মায়ের কথা পর্ব-০৪

0
5

#মায়ের_কথা
পর্বঃ৪
#সাবাব_খান

আমি আর কথা বাড়ালাম না আম্মার সাথে। এমনিতেই ব্যস্ত জীবন। আম্মাও কত দূরে থাকে! তাই অপছন্দের ব্যাপার আর টানলাম না। এমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সময় ব্যবধান অনেক। আমার এখানে যখন সকাল বাংলাদেশে তখন রাত। সাতদিন পর এক আম্মা আবার প্রসঙ্গ উঠালেন, ‘কিরে কিছু জানালি না যে?’

‘কোন ব্যাপারে আম্মা?’

‘তোর বিয়ার ব্যাপারে।’
‘সেদিনই তো বইলা দিছি। রাফারে বিয়া করমু না।’

‘আরেহ্ আহাম্মক, তোর পিছনে শ’ত্রু লাগছে,শত্রু!’
‘কে? এমেরিকায় তো আমার তেমন কোনো শ’ত্রু নাই।’
‘আরে দ্যাশে শত্রু লাগছে!’
‘দ্যাশে তো সবসময়ই আমাগো শত্রু আছে।’

‘এহন নতুন কাহিনী শুরু হইছে।’
‘কি কাহিনী আম্মা?’

‘তোর মেজো চাচায়ও তোর কাছে মাইয়া বিয়া দিতে চায়।’
‘কি কও তুমি আম্মা? মেজো চাচী আর বড় মামি তো আপন দুই বোন। দুই বোনই মেয়ে নিয়া লাগছে আমার পিছনে?’
‘আরেহ্ হ! তোর চাচাতো বইনডা তো এক নম্বরের ব’দমাইশ। আমার ভাইঝিডা কিন্তু খুব ভালো। তোর জন্য একটা ব্রেকআপও দিছে।’

‘আমার জন্য না। গত সপ্তাহে তুমি যখন বলছিলা রাফা আমার জন্য ব্রেকআপ করছে। তারপরও আমি খোঁজ লাগাইছি। আমাগো সারা নিজেই সব খোঁজ নিয়া আমারে জানাইছে। সারা তোমারে কিছু কয় নাই এই ব্যাপারে?’
‘আরেহ্ ধুর! আমার বড় মাইয়াডা নানা বাড়ির মানুষ দেখতেই পারে না, রাফারেও না। তুই তোর বইনের বুদ্ধি লইস না। ওরে এতো কইলাম সাবাবরে কিছু জানাবি না। অয় তোরে জানাইছেই জানাইছে।’
‘জানাইবো না ক্যান? রাফা ভুং-ভাং বুঝাইছিলো তোমারে। এক ছেলের সাথে সম্পর্ক করছে। ঐ ছেলে রাফারে ছ্যাকা দিছে আমি আমেরিকায় আসার মাস খানেক আগে। তোমার ভাইজি কেমনে কইতে পারল; যে আমার জন্য ব্রেকআপ দিছে?’

‘আরেহ্ সারার একটা কতা! অর কতা বিশ্বাস করিস না!’

‘বুঝছি মা! তুমি তোমার ভাইয়ের মেয়েরে বউ কইরা আনার জন্য নিজের মেয়েরেও অবিশ্বাস করতেছো। শোনো মা, কোন কিছুতেই কইরাই লাভ নাই। আমি তোমার ভাইজিরে বিয়া করমু না।’

‘তাইলে তো তোর চাচায় তোর কাছে মাইয়া বিয়া দিবো। সমস্যাডা বোঝোস না?’

‘কেন,বাংলাদেশে কি আর মাইয়া নাই? মামা,চাচার মাইয়া ছাড়া তোমার মাথায় কিছু ঢোকে না?’

‘শোন, তোর চাচায় ভালো না! চাচাতো বইনেও ভালো না। তোগো গুষ্টির কেউ ভালো না
পুরা গুষ্টিডাই খা’রাপ। এই গুষ্টির মাইয়ার লগে আমার ভাইঝির তুলনা! হুহ্!’

‘হুম, তোমার ভাইঝি তো খুব ভালো! তুমি কি ভুইলা গেছো সবসময় অরা আমারে কইতো পা’গলের পুত! তোমার ভাইঝিও কিন্তু পা’গলের বইন। সারাজীবন আমারে পা’গলের পুত কইছে।কত অপমান করছে! আমিও এহন পা’গলের বইনে রাফারে বিয়া করমু না।’

‘তুই জানোস দেশের খবর! তোর মামায় প্রত্যেকদিন আইসা আমারে দেইখা যায়। আমার সব ভালো-মন্দে আগায়া আসে!’

‘এখন তো আসবোই! প্রতিদিন কেন! দিনে চাইর-পাঁচ বারও আসবো। মাইয়া বিয়া দেওনের ধান্দা না! তোমার তো খোঁজখবর নিবোই? আর তুমি ভাইয়ের দুই দিনের ভালো ব্যবহারেই সব ভুইলা গেলা!’

‘আমার ভাইয়ের মতো ভাই অয় না।’

‘আচ্ছা শোনো, সারা আমারে কইল। মেজো চাচায়ও নাকি মাইয়া বিয়া দেয়ার জইন্য খুব খোঁজখবর নেয় তোমাগো!’

‘তোর চাচা হইছে স্বা’র্থপর! অয় খোঁজ নেয় স্বার্থের জইন্য।’

‘মামা-চাচা দুইটাই স্বার্থপর। সবাই এখন স্বা’র্থের জন্য খোঁজ নেই। মাইয়া বিয়া দেয়ার জন্য। আমি কারো মাইয়াই বিয়া করমু। আমি আমার পছন্দ মত বিয়া করমু।’

‘এই শোন হা’রা’মজাদা, আমার ভাইজিডার মনডা খা’রাপ। মনটা একদম নষ্ট হয়া যাইতেছে। মনের কষ্টে আছে। তুই বিয়া করলে আমার ভাইডা খুশি হইতো!’

‘এমেরিকা আসছি কি তোমার ভাইরে খুশি করতে? আর একটা কথাও বলবা না। আমি কারো মেয়েই বিয়া করমু না। আমার পছন্দ মত বিয়া করমু। এইটাই শেষ কথা।’

…………
এদিকে মেজো চাচাও আমাকে বেশ কয়েকবার কল দিয়েছিলেন তার মেয়ের কথা বলতে। আমি ভদ্রতার খাতিরে একবার কল রিসিভ করে আর রিসিভই করিনি। দুনিয়াতে যে কত রঙের মানুষ আছে! সবাই কোনো না কোনোভাবে স্বার্থপর! আপনি যদি ভি’কটিম না হন তাহলে আপনি বুঝবেন না। আমিও বুঝতাম না ভাগ্য পরিবর্তন করতে না এলে। আমার মনে হল, চাচা-মামা কারোরই অতীতের কথা মনে নেই। সেইসব দুর্ব্যবহারের কথাও মনে নেই। কতো যে ভালো মানুষ তারা!

এমেরিকায় আসার দু’মাস না পেরোতেই আম্মা বড় রকমের ঝামেলা শুরু করেন। অনেক কান্নাকাটি করে যাচ্ছেন। বড় মামার মেয়ে রাফাকে বিয়ে করতেই হবে। নয়তো মামার সাথে নাকি সম্পর্ক থাকবে না। আমি আম্মাকে বোঝালাম আমার যে মেজো চাচীটা সারাজীবন জ্বালিয়েছে সে হচ্ছে বড় মামীর আপন বোন। আমি যদি রাফাকে বিয়ে করি তাহলে বড় মামী আর তার বোন মিলে আম্মাকেই বের করে দিবে আমার জীবন থেকে। আম্মা বুঝতে চাইলেন না। জোর করলেন আমার সাথে। আমি শেষ পর্যন্ত আমার গার্লফ্রেন্ডের কথা বললাম। তারপরও আম্মার মন গলাতে পারলাম না। আম্মা অনেক কান্নাকাটি করলেন। শেষ পর্যন্ত সু’ই’সাইডের ভয় দেখালেন। রাফাও নাকি সু’ই’সাইড করবে। এগুলো সবই বড় মামার শেখানো বুদ্ধি। ভাইয়ের দুই দিনের ভালো ব্যবহারে আম্মা অতীতের সব ভুলে গেছেন। আগের অপমানের কোন কিছু মনে নেই তার। রাফা নাকি খুশি হবে আমি বিয়ে করলে! কান্নাকাটি করে আমার জন্য! রাফার মন খা’রাপ! ওর ভবিষ্যতের কি হবে? এসবই আম্মার অজুহাত। তার ভাইঝির যদি কিছু হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আম্মাকে ওয়াদা দিলাম রাফা কেই বিয়ে করবো।

বিয়ের ওয়াদা দিলেও আমার প্ল্যান কিন্তু আমার মনেই আছে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে