অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৫২

0
19

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৫২
হলুদ গোলাপগুলো টকটকে লাল রক্তে রঞ্জিত হয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আনন্দিত সময়টা যেনো মুহূর্তেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেলো৷ নয়নার সাদা হাতটাও তাজ রক্তে মেখে আছে। দানবের মত গাড়িটা মূহুর্তেই জলজ্যান্ত মানুষটাকে রক্তাক্ত করে ছুটে চলে গেছে।
“নয়না চিৎকার করার শক্তি টুকুও পাচ্ছে না। হঠাৎ খেয়াল করলো রাস্তার অপর পাশে জিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। সামনে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো! তাহলে এটা কে? আমি কি ভ্রমে আছি!
” ততক্ষণে পথচারীদের ভীড় জমে গেলো৷ রাস্তায় ভীড় জামানো লোকগুলো আহত ব্যাক্তিকে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো৷ নয়না গাড়িতে বসে বলে,কে আপনি?
“জিয়ান নয়নার হাত চেপে ধরে বলে,আমি তোমার হ্যাসবেন্ড।
” তাহলে উনি কে?
“নয়না। ও জাহিন। জানিনা হুট করে কোথা থেকে আসলো৷ ও না আসলে ওর জায়গায় আমি থাকতাম।
” জাহিন ভাইয়া এখানে কি করে আসলো!
“এসব এখন ভাবার সময় না। হসপিটালে যাই জাহিনের জ্ঞান ফিরুক তখন জেনে নেবো।
” হসপিটালের করিডোর পায়চারি করছে নাজিম চৌধুরী, জিয়ান, মিতা বেগম, মেহনুর, নয়না৷
“ডাক্তার ইমার্জেন্সি রুম থেকে বের হয়ে বলল,তেমন মেজর কোন সমস্যা হয়নি তবে বা’হাতে ফ্যাকচার হয়েছে আমরা প্লাস্টার করে দিয়েছি এক দেড়মাস লাগবে ঠিক হতে।
” নাজিম চৌধুরী বলল, জাহিন তোদের সাথে কি করে আসলো?
“বাবা আমি বুঝতে পারছিনা জাহিন ওই স্থানে কিভাবে উপস্থিত হলো! এক্সিডেন্ট হওয়ার কথা ছিলো আমার।
” তোমার মাথায় কোন কমন সেন্স নেই? মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি করছিলে?
“রাস্তা ফাঁকা ছিলো হুট করে কোথা থেকে বাসটা চলে আসলো বুঝতে পারছি না।
” মহাসড়ক ফাঁকা থাকে? মহাসড়কে সারারাত দূর পাল্লার বাস যাতায়াত করে৷ এতোটুকু ম্যাচিউরিটি নেই নাকি! যাও বৌমাকে নিয়ে বাসায় যাও। আগামীকাল তোমার ফ্লাইট বাসায় যেয়ে রেস্ট নাও।
“জিয়ান কিছু না বলে নয়নাকে নিয়ে বের হয়ে আসলো৷
” নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে৷
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
” আপনি সত্যি পাইলট জিয়ান রেজা চৌধুরী? না মানে আমি কনফিউজড।
“মাথার স্ক্রু-ঢিলা। দেখো এসব বিরক্ত লাগছে। বাচ্চাদের মত বিহেভিয়ার পরিস্থিতি ও বুঝো না নাকি?
” নয়না মন খারাপ করে বলে,স্যরি আপনার মন খারাপের কারন হতে চাইনি৷ আমি সত্যিই কনফিউজড।
“জিয়ান নয়নার হাত ধরে গাড়িতে এসে বসলো৷ মনে মনে বললো আজ তোর রক্ষা নেই জিয়ান। এই অভিমান তুই কিভাবে সামলাবি।
” পুরো রাস্তা নয়না কোন কথা বললো না। আমাবস্যার রাতের মতই তার মনটা কালো হয়ে গেছে অভিমানের মেঘে। শাড়ীর বিভিন্ন জায়গায় রক্তের ছিটা লেগে আছে।
গাড়ি চৌধুরী ম্যানশনে থামতেই নয়না গাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। কাভার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে৷ জিয়ান মাথায় আঙুল ঘষে বলে,নিব্বি বৌ পরিস্থিতি ও বুঝে না।এখন আমি এই অভিমানের মেঘ কিভাবে কাটাবো?জিয়ান রুমে এসে দেখে নয়না নেই। এদিক সেদিক উঁকি দিয়ে ডেকে উঠলো,সুনয়না, সুনয়না৷ কোন উত্তর না পেয়ে বারান্দায় খুঁজতে লাগলো। হুট করে মনে হলো ওয়াশরুমের কথা। জিয়ান ওয়াশরুমের সামনে এসে বলে, জান শুনছো… স্যরি জান।
” নয়না ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা বেডে এসে বসলো। ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে মাথা আঁচড়াতে লাগলো।
“জিয়ান নয়নার পাশে এসে বসলো৷
“নয়না সরে বসলো৷ জিয়ান আরেকটু পাশ ঘেঁষে বসলো,নয়না আরেকটু সরে বসলো। এভাবে সরতে সরতে খাট থেকে পরে যাওয়ার উপক্রম হলো৷ জিয়ান নয়নার হাত ধরে টান দিলো৷ নয়না সোজা এসে জিয়ানের বুকে পরলো৷
” নয়না সরে আসার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো।
“জিয়ান নয়নাকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে রাখলো। শান্ত কন্ঠে বলল,আমার ওভাবে রিয়েক্ট করা উচিৎ হয়নি৷ আমার বোঝা উচিৎ ছিলো তোমার ভুল হতেই পারে। আমরা দুজন দেখতে পুরো সেম। বাবা,মা ছাড়া আমাদের মধ্যে কেউ পার্থক্য করতে পারে না। স্যরি জান। প্লিজ রাগ করে থেকো না।তোমার মন খারাপ থাকলে আমার ভালো লাগে না৷
” নয়না ঠুকরে কেঁদে উঠলো।
“জিয়ান নয়নার থুতনি ধরে নয়নার চোখের পানি মুছিয়া দিয়ে বলে,এতো কান্না কিভাবে আসে? না মানে মেয়ে মানুষ এতো কান্না কি করে করতে পারে৷ উপসসস স্যরি সব দোষ আমার কান ধরে স্যরি বলবো?
” নয়না কিছু বললো না।
“কিছু তো বলো। বৌ কথা কও।
” নয়না মুখ খুললো আপনি আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন। থাকবো না এখানে আমি।
“জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিলো।
” নামান আমাকে যাবো না আপনার সাথে।
“জিয়ান বারান্দায় এসে বসলো। নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,ঝগড়া, রাগ অভিমান যত যাহোক বাপের বাড়ি যাবো এসব চলবে না। তুমি আমার আমার কাছেই থাকতে হবে।
” নয়না বলল,আমি বসবো।
“গলা জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বলো জাান আমি বসবো।
” বলবো না৷
“বুঝেছি কোল ছেড়ে নামতে ইচ্ছে করছে না৷
” নয়না অভিমানী সুরে বলল,আমি তো বাচ্চা আমি তো পরিস্থিতি বুঝি না৷ আমি তো পাগল। আপনার মত পাইলট আমার মত পাগলের সাথে মানায় না৷ আপনি আমার চেয়ে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করেন৷
“ইশশ আমার রাগী বৌটাকে দারুন কিউট লাগছে। রাগলেেও কাউকে এতো মায়াবী লাগে জানা ছিলো নাতো। শুনো বৌ ভুল আমি করেছি এবার শাস্তি হিসেবে হয়ত ফ্যানের সাথে ঝুলে পরবো৷ নয়ত এই বারান্দা থেকে লাফ দিবো। আমি পৃথিবী ছেড়ে দেবো প্রিয়া তুমি যদি রাগ না ভাঙ্গো। জিয়ান নয়নাকে চেয়ারে বসিয়ে বলে,বৌয়ের অভিমান ভাঙ্গাতে পারি না আমি আবার কিসের হ্যাসবেন্ড। রাখবো না এ জীবন দিয়ে দিলাম কিন্তু বিদায় পৃথিবী। বিদায় বৌ। জিয়ান নিজের এক পা তুলে দিলে রেলিংয়ে।
” নয়না জিয়ানের হাত ধরে বলে,আমিও ঝাপ দিবো আপনার সাথে।
“ভাঙবা তবুও মচকাবা না? বললাম তো জান আর কখনো এমন হবে না। স্যরি। এই কান ধরছি।
” নয়না জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,আমার সাথে একদম রাগ চলবে না৷
“আচ্চা স্যরি আর কখনো হবে না।
” মনে থাকবে তো?
“হু মনে থাকবে। এবার তো হাসো।
” আমি বুঝলাম না জাহিন ভাইয়া ওই সময় ওই স্থানে কি করে আসলো!
“হয়ত ঘুরতে বের হয়েছিলো। বাদ দাও জান৷ শুনো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
” সারপ্রাইজ!কিসের সারপ্রাইজ বলো।
“এখন বলা যাবে না৷ সারপ্রাইজ বলে দিলে সারপ্রাইজ থাকে নাকি।
” নয়না মনের মধ্যে তবুও ঘুরে ফিরে একি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। জাহিন কি করে আসলো! কেনোই বা আসলো।
“কি ভাবছো?
” প্রচুর ঘুম পাচ্ছে?
“এভাবে ঘুমিয়ে যাবে আমাকে ছেড়ে?
” বেডে আসো তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো৷
“আমাকে জড়িয়ে ধরলে তো তোমাকে ঘুমাতে দিবো না৷ কাল চলে যাবো বুঝতেই পারছো কুচকুচ হোতাহ্যা ইয়ার৷
” উঁহু এখন একদম এসব চলবে না। ঘুমাবো মানে ঘুমাবো।
“নিষ্টুর বৌ বরের মন বোঝে না।
“তোমার মন বুঝলে আর ঘুম হবে না।
” একটু সেক্রিফাইস করো না বৌ।
“নয়না হাই তুলতে তুলতে বলে,নো সেক্রিফাইস অনলি ঘুমফাইস। টাটা ডার্লিং বলেই রুমের দিকে আগ্রসর হলো৷
” জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে,আর কিছু না দাও একটা কিসমিস দাও বেব।
“নো কিসমিস ডিয়ার হাবি।
” জিয়ার নয়নার হাত ধরে ডান দিয়ে নিজের কাছে এনে অধরে অধর মিলিয়ে দিলো।
“নয়না জিয়ানের ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে দিলো। জিয়ান নয়নার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলে এটা কি হলো? জংলি বিল্লি।
” নয়না রুমে ঢুকে বলো ডু নট ডিস্টার্ব।
🌿 জাহিন আবার পিছু করলো জিয়ান আর নয়নার। বাইক একপাশে রেখে ধীরে ধীরে ফলো করে এগোচ্ছে জাহিন। হঠাৎ গাড়ি দেখে দৌঁড়ে যেয়ে জিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। গাড়িটা জাহিনের বা’পাশ ঘেঁষে চলে গেলো। মাথা ফেটে রক্ত গলগল করে পরতে লাগলো।পা’ও খানিটা কেটে রক্ত বের হচ্ছে। জাহিন মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ হওয়ার আগে জাহিনের কানে আসলো নয়নার কন্ঠ। জিয়ান বলে চিৎকার করছে নয়না।
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে