সৌরকলঙ্ক পর্ব-১৩+১৪

0
2

#সৌরকলঙ্ক
#উম্মে_প্রভা
#পর্ব_১৩

গতকাল হঠাৎ তানিয়ার মেজ ভাইয়ের ছেলে এসে উপস্থিত হলো তার বাড়ি। খুলনায় ছোট ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছে তারা ,তাই তানিয়াকে সাথে নিতে চায়।বাড়ি তে আদিব আশরাফ কেউ নেই তানিয়া একা শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছিল।ভাতিজার কথা শুনে সে আর দ্বিরুক্তি করলো না।তাদের সঙ্গ নিল।মেয়ে দেখে পছন্দ হলো সকলের, আ্যংটি পরিয়ে বিয়ের দিন ধার্য করলো সেই সময়।তানিয়া বুঝলো সবাই প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল শুধু তাকে কিছু জানানো হয় নি। খারাপ লাগলো তার তবে কিছু বলতে পারলো না। আশরাফের সাথে বিয়ে করার পর থেকে তার বাপের বাড়ির লোকজন তাকে প্রায় এড়িয়েই চলে।কোন আচার অনুষ্ঠান বাঁধলে কিংবা বাড়ি কিছু হলে সবার শেষে সে খবর পায়।এ নতুন না।এখন বিষয়গুলো তার গা স‌ওয়া হয়ে গেছে।তবে মাঝে মাঝে অভিমান হয় ভাইদের উপর।সে ভাই ভাই করে জীবন পাত করে অথচ তার ভাইরা তাকে গণনায়‌ও ধরে না।তানিয়া জানে বাবা যতদিন বেঁচে আছে ততদিন পর্যন্ত ঐ বাড়িতে তার সমাদর আছে তারপর হয়ত কেউ আর তার খোঁজ নেওয়ার সৌজন্যটুকুও দেখাবে না।এসব কথা ভেবে নিশ্বাস ভারী হয় তানিয়ার। দ্বীর্ঘশ্বাসের সংখ্যা বাড়ে।

মেয়ে দেখার পর তানিয়ার মেজ বোন জেদ ধরলো তারা তানিয়াকে সাথে নিয়ে যাবে ঢাকায়।বিয়ের দিন ক্ষণ পড়ে গেছে, এখন থেকেই আয়োজন শুরু করতে হবে।তানিয়া আপত্তি জানালো, বাড়ি কেউ নেই ফাঁকা বাড়ি রেখে সে যাবে না। কিন্তু তার বোন শুনলো না ফাঁকা বাড়িতে তানিয়া একা কি করবে এসব নানা কথা বলে রাজি করালো তানিয়া কে।বোনের জেদের কাছে হার মানল তানিয়া। আশরাফকে ফোন করে বাপের বাড়ি যা‌ওয়ার কথা বলে র‌‌ওনা দিল তাদের সাথে। এরমধ্যে আদিবের সাথে একবার কথা হয়েছিলো কিন্তু তাকে জানানো হয় নি সে ঢাকা যাচ্ছে।

বাবার বাড়ি পৌঁছানোর পর তানিয়া দেখলো অনুষ্ঠানের তোড়জোড় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে তার কোন প্রয়োজনই নেই।ভাবির বাপের বাড়ির লোকজন‌ই এখানে সর্বেসর্বা।তার প্রতি ভাই ভাবির উদাসীনতা দেখে মনে হলো এখানে সে না আসলেই ভালো হতো, একবারের জন্য মন চাইলো কোন একটা অযুহাত দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়তে কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সেটা আর হলো না।সবার ব্যস্ততার মাঝে একঘেয়েমি ঘিরে ধরলো তাঁকে ভাবলো ঢাকায় যখন এসেছেই তখন বসে না থেকে তৃপ্তি আর ওর বাচ্চাদের জন্য কিছু কেনাকাটা করা যাক।যেমন ভাবা তেমন কাজ বাবাকে বলে বাড়ি থেকে একটা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল নিকটস্থ শপিং মলের উদ্দেশ্যে।গাড়ি হাসপাতালের সামনে দিয়ে যা‌ওয়ার সময় হাসপাতালের গেঁটে চোখ পড়লো তার।আদিব তখন হাসপাতালে ঢুকছে।আদিব কে দেখে ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলল তানিয়া। ড্রাইভার কে তার জন্য সেখানে অপেক্ষা করতে বলে কিছু না ভেবেই ছুটে গেল আদিবের দিকে।ছেলেকে একবার পিছু ডাকতে গিয়েও আশেপাশে মানুষজনের ভিড় দেখে থেমে গেল।পিছু নিল ছেলের।ছেলে এসময় হাসপাতালে কি করছে মনে এ প্রশ্ন উদয় হতেই ভেতরটা খুঁত খুঁত করে উঠলো।সবার প্রথমে মনে এলো দিপ্তীর কথা মেয়েটা অন্তঃসত্ত্বা।তার কিছু হলো না তো?এ ভাবনায় মন ব্যাকুল হলো।পায়ের গতি বাড়ালো।আদিব কে ধরবে ধরবে ভাব এমন সময় ২৬৭নং রুমে প্রবেশ করলো আদিব।তানিয়া রুম নাম্বার টায় একবার চোখ বুলিয়ে ঘরের খোলা দরজা দিয়ে উঁকি দিল ভেতরে। দৃশ্যমান হলো ঘরের পরিস্থিতি।কানে এলো জাহানারা আর আদিবের কথোপকথন। স্থবির হলো পা।থমকে গেল সে।ছেলে তাকে মিথ্যা কথা বলে এখানে এসেছে, জাহানারার সেবা শুশ্রূষা করছে এই ব্যাপারটা হজম হলো না তার।ছেলেকে যে মেয়ে থেকে দূরে রাখতে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বাবার কাছে হাত পেতে টাকা নিয়েছে, ভাইদের কাছে ছোট হয়েছে ,ভাবিদের এতো এতো কথা সহ্য করছে, ছেলে সেই মেয়ের শরীর ঘেঁষে বসে আছে এটা সহ্য করতে পারলো না সে। চোয়াল শক্ত হলো তার।ধীর পায়ে নেমে এলো সিঁড়ি বেয়ে।বের হলো হাসপাতাল থেকে। অপেক্ষা করতে লাগলো ছেলের।সময় অতিবাহিত হলো, একসময় হাসপাতাল গেটে দেখা মিলল আদিবের।তানিয়া ফোন বের করে কল লাগালো ছেলেকে ।জানতে চাইলো সে কোথায় আছে।আদিব জানালো সে দিপ্তীর বাড়ি আছে।ছেলের মুখে মিথ্যা শুনে দাঁতে দাঁত চাপলো তানিয়া।ছেলের মিথ্যা শুনে রাগ হলো তার।রাগে মাথার রগ দপদপ করে উঠলো।নিজেকে অতি সাবধানে সামলে ছেলেকে বলল গাড়িতে এসে বসতে।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল ছেলের সাথে এ বিষয়ে কথা বলা দরকার। পরিষ্কার কথা।যার জন্য ড্রাইভার কে গাড়ি নিতে বলল খুলানর দিকে।বাবাকে ম্যাসেজে জানালো হঠাৎ একটা জরুরি কারণে বাড়ি যেতে হচ্ছে তাকে।এখন কিছু বলতে পারছে না।পরে কথা বলবে। গাড়ি আগামীকাল পাঠিয়ে দেবে।

তানিয়া আর আদিব যখন বাড়ি পৌঁছাল তখন রাত প্রায় দশটা।তানিয়া রাবেয়া কে বলে গাড়ি চালককের তদারকির দায়িত্ব দিয়ে, শীতল গলায় আদিব কে বলল,

-আদিব ফ্রেশ হয়ে আমার ঘরে আসো।

এরপর আদিব কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই স্থান ত্যাগ করলো।আদিব মায়ের প্রস্থানরত পথের দিকে তাকিয়ে একটা দম ফেলল।পা বাড়ালো নিজের ঘরে।আজ অন্যদিনের থেকে একটু বেশি সময় নিলো ফ্রেশ হতে।এ সময়ের মধ্যে মনে মনে গুছিয়ে নিলো মা যদি হাসপাতালে যা‌ওয়ার ব্যাপারে তার কাছে কিছু জানতে চাই তাহলে কি বলবে।

আদিব মায়ের ঘরের দরজায় একবার টোকা দিতেই তানিয়া গমগমে গলায় ভেতরে আসতে বলল তাকে।সে ছেলের অপেক্ষাতেই ছিল।আদিব ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো তানিয়া বিছানার উপর গুম হয়ে বসে আছে।আদিব কে ভেতরে ঢুকতে দেখে তার দিকে তাকালো তানিয়া।কোন ভণিতা ছাড়া প্রশ্ন করলো ,

-হাসপাতালে কি করছিলে?

-জাহানারা কে দেখতে গিয়েছিলাম।

নিজের ভেবে রাখা উত্তরটা সময় অপচয় না করেই বলল আদিব।তানিয়া দৃষ্টি রুক্ষ হলো।মায়ের দৃষ্টির সামনে নড়েচড়ে দাঁড়ালো আদিব।এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো মা কি কোনোভাবে সম্পূর্ণ সত্যি জেনে গেছে? কিন্তু আবার মনে হলো সেটা কি করে সম্ভব।সে জাহানারার স্বামী হ‌ওয়ার নাটক করছে, এ বিষয়টা রাকিব ব্যতীত বাইরের কেউ জানে না, এমন কি আকিবের স্ত্রী তারিন‌ও না।তাহলে?তার ভাবনা চিন্তার মধ্যে তানিয়া আবার বলল,

-কেন গিয়েছিলে?তোমাকে কি আমি বলিনি ঐ মেয়ে থেকে দূরে থাকবে?

তানিয়ার শীতল কণ্ঠ স্বর আদিব অবাক চোখে তাকালো।তানিয়া ছেলের চোখে চোখ রেখে বলল,

-আদিব তুমি কি চা‌ও সেটা স্পষ্ট করে বলবে আজ ,তুমি কি চাও ঐ মেয়েকে বিয়ে করতে।

রাগে ফুঁসছে তানিয়া।আদিব মায়ের কথা শুনে হতাশ হলো।”মানে কীসের মধ্যে কি পানতা ভাতে ঘি” এই টাইপের কথা বলছে তার মা।সে একটা হতাশ শ্বাস ফেলল বলল,

-মা তুমি ওভাররিয়াক্ট করছো

-তুমি দিনের পর দিন ঐ মেয়ের স্বামী সেজে তার সাথে রং ঢং করছো !আর আমাকে বলছো আমি ওভাররিয়াক্ট করছি?

দাঁতে দাঁত পিষে বলল তানিয়া। আদিব চমকালো।বুঝলো তার মা কোনো ভাবে সত্যিটা জেনে গেছে।আদিবের মুখের পরিবর্তিত অভিব্যক্তি দেখে তাচ্ছিল্য হাসলো তানিয়া ,বলল,

-কি মনে করেছিলে আমার থেকে সত্যি লুকাবে আর আমি কিছু বুঝতে পারবো না!

-মা তুমি যেমন ভাবছো তেমন কিছু না।আমি জাস্ট মানবিকতার খ্যাতিরে ওদের হেল্প করছি। ব্যাস।

আদিব নিজের সপক্ষে বলল।এরপর এগিয়ে গিয়ে মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে, জাহানারার জ্ঞান ফেরার পর থেকে যা যা ঘটেছে সমস্তটা খুলে বলল তানিয়া কে।তানিয়া চুপচাপ শুনলো সবটা। শেষ হতে দিলো ছেলের কথা। জাহানারার মানসিক অসুস্থতার কথা তার কানে গিয়েছিল কিন্তু তার সুস্থতার দায় যে তার ছেলের কাঁধে এসেছে সেটা জানা ছিল না।আদিবের কথা শেষ হতেই সে বলল,

-কে পাগল হলো কি,কি হলো না, তাতো তোমার দেখার দরকার নেই আদিব।শোনো আদিব, তুমি ওদের চেন না,ওরা খেতে দিলে শুতে চাই এমন ধরনের মানুষ। তোমার ভালো মানুষীর সুযোগ নিচ্ছে ওরা।আমার কথা শোনো ,যা করছো করছো এবার ওদের সাফ সাফ বলে দাও তুমি এসব নাটক ফাটক করতে পারবে না।আমি চাই না তুমি ঐ মেয়ের আশে পাশে থাকো।

তানিয়ার এমন স্বার্থপর মনোভাবটা ভালো লাগলো না আদিবের।তার মায়ের রাগ বেশি, সে জেদী,নিজের মতো থাকতে পছন্দ করে এই জিনিস গুলো মানতে পারলেও তার মায়ের এই স্বার্থপর মনোভাব মানতে পারলো না সে।চোখ মুখে অন্ধকার নামলো।গম্ভীর গলায় বলল,

-মেয়েটা অসুস্থ মা।আমার একটু সহযোগিতায় যদি ও সুস্থ হয়ে ওঠে তো ক্ষতি কী?

-আর যদি কখনো সুস্থ না হই? তাহলে কি সারাজীবন ওর বর হ‌ওয়ার নাটক করবে তুমি! হ্যাঁ?

তানিয়ার রাগান্বিত কণ্ঠ স্বর।আদিব বলল,

-তার প্রয়োজন পড়বে না। তাছাড়া আমি সেজ চাচুকে বলেছি সামনের মাসে আমি চলে যাবো। এরমধ্যে ওরা ঠিক কোনো না কোন ব্যবস্থা করে নেবে।

কণ্ঠে দৃঢ়তা আদিবের।তানিয়া ছেলের দিকে তাকালো।ছেলেকে আজ অন্যরকম লাগলো তার কাছে।অবাধ্য, অনড়।অজনা ভয়ে বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো তার।সে হড়বড়িয়ে বলে উঠলো,

-তোমার বড় মামা রুবাইয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে।

-স্যরি?

হঠাৎ প্রসঙ্গ বদলানোতে মায়ের কথা বুঝতে অসুবিধা হলো আদিবের।সে ভ্রূতে ভাজ ফেলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। তানিয়া একটু সময় নিয়ে বলল,

-তোমার বড় মামা রুবাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে দিতে চায়।সে জন্য প্রস্তাব দিয়েছে।

-শামীমের আশরাফ কে পছন্দ না, কিন্তু তার ছেলেকে পছন্দ! ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না তানিয়া?

ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল আশরাফ। আশরাফের হঠাৎ আগমনে চমকালো তানিয়া। ভড়কালো কিঞ্চিৎ।বাবাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো আদিব। আশরাফ কাঁধের ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে সোফায় বসলো।জগ থেকে পানি ঢেলে গ্লাস হাতে নিয়ে ফের বলল,

-কি হলো!থামলে কেন?কথা বলো ছেলের সাথে।আমার উপস্থিতি ভুলে যাও।

নির্লিপ্ত কণ্ঠে কথাটা বলে গ্লাসে ঠোঁট ছোঁয়াল আশরাফ। আশরাফের ঠেস দেওয়া কথার রেষ তখনো তানিয়ার কানে বাজছে,সে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো আশরাফের দিকে, সেভাবেই বলল,

-আশরাফ আর আশরাফের ছেলের মধ্যে পার্থক্য আছে, যার জন্য

-টাকা আর পাউন্ডের বুঝি?

তানিয়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে কটাক্ষের সুরে বলল আশরাফ।তানিয়ার চোয়াল শক্ত হলো।সে দাঁত পিষে বলল,

-তুমি ভুলে গিয়ে থাকলে, তোমাকে একবার মনে করে দিই যে,তোমার ছেলের পাউন্ড থেকে তাদের ডলার‌ও কম নেই। সুতরাং যা বলবে ভেবে চিন্তে বলবে।

তানিয়ার কথায় আশরাফের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো তাচ্ছিল্যের হাঁসি।সে অর্ধেক পানি ভর্তি গ্লাসটা সামনের টি টেবিলের উপর রাখলো। হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল,

-ভাবনা চিন্তা করার জোর নেই।তুমিই বলো হঠাৎ তোমার বড় লোক ভাইয়ের আমার ছেলেকে মেয়ের জন্য বেছে নেওয়ার কি কারণ?

-আদিব আমার ছেলে এটাই যথেষ্ট।

তানিয়া সময় নষ্ট না করে বলে উঠলো।তার কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট।তানিয়ার কথাটা কানে যেতেই উচ্চ স্বরে হাসলো আশরাফ।বলল,

-তাই না কি!তা বেশ।ভালো।ভালো। আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা মা ছেলে তাহলে নিজের আলোচনা শেষ করো, আমি ফ্রেশ হয়ে নিই।

আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো আশরাফ।তানিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো তার কাজ কর্ম।বাবা মায়ের মধ্যে এই সুপ্ত রেষারেষি দেখে গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আদিব। আশরাফ চলে যেতেই তানিয়া একটা শ্বাস টেনে উঠে দাঁড়ালো। ছেলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,

-আদিব , তোর বড় মামা অনেক আশা নিয়ে আমাকে এই প্রস্তাব টা দিয়েছে ,আমি তাকে না করতে পারে নি

-না করতে পারো নি মানে?তুমি কি মামাকে কথা দিয়োছো?
মায়ের কথা কেটে প্রশ্ন করলো আদিব।তানিয়া ছেলেকে আশ্বস্ত করে বলল,

-না কথা দেয় নি।বলেছি তোর মতামত নিয়ে জানাবো।তুই সময় নে। ভাব।রুবাইয়া মেয়ে হিসাবে খুব ভালো। আমি এক দুইবার কথা বলেছি তো ওর সাথে,কি আন্তরিক ব্যবহার!তার‌উপর যেমন চেহারা, তেমন লেখা পড়া।নিজের ভাতিজি বলে বলছি না, এই যুগে অমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া দায়।

রুবাইয়ার প্রশংসায় আরো কিছু বাক্য ব্যয় করলো তানিয়া তবে আদিব সেসব শুনলো বলে মনে হলো না।তাকে অন্যমনস্ক দেখালো।তানিয়া অবশ্য সেদিকে খেয়াল করলো না।সে নিজের মতো ভাতিজির প্রশংসা চালিয়ে গেল।

চলবে, ইনশাআল্লাহ।

#সৌরকলঙ্ক
#উম্মে_প্রভা
#পর্ব_১৪

এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল আশরাফ আর শামীম।এ বন্ধুত্বের দরুন আশরাফের আসা যা‌ওয়া ছিল শামীমের বাড়ি। সেখান থেকেই তানিয়ার সাথে তার প্রেমের সূত্রপাত হয়।দুই বছর শামীমের অলক্ষ্যে তানিয়ার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যায় আশরাফ।এরপর যখন তানিয়ার বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ পড়তে শুরু হয় ,তখন বন্ধুর দ্বারস্থ হয় আশরাফ।বন্ধু তার দিক টা বুঝবে এমন আশায় বন্ধুর সামনে সাহস নিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আশরাফের মনের ভাবনাকে তুষের নেয় উড়িয়ে দিয়ে তার উপর ক্ষিপ্ত হয় শামীম।তার বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে তার বোনকে সম্পত্তির লোভে ফাঁসিয়েছে আশরাফ এমন দোষ আরোপ করে। শামীমের কথায় ক্ষত বিক্ষত হয় আশরাফের ভেতরটা। আশরাফের আর্থিক অবস্থা তাদের মতো অত উন্নত না হলেও কখনো কারো কাছে হাত পাততে হয় নি। তাছাড়া শামীম তাকে এতো বছর ধরে চেনার পরেও এমন কথা বলতে পারলো…… এটা ভেবে মুষড়ে পড়ে সে। বন্ধুর উপর অভিমান করে সিদ্ধান্ত নেয় তানিয়ার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করবে।নিজের মনের কথা কাগজের পৃষ্ঠায় সাজিয়ে গুছিয়ে লিখে পাঠায় তানিয়া কে।ভুলে যা‌ওয়ার চেষ্টা করে তাকে। আশরাফের সেই চেষ্টা বিফল করে দিয়ে তার দরজায় হাজির হয় তানিয়া।জাহির করে নিজের ভালোবাসা। আশরাফ কে জানায় সে নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে ।এখন আশরাফ তাকে বিয়ে না করলে মৃত্যু ছাড়া তার আর গতি নেই। অজ্ঞাত সব ভাবনা চিন্তা ফেলে,শামীমের অপমান দূরে ঠেলে আশরাফ বিয়ে করে তানিয়াকে।

তানিয়ার বিয়ের খবর বাড়ি পৌঁছানোর পর তানিয়ার মা বিছানা নেয়, তোফায়েল মেয়ের সাথে সব সম্পর্ক ছেদের ঘোষণা দেন,শামীমের জন্য তানিয়া এমন একটা কাজ করেছে বলে শমীম কে যাচ্ছে তাই শোনান।এই ঘটনার পর শামীম রাগে ক্ষোভে অন্ধ হয়ে আশরাফের কাছে ছুটে যায়। আশরাফ তখন বউ নিয়ে খুলনায়।আহাসান‌উল্লাহ ছেলের হঠাৎ বিয়ে করে বাড়ি ব‌উ নিয়ে আসায় রাগ করলেও ছেলেকে বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছে। জাহানারা বেগম‌ও ধৈর্যের সাথে সবটা মেনে নিয়েছে। শ্বশুর বাড়ি থেকে তিরস্কার পেলেও বাবা মায়ের নরম ব্যবহারে আশরাফ সবে মাত্র স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল ঠিক সেই সময় তার সামনে উপস্থিত হয় শামীম। আশরাফ *****বাজারে ছিল,সাথে জায়েদ।দুই ভাই মায়ের কথা মতো জরুরি কিছু সদয় করে ফিরছিল। হঠাৎ সেখানে শামীমের অপ্রত্যাশিত আগমনে কিঞ্চিৎ চমকালো আশরাফ। শামীমের চোখে মুখে তখন রাগের গনগনে আগুন।দ্বীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের দরুন শামীমের এই রাগকে চেনে আশরাফ।এমন রাগে শামীমের হুঁশ জ্ঞান থাকে না ,কি বলে, কি করে নিজেও জানে না, এটা খুব ভালো করে জানে আশরাফ। আশরাফ শামীমের মাত্র অতিরিক্ত রাগের কথা ভেবেই তার দিকে এগিয়ে গেলে, নরম স্বরে সাবধানে কথা বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু শামীম তার কথা শুনতে প্রস্তুত ছিল না তাই তো কোন কিছু না ভেবেই আশরাফের গায়ে হাত তুললো।সপাটে চড় বসালো আশরাফের গালে ,শুধু তাই নয় হিংস্র বাঘের মতো খুবলে ধরলো আশরাফের শার্টের কলার। গালাগালি করতে লাগলো অকথ্য ভাষায়।ভরা বাজারে মানুষ জনের মধ্যে শামীমের এমন নিয়ন্ত্রণ হীন আচরণ দেখে জায়েদ হতভম্ব হলো, ভাইকে শামীমের থেকে ছাড়াতে এগিয়ে গেল।ছাড়াতে চাইলো শামীমের বজ্র মুষ্টি থেকে আশরাফ কে। কিন্তু শামীমের আক্রোশের কাছে জায়েদের প্রচেষ্টা সফল হলো না, উলটো আশরাফ কে ছেড়ে রাগের মাথায় সজোরে ধাক্কা দিল জায়েদকে।সাথে সাথে পিচ ঢালা রাস্তায় ছিটকে পড়লো জায়েদ……

-বাবা!

-হু!

আদিবের ডাকে চমকে উঠলো আশরাফ।বেরিয়ে এলো সেই বী”ভৎস স্মৃতি থেকে।হাত দিয়ে কানের পাশের ঘাম মুছে সামনে টেবিলের উপর থাকা পানি ভর্তি গ্লাসটা হাতে তুলে নিল, ঢকঢক করে পান করলো পানি।একটু সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলো আশরাফ। তারপর আদিবের উদ্দেশ্যে বলল,

-কিছু বলবে?

আশরাফ নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও আদিবের চোখ এড়ায়নি বাবার অস্থিরতা।সে বলল,

-তোমাকে অস্থির দেখাচ্ছে!কিছু হয়েছে?

-না তেমন কিছু না।তোমার ডাকে চমকে উঠেছি এই।

আদিব এগিয়ে গেলো।বাবার সামনে রাখা সোফায় বসে আশরাফের দিকে সন্দেহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

-সত্যি?

-তোমার মায়ের মতো কথা বলো না!তোমার মুখে মানাচ্ছে না।

-সব কথায় মা-কে টানো কেন?

-বেশি ভালোবাসি তো তাই।

ফিচলে হেঁসে বলল আশরাফ।বাবার কথায় মৃদু হাসলো আদিব। আশরাফ ফের বলল,

-হঠাৎ এ সময় বাবার কাছে! কিছু বলবে?

-হুম।মা কালকে যে বিষয়ে কথা বলছিল সেটা নিয়ে একটু কথা বলার ছিল।কি করবো বলতো?

-তোমার কি মনে হচ্ছে সেটা বলো আগে।

-সত্যি কথা বলতে আমি এখন বিয়ে সাদি করতে চাই না।

-বিয়ে শাদি করতে চাও না, না কি রুবাইয়া কে বিয়ে করতে চাও না?

ছেলের কথা কেটে জিজ্ঞেস করলো আশরাফ।আদিব বাবার দিকে তাকালো। ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে বলল,

-দুটোই।

-তাহলে সেটা তোমার মা কে বলো।

-বলেছি।কাজ হয় নি।মায়ের এক কথা, মেয়েটা ভালো, একটু ভেবে দেখ, সময় নে।

-তাহলে সময় নাও ।ভাবো।

-তোমার কোন আপত্তি নেই এই সম্বন্ধে?

-না।বিয়ে করবে তুমি, সংসার করবে তুমি, সেখানে আমি আপত্তি করে কী করবো।

-এমন দায় সারা কথা বলছো কেন?

-দায় সারা কথা বলছি না,সত্যি বলছি।দেখো ,ভাবো ,সময় না‌ও । তারপর সিদ্ধান্ত না‌ও। তোমার জীবন, তোমার যেটা ভালো মনে হয় তাই করো।বড় হয়েছে তুমি,এখন তো অন্তত মা বাবার সিদ্ধান্তের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসো।বি ইয়োর সেল্ফ আদিব।

ছেলের মুখে দৃষ্টি রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল আশরাফ।আদিবের মনে হয়েছিল মামার সাথে মন মালিন্যের কারণে বাবা হয়ত এই সম্বন্ধে আপত্তি জানাবে কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণিত করে বাবার এই ইতিবাচক মনোভাব তাকে নিরাশ করলো।সে ভেবেছিল বাবার আপত্তির জের ধরে মা-কে না করবে কিন্তু বাবার কথা শুনে মন পরিবর্তন করলো। সিদ্ধান্ত নিল রুবাইয়ার সাথে কথা বলার। সম্বন্ধ টা নিয়ে ভেবে দেখার।

______________
জাহানারার ডিসচার্জের পর তাকে খুলনা নিয়ে আসা হলো ,আদিব নিজে গিয়েছিল তাকে যশোর এয়ার পোর্টে রিসিভ করতে। ডিসচার্জের সময় আদিব থাকেনি এই নিয়ে জাহানারা খুব কান্না কাটি করেছে, কষ্ট পেয়েছে সে, যার কারণে তিন দিন পর আদিবের সাথে দেখা হলেও সে কথা বলল না।আদিব বুঝলো সেটা। কিন্তু তার‌ই বা কি করার ছিল। জাহানারার কাছে আসার জন্য তানিয়াকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করতে করতে তার পুরো তিন দিন লেগে গেল। জাহানারার থমথমে মুখটা দেখে একটা হতাশ শ্বাস ফেলল আদিব।

সারা রাস্তা আদিবের সাথে কোন কথা বলল না জাহানারা কিন্তু বাড়ি ফিরতেই কান্নায় ভেঙে পড়লো।একের পর এক অভিযোগ করলো।আদিব একটু তাকে ভালোবাসে না,তার কেয়ার করে না ইত্যাদি ইত্যাদি ।আদিব চুপ চাপ জাহানারার অভিযোগ মাথা পেতে নিল।অনেকটা সময় নিয়ে খ্যান্ত হলো জাহানারা।আদিব সহ বাকি সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সারাদিন কোন রকমে কাটলেও রাত বাঁধলো আরেক বিপত্তি। জাহানারা হাসপাতালে থাকাকালীন আদিব রাতে থাকলেও বাইরে এদিক-ওদিক হাঁটা হাঁটি করে ওয়েটিং রুমে শুয়ে বসে কাটিয়ে দিত।জাহানারা কিছু বললে তার অসুস্থতার দোহাই দিত। কিন্তু আজ যখন জাহানারা ঘুমাতে যা‌ওয়ার প্রস্তুতির সময় আদিব কে নিজের সাথে, নিজের পাশে বিছানায় শোয়ার কথা বলল তখন যেন চমকে উঠলো আদিব।অবাক চোখে তাকালো জাহানারার দিকে।তারপর যখন নিজেদের মিছিমিছি সম্পর্কের কথা মনে হলো তখন কিছু না বলে হুট করে ঘর থেকে বের হয়ে এলো।বাইরে এসেই শব্দ করে একটা দম ফেলল।সময় অপচয় না করে সোজা হাঁটা দিল ছোট চাচুর কাছে। জাহানারার সাথে শাহেদ‌ও এসেছে খুলনা।শাহেদ জায়েদের সাথে কথায় ব্যস্ত ছিল।আদিব কে একপ্রকার তার দিকে ছুটে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো,

-কি হয়েছে আদিব?জাহান ঠিক আছে?

চাচুর প্রশ্ন শুনে আদিব সেজ চাচার দিকে এক পলক তাকালো জোরপূর্বক হাসলো। হেঁসে বলল,

-জাহানারা ঠিক আছে চাচু।তুমি একটু এদিকে এসো, তোমার সাথে কথা আছে।

-কি কথা?

বলতে বলতে সামনে এগিয়ে গেল শাহেদ।আদিব সেজ চাচার দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি টেনে শাহেদের বাহু ধরে তাকে এক পাশে নিয়ে বলল,

-জাহানারা আমাকে ওর সাথে এক বিছানায় থাকতে বলছে।এখন কি করবো?

-কি!

-হ্যাঁ।চাচু শোনো আমার না এসব ভালো লাগছে না। তাছাড়া আমি “সম্পূর্ণ রেট্রোগ্রেড আ্যমনেশিয়া” সম্পর্কে যতটুকু জানি সেখানে রোগীর কিন্তু এত জ্ঞান থাকেনা।সে একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়, তাকে জ্ঞান ফেরানোর পর যা বোঝানো হয় সে তাই বোঝে, তাই জানে,তার নিজস্ব কোনো বোধ থাকেনা।এখন কথা হচ্ছে স্বামী -স্ত্রীর, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক এ বিষয়ে তো আমরা জাহানারা কে কিছু জানায়নি। তাহলে সে এত কিছু কি করে জানলো? ইজেন্ট ইট’স স্ট্রেঞ্জ!

থামলো আদিব।তার কণ্ঠে সন্দেহের ছাপ।শাহেদ বুঝলো যেটা।তবে আদিবের কথা গুলো ফেলে দিতে পারলো না সে ।তাকেও ভাবালো কথা গুলো। চিন্তার একটা মৃদু রেখা খেলে গেল তার চোখে মুখে।সেই সময় সেখানে উপস্থিত হলো নেহা। ইতস্তত করে বলল,

-স্যার স্যরি আমি আপনাদের কথা শুনে ফেলেছি, আসলে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই কানে এলো কথাগুলো।আসলে ম্যাম যেগুলো বলছে বা করছে সেখানে ওনার কোনো ভুল নেই উনি একদিন আমার কাছে জিজ্ঞেস করছিল স্বামী স্ত্রীর কি?তাদের সম্পর্ক কি আমি কিছু না ভেবেই ওনাকে নিজের মতো বলেছিলাম।

-তুমি কি পাগল নেহা?এসব বলার আগে আমাদের বলবে না?

-স্যরি স্যার। কিন্তু আমি তো মিথ্যা বলিনি। তাছাড়া এসব বিষয়ে ম্যামের‌ও তো জানার দরকার ছিল।তাই না।

নিজেকে সঠিক প্রমাণিত করার একটা চেষ্টা করলো নেহা।এটা তার পুরোনো অভ্যাস।নিজের ভুল কে সঠিক প্রমাণিত করার জন্য সে এমন ছোট বড় যুক্তি ব্যবহার করেই থাকে। দীর্ঘ দিনের পরিচয়ের সুবাদে শাহেদ জানে সেটা।সে বিরক্তি নিয়ে বলল,

-নেহা তুমি একটু বেশি বোঝো।যা‌ও এখান থেকে।

শাহেদের বকা খেয়ে চুপসে গেল নেহা।সে মুখ কাঁচুমাচু করে স্থান ত্যাগ করলো।আদিব চোখ মুখ গুটিয়ে বলল,

-এসব ক্যার্টুন কোথা থেকে জোগাড় করেছো!

-আমি করি নি তোর চাচাতো বোন করছে।বাদ দে। আচ্ছা চল আমার সাথে, দেখি কি করা যায়।

কথা বলতে বলতেই সিঁড়ির দিকে হাঁটা ধরলো শাহেদ আদিব‌ও তার পিছু নিল। জাহানারা রুমের সামনে এসে থামলো তারা। জাহানারা তখন তারিনের সাথে কথা বলছে।তারিন কে তার ভালো লেগেছে।তবে আকিব কে ভালো লাগেনি।আকিব তাকে কথায় কথায় ধমক দেয় এটা নিয়েই তারিনের কাছে অভিযোগ করছে জাহানারা।তারিন মুচকি হেসে তার সেই অভিযোগে সাঁই দিচ্ছে। জাহানারা সেই সাঁই পেয়ে আরো বাড়িয়ে চাড়িয়ে কথা বলছে।শাহেদ আর আদিব ঘরে ঢুকতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারিন। শাহেদের কিছু প্রয়োজন কি না জানতে চাইলো।

আদিবের জাহানারার সাথে স্বামীর অভিনয় করার বিষয়ে তারিন এখনো কিছু জানে না।আজ‌ও তাকে অন্ধকারে রাখতে শাহেদ বলল তাদের রাতের খাবারের সময় হয়েছে, তারিন যদি সেদিকটা একটু দেখে।তারিন চাচা শ্বশুরের কাছ থেকে আদেশ স্বরূপ অনুরোধ পেয়ে বিনা বাক্যব্যয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।তারিন চলে যেতেই শাহেদ বসলো জাহানারার সামনে।এদিকে ওদিকের কথা বলে কিছু সময় অপচয় করে বলল আদিবের মা অসুস্থ তাকে বাড়ি যেতে হবে।আদিবের চলে যা‌ওয়ার কথা শুনে মুখটা একটুখানি হয়ে গেল জাহানারার।আদিব সেটা দেখে তড়িঘড়ি বলে উঠলো,

-জাহানারা কাল সকালে চলে আসবো আমি।

আদিবের কথা শুনে তার দিকে তাকালো জাহানারা। অশ্রু স্বজল টলমলে চোখে বলল,

-সত্যি?

-হুম, সত্যি।

-কিন্তু আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।তুমি একবার গেলে আসতে চাও না।আমার ফোন‌ও ধরো না।

জাহানারা কথায় মনে একটু অপরাধবোধ উদয় হলো আদিবের।সে সত্যি এমনটা করে থাকে।তবে এই পরিস্থিতিতে জাহানারা কে আশ্বস্ত করতে বলল,

-আমি প্রমিস করছি আর এমন করবো না।

আদিবের কথায় জাহানারা আশ্বস্ত হলো কি না বোঝা গেল না।সে মাথা নাড়লো।আদিব স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো। আরো কিছু সময় জাহানারা সাথে বসে এটা সেটা নিয়ে গল্প করলো। তারপর জাহানারার খাওয়া হলে তাকে ঔষধ খাইয়ে বিদায় নিল।

আদিব যখন বাড়ি পৌঁছাল রাত তখন বারোটা।তানিয়া ছেলের অপেক্ষাতে জেগেই ছিল।আদিব আসতেই তাকে বলল খাবার টেবিলে আসতে।আদিব যদিও ও বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছিল কিন্তু মায়ের কথার পরে কথা বলল না। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসলো।তানিয়া না খেয়ে বসেছিল ছেলের জন্য।ছেলেকে খাবার দিয়ে সেও খেতে বসলো কিন্তু ছেলেকে খাবার প্লেটে খাবার নাড়াচাড়া করতে দেখে সে বুঝলো ছেলে খেয়ে এসেছে ঐ বাড়ি থেকে।সাথে সাথে খিধে মরে গেল তার।তবে আদিব কে সেটা বুঝতে না দিয়ে খাবার প্লেটে হাত রেখেই জিজ্ঞেস করলো ,

-জাহানারা কেমন আছে এখন?

-আগের থেকে অনেকটা ভালো।

-ওদের সেই ডাক্তার কবে আসবে যেন?

-সামনের মাসে পনেরো তারিখে।

এরপর কিছুক্ষণ নিরবতা। তারপর তানিয়া ফের বলল,

-ও… ভালো কথা তোমার মামা ফোন করেছিল।আমার কাছে জানতে চাচ্ছিলো তুমি কি বলেছো।

-তুমি বলো নি আমার সময় চাই?

-বলেছি। কিন্তু ওরা আবার ফিরবে তো, তাই চাইছিল ফেরার আগে যদি আকদটা হয়ে যেত, তাহলে সুবিধা হতো।

অনেকটা ইতস্তত করে বলল তানিয়া।আদিব মায়ের দিকে দৃষ্টি ফেলে বলল,

-এত তাড়াহুড়ো করতে পারবো না আমি, আমার সময় চাই মা।মামাদের তাড়া থাকলে অন্য ছেলে দেখতে বলো, আমার সমস্যা নেই।

-না না ওদের তাড়া নেই।তুই সময় নে।কোনো সমস্যা নেই।

ছেলের নেতিবাচক মনোভাব দেখে তড়িঘড়ি বলে উঠলো তানিয়া।এরপর আর কথা জমলো না মা ছেলের।আদিব ভর্তি পেটেও নিজের প্লেটের খাবার শেষ করলো।তানিয়া সবটা বুঝেও বাক্য ব্যয় করলো না।ছেলে তার অমতে যে রাস্তায় হাঁটছে তার জন্য এতটুকু ভোগান্তি তো তাকে পোহাতে হবেই!

চলবে, ইনশাআল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে