সন্ধ্যাবাতি পর্ব-০১

0
8

#সন্ধ্যাবাতি
#পর্বঃসূচনা_পর্ব
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমি হাজির হয়েছে আমি নিজের স্বামীর বিয়ের অনুষ্ঠানে। কথাটা শুনে হয়তো আপনারা একটু অবাক হয়ে গেছেন। কিন্তু এটাই সত্যি। আমার স্বামী আজ বর বেসে অন্য এক নারীর সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। আর আমি সেই বিয়েতে একজন দর্শকের ন্যায় বিয়ের প্যান্ডেলের এক কোনে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের চোখের জল ফেলছি। নিজের চোখের সামনে নিজের ভালোবাসাকে অন্য কারোর হয়ে যেতে দেখতে কেমন লাগে? সেটা শুধু মাত্র তারাই বুঝতে পারবে! যারা এমন পরিস্থিতিকে কাছ থেকে অনুধাবন করেছে। গল্প ফেরার আগে চলুন পরিচয় দিয়ে নেই। আমি অধরা চৌধুরী। আমি আমার পরিবারের একমাত্র মেয়ে। আমার বাবা এই শহরের বিশিষ্ট একজন বিজনেস ম্যান ছিলেন। আমার পরিচয় বলতে এই টুকুই। আর আজ যার বিয়ে হচ্ছে! তিনি আমার স্বামী অয়ন চৌধুরী। অয়ন বর্তমান সময়ের একজন তরুণ বিশিষ্ট বিজনেস ম্যান।‌ অয়ন আজ যেই পজিশনে আছে! সেই পজিশনে আসা সকলের স্বপ্ন। আর অয়ন সেই স্বপ্নকে সত্যি করে দেখিয়েছে। তবে আজকের এই অয়ন আগেকার অয়ন এক মানুষ নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ এই অয়ন। আজকের অয়নের কাছে নিজের জীবনের সফলতা ছাড়া আর কিছুই জরুরী নয়। আর আগেকার অয়নের কাছে নিজের ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না। আর তাই তো আজ অয়ন আমার থেকে এতোটা দূরে! আমি চাইলে হয়তো সিনক্রিয়েট করতে পারি। তবে আমার সেই‌ ক্ষমতা নেই। আমি প্রায় আধ ঘন্টা সময়ের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। একদম সকলের দৃষ্টির আড়ালে। বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর আচমকা কেউ একজন আমার পেছনে দাঁড়িয়ে ভিশন কর্কশ কন্ঠে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— এই মেয়ে এখানে কি চাই?

কন্ঠস্বরটা কানে ভেসে আসতেই অধরা নিজের ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকালো। অধরা পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো তার সেই চিরচেনা পরিচিত মুখ। অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন কে নিজের সামনে দেখার পর অধরার মুখ থেকে একটাও কথা ফুটছে না। শুধু মাত্র চোখ থেকে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু জল। অয়ন অধরার চোখের কোনে নোনাজল দেখে তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিয়ে বলল

— ভালো লাগছে আজ। সত্যি খুব ভালো লাগছে। তোমার চোখের এই মিথ্যা জল টুকু আবার দেখতে পেয়ে অনেক শান্তি লাগছে আমার।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা অনেক কষ্টে অয়ন কে বলল

— অয়ন আমার চোখের জল মিথ্যা নয়। আমি সত্যি আজ…!

অধরা সম্পূর্ণ কথাটা বলার আগেই অয়ন একটা ধমক দিয়ে অধরাকে ঠাঁই থামিয়ে দিলো। অয়নের ধমকের শব্দটা এতোটাই বিকট ছিলো যে বিয়েতে আসা সকলের কানে পৌঁছে গেলো সেই শব্দ। সকলে অতি আগ্রহের অয়ন আর অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে উপস্থিত অনেকেই জানে না অধরার আসল পরিচয়। অয়ন অধরার দিকে খানেক এগিয়ে এসে অধরার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে ভিশন শক্ত গলায় অধরাকে বলল

— এসব ছলনা দিয়ে অয়ন চৌধুরীকে আর কাবু করতে পারবে না তুমি। আমার মন থেকে তুমি সম্পূর্ণ ভাবে মুছে গেছো।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা হেসে ফেলল। অধরার ঠোঁটের মাঝে হাসির রেখা দেখে অয়নের সারা শরীর যেনো জ্বালা করে উঠলো। অয়নের চোখ মুখ রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। অয়ন নিজের রাগকে আর চাপিয়ে রাখতে পারছে না। অয়ন অধরাকে অবাক করে দিয়ে দুম করে অধরার বাহু জোড়া শক্ত হাতে চেপে ধরলো। অয়ন অধরার বাহু জোড়া শক্ত হাতে চেপে ধরে অধরাকে জিজ্ঞেস করলো

— পাগল হয়ে গেছো তুমি? তোমার এই হাসি আমার সহ্য হয় না। আমার সামনে দাঁড়িয়ে কান্না তো করতে পারবে। কিন্তু হাসতে নয়।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা নিজের হাসি থামিয়ে বলল

— কেনো মিস্টার অয়ন চৌধুরী। আমার হাসি দেখলে বুঝি আপনার ভয় হয়! ভয় পান আপনি?

— নো। অয়ন চৌধুরী কখনো ভয় পেতে পারে না। অয়ন কে দেখে অন্য সবাই ভয় পায়। অয়ন কখনো ভয় পায় না।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই অধরা বলল

— অবশ্যই তুমি ভয় পাও আমাকে। এই যে বলো না আমাকে তোমার মন থেকে মুছে ফেলেছো! এটা মিথ্যা কথা। যদি তাই হতো! তবে আমাকে এড়িয়ে চলতে। আমাকে দেখার পর বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে আমার সামনে এসে দাড়াতে না। অয়ন তুমি বিশ্বাস করো বা না করো! আমি তোমার মনের মাঝে আজ ও বেঁচে আছি। আর সারা জীবন বেঁচে থাকবো।

অধরার কথাটা শেষ হতেই অয়ন অধরার বাহু জোড়া থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। অধরা তো সত্যি কথাই বলেছে। আজ অয়নের সাথে ফারিয়ার বিয়ে হবে। অয়ন অধরাকে দেখার পর এখানে চলে আসাটা উচিত হয়নি অয়নের। অয়ন অধরার দিক থেকে নিজের চোখ নামিয়ে নিলো। অয়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো একটা ওয়েটারকে। অয়ন ওয়েটারের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা ড্রিংকের গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে মদ্যপান করতে লাগলো। দুই প্যাগ ড্রিংক করে নিয়ে অয়ন অধরার দিকে এগিয়ে আসতে নিতেই অয়নের সামনে এসে দাঁড়ায় ফারিয়া। ফারিয়া অয়নের সামনে এসে দাড়িয়ে অয়ন কে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে বলল

— অয়ন কি করছো কি তুমি? আজ‌ আমাদের বিয়ে। এখানে এই মেয়েটার সাথে সিনক্রিয়েট করছো কেনো?

— আমি কারোর সাথে সিনক্রিয়েট করছি না। আমি এই মেয়েটাকে ওর যোগ্যতা বুঝিয়ে দিচ্ছি।

— সরি অয়ন তুমি সেটা করছো না। এখন তোমার থাকার কথা বিয়ের আসরে। আর তুমি কি না নিজের এক্স….!

ফারিয়া নিজের কথাটা সম্পূর্ণ করলো না। অয়ন ফারিয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন নিজের সাথে অধরার নাম কোনো ভাবে আর জড়াতে চায় না। অধরার সাথে তার অতীতের সম্পর্কের কথা কেউ বললে অয়ন সহ্য করতে পারে না। অয়ন ভিশন রেগে যায়। ফারিয়া নিজেও সেই বিষয়টা জানে। তবে ভূল করে ফারিয়া আজ সেই কথাটা বলে ফেলেছে। অয়ন ফারিয়ার দিকে খানেক সময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর ফারিয়ার সামনে থেকে সরে চলে গেলো অধরার সামনে। অয়ন অধরার সামনে এসে দাড়িয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আমি জানি না তুমি এখানে কেনো এসেছো? যদি বিয়ে দেখতে এসে থাকো তবে এখানেই বসো। আর যদি কোনো ঝামেলা করতে এসে থাকো। তবে এখুনি বেরিয়ে যাও।

অয়নের কথাটা শেষ হতেই ফারিয়া অয়নের পেছন থেকে এগিয়ে এসে অধরার হাত ধরে ভিশন রাগী কন্ঠে বলতে লাগলো

— কেনো অয়ন এই মেয়েটা এখানে থাকলে আমাদের সুন্দর জীবন কখনোই সুন্দর থাকবে না। ওকে এখুনি এখান থেকে বের করে দিতে হবে। এসব ছোট লোকের ঠাই এখানে কখনো হবে না। চল বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে।

ফারিয়া কথাটা বলতেই অধরার হাত ধরে টানতে লাগলো। অধরা কোনো কথা বলছে না। শুধু মাত্র অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অধরা। অয়ন ও খানেক নিরব হয়ে আছে। ফারিয়া অধরাকে অয়নের সামনে থেকে নিয়ে যেতেই আচমকা একটা বিকট শব্দ ভেসে আসলো অয়নের কানে। অয়ন নিজের ঘার ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই যা দেখতে পেলো। তা দেখার জন্য অয়ন মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। অয়ন পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো অধরা……………!

#চলবে…………..!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে