Dont forget me পর্ব-০১

0
85

#Dont_forget_me (পর্ব – ১)

আলোর খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেছে। বাইরে ঝোড়ো বাতাস সেই সাথে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘুমকাতুরে চোখে সে জানালায় চোখ রাখল। তারপর উঠে তার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বৃষ্টি দেখল। আর তখনই তার মনে হলো- এখনই ছাদে যেতে হবে। সবাই ঘুমুচ্ছে এই সুযোগ… সে তৎক্ষনাৎ দুকাপ চা বানিয়ে ছাতা আর ফোন নিয়ে ছাদে চলে গেল। বাইরে তখনো প্রায় অন্ধকার… সেটা ভোরবেলা বলে নাকি ঝড়-বৃষ্টির কারণে বোঝা গেল না। অন্ধকারই ভালো, সে তো এমনটাই চাইছিল। সে চায়ের কাপসহ ট্রেটা বাগান বিলাস গাছ আর আমগাছের নিচে রেখে কিছু ছবি তুলল। তারপর চলে গেল রেলিঙের কাছে। সেখানে পেয়ারা গাছের নিচে চা রেখে দুটো ছবি তোলার পর পরই পেছন থেকে কেউ ভরাট গলায় বলল-

-এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ছাদে কী করছ?

আলো চমকে ওঠে। তার হাত থেকে ফোনটা প্রায় পরেই যাচ্ছিল, কোনমতে সেটাকে সামলে নিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখল বাড়িওয়ালার ছেলে তূর্য ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে! সে মনে মনে বলল- উফ জানেমান, এভাবে ভয় পাইয়ে দিতে হয়? জানেন হৃদয়ে কী হাঙ্গামা হয়ে যাচ্ছে? কিন্তু মি. রসগোল্লা এত সকালে এখানে কী করতে এসেছে? এমনিতেই আবহাওয়া রোমান্টিক তার উপর এর উপস্থিতি। আমার হার্ট এ্যাটাক করিয়ে ছাড়বে নাকি? এর কথা ভেবে ভেবে অলরেডি দিন-রাতের হদিস থাকছে না তার উপর এই রোমান্টিকতা সহ্য করব কীভাবে??? এমন সময় তূর্য অসহনীয় হয়ে ধমকের গলায় বলল-

-কী হলো এমন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন?

-না মানে…

-কী করছিলে ওখানে? ঝড় বাদলের মধ্যে লুকিয়ে সুইসাইড করতে এসেছ?

আলোর রাগ হলো, বলবার জন্য আর কোনো প্রশ্ন পেল না? সে কপাল কুঁচকে বলল- সুইসাইড করতে আসব কোন সুখে?

-সুইসাইড কেউ সুখে করতে আসে নাকি?

-জানি না। আমি তো আর কোনদিন সুইসাইড করতে যাইনি।

-তাহলে কী করতে এসেছ এখানে?

-ঝড়-বৃষ্টির ছবি তুলতে এসেছিলাম।

-ছবি তোলার সাবজেক্টের এত অভাব পৃথিবীতে? মাই গড!

-এটা অভাব নয়, different কিছু করার চেষ্টা।

-different কিছু করা আর different কিছু করার নামে ছাগলামো করার মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। যা হোক চা দুই কাপ কেন? আর কে আছে সাথে?

আলো চোখ সরু করে বললে- সাথে কেউ নেই। আমি একাই দুকাপ চা খাই।

-চা কখনো খাওয়া যায় না, ওটা পান করতে হয়। আর কেউ কখনো একসাথে দুই কাপ চা পান করে না, সেক্ষেত্রে মগ ইউস করে। তোমাদের বাসায় মগ নেই নাকি তুমি আসলে কিছু লুকাচ্ছ?

আলো কিছু বলতে যাবে এমন সময় ঝড়ের বেগ হুট করে বেড়ে গেল। তীব্র বাতাসে আলো তার ছাতা সামলাতে হিমশিম খেতে লাগল, কিছুক্ষণ পর সেটা উড়ে গেল হাওয়ায়! আলো আতঙ্কিত চোখে সেদিকে তাকিয়ে থেকে চিৎকার করে বলল- আমার ছাতা… ততক্ষণে সেটা দুটো বিল্ডিং পার হয়ে চোখের আড়াল হয়ে গেল। কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে! সে তখন তূর্যর দিকে ফিরে বলল- আপনার জন্য আমার ছাতাটা উড়ে চলে গেল।

তূর্য অবাক হয়ে বলল- আমার জন্য মানে? আমি কী করেছি?

-আপনি এসে…

-এত কথা না বলে আমার ছাতার নিচে এসো, নয়ত বাতাস তোমাকেও উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

আলো মনে মনে বলল- আপনার ছাতার নিচে! আপনার এত কাছে! ভিজে আমার ঠান্ডা লেগে যাবে বলে ভাবছে? ইসস কী মায়া, কী ভালোবাসা আমার জন্য! আহা হা… আমি পারি না আর পারি না… বলল- আপনার ছাতার নিচে কেন যাব?

-ভিজে ঠান্ডা লাগবে সেই জন্য বলছি এতটা ভাবার দরকার নেই। ভেজা জামা কাপড় গায়ের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাওয়া আমার জন্য মোটেও শোভনীয় নয়।

আলোর ততক্ষণে হুশ হলো। সে দ্রুত নিজেকে গুটিয়ে ফেলে সেখান থেকে চলে যেতে নিলে তূর্য পেছন থেকে বলল- ও হ্যালো, ছবি তুলতেই এসেছিলে নাকি গাছের আম চুরি করতে এসেছিলে? কাপ ফেলেই চলে যাচ্ছ যে? নাকি ওগুলোকেও উড়িয়ে দেবার ইচ্ছে?

-উড়ে যাক, সাথে আপনিও উড়ে যান। বলে আলো ওগুলো না নিয়েই চলে যাচ্ছিল কিন্তু তূর্য ওকে থামিয়ে চায়ের ট্রেটা এনে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল- আমার ওত ওড়ার সখ নেই, বুঝেছ? যাও এখন।

আলো ট্রে হাতে ছাদের মাঝ বরাবর আসতেই বাতাসের বেগ এত বাড়ল যে সে থেমে গেল, আগাতে সাহস হচ্ছিল না। তূর্য এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল- চলো। আলো চুপচাপ তার পাশে হেঁটে চলল। তূর্য বিড়বিড় করে বলল- কাছে আসার বাহানা, বুঝি না ভেবেছে। মা এইসব পিচ্চি-পাচ্চাকে কেন যে ছাদের চাবি দিয়ে বসে? কবে কোন বিপদে পড়বে কে জানে! তারপর সিঁড়ির কাছে এসে হনহন করে চলে গেল আলোকে পেছনে ফেলে। আলো তখন দাঁত কিড়মিড় করে পেছন থেকে হাত উঁচু করে তূর্যকে চড় দেখানোর ভঙ্গি করে মনে মনে রাগের ঝাল মেটাল।

বাসায় ঢুকে আলো দ্রুত চেঞ্জ করে নিল। তার হাঁচি শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। যদিও বের হবার আগে মায়ের ফোনে ম্যাসেজ পাঠিয়ে গেছে যে সে ছাদে যাচ্ছে তবু মা উঠে যাওয়ার আগেই নিজেকে গুছিয়ে ফেলতে হবে। সে চেঞ্জ করে বিছানায় চলে গেল। এখন কিছুক্ষণ শুয়ে না থাকলে সর্দি লেগে যাবে। সে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ আগে তোলা ছবিগুলো দেখতে লাগল। ছবিগুলো খুব সুন্দর এসেছে, সেখান থেকে কিছু ছবি বাছাই করল। এগুলো এখনই ফেসবুকে আপলোড করবে। ক্যাপশনে লিখবে, “শান্তিতে দুটো ছবিও তোলা যায় না, যেখানে সেখানে গন্ডার ঢুকে পড়ে!” তারপর মনে মনে হাসল। মি. রসগোল্লা, আজ আমার পোস্টে দিস হা হা রিয়েক্ট। তারপর ফেসবুক ক্রল করতে লাগল… এমন সময় দেখে মি. রসগোল্লা তারই দুটো ছবি আপলোড করেছে ১৫ মিনিট আগে! একটু আগে ছাদে যখন তার ছাতা উড়ে যাচ্ছল আর সে সেটাকে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করছিল সেই সময় তোলা। ওর চেহারা অবশ্য দেখা যাচ্ছে না ভালো করে। ছবির ক্যাপশনে লিখেছে, “হালকা বাতাসে কন্যা উড়ে যায় আকাশে!” পোস্ট হা হা রিয়েক্টের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে! মান সম্মানের তেঁতুলের চাটনি করে দিল একেবারে। এভাবে লুকিয়ে মেয়েদের ছবি তোলা অন্যায় সেটা কী জানে না? আর ছবিগুলো তাকে না দিয়ে এভাবে পোস্ট করার মানেই বা কী? তারপর হুট করেই মনে পড়ল ভাইয়া এই পোস্ট দেখলে কী করবে!!! অলরেডি একবার এসব নিয়ে মার খেয়েছে আর আজ যদি এই ছবি দেখে… শেষ, আলো আজ শেষ। বিকালের মধ্যেই তার দাফন কার্য শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে!

তূর্য আলোর ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে আছে। সে আলোর সকল পোস্টেই অতি নিষ্ঠার সাথে হা হা রিয়েক্ট দেয়, সে যে ধরনের পোস্টই হোক। আলো একদিন রাগ করে তূর্যর আইডিতে ঢুকে তার প্রায় শ’খানেক পোস্টে এ্যাংরি রিয়েক্ট দিয়ে এসেছিল। সেটা দেখে ব্যাটা বদ সবগুলো রিয়েক্টের নোটিফিকেশন স্ক্রিনশট নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে আর ক্যাপশনে লিখেছে, “Angry Bird 🤣🤣” সেটা দেখে রাগে আলোর গা জ্বলে গেছে। তাদের মিউচুয়াল কিছু ফ্রেন্ড আছে তারা এই নিয়ে হাসাহাসি করে অস্থির… কী সব কমেন্ট… উফ কী অপমান, কী অপমান। তারচেয়েও ভয়ংকর কথা ভাইয়া এর ফ্রেন্ড লিস্টে আছে আর ও এটা দেখলে মেরে পিঠ ভেঙে ফেলবে! বড় হয়েছে তো কী হয়েছে কিছু হলেই মারে। তার চিৎকার করে কান্না করতে মনে চেয়েছিল। এর আধঘন্টা পর ভাইয়া এসে চোখের সামনে সেই স্ট্যাটাস ধরে বলেছিল-

-কী এগুলো?

আলো ঢোক গিলে বলেছিল- তূর্য ভাইয়া আমার সব পোস্টে হা হা রিয়েক্ট দেয় সেইজন্য রাগ করে এটা করেছি।

-তুই তো হা হা রিয়েক্ট দেয়ার মতই স্ট্যাটাস দিস, ও হা হা দিবে না তো কী দিবে?

আলোর ইচ্ছে হয়েছিল বলে- “আমি স্ট্যাটাস যেমনই দেই ওকে লাভ রিয়েক্ট দিতে হবে। কেন হা হা দিবে?” কিন্তু বলতে পারেনি, ভীষণ আফসোস হয়েছিল… ওর ভাইয়া তখন ওর চুলের বেনি টেনে ধরে বলেছিল- তোদের মধ্যে অন্য কিছু চলছে কিনা সোজাসাপ্টা বল? নয়ত তোর চুল ছিঁড়ে ছাগলের লেজ বানিয়ে দিব এখনি। আলো চিৎকার করতে করতে বলেছিল- মারিস না ভাইয়া, মারিস না… আমাদের মধ্যে কিছু নেই, সত্যি বলছি কিছু নেই। “ফেসবুকে আবার উল্টাপাল্টা কিছু দেখলে মেরে হাত পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি করে দেবে” বলে শাসিয়ে আলিফ চলে গিয়েছিল। এরপর থেকে আলো সাবধানে চলে। কিন্তু মনকে কী করে সাবধানে রাখবেরে… তার উপর আজকের এই ঘটনা! এখন সে ভাইয়ার হাতে মার খেতে খেতে কষ্ট করে মরবে নাকি নিজেই আরাম করে সুইসাইড করবে বুঝতে পারছে না। মার খেতে অনেক ব্যথা লাগে এর চেয়ে সুইসাইডই ভালো… এসব ভাবতে ভাবতে সে যখন প্রায় পাগল সেই মুহুর্তে মনে পড়ল ভাইয়া তো বাসায় নেই, দুই দিনের জন্য বড় মামার বাসায় গেছে। ওহ, বাঁচা গেল মাইর থেকে। এর মধ্যে ওই অসভ্য তূর্যটাকে ধরতে হবে। সে তূর্যর ম্যাসেঞ্জারে নক দিল “হাই” লিখে।

তূর্য সেটার রিপ্লাই দিল- “স্ট্যাটাস বা ক্যাপশন কোনটাই চেঞ্জ হবে না” লিখে।

আলোর মেজাজ খারাপ হলো। এই ছেলে এত চালাক কেন? তার ইচ্ছে হলো “I love you” লিখে অভদ্রটার মাথা নষ্ট করে দিতে কিন্তু পরে দেখা যাবে এটাও স্ক্রিনশট দিয়ে শেয়ার করে দিয়েছে। তাই নম্র হয়ে লিখল- “চেঞ্জ করবার কোনো দরকার নেই, ডিলিট করে দিলেই হবে। ভাইয়া দেখলে আমাকে খুব মারবে… প্লিজ…”

-তুমি মার খেলে আমার কী? আমি আমার টাইম লাইনে কী শেয়ার করব আর কী ডিলিট করব সেটা তোমার কাছ থেকে শুনতে হবে?

-আমি মার খেলে আপনার কিছু না কিন্তু এমন কিউট একটা মেয়ে আপনার জন্য মার খাবে সেটা নিশ্চই ভালো দেখাবে না?

-কে কিউট, তুমি? হুহ, সামান্য বাতাস এলেই তো উড়ে যাও!

-আমি কিন্তু আন্টিকে বলে দিব, অনুমতি ছাড়া আপনি আমার ছবি তুলেছেন আবার সেটা ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন।

-বলে দাও। আমিও বলব- সকাল সকাল তুমি ছাদে গিয়েছিলে আম চুরি করতে, আমি সেটা দেখে ফেলেছি বলে তুমি এসব বলছ।

-আংকেল আন্টি অনেক ভালো তারা আপনার কথা বিশ্বাস করবে না।

-তারা তাদের ছেলের কথা বিশ্বাস না করে তোমার কথা শুনবে? এই রকম প্লাস্টিকের মগজ নিয়ে ঘুমাও কীভাবে? এই কোন ক্লাসে যেন পড়ো তুমি? নাইনে?

আলো দুটো এ্যাংরি ইমুজি দিয়ে চলে যায়। এরপর সারাদিন তার আতংকে কাটল, এই বুঝি ভাইয়া ফোন করে বকা শুরু করল। কিন্তু কী এক কারণে সেটা হলো না।

রাতে মাকে দেখল রান্নাঘরে ভীষণ ব্যস্ত। অনেক খাবারের আয়োজন চলছে। জিজ্ঞেস করলে বলল- কাল বাসায় গেস্ট আসবে, অনেক কাজ। এখন একটু গুছিয়ে না রাখলে কাল পারব না।

-কে আসবে?-

-আলিফ তোর বড় মামা মামীকে নিয়ে আসবে।

-ও… আসুক অনেকদিন হলো ওদের দেখি না।

পরদিন সকাল থেকে বাসা ভর্তি হয়ে গেল মেহমান দিয়ে। শুধু বড় মামা মামী না ছোট মামা, বড় চাচ্চু আর বড় চাচ্চুর মেয়ে আদিবা আপুও এসেছে। মা রান্না নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত, বড় মামী তাকে সাহায্য করছে। আদিবা আপু আজ আলোর বিশেষ যত্ন নিচ্ছে সেই সাথে রান্নাঘরেও যাচ্ছে। দুপুরের আগেই সবাই দ্রুত গোসল করে ভালো কাপড় পরে তৈরি হয়ে গেছে। ব্যাপারটা কী আলো ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। সে আদিবাকে বলল- আপু কী হচ্ছে বলো তো? সবাই এমন সেজে আছে কেন?

-কারা যেন দাওয়াত খেতে আসবে, তুই জানিস না কিছু?

-নাতো! আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি।

-কোন আংকেল আন্টি যেন আসবে। চাচ্চুর নাকি পরিচিত।

-ও… এমন সময় আলোর মা এসে বলল- এই আদিবা এই শাড়িটা আলোকে পরিয়ে দে তো মা। আলো অবাক হয়ে বলল-

-কী আশ্চর্য আমি শাড়ি কেন পরব?

-শাড়ি পরতে আবার আশ্চর্য হবার কী আছে?

-অবশ্যই আছে। ঝেড়ে কাশো তো মা, কী হচ্ছে আসলে? কারা আসছে? কেন আসছে?

-এত অস্থির হচ্ছিস কেন? যারা আসছে তারা তোকে দেখতে আসবে। কোন কথা না বলে যাও তৈরি হয়ে নাও। ওরা যেকোনো মুহূর্তে চলে আসবে।

-তৈরি হয়ে নাও মানে কী? এত কিছু হচ্ছে আর আমাকে কিছুই জানালে না!

-আমরা সবাই জেনেছি এটাই যথেষ্ট। কথা না বাড়িয়ে যা রেডি হ। আর হ্যাঁ, আমাদের উপর ভরসা রাখ। তোর পছন্দের বাইরে আমরাও কিছু করব না। সবাই এই প্রস্তাবটা পছন্দ করেছে। বড়রা সবাই যেটাকে সমর্থন করে সেটা বরকতময় হয় তাই চিন্তা করিস না, যা। আলো এরপর আর কিছু বলার সাহস পেল না কিন্তু তার খুব রাগ হতে লাগল, বুক ফেটে কান্না আসতে লাগল… মি. রসগোল্লাকে নিয়ে সে মনে মনে কত স্বপ্ন আঁকতে শুরু করেছিল সেগুলো সব স্বপ্নেই ঝড়ে যাবে? তূর্যর কথা কাউকে বলবে সে উপায়ও তো নেই। কারণ তূর্য তো তাকে পছন্দই করে না। সব সময় কেমন উল্টো কথা বলে পঁচায়। অথচ তূর্য তার প্রথম ভালো লাগা…

আদিবা আলোকে শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। আয়নার সামনে বসিয়ে বলল-

-আলো তাকিয়ে দেখ একবার তোকে কী মিষ্টি লাগছে! আলো প্রচন্ড অনিচ্ছায় একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। তাকে আসলেই খুব সুন্দর লাগছে।

-আরে অত স্যাড হচ্ছিস কেন? চাচী কী বলল শুনলি না? তোর পছন্দ না হলে কিছুই হবে না। তবে শুনেছি ছেলে নাকি খুব ভালো। ভালো ছেলেদের অত রূপ থাকা লাগে না। রূপের সাথে এডজাস্ট করে নেওয়া যায়। তবু তোর পছন্দ না হলে আমি এই প্রপোজাল ঘেটে দিব চিন্তা করিস না।

আদিবা আর আলোর কথার মাঝেই গেস্টরা সব চলে এলো। খাওয়া দাওয়ার পর পাত্র পাত্রী দেখা হবে। আদিবা এক ফাঁকে আড়াল থেকে পাত্র দেখে এসে বলল- আলো তোর কী ভাগ্যরে… এই ছেলে তো পুরাই কিলার, শুধু ভালোই না সেই হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং! আমার তো বুকে আনচান আনচান করছে। তুই মানা করে দিস আলো, এই ছেলেকে আমি বিয়ে করে ফেলি?

-তাহলে এজাজ ভাইয়ার কী হবে?

-কী আর হবে? ব্রেকাপ হবে। এক বয়ফ্রেন্ড আর কত পালব? টেস্ট নষ্ট হয়ে যায়। পরমুহূর্তেই কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল- না, সম্ভব না… ওই পাগলটা আমাকে অনেক ভালোবাসেরে… কিন্তু এই ছেলেটাও তো চোখে ফেবিকলের মত চিপকায় গেছে, কী করি এখন??? হায়রে আমার ভোলা ভালা অবলা মন…

আলো আদিবার দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বলল…

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে