সবিতা
পর্ব: ০৭
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
সবিতার বাবা-মা তাকে কখনোই পুরোপুরি বোঝেনি। তাদের কাছে সবিতা ছিল সেই মেয়ে, যে পরিবারের জন্য ভালো কিছু করে নি,পরিবারের মানসম্মান নষ্ট করেছে সেজন্য সে বাবা মার ভালোবাসা কখনোই পায়নি।
কিন্তু সবিতা যে এতটা কষ্ট পেয়েছে, তা তারা কখনো বুঝতে পারেনি। একদিন সবিতা তাদের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে গিয়ে বলে—
– “আমার জীবনের এই সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নিয়েছি। তবে আমি আপনাদের কাছে যা চেয়েছিলাম, তা কখনোই পাই নাই। আমি জানি, আপনারা আমাকে বুঝতে পারেন নি, তবে আমি জানি, নিজের পথ বেছে নিলে, একদিন আমি সফল হব।”হ্যাঁ আমি সফল হয়েছি।
সবিতার মা এক লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লেন, তারপর বললেন—
– “তুমি যদি এখনো এই পথে থাকতে চাও, তবে তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবো।”পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিও।আমরা তোমাকে সত্যি বুঝতে পারি নি।
বাবাও কিছুটা মনোযোগ দিয়ে বললেন—
– “তুমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছো, তা তোমার জীবনের জন্য সঠিক কিনা, তা শুধুমাত্র তুমি বুঝবে।”তবে আমাদের ভুল একটাই আমরা সাইফের উপর করা রাগের শাস্তি তোমাকে দিয়েছিলাম,আমাদের উচিত ছিলো সাইফ কে উচিত শাস্তি দিয়ে তোমাকে নিজের ঘরে ফিরে আনা।
সবিতা বাবা মার কথা শুনে দীর্ঘ নি:শ্বাস ছাড়লো।তবে তার বাবা মার কথা শুনে মনের মধ্যে ক্ষোভের পরিবর্তে এক নতুন শক্তি তৈরি হয়েছিল। সে জানত, তার মা-বাবা তাকে ভালোবাসে, কিন্তু তাদের ভালবাসা ও সমর্থন তার দু:সময়ের জীবনের সময় ছিল না,এটাই তার অনেক বড় আফসোস।
_____________
সবিতার নতুন জীবন ঠিক যেমনটি সে চেয়েছিল, তেমন সহজ ছিল না। শুরুর দিকে সমস্ত কিছুই স্বপ্নের মতো মনে হলেও, বাস্তবতার কঠিন বাস্তবতা সবিতার পথে আঘাত হানে। তার প্রতিটি পদক্ষেপে বাধা ছিল। তবে সে থামল না, কারণ সে জানত, তার সামনে কেবল নিজের এক নতুন লক্ষ্য। কিন্তু, সামনে যেসব প্রলোভন ছিল, তা তাকে বাধ্য করেছিল এক নতুন দ্বিধার মধ্যে পড়তে।
মোহাইমিন তার পায়ের নিচে জমে থাকা মাটি আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। সবিতা তার কাছ থেকে দূরে চলে আসার পর সে অনেক চেষ্টা করেছে তাকে ফিরিয়ে আনতে, তবে একবারও সবিতা তার কাছে ফিরে যায়নি। তবে, মোহাইমিনের মনের মধ্যে এক ভয়াবহ পরিকল্পনা গড়ে উঠছিল।
একদিন, মোহাইমিন সবিতার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং বলে—
– “তুমি যদি আমার সঙ্গে কাজ করো, তাহলে তুমি যা চাও, তা পেতে পারবে। আমার সাহায্য ছাড়া তুমি কিছুই করতে পারবে না।”
সবিতা হাসল, এই হাসি ছিল বিজয়ের হাসি।
– “তুমি যদি ভাবো, আমার জন্য তুমি এতটা গুরুত্বপূর্ণ, তবে তুমি ভুল ভাবছো। আমি নিজের পথই চয়ন করেছি। আমি আর কারো হাতের পুতুল হতে চাই না।”
মোহাইমিন চলে যায়, কিন্তু সে জানে, সবিতা তাকে সব সময় অতিক্রম করে যাবে। মোহাইমিনের মতো মানুষ হয়তো তার পথের অংশ ছিল, তবে সবিতার জীবনে সেই ছায়ার স্থান নেই।
এই সমস্ত ঘটনার পর, সবিতার জীবনে এক নতুন সূচনা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রস্তাব মেনে নিয়ে, সে এক নতুন জীবন শুরু করে। পুরনো সম্পর্ক আর পারিবারিক সমস্যা তাকে আর থামাতে পারে না। সে জানে, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু সে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
যারা সবিতাকে তুচ্ছ বুঝেছিল, তাদের জন্য সে এক প্রমাণ হয়ে উঠবে। নারী স্বাধীনতা, অধিকার—এগুলোই তার মূল লক্ষ্য। সবিতা এই মুহূর্তে বুঝতে পারে, পুরনো জীবন ছেড়ে নতুন পথের দিকে এগিয়ে যাওয়াই তার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।
একদিন সবিতা নিজেই তার জীবনের অনেক গুলো গল্প লিখবে। সে জানবে, তার সংগ্রাম কেবল তার জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য ছিল। সে ছিল একটি সাহসী পথিক, যে নিজের জীবনের গল্পে জয়লাভ করেছে।
_________
সবিতা এখন পুরো দমে লেখালেখি শুরু করেছে, তবে তার প্রতিটি লেখায় তার জীবন এবং অভিজ্ঞতার গভীরতা ফুটে ওঠে। তাকে একে একে প্রতিটি কথা, অনুভূতি এবং শোককে অক্ষরে বন্দী করতে হচ্ছিল, কিন্তু সে জানত—এটি তার মুক্তির পথ হতে পারে। সেই রাতে, যখন সে তার প্রথম ছোট গল্পটি শেষ করেছিল, সেজন্য সে নিজের মনে এক অদৃশ্য প্রশান্তি অনুভব করেছিল।
একদিন সবিতা অফিসে কাজ করতে বসে ছিল, তখন তার সহকর্মী তাওহীদ এসে তাকে কিছু কাজে সাহায্য করার প্রস্তাব দেয়। তাওহীদ একজন সদ্য চাকরি করা ছেলে, তার মধ্যে এমন কিছু ছিল, যা সবিতার মনকে একটু উজ্জীবিত করেছিল। তাওহীদ তার সঙ্গে কথা বলার সময় কখনও বেশি চাপ দেয়নি, বরং আন্তরিকতা দেখিয়েছে।সবিতার মধ্যে এক ধরনের বিশ্বাস জন্মাল, যে মানুষ সত্যিই ভালো হতে পারে, যদিও সে এখন পর্যন্ত এরকম কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না।
তাওহীদের সাথে কিছু সময় কাটানোর পর সবিতা বুঝতে পারে, এই মানুষটিই সম্ভবত তার জন্য নতুন শক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে। সে তাওহীদকে তার জীবনের কিছু ঘটনা শেয়ার করতে শুরু করে, আর তাওহীদ একান্তভাবে তার কথা শুনে যায়। এই বন্ধুত্বের মাঝে সবিতা এমন এক নিরাপত্তা অনুভব করছিল, যা তাকে আবার বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিল যে, ভালোবাসা এবং বন্ধুত্ব এখনও সম্ভব।
তাওহীদ মাঝে মাঝে সবিতাকে উৎসাহিত করত।
– “সবিতা তুমি কি জানো, তোমার মধ্যে আর তোমার লেখার মধ্যে একটা বিরাট শক্তি আছে।যা আমি দেখছি, তা একদিন পৃথিবীকে আলো দেখাবে।”
—
একদিন সবিতার শান্ত জীবন আবার এক দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করল। সাইফ, তার পুরনো স্বামী, একদিন তাকে ফোন করে বলল—
