অবুঝ পাড়ার বাড়ি পর্ব-১৩

0
2

#অবুঝ_পাড়ার_বাড়ি
#হুমায়রা
#পর্বঃ১৩

ডক্টর অনিন্দর চেম্বারে বসে অপেক্ষা করার মিনিট দশেকের মধ্যেই সে আসলো। সাদিক উঠে দাঁড়িয়ে কুশল বিনিময় করে আবার নিজের জায়গায় বসলো। সাদিকের মুখ বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিলো। তাকে আর চিন্তায় না ফেলে কোন ভণিতা ছাড়াই ডক্টর অনিন্দ বলল,
–মাহাদীর র’ক্তের প্লেটলেট যথেষ্ট কম। কেমো সেশনের আগে প্লেটলেট দিতে হবে।

সাদিকের মাথা বাজ পরলো বলে মনে হলো। অবিশ্বাস্য সুরে বলল,
–কেমো দিতে হবে কেন?

ডক্টর অনিন্দ মিনিটের মতো চুপ থাকলো। চেম্বারে তেমন শব্দ নেই। একসময় এসির পাওয়ার কমিয়ে পরিবেশ ঠান্ডা করে বলল,
–মাহাদী লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত। সহজ ভাষায় বললে ব্লা’ড ক্যা’ন্সার।

সাদিকের পুরো পৃথিবী দুলে উঠলো৷ চেয়ারের হাতল ধরে দ্রুত নিজেকে সামলালো। অহনার কথা মনে পরলো তার। কথাটা শোনার পর নিজেকে কিভাবে সামলেছিলো সে? তার বাচ্চাটা, ছোট বাচ্চাটা ক্যান্সার নিয়ে ঘুরছে! ওইটুকু বাচ্চাটার শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে!
নিঃশ্বাসের বেগ পেতেই নিজের চুল খামচে ধরলো সাদিক। পরিস্থিতি বুঝে বন্ধুকে সামলে নিতে সময় দিলো অনিন্দ। একসময় সাদিক আহাজারি করে উঠে বলল,
–অনি, আমার ছেলে! আমার ছেলেকে কি হারিয়ে ফেলবো রে? সবে কোলে নিয়েছি ওকে। কাল রাতেও গল্প পড়ে শোনালাম। শোবার সময় কিভাবে আমার গলা জড়িয়ে শুয়েছিলো। ও..ও কি আর..

কথা শেষ করতে পারলো না সাদিক। শ্বাস টানা শুরু হয়েছে তার। অনিন্দ উঠে এক গ্লাস পানি ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে পাশের চেয়ারে বসে পরলো। সাদিকের বিবাহিত জীবন আর এর পরের জীবন সম্পর্কে মোটামুটি সবটাই জানে সে। তাই এটা নিয়ে আর প্রশ্ন তোলে না। সাদিক জানে ওর বন্ধু অনেক বড় ডাক্তার। তাও পাগলের মতো করতে লাগলো। অনিক ওকে শান্ত করতে বুঝিয়ে বলল,
–আগে তুই একটু শান্ত হ। আমি সব বুঝিয়ে বললে তখন এতো কঠিন লাগবে না। লিউকেমিয়া বাচ্চাদের একটা সাধারণ রোগ। সব বাচ্চাদের না হলেও যাদের হয় তাদের এই টাইপের লিউকেমিয়াই হয়। আর প্রায় নাইন্টি পারসেন্ট বাচ্চাই সুস্থ হয়ে যায়।

সাদিক বুঝলো না। আর্তনাদ করে বলল,
–তাই বলে আমার ছেলে…ও কত কষ্টই না পাচ্ছে! এটা..এটা কিভাবে হলো? কবে হলো এসব?

অনিন্দ চোখ বুজে শ্বাস ফেলে বলল,
–কিভাবে হলো আর কবে হলো সেসব তো বলা সম্ভব না। আমি তোকে সব বুঝিয়ে বলছি। শান্ত হয়ে শোন।

সাদিক চুপ রইলো কিন্তু শান্ত হলো নাকি বোঝা গেলো না। অনিন্দ বন্ধুর হাতে নিজের ভরসার হাত চেপে বলল,
–বোনম্যারোতে স্বাভাবিক অবস্থায় যতটা র’ক্তকণিকা তৈরি হয় লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হলে সেটার ব্যাঘাত ঘটে। আমাদের বডি স্বাভাবিকভাবে যতটা হোয়াইট ব্লা’ড সেল বানায়, তখন সেটা বেড়ে যায় আর তুলনামূলক রেড ব্লা’ড সেল কম হয়। আর এর ফলে হোয়াইট ব্লা’ড সেল অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে র’ক্তে জমে যায়। যেমন আমাদের শরীরে চর্বি জমে আমাদের মোটা করে তেমনই অস্থিমজ্জার ওই অংশ তখন ফুলে ওঠে। আর এটা ধীরে ধীরে পুরো বডিতে ছড়িয়ে যায়। লিউকেমিয়া ব্লা’ড ক্যান্সারের একটা প্রকার মাত্র। এর চিকিৎসা আছে আর প্রচুর মানুষ একদম সুস্থ হয়ে যায়। আর মেইনলি, বাচ্চাদের শরীর কেমো খুব ভালোভাবে অ্যাক্সেপ্ট করে।

অনিন্দ বুঝানোর শুরুটা রোগ দিয়েই করলো। রোগ কিভাবে হয় সেটা বুঝতে পারলে চিন্তা অনেকাংশেই দূর হয়। কারন তখন মনের মধ্যে থাকে, ওই অংশটুকু রিপেয়ার করলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। সাদিকের ক্ষেত্রও তাই হলো। নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক করে ফেললো। অনিন্দ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
–দেখ সাদিক, ভাবি চিকিৎসার কোন কমতি রাখেনি৷ লাস্ট দশ বারোদিন হলো মাহাদীর সাপোর্টিভ মেডিসিন চলছে। লিউকেমিয়া ধরা পরার পর ওর ফুল বডি নতুন করে চেকাপ করানো হয়েছিলো। শরীর অত্যাধিক দুর্বল আর লিভারের প্রবলেম ধরা পরেছিলো। খুব বেশি না, সামান্য। এই অবস্থায় কেমো দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ দ্যাটস হোয়াই, এই সাপোর্টিভ মেডিসিন চলছিলো৷ আর এই অবস্থায় একটা বাচ্চার তার বাবা আর মাকে খুব দরকার। বাচ্চারা মাকে বেশি ভালোবাসলেও ভরসা বেশি বাবাকেই পায়৷ একটা আস্থা তৈরি হয় বাবার উপর। এটা ন্যাচারাল। ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে তবে সেটা আলাদা কথা। যাই হোক, ভাবীর সাথে কথা বলে জেনেছি, তোরা সেপারেশনে আছিস৷ আমি সাজেস্ট করলাম, বাচ্চার মেন্টাল কন্ডিশনের জন্য হলেও অন্তত বাবাকে বাচ্চার কাছে রাখুন। অন্তত কেমোর প্রথম দুই তিন মাস। আর এরপরের ঘটনা আমার জানার কথা না, তোরা ভালো জানিস। এখন তোর কাজ শুরু, মাহাদীকে মেন্টালি স্ট্রং বানানোর। রিপোর্ট সব নরমাল এসেছে। লিভারের প্রবলেম দূর হয়েছে। শুধু ওর শরীরে প্লেটলেট যথেষ্ট কম। কেমো দিলে এমনিতেই প্লেটলেট কমে যায়। তাই আগে প্লেটলেট দিতে হবে আর এরপর কেমোর প্রথম সেশন শুরু হবে।

সাদিক সব শুনলো, বুঝলো। আহত পাখির মতো ছটফট করতে মন চাইলো তার। পারলো না কোনোভাবে। দুর্বল গলায় শুধু বলল,
–কবে দিবি?

অনিন্দ সামান্য হেসে বলল,
–যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত তাড়াতাড়ি। আমি তো আজকেই রোগীকে ভর্তি করার সাজেস্ট করবো। আজকে প্লেটলেট ট্রান্সফার করলে কাল সকালেই কেমো দিতে পারবো।

সাদিক হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বলল,
–ঠিক আছে। আজকেই ভর্তি করাবো। আর কিছু কি লাগবে?

–না। ভর্তি করানোর পর বাকিটা আমরা দেখে নেবো। তুই স্বাভাবিক হয়েছিস দেখে ভালো লাগলো।

সাদিক উত্তর না দিয়ে মাথা নেড়ে চেম্বার থেকে বের হলো। ও ঠিক কতটা স্বাভাবিক আছে তা ওর থেকে ভালো আর কে জানে!
সারা রাস্তা মাহাদীকে বুকের সাথে আকড়ে ধরে এনেছে সাদিক। মনে পড়ে, একদিন অহনা বাজারে যাওয়ার আগে মাহাদীকে কোলে নিয়ে ওর কাছে এসেছিলো যাতে ও ছেলেকে একটু দেখে রাখে। সাদিক সেদিন ব্যাজার মুখে বলেছিলো,
–দুর্বলতার জন্য শুধু মেডিসিন খেলে হবে না। শাক, সবজি, ফলমূল সব খেতে হবে।
আজ মনে হচ্ছে, ওসব কেনো বলেছিলো? কেনো প্রথম দেখায় ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরেনি? কেনো অহনা আর ফিরলো না? আর কেনোই বা সে ক্যারিয়ারের জন্য দেশের বাইরে চলে গেলো! অন্তত ছেলের কাছে আরো অনেকটা সময় কাটাতে পারতো। ছেলের শিশুকাল দেখতে পারতো। তিনমাস এতো কম সময়! অহনা আরো আগে কেনো গেলো না? ওর ছেলে অসুস্থ! সুস্থ ছেলেকে কি আদৌ দেখতে পারবে?

হসপিটালে নেওয়ার দুই ঘন্টার মধ্যে প্লেটলেট দেওয়ার কাজ শুরু হলো। অহনা ছেলের মাথার কাছে বসে ছোট ছোট কথা বলে সাহস জোগাচ্ছে। সাদিক বাড়ে বাড়ে ওকেই দেখে যাচ্ছে। মেয়েটা এতো শক্ত আছে কিভাবে! পরিস্থিতি কাউকে সত্যিই এতো শক্ত বানিয়ে দেয়! হাসপাতালের সেই সাদা বিছানায় তাদের কলিজার টুকরা ভয়ার্ত মুখে শুয়ে আছে। সাদিক ছেলের হাত শক্ত হাতে চেপে ধরতেই মাহাদী খিলখিল করে হেসে উঠে বলল,
–আম্মু, বাবা ইজেকশনে ভয় পেলো।

সফেদ পোশাক পরা নার্সের হাতে ক্যানোলা ছিলো। মাহাদী সেটাকেই ই’ঞ্জেক’শন ভেবে নিয়েছে। আর তারপর বাবার ভয় দেখে সে নিজে আর ই’ঞ্জেক’শনে ভয় পেলো না। ছোট ছোট কথায় বাবাকে সাহস দিতে লাগলো। নার্স সেই ফাঁকে মাহাদীর হাতে ক্যানোলা ঢুকিয়ে সব সেট করে ফেললো। ক্যানোলা পরানোর সময় সামান্য আর্তনাদ করলো মাহাদী৷ সাদিক ওর ক্যানোলা লাগানো নাজুক হাত নিজের শক্তপোক্ত হাতে তুলে চুমু দিয়ে বলল,
–মাহাদীর আম্মুর মতোই মাহাদী ব্রেভ। ভয় একদম পাবে না, ঠিক আছে?

মাহাদী বাবার দিকে তাকিয়ে নিজেকে সাহসী প্রমাণ করতে ফ্যাকাসে মুখে মাথা হেলিয়ে সায় জানালো। সাদিক মৃদু হেসে অহনার রক্তশূণ্য মুখের দিকে তাকালো। কি নির্লিপ্ততা! নিজেকে পাথর করতে আর কিছুই বাকি রাখেনি মেয়েটা!
নার্স ধীরে ধীরে র’ক্তের ব্যাগের নল মাহাদীর হাতে সংযুক্ত করে দিলো। তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্লেটলেট ট্রান্সফিউশান শুরু করলো। ডাক্তার পাশে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা করছে মাহাদীকে। ওর শরীর ঠিক আছে কি না দেখছে।
মাহাদীর ছোট শরীরটা ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো। সাদিক আর অহনা মিলে অনেক গল্প করলো তার সাথে৷ মাহাদী কিছু গল্পে মনোযোগ দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো আবার কিছু গল্পে মনোযোগ দিতে না পেরে ভয়ে বা মায়ের বুকে মুখ গুজতে চাইলো৷ পয়তাল্লিশ মিনিটের দীর্ঘ জার্নির পর প্লেটলেট দেওয়া শেষ হতেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে মায়ের কোলে ঢুকে পরলো মাহাদী৷

সেদিন রাতটা হসপিটালেই কাটালো তারা। মাহাদীকে কেবিনে শুইয়ে বাইরে এসেছিলো অহনা। ক্লান্ত দেহে বাইরে রাখা চেয়ারে বসতেই সাদিক খাবার নিয়ে আসলো। পাউরুটি আর কলা এনেছে। অহনা পাউরুটি হাতে চুপচাপ বসে রইলো৷ পাশে সাদিকেরও একই হাল৷ দুজনের কারোরই খাওয়ায় আগ্রহ নেই। কিছুক্ষণ মৌন থেকে ভাঙা গলায় নিরবতা ভাঙলো অহনা। ভেজা গলায় বলল,
–আমার ছেলেটা জীবনে কাউকে পায়নি। বাবার সাথে থাকার ভীষণ ইচ্ছা ছিলো। একদম যখন ছোট ছিলো তখন বাবা বাবা বলে ডাকতো। তারপর আশেপাশের বাচ্চাদের দেখে ওর নিজের বাবার কথা জিজ্ঞাসা করতো। আরো বড় যখন হলো তখন আর কিছুই বলেনি। কিন্তু মনে মনে বাবাকে চাইতো। জ্বর হলে, কান্না করলে সারাক্ষণ বাবা বাবা ডাকতো। ডক্টর বলল, ওর মেন্টাল কন্ডিশন খুব খারাপ। এমন হলে ঔষধ কাজ করবে না। বাচ্চার বাবাকে আনুন। বাচ্চার বাবাকে আনলাম। এখনও কি আমার ছেলেটা ঠিক হবে না?

এই প্রথম অহনাকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখলো সাদিক৷ অহনা আগ বাড়িয়ে কখনোই কিছুই বলেনি, কিন্তু নিজেকে প্রকাশও করেনি কোনোদিন। সাদিক আহত মনে জড়িয়ে ধরলো তাকে। মাথায় চুমু দিয়ে আস্তে করে বলল,
–আমাদের ছেলের কিছুই হবে না। কয়দিন পর একদম ফিট হয়ে ফুলবল খেলবে।

অহনা প্রতিউত্তর করলো না। ওভাবেই স্বামীর বুকে পরে রইলো। বোধহয় এইটুকু আশ্রয় তার খুব প্রয়োজন ছিলো।

মাহাদীর কেমোথেরাপির প্রথম সেশন শুরু হলো পরদিন সকাল এগারোটায়। তার আগে মাহাদীর সুন্দর চুলগুলো একদম ফেলা দেওয়া হলো। চিৎকার করে কান্না করছিলো সে৷ নিজের চুল তার ভীষণ পছন্দের৷ অহনা আড়ালে চোখ মুছে ছেলেকে বুঝালো অনেকক্ষণ। শেষপর্যন্ত বুঝলো চোখ টোখ ফুলিয়ে কান্নাকাটি করার পর। গাল ফুলিয়ে এরপর কেমোথেরাপি নিতে বসেছিলো৷
মাহাদীর চোখেমুখে ভীষণ ক্লান্তি দেখা যাচ্ছিলো। সাথে একটু ভয় আর কৌতুহলও ছিলো। কেমো ইউনিটের চারপাশে ড্রিপ, নল আর ডাক্তার নার্সদের ব্যস্ততা। মাহাদী টলটল চোখে সেই ব্যস্ততা দেখছিলো। হালকা শোয়ানো চেয়ারে বসে আছে সে। তার মাথার কাছে বসে আছে মা আর পায়ের কাছে বাবা। অহনা ওর মুখভঙ্গি দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
–ভয় করছে আব্বু?

মাহাদী মুখ ছোট করে মাথা নাড়লো। তার মতো সাহসী ছেলের ভয় পাওয়াটা খুবই লজ্জাজনক কিন্তু ভয়টাও যে অনেক বেশি। কিছুতেই লুকিয়ে রাখা গেলো না। সাদিক চুপচাপ মা ছেলেকে দেখছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে, তারা মা ছেলে তাকে ছাড়া অনেক সুখী। ও এখানে এক্সট্রা পারসোন। ছেলে অসুস্থ না হলে কখনই তার দরকার ছিলো না অহনার। জীবনটা হঠাৎ কি জটিলই না হয়ে গেছে!
ডক্টর অনিন্দর পরনে এপ্রোন। বেশ আগ্রহ ভরে এপ্রোন আর স্টেথোস্কোপ দেখছিলো মাহাদী। এরমাঝে নার্স ওর হাতের শিরায় ছোট সুঁ’চ ঢুকালো। চোখ বড় বড় করে কেঁদে উঠলো মাহাদী। অহনা ভয় পেয়ে মাহাদীর চোখ হাত দিয়ে ঢেকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো৷ মায়ের কোলে থাকা ভয়ার্ত মাহাদীর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো। আইভি ড্রিপের মাধ্যমে মেডিসিন ধীরে ধীরে তার শরীরে ঢুকতে লাগলো। সাদিক ছেলের জুতা খুলে পা কোলে তুলে নিলো। এরপর আলতো হাতে পা ম্যাসাজ করে দিতে লাগলো। আরামে শারীরিক অস্বস্তি ভুলে চোখ বুজে পরে রইলো মাহাদী। ঘন্টাখানেক পর মাহাদীর শরীর কেমন নেতিয়ে পরলো। বেশ অসুস্থ লাগতে লাগলো তার। অনিন্দ আশ্বাস দিয়ে বলল,
–এটা ন্যাচারাল। মেডিসিনের জন্য বডি রিঅ্যাক্ট করছে৷

অহনার জায়গায় তখন সাদিক বসেছিলো। মাহাদীর ছোট শরীর ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে উঠে বাবার কাঁধে নেতিয়ে পরে রইলো। নার্স কিছুক্ষণ পরপরই ওর শ্বাসপ্রশ্বাস, তাপমাত্রা, রক্তচাপ পরীক্ষা করছিলো৷ দীর্ঘ দুই ঘন্টা পর এই মানসিক কষ্টদায়ক সেশন শেষ হওয়ার পর মাহাদী ঘুমিয়ে পরলো। বেশ কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে ওঠার পর একদম সুস্থ দেখালো ওকে। আরো কিছুক্ষণ চেকাপ করিয়ে ছুটি দিলো ডক্টর। তার আগে অহনা আর সাদিককে সাবধান করে দিলো। কেমোথেরাপির সাইড ইফেক্ট সবসময় সাথে সাথে শুরু হয় না। আগামী কয়েকদিন ওরজন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেশি অসুস্থ হলে সাথে সাথেই যাতে হসপিটালে নিয়ে আসে।
এরপরের দুই তিনদিন মাহাদী একদম সুস্থ ছিলো। আগের মতো দুর্বলতাও ছিলো না। বাবার সাথে সাইকেল চালিয়েছে, হেঁটে হেঁটে বাজারে গেছে আবার হালকা দৌড়ে ফুটবলও খেলেছে। ওকে এমন সুস্থ দেখে সাদিক সিদ্ধান্ত নিলো, বাড়ি যাবে। দরকারী কিছু কাজ আছে তার। পরেরদিন দুপুরের পর বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলো সে আর সেইদিন রাত থেকেই মাহাদীর ধুম জ্বর। শেষরাতে শ্বাসকষ্টের সাথে বমি শুরু হলো। শেষে তো বমির সাথে রক্ত পরতে লাগলো। ভীষণ ভয় পেয়ে তক্ষুনি হসপিটালে নেওয়া হলো মাহাদীকে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে