#যতনে_রাখিও
#পর্ব_২ ( শেষ)
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম ( অনি)
স্নিগ্ধা সাজিমের জন্য কফি বানিয়ে দোতালায় গেল। সাজিম ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছে। স্নিগ্ধা সাজিমের জন্য কফির কাপ হাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। একটু পর সাজিম ওয়াশরুম থেকে বের হলো। স্নিগ্ধা হাসি মুখে সাজিমের দিকে কফির কাপ বাড়িয়ে দিল। কিন্তু সাজিম যে এমন কিছু করবে স্নিগ্ধা কল্পনাও করেনি। সাজিম স্নিগ্ধার হাত থেকে কফির মগ নিয়ে সম্পূর্ন কফি টুকু ফ্লোরে ফেলে দেয়। স্নিগ্ধা ছলছল চোখে সাজিমের দিকে তাকাল। সাজিম রুক্ষ কন্ঠে বলল,
“- তোমাকে কে বলেছে আমার জন্য কফি আনতে? কেন আনতে গেলে এবার ফ্লোর থেকে কফি উঠাও। জায়গা টা একদম আগের মতো চকচক করে ফেলবে বুঝেছো।
স্নিগ্ধা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। সাজিম রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। স্নিগ্ধা ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসল। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সে তো ভালো মনে করেই সাজিমের জন্য কফি এনেছিল। সে কি খুব বড়ো কোনো অপরাধ করে ফেলেছে। তার তো তেমন টা মনে হয় না। তাহলে? কেন বারবার এমন করে সাজিম। তার কি সত্যি সাজিমের জীবন থেকে চলে যাওয়া উচিত। এভাবে বেহায়ার মতো তো কারোর জীবনে থাকা যায় না। এই কয়েক মাস সে সাজিম কে বুঝিয়েছে। কিন্তু সে ব্যর্থ। সাজিমের মুখ থেকে সে সবসময় এক কথায় শুনে এসেছে। তাকে সে ডিভোর্স দেবে। এখানে পরে থেকে নিজেকে ছোটো করার মানে হয় না। ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে এমন টা নয়।
স্নিগ্ধা ফ্লোর পরিষ্কার করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। তার হাতে থাকা ফোন টা অন করল। ফোন করল তার প্রিয় বান্ধবীর কাছে। দুবার রিং হতেই ফোন রিসিভ করল তিশা। সে বলল,
“- কেমন আছিস স্নিগ্ধা? জিজু কেমন আছে?
স্নিগ্ধা মলিন কন্ঠে বলল,
“- আছি কোনো রকম রে। আমি আর পারছি না।
“- আবার কি হলো..?
“- যা হয় তাই হয়েছে।
“- জিজু র কি সত্যি কেউ আছে স্নিগ্ধা।
“- হ্যাঁ রে। উনি আমাকে প্রথম থেকেই বলে এসেছেন। সে অন্য কাউকে ভালোবাসে। কিন্তু আমিও তো তাকে খুব ভালোবাসি তিশা। তাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব বল। আর কতদিন এভাবে বেহায়ার মতো পরে থাকব বল। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাজিম যা চাই তাই হবে। ভালোবাসলেই যে তাকে পেতে হবে এমন টা নয়। দুর থেকেও ভালোবাসা যায়। আমিও না হয় তাই করবো৷ দুর থেকে আমার প্রিয় মানুষ টা কে ভালোবাসব।
“- কি বলব সত্যি ভেবে পাচ্ছি না রে।
“- আচ্ছা রাখছি।
____________
খোলা মেলে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধা সাজিম আর একটা মেয়ে। মেয়ে টা সাজিমের গার্লফ্রেন্ড। সাজিমের ভালোবাসার মানুষ। স্নিগ্ধা ই সাজিম কে জোর করে মেয়ে টার সাথে দেখা করতে এসেছে। সাজিম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধা মেয়ে টার দিকে কিছুক্ষণ গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখল। স্নিগ্ধা র এভাবে তাকানো তে মেয়ে টার অস্বস্তি হয়। মেয়ে টা সংকোচ বোধ করে বলে,
“- আপু….
স্নিগ্ধার হুশ আসল। স্নিগ্ধা নিজেকে সামলে হালকা হেঁসে বলল,
“- আপনিই সেই মেয়ে যে কি না আমার স্বামীর সবটা জুড়ে আছেন। তাই না।
মেয়ে টা মুচকি হাসল। স্নিগ্ধা ফের বলল,
“- আপনি মাশাল্লাহ খুব সুন্দর আপু। যে কোনো ছেলে দেখলেই পাগল হয়ে যাবে। যেমন সাজিম আপনি বলতে পাগল। সাজিমের সবটা জুড়ে আপনার বসবাস। কেউ চাইলেও তার মন থেকে আপনাকে সরাতে পারবে না।
“- জ্বি….
“- বেশি কিছু বলব না আপু। শুধু একটা কথায় বলবো।
“- বলেন আপু!
“- আপনি সাজিম কে খুব ভালো রাখবেন! কখনো অবহেলা করবেন না। তাকে সবসময় আগলে রাখবেন। সব বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবেন। সাজিম যেমন ওর সবটা দিয়ে আপনাকে ভালোবাসে ঠিক তেমনি আপনি আপনার সবটা দিয়ে ওকে ভালোবাসবেন। আমার প্রিয় মানুষ টা কে #যতনে_রাখিও আপু। সে আমার ভালোবাসার এক টুকরো সুখ। সে ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি। তার সুখে আমার সুখ। তার অসুখে আমার অসুখ! তাকে আমি আমার সবটা দিয়ে ভালোবাসলেও সে আমার হবে না। কেন জানেন..?
“- কেন?
“- কারণ সে আপনাকে ভালোবাসে । আপনি ছাড়া তার জীবনে কোনো নারীর অস্তিত্ব নেই। এমনি তার বিবাহিত বউ ও না। আচ্ছা ভালো থাকবেন আপু।
স্নিগ্ধা এবার সাজিমের দিকে আগালো। সাজিম স্নিগ্ধার দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে ছিল। স্নিগ্ধার প্রতিটি কথা সাজিমের বুকে গিয়ে লাগছে। স্নিগ্ধা হাসি মুখে বলল,
“- ডিভোর্স পেপার রেডি করে পাঠিয়ে দিবেন। আমি সাইন করে দিবো। কোনো টেনশন করবেন না। আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাব না। আপনার জন্য কিছু করতে পারি আর না পারি। ডিভোর্স দিয়ে আপনার ইচ্ছে তো পূরণ করতে পারব। ভালো থাকবেন। কাল থেকে আর আমাকে দেখতে হবে না। নিশ্চিতে থাকতে পারবেন।
সাজিম এখনো অবাক হয়ে চেয়ে আছে। অবাকতার রেশ নিয়ে বলল,
“- কোথায় যাবে তুমি? থাকবে কোথায়..?
“- আমার থাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি যেখানেই যাই না কেন? সেখানে ভালো থাকব। আর হ্যাঁ বাবা কে একটু বলে দিবেন। তিনি যেন কষ্ট না পান।
স্নিগ্ধা চলে গেল। সাজিম এখনো স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে। তিশা এগিয়ে এসে বলল,
“- চলো বেবি।আজ আমরা পার্টি দেব। আর কিছু দিন পর ই আমরা বিয়ে করতে চলেছি। বলে সাজিম কে জড়িয়ে ধরল।
সাজিমের কোনো হেলদোল নেই। সাজিম মনে মনে ভাবছে। সে ভুল করল না তো। আবার ভাবে সে যা করেছে একদম ঠিক করেছে। সে যাকে ভালোবাসে তাকেই সে বিয়ে করবে।
স্নিগ্ধা রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। আজ সব কিছু ফেলে চলে এসেছে। সে কারোর জীবনের বোঝা হতে চাই না। সে ভালোবাসে তাতে কি? দুর থেকেই ভালোবাসবে। জীবনের কষ্ট গুলো না হয় একাই সামলে নিবে। আজ থেকে নিজের জীবন নিয়ে ভাববে। হেসে খেলে চলবে। নিজেকে গড়ে তুলবে। এটাই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ। ভালোবাসার থেকে নিজেকে গড়া বড্ড দরকার। আজ থেকে নতুন স্নিগ্ধা কে দেখবে। একটু একটু করে যতনে রাখবে সে। স্নিগ্ধা আজ বুঝল সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যায়। তার ভালোবাসার নাম টা না হয় অপূর্ণর খাতায় লেখা থাকুক।
সমাপ্ত