– “সবিতা, আমি জানি আমি ভুল করেছি। তুমি কি একবার আমার সঙ্গে কথা বলতে আসবে? আমি এখন অনেক কিছু শিখেছি।”প্লিজ একবার একটু আসো।আমি তোমাকে না দেখতে পেয়ে দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।”
সবিতা বুঝতে পারলো, সাইফ তার পুরনো চরিত্রে ফিরে আসতে চাইছে, সাইফ বর্তমানে নিজের অনুশোচনায় ভুগছে, কিন্তু অনেক বেশি দেরি করে ফেলেছে সাইফ।এখন সে কিছুতেই সাইফের জীবনে ফিরতে পারবে না।
সে সাইফের কলের উত্তর দিল না, কিন্তু তার মন প্রচন্ড ভাবে খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সে মনের মধ্যে ভাবল—
– আমার সামনে এসব কিসের পরীক্ষা চলছে সৃষ্টিকর্তা?সাইফের অনুনয় বিনয় আর সহ্য করতে পারছি না আমি। তাকে যে এক সময় আমি প্রচন্ড ভালোবেসে ছিলাম।
তবে আমি আর কখনোই ফিরবো না তার কাছে।আমি সাইফের কাছে ফিরলে নিজের সাথে প্রতারণা করে ফেলবো।তখন এই আমার আমি আমাকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না।যখন আমার পাশে কেউ ছিলো না তখন এই আমার আমি টাই ছিলো শুধু।সেজন্য আমার তার কথা শুনতে হবে এখন।
সবিতার কাছে এখন নিজেকে মেলে ধরার সময় এসেছে, আর কোনো অতীতের জটিলতা নিয়ে সে ভাবতে চায় না।সাইফ তার অতীত।
—
সবিতা তার লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত।তাওহীদ তাকে অনেক সাহায্য করছে।সবিতা তার লেখা বিভিন্ন প্রকাশনার জন্য পাঠাচ্ছিল, তবে প্রতিটি গল্পের পেছনে তার জীবন ছিল। একদিন সবিতা একটি বড় প্রকাশনীর কাছে তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস পাঠাল।
কিছুদিন পরই তারা তাকে জানায়, তারা তার বইটি প্রকাশ করতে চায়। সবিতার মনে তীব্র উত্তেজনা ছিল, কিন্তু সে জানত—এটা তার কঠোর পরিশ্রমের ফল।
এখন তার জীবনের প্রথম বড় প্রকাশনা হয়ে গেল, যা তার পুরনো দুঃখের চেয়েও বড় হয়ে উঠল। তার লেখালেখি যে শুধু তার নিজের জন্য ছিল না, বরং অন্যদের জন্যও ছিল। সবিতা জানত, তার এই প্রথম সফলতা একদিন অনেক দূর যাবে।
তাওহীদ তাকে নিয়ে ভীষণ আনন্দিত ছিল, এবং সবিতা তার কাছ থেকে আরও অনেক শিক্ষা পেয়েছিল। তাদের বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, এবং সবিতা তার জীবনে তৌহিদের মতো একজন বিশ্বস্ত বন্ধু পেয়ে অনেক খুশি ছিলো।
—
রাইয়া, সবিতার একমাত্র বন্ধু, তার নতুন বইটি পড়ে অনেক খুশি হয়েছিল। সে বলেছিল—
– “তুমি শুধু তোমার জীবনের গল্পই লিখছো না, সবিতা, তুমি সবার জন্য একটা পাঠ শিখাচ্ছো।”
সবিতা তার বইয়ের প্রথম প্রচ্ছদে রাইয়ার নাম লিখেছিল, কারণ সে জানত, রাইয়া ছাড়া তার এই পথ চলা কখনোই সম্ভব হত না। সবিতা জানত, যদি তার জীবনে কখনো কোনো সত্যিকারের মানুষ থাকে, তবে তা হলো রাইয়া।
রাইয়া বলল—
– “সবিতা, তুমি যেভাবে আছো, সেভাবে সবাইকে দেখাও। তুমি যদি নিজের জন্য কিছু করতে পারো, তবে পৃথিবীটাও বদলাতে পারবে।”
এখন সবিতা জীবনের নতুন সুরে চলতে শুরু করছে। তার পৃথিবী বদলানোর প্রস্তুতি চলছে। তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। তার সামনে শুধু এক নতুন দিন অপেক্ষা করছে।
……..
সবিতা তার জীবনের পথে এক নতুন সূচনা করেছে, তবে পুরনো অধ্যায় তাকে তাড়া করেই যাচ্ছিল। তার জীবন এখন অনেক বেশি স্থিতিশীল, কিন্তু মাঝে মাঝে পুরনো স্মৃতি, পুরনো যন্ত্রণাগুলি ফিরে আসত। সেগুলিকে উপেক্ষা করেই সে নিজের পথে চলতে শুরু করেছিল। তাওহীদ তার লেখালেখির ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছে, কিন্তু সবিতার জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ ছিল—নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলা, নতুন করে দাঁড়িয়ে থাকা।
—
একদিন সবিতা আবার সাইফের ফোন পেল, যে ফোনটি তার জন্য একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ সবিতা সেদিন সাইফ কে মুখের উপরই না করে দিয়েছে যেনো সে আর তাকে কল না করে।
“তুমি কেন এভাবে নিজের জীবন টা নষ্ট করছো? পরিবারে ফিরে যাও। আমরা আবার একসাথে সব ঠিক করে নিতে পারি।”কারণ আমরা একে অপরকে অনেক ভালোবাসি।
সবিতার চোখে ক্ষোভ, তবে তার মুখে শান্তি।
“এই তুমি—এখনও বুঝতে পারো না! আমি আর কখনো তোমার কাছে ফিরে যাব না। আমি স্বাধীন, আমার জীবন আর তোমার দাসত্ব নয়।”
– “সবিতা, আমি জানি আমি তোমার প্রতি অন্যায় করেছি। কিন্তু আমি এখন অনেক কিছু বুঝেছি। তুমি কি একবার আমাকে আবার সুযোগ দেবে?”প্লিজ সবিতা।তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে এক সময়।
সাইফের কথাগুলি যেন পুরনো যন্ত্রণা আবার ফিরে আনে। সবিতা তার জীবনে সাইফের প্রভাব বুঝে উঠতে পারছিল না।সে বুঝতে পারছিল যে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা তার নিজের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে।
সবিতা কিছু সময় চুপ থাকল, তারপর ধীরে ধীরে বলল—
– “সাইফ,আমি যখন তোমার প্রয়োজন ছিলাম না, তখন আমি নিজেকে গড়েছি। তুমি যদি ভাবো আমি তোমার কাছে ফিরব, তাহলে তুমি ভুল ভাবছো। আমার জীবন এখন আমি নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছি। আমি আর তোমার অতীতের অংশ হতে চাই না।”প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও।আর আমাকে ভালোবাসার অজুহাত দেখিয়ে ব্লাকমেল করো না।আমি আগেও বলেছি আর এখনো বলছি আমি আর তোমার জীবনে কখনোই ফিরবো না।কারণ তোমার সেই ভালোবাসার কাঙাল আন্নি মারা গেছে অনেক আগেই।
এ কথাগুলি সাইফকে চমকে দিয়ে গেল,সাইফের অজান্তেই দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো, অন্যদিকে সবিতাও কাঁদছে,যত কিছুই হোক এক সময় তো তাকে সে প্রচন্ড ভাবে ভালোবেসে ছিলো।
তবে সবিতা ভালো করেই জানে—এই সিদ্ধান্তটি তার জীবন ও স্বকীয়তার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল।আজ এসব না বললে সাইফ বার বার তাকে বিরক্ত করতো।
সবিতা সাইফের প্রতি ভালোবাসার জন্যই তাকে আইনি ভাবে শাস্তি দেয় নি কোনো,তবে সে সাইফের জীবন থেকে এখন অনেক দূরে চলে গেছে।
—
তাওহীদ বন্ধু হিসেবেই সবিতার পাশে থাকলো। তার লেখালেখির সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও, তাওহীদ কখনোই তাকে ব্যক্তিগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাপ দেয়নি। সবিতা বুঝতে পারছিল, তাওহীদ তাকে নিঃস্বার্থভাবে সহ্য করে এবং তার সব বিপদের সময় তাকে শক্তি দেয়। সবিতা তাওহীদের সঙ্গে অনেক রাত কেটেছে গল্প, কবিতা, এবং সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেছে। তাওহীদ তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছিল, কিন্তু তারা কখনো একে অপরকে বেশি ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করেনি।
তাওহীদ একদিন বলেছিল—
– “সবিতা, তোমার লেখার মধ্যে তুমি যেমন তোমার যন্ত্রণাকে প্রকাশ করো, তেমনই তুমি জীবনের আরো অনেক বড় চিত্রও ফুটিয়ে তুলবে। তোমার লেখায় এক শক্তি রয়েছে যা আমি কখনো কোনো লেখকের মধ্যে দেখি নি।”
এটা সবিতার জন্য বড় প্রশংসা ছিল। তার কাছে তাওহীদ শুধু একজন বন্ধু ছিল না, বরং তার জীবনের চলমান সঙ্গী, এক মানুষ যাকে সে কখনো হারাতে চায় না।
—
একদিন সবিতা তার বন্ধু রাইয়ার সঙ্গে বসে পুরনো স্মৃতি চারণা করছিল। তারা মজা করছিল, হাসছিল এবং একে অপরকে জীবন সম্পর্কে তাদের অনুভূতি জানাচ্ছিল। রাইয়া বলেছিল—
– “তুমি জানো, সবিতা, তুমি আজ যা আছো, তা তোমার নিজের শক্তির ফল। তুমি যদি ভেবো, তোমার জীবনের কোনো মুহূর্তেও কেউ তোমাকে মূল্যায়ন করেনি, তবে সেটা পুরোপুরি ভুল হবে। তোমার ভিতরে যা কিছু আছে, তা তোমার আত্মবিশ্বাস থেকে এসেছে।”
রাইয়ার কথাগুলি সবিতার মনকে আরো গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। সে বুঝতে পারছিল, তার পথের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি কষ্ট, শুধুমাত্র তার নিজের তৈরি। রাইয়া তাকে জীবন সম্পর্কে একটি নতুন দৃষ্টি দিয়েছে—যে দৃষ্টি দিয়ে সে দেখতে পায়, কোনো কিছুই সহজে আসে না, কিন্তু যদি তুমি নিজের উপর বিশ্বাস রাখো, তবে তুমি সবকিছু অর্জন করতে পারো।
—
একদিন সবিতা তার লেখালেখি সম্পূর্ণ করে একটি নতুন বই প্রস্তুত করল। এই বইটির নাম ছিল “জীবনের শেষ কথা”।
এটি তার জীবনের সমস্ত চ্যালেঞ্জ, তার সংগ্রাম এবং তার আত্মবিশ্বাসের গল্প তুলে ধরেছিল। তার বইটি প্রকাশনা থেকে এক মাস পরই বিক্রি হয়ে যায়, এবং এই প্রথমবার সবিতা অনুভব করেছিল, সে সফল হয়েছে। এটি তার জন্য এক নতুন সূচনা ছিল, একটি নতুন অধ্যায়।
সে জানত, এই পথ তার জন্য কঠিন ছিল, কিন্তু সেই কঠিন পথে গিয়েই সে নিজেকে গড়ে তুলেছিল। এখন তার সামনে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিল, যেখানে সে তার জীবনের সবকিছু নতুন করে সাজাতে পারবে।
—
সবিতার নতুন বইয়ের প্রকাশনা খুব ভালো হয়েছিল। সে জানত, একদিন তার লেখা সারা পৃথিবীজুড়ে পরিচিত হবে। তার জীবনের গল্প ও সংগ্রাম একদিন অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে। এই বিশ্বাস সবিতার হৃদয়ে শক্তি যোগাচ্ছিল।
তাওহীদ এবং রাইয়া তার পাশে ছিল, এবং সবিতা জানত—তার জীবন আর কখনো অন্ধকারে হারাবে না। তার সামনে শুধু একটি উজ্জ্বল, স্বাধীন, সফল জীবন অপেক্ষা করছে।
[চলবে…]