে তার আগে চট্টগ্রাম থানায় একটা জিডি করেছেন। জিডি করে গাড়িতে ওঠার দুই ঘন্টা পরে জামাল ফোন দেয়। তিনি শীতল গলায় জামালকে বলেছে- “আমি থানায় জিডি করে এসেছি তোমাদের সবার নামে। পারলে থানায় গিয়ে দেখে এসো। আমার বা আমার পরিবারের কারো যদি সামান্যতমও কিছু আঁচ লাগে তো পুলিশ সর্ব প্রথম গুষ্টিসুদ্ধ তোমাকেই ধরবে।” তারপর ঢাকায় এসে এখানেও জিডি করেছেন। এরপর জামাল কিছুটা থামলেও জুলিকে থামানো যাচ্ছিল না। সে ফোন দিয়ে স্ত্রীর অধিকার চেয়ে চেয়ে মাথা খারাপ করে ফেলেছে। মামা বাড়ির আবদার আর কি… বিষয়টা নিয়ে কোর্টে যাব শুনেই ছেলে-মেয়ে সহ বাসায় এসে উঠেছে চর দখল করার মত আমাকে দখল করতে! ইয়াং বয়সে বেশ হ্যান্ডসাম স্মার্ট ছেলে ছিলাম মেয়েরা প্রতিনিয়তই প্রেমে পড়ে যেত। কী কী সব রোমান্টিক বিনোদনে ভরপুর দিন দেখতে হয়েছে তখন কিন্তু এই বয়সে এসে যেটা দেখতে হচ্ছে তা রীতিমতো অভাবনীয় এবং ভয়ংকর! আজকাল বয়ষ্ক লোকের প্রেমে পড়াটা ফাতরা মেয়েদের ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে! ফেসবুক ভর্তি এসব নোংরামি দিয়ে। আর সেই নোংরামি আমার লাইফে এসেই জুটতে হলো? সিঙ্গেল থাকলে তাও নাহয় মানা যেত। উফ জীবন আমাকে এমন সংকটে কেন যে ফেলে দিল…

তূর্য এসে মোতাহার উদ্দিনের পাশে বসে বলল- বাবা কী করবে এখন ভেবেছ কিছু?

-কী আর ভাবব… কোর্টে যেতে হবে।

-ওর যা ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড বললে তারা কী এত সহজে মেনে নেবে?

-ওরা এক্ষুনি কিছু করতে পারবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। দুর্জন যতই বড় বড় কথা বলুক সাহস দেখাক আসলে সাহস তাদের লেজের ডগায় থাকে। সামনে নির্বাচন তাই এই মুহূর্তে ওরা আমাকে তেমন ঘাটাবে না। কিন্তু সমস্যা জুলিটাকে নিয়েই। ও উল্টা পাল্টা বলে জট পাকিয়ে ফেলতে পারে। আর আমাদের সমাজ এবং আইন ব্যবস্থায় এসব ক্ষেত্রে মেয়েদের কথাকেই সত্য বলে মেনে নেয়। পুরুষও যে নির্যাতনের স্বীকার হতে পারে সেটা কেউ মনেই করে না। তবে আশার ব্যাপার একটা আছে কিন্তু সেটা আসলেই আশার কিনা সেটাই প্রশ্ন…

-কী?

-চট্টগ্রাম থানায় যখন ওদের নামে জিডি করলাম তখন পুলিশ অফিসার বলেছিল, কোনো রকম কিছু হলেই যেন তাদের জানাই। কারণ জুলির নামে অলরেডি একটা ভয়ংকর রিউমার আছে শুধু প্রমাণের অভাবে তারা কিছু করতে পারেনি। কী রিউমার জানতে চাইলে বলল, জুলির হাজবেন্ড নাকি মারা যায়নি তাকে হত্যা করা হয়েছে আর সেটা জুলি নিজেই করেছে! রাজনৈতিক পরিবার আর জুলির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা সাধারণ দুর্বল পরিবার বলে ব্যাপারটা তারা সহজেই ধামাচাপা দিতে পেরেছিল। এখন সেটা যদি সত্য হয় আর কোনো ভাবে যদি প্রমাণ করা যায় তাহলে আমার জন্য সব কিছু সহজ হয়ে যায়।

তূর্য চমকে উঠল… বাবা তো ভয়ানক ক্রিমিনাল পরিবারের সাথে জড়িয়ে গেছে! বের হবে কী করে…? হঠাৎ তার এক কলিগের কথা মনে পড়ল। বলল- বাবা টেনশন নিও না, আমি দেখছি পুরো ব্যাপারটা। আমার কলিগ ফাতিম ভাইয়ের মা বেশ নামকরা একজন ল’ইয়ার। তার সাথে আমি কথা বলব। ইনশাআল্লাহ তিনি সব সামলে নিতে পারবে।

-ঠিক আছে। কিন্তু তোর মাকে সামলাবে কে? সে তো কারো কথাই শুনছে না। বাপের বাড়ি চলে যাবার হুমকি দিচ্ছে। আরে সে চলে গেলে যে জুলির জন্য মাঠ ফাঁকা হয়ে যায় সেটাও বুঝতে পারছে না।

সেই মুহূর্তে চা নিয়ে আলো ঘরে ঢুকে বাবার কথা শুনে বলল- জুলি আন্টিকে যা দেখলাম তাতে গোল দেবার জন্য ফাঁকা মাঠের প্রয়োজনই পড়বে না তার। মুখ তো নয় যেন আস্ত তলোয়ার! যা বলে সামনে দাঁড়ানো মানুষকে একেবারে কেটে এফোঁড়ওফোঁড় করে ফেলে। আর উনার মেয়েটাও… যেমন গাছ তেমন তার ছায়া!

তারান্নুম হোসেন বললেন- এর একটা ব্যবস্থা না হওয়া অব্দি আমার কাছে এসে তোমরা এভাবে ভ্যাজরভ্যাজর করবে না। অন্য কোথাও যাও। মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।

-মা চা’টা খেয়ে নিন ভালো লাগবে। আর জুলি আন্টিকে আমি দেখে নেব। তবে উনি খুব ডেঞ্জারাস মহিলা তো… একা দেখতে ভয় লাগে, আপনি যদি একটু সাহায্য করতেন…

-কী লাগবে এসে বলবে। মানা করেছি নাকি?

মোতাহার উদ্দিন হাসলেন। মনে মনে বললেন- আল্লাহ সহায় হোক।

সবার চা খাওয়া হয়ে গেলে আলো ড্রইংরুমে বসে ফেসবুক ক্রল করতে লাগল। আসলে ফেসবুক দেখাটা উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য হলো- উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাওয়া উদবাস্তু গুলো কী করছে সেই গতিবিধি ফলো করা। এমন সময় জুলি এসে আলোকে বলল- তোমরা কী বিকেলে চা খাও না? নাকি ভদ্রলোকেরা যে খায় সেটাও জানো না?

-“চা খাওয়া”র মত ভদ্রলোক সত্যিই আমরা নই। তবে হ্যাঁ, দিনে ৩/৪ বার তো আমাদের চা পান করতেই হয়। চা পান করা ভদ্রলোক তো আমরা বটেই।

জুলি দাঁতে দাঁত চেপে অপমানটা হজম করল। বলল- অন্যের কথা না শুধরে নিজের আচরণ শোধরাও। নয়ত ভবিষ্যৎ অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই হবে না।

-আপনার মত মানুষের সাথে যার পরিচয় বা ওঠাবসা হয়েছে তার জীবন আলোকিত হবার কথাও না।

জুলি খুব রূঢ় গলায় বলল- চ্যাটাং চ্যাটাং কথা না বলে যাও আমার আর জাসিয়ার জন্য দুকাপ চায়ের ব্যবস্থা করো। জাওয়াদ বার্গার খেতে চাইছে তূর্যকে বলে দাও দুইটা বার্গার আনতে।

আলো আড় চোখে জুলির দিকে তাকিয়ে বলল- এই হালিমা… জুলি গুন্ডি… সরি জুলি আন্টিকে চা দে। চা বানানোর সময় চিনি খেয়াল করে দিস। চিনির বোয়াম কিন্তু বদলেছি। আগেরটায় ইঁদুর মারার বিষ রাখা আছে। মনে করে আবার সেটা দিয়ে দিস না।

আলো তো রান্না ঘরেই যায়নি আর বাসায় কোনো ইঁদুরও নেই, তাহলে বিষ আসবে কোত্থেকে? আলোর কথার কোনো মানেই বুঝল না হালিমা। সে না বুঝে বোকার মত আলোর দিকে তাকিয়ে রইল। আলো তাকে চোখের একটা ইশারা দিল। হালিমা তখন ব্যাপারটা বুঝে মুচকি হাসি দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল।

জুলি মুচকি হেসে বলল- এত খুশি হবার কিছু নেই কারণ ইঁদুর মারার বিষে কোনদিন মানুষ মরে না।

-মানুষ কে মারতে চাইছে ৩/৪টা পিশাচ মরবে কিনা সেটা প্রশ্ন!

জুলি তখন রাগে ফোসফাস করতে করতে বলল- তেমন বিষ পেলে আমাকে জানিও। আমার নজরেও কিছু পিশাচ আছে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে