অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫৩

0
16

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৫৩
নয়নার চোখে ঘুম নেই। তার পাশে যে ব্যক্তি শুয়ে আছে, সে আসলে কে? নয়না নিজের মোবাইল নিয়ে করিডোরে চলে এলো। ডায়াল লিস্ট থেকে তুষির নম্বর বের করে তাকে কল করলো।
তুষি কল রিসিভ করে বলল, “এত রাতে জামাইয়ের সোহাগ ছেড়ে আমাকে মনে পড়লো কেন, ম্যাডাম?”
“টেনশনে আছি।”
“তোর টেনশন মানে আজগুবি চিন্তা। তা, কী নিয়ে টেনশন?”
“বিয়ে তো করিসনি, বুঝবি কী করে? বিবাহিত মেয়েদের কত শত টেনশন থাকে!”
“চুপ কর, বুড়ি! এমনভাবে বলছে, যেন ওর পাঁচ-দশটা বাচ্চা আছে। কী বলবি, বল।”
“আসলে কীভাবে বলবো, বুঝতে পারছি না।”
“গোলগোল না ঘুরিয়ে সোজাসাপ্টা বলে ফেল। আমার সঙ্গে কথা বলতে এত ভাবতে হয়?”
“আসলে জানিস তো, তোর দুলাভাই আর তার ছোট ভাই জমজ।”

“তাতে কী?”
“এখন আমি বুঝবো কী করে কোনটা কে? একই ড্রেস পরলে কীভাবে বুঝবো?”
“এটা বোঝা কোনো ব্যাপার হলো?”

“দুজন মানুষের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আমি কীভাবে বুঝবো কোনটা কে?”

তুষি নয়নার কথা শুনে বলল, “এতদিন স্বামীর বগলদাবা হয়ে থেকে এখন বলছিস কীভাবে চিনবি? বলদি, তোর স্বামীর শরীরের ঘ্রাণ তুই চিনতে না পারলে কেমন বউ তুই? বেঁচে আছিস কেন এখনো? যা, কচুগাছের সঙ্গে দড়ি বেঁধে ঝুলে পড়।”

“চুপ থাক, ভুষি! তুই আমাকে বুদ্ধি না দিয়ে অপমান করছিস। যা, লাগবে না তোর পরামর্শ।” বলেই খট করে কল কেটে দিলো।

নয়না কীভাবে বোঝাবে তার কনফিউশন কী নিয়ে? আচ্ছা, দুজন মানুষ একই ড্রেস পরা, একই চেহারা, একই কণ্ঠ! আমি কীভাবে আলাদা করবো তাদের? নয়না চোখ বন্ধ করে জিয়ানকে অনুভব করার চেষ্টা করছে। মনে মনে বলল, “আচ্ছা, আজকের কিস আর এতদিনের কিসের টেস্ট মেলালেই তো বোঝা যাবে, আমার সঙ্গে আসলটা নাকি নকলটা!” নয়না আবার চোখ বন্ধ করে গভীর মনোযোগ দিয়ে অনুভব করতে লাগলো।

জিয়ান চোখ বন্ধ করে নয়নার কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করছিলো। এবার চোখ খুলে বলল, “কী করছো? ধ্যান, নাকি তপস্যা? নাকি কোনো সাধনা করছো?”
“টেস্ট করার চেষ্টা করছি।”
“কিসের টেস্ট?”
“চুমুর টেস্ট।”

জিয়ান নয়নার হাত ধরে টান দিলো। নয়না রাগী চোখে তাকিয়ে বলল, “কী অসভ্যতা করছেন? ছাড়ুন। একদম আমাকে স্পর্শ করবেন না।”

জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলল, “এমন করছো কেন? জ্বিনে-টিনে ধরেনি তো আবার?”

“চুপ করে থাকেন, একদম কোনো কথা বলবেন না।”

“আরে, বুদ্ধু, আমাকে চিনতে পারছো না? আমি তোমার প্লেন ড্রাইভার।”

নয়না জিয়ানের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বলল, “জানি না, আমার মনে কেন কনফিউশন তৈরি হচ্ছে। মনে হচ্ছে আপনি জাহিন। সত্যি করে বলুন, আপনি কে?”

“আমি কে মানে? এতদিন আমার সঙ্গে থেকেও আমার স্পর্শ চিনতে পারছো না? আচ্ছা, এখনই আমার স্পর্শ অপরিচিত মনে হচ্ছে? আমি ফিরে আসলে তো ভুলেই যাবে আমাকে। নাহ, এমন ভোলা-মনা বউ রেখে কাজে যাওয়া মুশকিল। এখন কি ছেড়ে দেবো জব? ঘরে বসে বউ পাহারা দেবো? এছাড়া আর কোনো অপশন দেখছি না আপাতত।”

নয়না জিয়ানের অনেকটা কাছে এলো। হঠাৎ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো জিয়ানকে। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জিয়ানকে জড়িয়ে রেখেছে, যেন জিয়ান কোথাও পালিয়ে যাবে।

জিয়ান নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “বাটার মাশরুম, আমি শুধু তোমার প্লেন ড্রাইভার। আমি ছাড়া অন্য কারো সাহস নেই তোমাকে টাচ করার। যদি কেউ এমন দুঃসাহস দেখায়, তাহলে তাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো।”

নয়নার মনে বিশ্বাস জন্মালো, এটা তার পাইলট রেজা চৌধুরী। তার দেহ-মন জানান দিচ্ছে, তার মানুষটাকে সে জড়িয়ে ধরে আছে। নয়নার চোখ ভিজে উঠলো নিজের অজান্তেই।

জিয়ান নয়নাকে নিজের কাছ থেকে আলাদা করে বলল, “এই পাগলি, কাঁদছো কেন? আমি ছাড়া তোমাকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। তুমি আমার একান্ত ব্যক্তিগত ফুল, যার সৌরভের মাদকতায় একমাত্র আমি আসক্ত হবো। আমি ছাড়া এই সৌরভে মুখরিত হতে পারবে না। তুমি শুধুই আমার অর্ধাঙ্গিনী। কাল চলে যাবো, এখন এভাবে কাঁদবে জান?”
“জানি না, আমার মন মানছে না। এসব কিছু কাকতালীয় মনে হচ্ছে! তুমিই বলো, জাহিন ভাইয়া ওই রাতে একই ড্রেসে কীভাবে এলো? আর কেনই বা এলো? সে জানলো কীভাবে আমরা সেখানে আছি? এতসব কাকতালীয় কীভাবে হয়? তুমি চলে গেলে আমি এই বাসায় থাকবো না। আমার জাহিন ভাইয়াকে মোটেও পছন্দ না।”
“আচ্ছা, বুঝলাম। আমি চলে গেলে তুমি তোমার বাসায় থেকো। এখন সব বাদ দিয়ে কাছে এসো। একদম কাছে এসে বুকে মাথা রাখো। মিশে যাও তোমার মানুষের সঙ্গে।”

নয়না জিয়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। জিয়ান নয়নাকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। নয়নার মাথায় চুমু দিয়ে বলল, “পিচ্চি, একটা কিউট বউ পেয়েছি। সবকিছু নিয়ে ওভারথিঙ্কিং করে। এই যে পিচ্চি বউ, এইটুকু মাথায় ইয়া বড় লম্বা-লম্বা চুল। এতটুকু মাথায় এত প্রেশার দেওয়া চলবে না। তুমি জিয়ান রেজা চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী। আমি বেঁচে থাকতে তোমার কাছে আসার সাহস কারো হবে না।”

নয়না জিয়ানের বুকে আলতো করে চুমু দিচ্ছে। জিয়ান নয়নার কানে ফিসফিস করে বলল, “কী গো, বউ, আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছো কেন? উত্তাপ বাড়ালে কিন্তু তোমাকেই শান্ত করতে হবে।”
নয়না লজ্জা পেলো। আলতো কামড় বসিয়ে দিলো জিয়ানের বক্ষে। জিয়ান এক ঝটকায় নয়নাকে ঘুরিয়ে তার উপর ঝুঁকে নেশালো কণ্ঠে বলল, “আই নিড ইউ। এই মুহূর্তে আমার তোমাকে চাই, একদম পুরোপুরি।”

নয়না নিজেও বেসামাল হচ্ছে। শক্ত করে খামচে ধরলো বেডশিট। জিয়ান নয়নার গলায় মুখ ডুবালো। রাতের অন্ধকারের সঙ্গে মিলিয়ে যেতে লাগলো একজোড়া কপোত-কপোতী।

🌿

জাহিন হাসপাতালের বেডে হেলান দিয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সে যা চায়, তা ঠিক নয়, কিন্তু তার মন তাকে দিয়ে তা করাচ্ছে! আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি সারাজীবন নিঃসঙ্গ থাকবো, ঠিক চাঁদের মতো।” জাহিন হঠাৎ কিছু একটা ভেবে হাসলো। তার হাসির কারণ কী, সেটা ঠিক বোঝা গেল না।অন্তর জাহিনের জন্য ছুটে এসেছে। জাহিনের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “কী হয়েছে তোর?”

“আরে, বলিস না। রিতুর সুইসাইড কেসের তদন্তের জন্য বেরিয়েছিলাম। এরপর ভাইয়ার সঙ্গে দেখা। তাকে বাঁচাতে গিয়ে সামান্য লেগেছে। ঠিক হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি, তেমন গুরুতর আঘাত নয়। রিতুর কী অবস্থা?”

অন্তর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “হয়তো আর বাঁচবে না। আমার হাসিখুশি বোনটা এখন মৃত্যুর পথে। আমি ভাই হয়ে কিছু করতে পারছি না।”

“তুই টেনশন করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই ভেঙে পড়লে চলবে না।”

জাহিনের বিরক্ত লাগছে অন্তরকে। হঠাৎ তার একা থাকতে ইচ্ছা করছে। মনে হচ্ছে, পৃথিবীর এমন কোনো স্থানে যেতে, যেখানে তার ছাড়া আর কোনো মানুষ নেই। মানুষের উপস্থিতি তার সহ্য হচ্ছে না।

অন্তর চলে গেলো। তার হাতে সময় নেই। জাহিন নিজের ফোন বের করে কাউকে কল করলো। দু’মিনিট কথা বলেই ফোনটা ছুড়ে ফেললো।কর্তব্যরত নার্স দ্রুত এসে বলল, “কোনো সমস্যা, স্যার? আপনার কিছু লাগবে?”

জাহিন গর্জে উঠে বলল, “এই মুহূর্তে আমার রুম থেকে বের হয়ে যান, নয়তো মেরে ফেলবো।”

নার্স ঘাবড়ে গেলো। রুম থেকে বের হয়ে ডাক্তারকে ইনফর্ম করলো। ডাক্তার নাজিম চৌধুরীকে কল করলো। নাজিম চৌধুরী মাত্র বাসায় ঢুকেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে এলেন। তার এই ছেলেটাকে তিনি ঠিক বুঝতে পারেন না। ছোটবেলা থেকেই খুব জেদি আর একরোখা। কখন যে কী করে, কিছুই জানা যায় না। বাবা হয়েও ছেলের সম্পর্কে তিনি তেমন কিছুই জানেন না!
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে