Dont forget me পর্ব-০৭

0
181

#Dont_forget_me (পর্ব – ৭)

বাসার পরিবেশ এই মুহুর্তে ভয়ংকর। সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে। ১৫ মিনিট আগে এক মহিলা এসেছে যার সাথে দুটো বাচ্চা। মেয়েটা মনেহয় এখনও স্কুল শেষ করেনি বা মাত্রই শেষ করেছে টাইপ। আর ছেলেটার ৭/৮ বছর বয়স হবে। খুব স্বাস্থ্যবান, দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব দুষ্টু আর পেটুক। বাচ্চা দুটো যে ভদ্রমহিলার সেটা বলার অপেক্ষা রাখছে না। এদের কাউকে আমরা কেউ চিনি না। ভদ্রমহিলা তার সন্তান এবং লাগেজ আর ব্যাগপত্র নিয়ে কিছু না বলে সোজা ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। ঢুকে যা বলেছে তা শুনে সবার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। মোতাহার উদ্দিনের মুখে কোন কথা নেই আর তারান্নুম হোসেন কিছুই বুঝতে না পেরে নির্বাক অবস্থায় আছেন। তূর্য বুঝতে পারল কী হচ্ছে তবে এই পরিস্থিতিতে কী করণীয় সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। তারান্নুম হোসেন স্বামী সন্তানকে চুপ থাকতে দেখে আতংকিত গলায় বললেন-

-এরা কারা? কী বলছে এসব?

তূর্য তার পাশে গিয়ে বলল- মা ঘরে চলো আমি তোমাকে সব বলছি…

-“সব বলছি” মানে? তার মানে এরা যা বলছে সব সত্যি?

-আমি বলছি তো তুমি ঘরে এসো বলছি আমি তোমাকে…

-না, ঘরে যাব না। যা বলার এখানেই বল।

কিন্তু তূর্য কিছু বলার আগেই আগন্তুক ভদ্রমহিলা মোতাহার উদ্দিনের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন- আপনি এখনও কাউকে কিছু জানাননি? ওদের বলুন আমি কে? আমি যা বলেছি সবটাই সত্য বলেছি। বলুন?

মোতাহার উদ্দিন কিছুই বলতে পারলেন না তিনি প্রচন্ড অসহায়বোধ করছেন। বুকের বাপাশে চাপ অনুভব হচ্ছে।

মহিলার ছেলেটা তখন লাগাতার বলেই যাচ্ছে- “মা আমার খিদে পেয়েছে, আমি কিছু খাব। প্লিজ মা আন্টিকে বলো না আমাকে কিছু খেতে দিতে?” পাশ থেকে তার বোন খুব সহজ আর রিনরিনে গলায় বলল- জাওয়াদ, এমন করছিস কেন? দেখছিস না এবাসার সবাই কেমন ট্রমায় আছে? তারা এখন নাশতা দিতে পারবে না।

-কিন্তু আমার তো খিদে পেয়েছে…

মেয়েটা ব্যাগ থেকে একটা বিস্কিটের প্যাকেট আর জুস বের করে দিয়ে বলল- এখন এটা খেয়ে নে, নাশতা পড়ে দেখা যাবে। জাওয়াদ বিনা বাক্যে খাওয়া শুরু করল। সে খাচ্ছে আর বিস্কিটের গুড়ো সারা ঘরে ফেলছে!

তূর্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল- মা এই ভদ্রমহিলা যা বলছে সত্য বলছে তবে সবটা না। বাবা চিটাগং যাবার পর এক সপ্তাহ আগে বাবাকে উনি ট্র‍্যাপে ফেলে বিয়ে পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে। একটু আগেই বাবা আমাকে সব বলেছে। এখানে বাবার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। বাবাকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ট্র‍্যাপে ফেলে এরা এদের স্বার্থসিদ্ধি করেছে।

ছেলের কথায় তারান্নুম হোসেনের মাথা চক্কর দিতে লাগল। আগন্তুক ভদ্রমহিলা তখন গলার আওয়াজ একটু তুলেই বললেন-

-বিয়ে যেভাবেই হোক হয়েছে এটাই বড় এবং শেষ কথা। এক সপ্তাহ অনেক দীর্ঘ সময়, আমি আর সময় দিতে পারছি না। আমার কথা কেউ কানে তুলতে চাইছিল না তাই বাধ্য হয়েই এখানে চলে আসতে হয়েছে। তারপর তারান্নুম হোসেনের দিকে তাকিয়ে বলল- সংসার আপনি একাই করবেন তা তো হয় না, স্বামীটা তো আমারও।

মোতাহার উদ্দিন এবার ধৈর্য হারা হলেন একটু। বললেন- বেশি বাড়াবাড়ি করো না জুলি। বাচ্চাদের সামনে কী বলছ হুশ আছে কোনো?

-হুশ থাকবে না কেন? ওদেরও তো সব জানা উচিত? তাছাড়া থাকবার জন্য এখনও আমাদের কোনো ঘর দেখিয়ে দেয়া তো দূরে থাক অভ্যর্থনাই তো জানাচ্ছে না কেউ! কথা বলবটা কোথায় তাহলে?

তারান্নুম হোসেন নিজের ঘরে চলে গেলেন। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে এসব সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না তার। দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলেন। কী হয়ে গেল এসব? তূর্যর বাবা অত্যন্ত ভদ্র শান্ত মেজাজের মানুষ। তার চরিত্রে কখনোই নারীলোভ ব্যাপারটা ছিল না। সাত চড়ে রা কাটেনা টাইপ মানুষ আর সেই মানুষটা এমন একটা কাজ করল!!! এও কী সম্ভব? কাউকেই কী তবে আর বিশ্বাস করা যাবে না? সমাজে মুখ দেখাবে কী করে? ছেলের বিয়ের দু’দিন না যেতেই বাবার নতুন বউ এসে হাজির! আলোর পরিবার কী বলবে? লোকের হাসির খোরাক হয়ে গেল! তার মাথা কাজ করছে না… মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে এক্ষুনি!

এদিকে আলো আছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে। সে কোন দিকে যাবে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এমন ভয়ংকর উদ্ভট ঘটনার সম্মুখীন সে কোনদিন হয়নি। তাই কী করা উচিত এখন তা বুঝে আসছে না। বোকার মত দাঁড়িয়ে থেকে দেখে যাচ্ছে সব। জুলি নামের ভদ্রমহিলা ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে। যেন কিছুই সমস্যা নেই বরং ভেতরে ভেতরে মজাই পাচ্ছে। মহিলার মেয়েটার ভাবগতিক কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আসার পর থেকে ফোন টিপেই যাচ্ছে। মাঝে একবার আলোর কাছে ওদের ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড চেয়েছিল। আলো মুখ কঠিন করে বলেছে, “আমাদের ওয়াইফাই নেই” মেয়েটা ড্যাম কেয়ার ভাবে হেসে বলল- “সমস্যা নেই, একটু পরে ঠিকই দিবে।” আলো বুঝল এই মেয়ে ছোট হলে কী হবে পাক্কা ঝাল মরিচ। আর জাওয়াদ মোটকাটা আসার পর থেকে নড়াচড়া করেই যাচ্ছে আর একটু পরপর ব্যাগ থেকে এটা সেটা বের করে খাচ্ছে। ওরা কী আস্ত মুদির দোকান ব্যাগে ভরে ঘাড়ে নিয়েই ঘুরে বেড়ায়? খাবার বের হয়েই যাচ্ছে হয়েই যাচ্ছে! আর fm রেডিওর এ্যাডের মত একটু পরপর বলেই যাচ্ছে- “মা ওরা আমাদের কিছু খেতে দিচ্ছে না কেন?” আরে রাক্ষস তোকে কী খেতে দিবে? তোর এই খিদে ইহকালে মিটবে বলে তো মনে হচ্ছে না! ও যখন জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিল তখন জুলি বলে উঠল-

-তুমি নিশ্চই তূর্যর বউ?

আলো চমকে উঠে জুলির দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না। জুলি বলল- আমার ছেলের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? অনেক্ষণ ধরে এসেছি কিছু খেতে না দেওয়াটা অভদ্রতা। তার উপর আমার ছেলেটার খিদে লেগেছে বার বার খেতে চাইছে দেখেও চুপ আছ, আশ্চর্য!

-আপনি আমাকে চিনলেন কী করে?

-এত অবাক হবার কিছু নেই, আমি তোমাদের সবাইকেই চিনি। নিজের অধিকার আদায়ে আমাকে আটঘাট বেঁধেই তো নামতে হবে বলো? সেই চিটাগং থেকে সারারাত লম্বা জার্নি করে এসেছি। আমাদের সবারই খিদে পেয়েছে। ছেলের বউ হিসেবে তোমার উচিত আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করা।

আলো বুঝতে পারল এই মহিলা নিতান্তই অভদ্র একজন। নইলে এমন পরিস্থিতিতে নির্লজ্জের মত খাবার চাইতে পারে? সে বলল- আমাদের সকালের নাশতা করা শেষ। বাসায় আর কোনো খাবার নেই।

জুলি মুচকি হেসে বলল- আমাকে তূর্যর মা পাওনি, আমি জুলি। দরকার হলে পেটের ভেতর থেকে খাবার বের করে আনতে জানি। যাও নাশতার ব্যবস্থা করো।

আলো আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। ভয়ে এক দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। জুলি তখন কাজের মেয়েটাকে বলল- বাসায় ডিম আছে? আমার ছেলেকে দুইটা ডাবল ডিমের পোচ, এক গ্লাস গরম দুধ আর ৫টা পরটা ভেজে দাও। আর আমাদের দুজনের জন্য ৩টা করে পরটার সাথে একটা করে ডিম পোচ হলেই হবে। সাথে কিছু আমন্ড আর কাজু বাদাম দেবে জাসিয়ার জন্য। আর হ্যাঁ, আমি খিদে সহ্য করতে পারি না জলদি করবে। মেয়েটা মাথা হেলিয়ে সায় জানিয়ে চলে যেতেই জুলি উঠে ঘুরে ঘুরে সব দেখতে লাগল। এমন সময় তূর্য এসে বলল-

-আপনার কথা আজ সকালে বাবা আমাকে সব বলেছে। আপনি যে নিজেকে বাবার স্ত্রী বলে দাবি করছেন আপনাদের তো বিয়ে হয়নি, কেবল কাবিন হয়েছে। তাও বাবাকে ভয় দেখিয়ে বাধ্য করে এসব করেছেন।

-কাবিন হলে বিয়ের আর বাকিই থাকে কী?

-থাকে, বাকি থাকে। কবুল না বলা পর্যন্ত শরীয়ত মোতাবেক আপনি কারো স্ত্রী বলে সরাসরি দাবি করতে পারবেন না।

-সেটা আদালতের কাছে কোনো বিষয় নয় তারা দেখবে প্রমাণ। আর প্রমাণ তো আমার আছেই।

তূর্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই জুলি বলল- আমার এখন এসব বাজে আলোচনা করার মুড নেই, যথেষ্ট টায়ার্ড আছি। বিশ্রামের দরকার, আমাদের ঘরটা দেখিয়ে দাও।

-আমাদের বাড়িতে এক্সট্রা কোনো ঘর নেই।

-তাহলে কী সরাসরি তোমার বাবার ঘরেই উঠব?

তূর্য বুঝতে পারল এই মহিলাকে কাবু করা এতটা সহজ হবে না। বাবার কাছ থেকে যা শুনেছে তাতে তো জেনেছেই এর পুরো পরিবারই সন্ত্রাসী! তাই হুট করেই ঝামেলায় জড়ানোটা ঠিক হবে না, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। সে কাজের মেয়ে হালিমাকে ডেকে বলল- গেস্ট রুমটা কোন দিকে এদের বলে দে।

-“বলে দে”!!! এসেই কোনো ঝামেলা বাধাতে বাধ্য করো না আমাকে। ভদ্রতা দেখাচ্ছি বলে ভেব না সেটা দেখিয়েই যাব। আমার সাথে অভদ্রতা করলে অভদ্রতা কাকে বলে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে ছাড়ব। বলে জুলি গলা উঁচিয়ে হালিমাকে বলল- হালিমা ব্যাগপত্র গুলো রুমে দিয়ে আয়।

তূর্যর সামনে দিয়ে গটগট করে জুলি তার ছেলেকে নিয়ে গেস্ট রুমের দিকে এগিয়ে গেল। তার মেয়েটা পেছন পেছন যেতে যেতে তূর্যর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল-

-সরি তূর্য ভাইয়া, স্মার্ট লোকের সাথে খেলতে গেলে আগে নিজেকে স্মার্ট হতে হয়। এমন গুডবয় টাইপ ইমেজ গার্লফ্রেন্ডদের জন্য, প্রতিপক্ষের জন্য না। বলে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেল। উত্তর শুনবারও প্রয়োজন মনে করল না!

তূর্যর ভয়ানক মেজাজ খারাপ হলো। এই এতটুকুন পিচ্চি একটা মেয়ে পর্যন্ত তাকে কথা শোনাচ্ছে আর সে কোনো জবাবও দিতে পারল না!!!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে