#ডাক
১ম পর্ব
সোয়েব বাশার
দুজন অপরিচিত মহিলাকে দেখলাম বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে। দুজনের সারা শরীর কালো চাদরে ঢাকা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনারা কে? কোন বাসায় আসছেন?’
তারা আমার প্রশ্নের উত্তর দিলো না। শুধু আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো।
আমি জানি না, আমার কেন ভয় লেগেছিলো সেদিন। কেমন গা ছমছমে ভয়। ভয়ে আমার সারা গা কেঁপে উঠেছিলো।
আমি দারোয়ানকে গিয়ে বললাম, ‘দুইজন মহিলা উঠছিলো সিঁড়ি বেয়ে। উনারা কারা?’
দারোয়ান পানের পিক থু করে ফেলে বললো, ‘কি যে বলেন ভাইজান। সিঁড়ি দিয়ে উঠবো কেডা? লিফট তো চালু।’
আমিও দেখলাম, লিফট চালু। তাহলে সিঁড়ি বেয়ে তারা উঠছিলো কেন? দারোয়ানও বা তাদের দেখেনি কেন?
এই বাড়িটা আমার বোন-দুলাভাইয়ের।ভাইয়া এখানেই ফ্ল্যাট কিনেছেন। আদাবরে ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট। এই বাড়িতে ভাইয়া ভাবি ছাড়াও থাকে তুশি।
তুশি হলো আপুর চার বছরের পিচ্চিটা। একদম ছোট্ট পুতুলের মতো। ছোট ছোট পায়ে যখন ও ‘মামা, মামা’ বলে হাঁটে, মনে হয় চাঁদের একমুঠো আলো মাখা ছোট্ট একটা গোলুমোলু কিউট পুতুল হেঁটে বেড়াচ্ছে। ওকে কোলে নিলে একটুও নামাতে ইচ্ছা করে না। মনে হয় সারাক্ষণ ওকে আদর করি।
তুশির ইদানিং সমস্যা হচ্ছে।এইজন্যই ডেকেছে আপু। ও ইদানিং ভয় পায়। কাকে নাকি দেখে। রাতে একা থাকতে পারে না। এইরুম থেকে ও রুমে যেতে পারে না ভয়ে। রাতে লাইট নেভাতে দেয় না। সারারাত লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাতে হয় আপা আর দুলাভাইকে।
আমি তুশির এই প্রবলেম সলভ করতে যে এখানে এসেছি, এমনটা না। এসেছি এই বাসায় ঘুরতে। কালকে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে, সামনে তেপান্তরের মাঠের মতো আদিগন্ত বিস্তৃত লম্বা ছুটি। কষিয়ে ছুটি কাটাবো। এই ছুটি কাটানোর প্ল্যানেই আপুর বাড়িতে আসা।
আপু সন্ধ্যায় আমাকে আর তুশিকে রেখে একটু শপিংয়ে গেলো। ভাইয়া অফিসে।বাসায় খালি আমি আর তুশি। আমি ড্রয়িংরুমে টিভি চালিয়ে বসে আছি। তুশি খেলছে। খেলতে খেলতে ও কেমন যেন ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে, মামা?’
তুশি কিছু বলে না। ভীতু বিড়ালের মতো আমার কাছে এসে জড়োসড়ো হয়ে থাকে।
আমি কান পাতি।
কেমন একটা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
অদ্ভুত একটা শব্দ।
মানুষের ডাকের শব্দ।
শব্দটা আসছে সামনের রুমটা থেকে।রুমটা অন্ধকার। ভীষণ অন্ধকার।
তুশি আমার কোলে উঠে বসে। আমাকে জাপটে ধরে। ফিসফিস করে বলে, ‘ভয় লাগছে মামা। আমার ভয় লাগছে।’
আমি অন্ধকার রুমটার দিকে ভালো করে তাকাই। কিছুই দেখা যায় না।এসময়ই হঠাৎ বাজ পড়ে কাছাকাছি কোথাও।
বিদ্যুৎ চমকের আলোতে রুমটা হঠাৎ আলোকিত হয়ে যায়। আর আমি যা দেখি, আমার পুরো শরীর ভয়ে কাঁপতে থাকে।
আমি দেখি সকালের সেই মহিলা দুটো রুমের মধ্যে। অদ্ভুত ভাবে হাসছে তারা। হাত নেড়ে নেড়ে ডাকছে। তাদের ডাকের শব্দও শুনতে পারি আমি।
তারা ডাকতে থাকে, ‘আয়, তুশি আয়।’
ভয়ে আমার শরীর কাঁপতে থাকে। আর তারা হাত নেড়ে ডাকতেই থাকে, ডাকতেই থাকে।
‘আয় তুশি। আয়।’
(চলবে)