ডাক পর্ব-০২

0
2

ডাক
২য় পর্ব

আমি তুশিকে কোলে নিয়ে দৌড় দিলাম। ঝাড়া দৌড়।‌ এক দৌড়ে বিল্ডিংয়ের বাইরে।

আমাকে দেখে দারোয়ান অবাক হয়ে বললো, ‘দৌড়ান কেন স্যার?’
আমি বললাম, ‘পুলিশ ডাকেন, জলদি পুলিশ ডাকেন। আমাদের বাসায় কারা জানি ঢুকেছে।’

দারোয়ান বললো, ‘পুলিশ ডাকার আগে আমি একটু দেইখা আসি। কে এমনে ঢুকলো। আমি তো এতোক্ষণ বসা আছিলাম। একটা তেলাপোকাও তো ঢুকতে দেই নাই।’

দারোয়ান উপরে আমাদের বাড়ি গেলো। আমি নিচে তুশিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তুশির মুখটা শুকনো। ভয় পেয়েছে খুব।

পনেরো মিনিট পর দারোয়ান এলো। গিয়েছিলো সে চোখমুখ শক্ত করে। দেখে মনে হচ্ছিলো, চোর ছ্যাচ্ছর সব একাই পিটিয়ে বের করে নিয়ে আসবে।

অথচ যখন এলো, তখন তাকে দেখে আমিই ভয় পেয়ে গেলাম। পুরো লম্বা দৈত্যের মতো দেখতে লোকটা ভয়ে কাঁপছে। পাগলের মতো কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতেই বললো, ‘এই চাকরি করুম না। এই চাকরি করুম না।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে।’

দারোয়ান আমার দিকে তাকালো। তারপর হাসলো। পাগলের মতো হাসলো। বললো, ‘আমি জ্বীন দেখসি স্যার। সত্যিকারের জ্বীন দেখসি। এমন ভয়ংকর জিনিস দুনিয়ার আর কেউ দেখে নাই।’

লোকটা বেরিয়ে চলে গেলো। তার আর দেখা পাওয়া গেলো না।

আমি তুশিকে নিয়ে বিল্ডিংয়ের নিচে বসে রইলাম। সন্ধ্যা পার হলো। আপু ফিরলো আগে। এসেই বললো, ‘তোরা এখানে কেন?’

আমি বললাম, ‘এখানে তোর জন্য বসেছিলাম। আর এক মুহূর্তও থাকা যাবে না এখানে। আমার সাথে এখনই আমাদের বাসায় চল। দুলাভাইকেও ফোন করে দে ওখানে যেতে। আমার ফোনটা উপরে রেখে এসেছি, ফোন করতে পারছি না।’

আপু বললো, ‘কি সব পাগলামি শুরু করলি।’

আমি বললাম, ‘চল আপু, চল। রাস্তায় সব বলবো তোকে।’

রিকশায় উঠতে উঠতে আপুর বিল্ডিংয়ের দিকে তাকালাম। আপুদের ফ্ল্যাটটা অন্ধকার।‌ জানালা দিয়ে ওখানে কিছুই দেখা যায় না।

অথচ আমি দেখলাম।‌দুজন মহিলাকে দেখলাম। তারা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জানালার দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে ওদের।

বাসায় ফিরতে ফিরতে আপুকে সব বললাম। সে বিশ্বাস করলো না। বললো ফাজলামি করছি। আমাকে অনেক বকলো তুশিকে ভয় দেখানোর জন্য। তুশি ভয়ে এতোটুকু হয়ে গেছে।

আপু ফোন দিলো দুলাভাইকে। বললো যে সে আজ রাতে মায়ের বাসাতেই থাকবে। ভাইয়া যেন সোজা বাড়িতে চলে যায়। ফ্রিজে খাবার রাখা আছে, গরম করে খেয়ে নিবে। আমি চিৎকার করে বললাম, ‘এটা কি বললি আপু। সত্যিই ঐ বাড়িতে থাকলে ভাইয়ার বিপদ হবে।’

আপু চোখ রাঙিয়ে বললো , ‘চোপ ফাজিল। তোর ফাজলামির জন্য আমার মায়ের বাসায় যাওয়া লাগছে। তোর দুলাভাইকেও এমনে বোকা বানাবো‌ নাকি। ও বাসাতেই যাক। বাসা খালি রাখা ঠিক হবে না।’

আপুকে কোনোভাবেই মানাতে পারলাম না।‌রাতে ভাইয়া ঐ বাসাতেই থাকবে।‌ একা। আমরা আমাদের বাসায়। আপু আর তুশি এক রুমে ঘুমাতে গেলো। আমি তাদের পাশের রুমে।

আমি রাতে জেগে রইলাম। খুব ভয় করছিলো। মনে হচ্ছিলো, এখনই ফোন বাজবে আপুর। আপু ফোন ধরবে।‌আর ওপাশ থেকে আসবে কোনো খারাপ খবর।

রাত তখন একটা বাজে। ফোনটা এলো।

আপু ধরলো ফোন।

আমি আপুদের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।‌

আপু কণ্ঠটা কেমন গম্ভীর শোনালো প্রথমে। তারপর ভয়, অদ্ভুত ভয় জাগলো তার কন্ঠে। আপু কান্না কান্না গলায় বললো, ‘কি দেখছো তুমি? কি দেখছো? বেরিয়ে যাও, এখনই বেরিয়ে যাও বাসা থেকে।’

আমি দরজা ঠকঠক করলাম। আপু খুললো দরজা। চোখ দুটো ভেজা। ভয়ে কাঁপছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে?’

আপু বললো, ‘তোর ভাইয়া শুয়ে ছিলো। ঘুম ভেঙ্গে দেখে, দুটো মানুষ সিলিঙে চারহাতপায়ে টিকটিকির মতো হেঁটে বেড়াচ্ছে।’

হঠাৎ চিৎকারের শব্দ। আপুর ফোনে। আপুর ফোনটা অন করা। ভাইয়া অন কলে ছিলেন। চিৎকারটা ভাইয়ার।

আমার তখন ভাইয়ার চিৎকারের দিকে মন নেই। আমার দৃষ্টি আপুদের বিছানায়। সেখানে তুশি বসে আছে। জানালার দিকে তাকিয়ে আছে সে।‌ জানালার ওপারে বারান্দা। বারান্দায় স্নিগ্ধ জোছনা। জোছনায় বারান্দার অনেকখানি আলোকিত হয়ে আছে।

সেই জোছনার ভয়ংকর আলোয় আমি দেখলাম, দুজন চাদর পরা মহিলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে তুশির দিকে তাকিয়ে আছে। হাত নেড়ে ডাকছে তুশিকে।

চলবে

লেখা- সোয়েব বাশার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে