অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৮

0
32

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪৮
নয়না জিয়ানের বাহুতে আবদ্ধ। নয়নার চোখ দুটো কাপড়ে বাঁধা। হৃদপিণ্ড বেসামাল, খামচে ধরে আছে জিয়ানের পাঞ্জাবি।
“জিয়ান নয়নার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,ডিয়ার বাটার মাশরুম। এতোটুকু ছোঁয়ায় হাওয়াই মিঠার মতো মিলিয়ে যেও না। তোমার জীবনের সবচেয়ে স্বরণীয় দিনের জন্য প্রস্তুতি নাও প্রাণ।”

নয়না এখনো জিয়ানের পাঞ্জিবর কলার শক্ত করে ধরে আছে।

জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,”ভালোবাসি না বলেও ভালোবাসা যায়। স্পর্শে ব্যাকুলতা ছড়িয়ে মিশে যেতে হয় একে অপরের পাজরে। অপূর্ণ থেকে পূর্ন হওয়া যায়, মিশে যাওয়া যায় একে অপরের মাঝে,লোকে জানবে, তুমি আমি দুটি দেহ, একটি প্রাণ৷ কবুল বললেই অপরিচিত নারীকে অর্ধাঙ্গিনী রুপে পাওয়া যায়। তবে সে নারীর ভালোবাসায় উন্মাদ হওয়া যায় জানা ছিলো না৷ তুমি আমার সব শূন্যতার প্রিয় পূর্নতা।”

“নয়না ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে চাইলো৷ তার আগেই ঠোঁট দুটো দখল করে নিলো অপর দু’টি ঠোঁট। নয়না কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো৷ খামচে ধরলো জিয়ানের পিঠ।

পেছন থেকে অনিকেত বলে,”ভাই আমরা অবিবাহিত একটু দয়া কর আমাদের উপর। তোদের যা করার আমরা সরলে করিস।”
“জিয়ান নয়নার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে সরে আসলো কিছুটা। অনিকেতকে উদ্দেশ্য করে বলে,”শা’লা কয়েক মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখতে পারলি না!মনমত কিসটা করতেও পারলাম না৷”
“বৌ তোরই, ফুরিয়ে যাচ্ছে না। সারাজীবন মনভরে যা খাওয়ার খেয়ে নিস। খাওয়ার আগে খেয়াল রাখিস আগে পিছে কেউ আছে নাকি। যেখানে সেখানে খেতে হয় না৷”
“নয়না মনে মনে বলে,এই লোকটা এতো ঠোঁট কাটা! লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই। এভাবে কেউ সবার সামনে বলে!অসভ্য,নির্লজ্জ,বেকুব প্লেন ড্রাইভার।”

জিয়ান বলল,”মনে মনে বকছো কেন! যত যায়ই বলো আমি কিন্তু তোমারই, তাই বকে টকে লাভ তেমন নাই সহ্য সারাজীবন করতেই হবে নো অপশন।”
জিয়ান নয়নার হাত ধরে নিয়ে আসে। আস্তে আস্তে নয়নার চোখ খুলে দেয়৷ নয়নার দৃষ্টি তখন আকাশে, সুন্দর করে লেখা, প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী শুভ জন্মদিন। লেখাটা মিলিয়ে যায় কয়েক মূহুর্তে। এরপরই নয়নার উপর বর্ষিত হতে থাকে নানা রকম সুগন্ধি ফুল৷ সবাই একসাথে উইশ করছে,হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার সুনয়না। হেলিকপ্টার থেকে বর্ষিত হচ্ছিলো ফুলের পাপড়িগুলো৷ এরপর উপর থেকে লাল আর সাদা রঙের বেলুন৷ নয়নার চোখেমুখে বিস্ময় আনন্দ দু’টো প্রকাশ পাচ্ছে।
“জিয়ান বলল,হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার বাটার মাশরুম। বেচে থাকার প্রার্থনায় তোমার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।নয়নার খালি হাত দু’টো নিজের হাতের মধ্য আবদ্ধ করে নেয়। এরপর অপর হাত দিয়ে নিজের পাঞ্জাবির পকেটে থেকে বের করে আনে, লাল রঙের রেশমি কাঁচের চুড়ি।

“নয়না অবাক নেত্রে তাকিয়ে আছে জিয়ানের দিকে। মানুষটা তাকে কত যত্ন নিয়েই ভালোবাসে! পরম যত্ন নয়নার শুন্য হাত ভরে উঠলো লাল কাঁচের চুড়িতে৷ হাত ছাড়তেই চুড়ি ঝুনঝুন করে উঠলো।”
“জিয়ান বলল,তোমার হাত এই চুড়ির সৌন্দর্য বর্ধন করে দিয়েছে।”
” নাজিব চৌধুরী, মিতা বেগম ওনারাও এসেছেন৷ যদিও কিছুটা দেরিতে ডেকে এনেছে ওনাদের। তবুও দু’জনেই বেশ খুশি হলো।সবাই মিলে একত্রিত হয়ে কেক কাটলো৷ নয়না সর্বপ্রথম কেকের পিসটা নিয়ে মিতা বেগমের মুখে তুলে দিলো৷ এরপর নাজিম সাহেবকে খাইয়ে দিয়ে কেকের পিসটা রেখে দিলো।”

সবাই বেশ আনন্দিত। তবে মেহনুরের মন যেনো আমাবস্যারাত। বেশি সময় সবাই থাকলো না৷ সবাই চলে গেলো যে যার মত।

“অনিকেত জিয়ানের, কানের কাছে মুখ এনে বলে,ভাই আমার তাল হারিয়ে ফেলিস না৷ নয়ত সেবারের মত ভাবি জ্ঞান হারাবে আর তুই এবারও ফুলকোর্স কম্পিলিট করতে পারবি না। একটু রয়ে সয়ে খাইস ভাই। জিনিস তোরই সারাজীবন খেতে পারবি।”
“শা’লা ইতর তুই যাবি নাকি সায়নাকে ফোন করে ডেকে আনবো?”
” যাচ্ছি। তবে এবার কিন্তু ইনকম্পিলিট রাখিস না।”

জিয়ান ছাদের দরজা বন্ধ করে নয়নাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নয়নার চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো। শুষে নিতে থাকলো নয়নার চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ৷
“নয়না চোখ বন্ধ করে ডাক্তারের কথাগুলো স্বরণ করলো,তুমি বর্তমান উপভোগ করো অতীত কে বর্তমানে আসার সুযোগ না দিয়ে৷ যদি বর্তমান আর অতীত একসাথে আসতে চায় একটু শ্বাস নাও ট্রাই করো বর্তমানকে অনুভব করার। মৃদু স্বরে বলল, চুলে কি তেলের বদলে আফিম ব্যবহার করো নাকিগো!কেমন মাতাল হয়ে যাচ্ছি। জিয়ান ধীরে ধীরে নয়নার কাঁধ থেকে চুলগুলো সরিয়ে নয়নার ঘাড়ে আলতো করে ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ দেয়।

“নয়না কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে দু”হাতে শাড়ি খামচে ধরে। নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,এতোটুকুতেই জমে গেলে এই পুরো আমি টাকে কি করে সামলাবে বাটার মাশরুম !”

“নয়নার মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না। নিশ্বাসের শব্দ ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
“পরপর কয়েবার জিয়ান নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের উষ্ণতা অনুভব করালো নয়নার ঘাড়ে৷”
” নয়না ঘুরে জিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো,কোমল কন্ঠে,বলল,আমার কেমন জেনো লাগছে।”
“জিয়ান পরম আদরে জড়িয়ে নিলো নয়নাকে নিজের বক্ষপিঞ্জরে, আদুরে স্বরে বলল,কেমন লাগছে বাটার মাশরুম? এই অনুভূতি এক্সপ্লেইন করতে পারবে?”
“নয়নার হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি টের পাচ্ছে জিয়ান৷ বলো না জান কেমন লাগছে তোমার?”

“নয়না জিয়ান পাঞ্জাবি ভেদ করে নখ বসিয়ে দিলো জিয়ানের পিঠে,মৃদু কন্ঠে বলল,জানিনা তুমি আমাকে কোন ঘোরে নিয়ে যাচ্ছো!মনে হচ্ছে আমি হারিয়ে যাচ্ছি তোমার স্পর্শে।”

“জিয়ান নিজের জমিয়ে রাখা কন্ট্রোল হারিয়ে বসলো, নয়নার মুখ থেকে তুমি ডাক শুনো৷ হুট করে নয়নার ঠোঁট ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো গভীর ভাবে।”
“নয়না পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।সে যেনো হারিয়ে যাচ্ছে নিজের মধ্য থেকে৷ ইচ্ছে করছে জিয়ানের ভেতর নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলতে।”
“প্রায় পাঁচ মিনিট পর নয়নার ঠোঁট জোড়া মুক্ত হলো জিয়ানের ঠোঁট থেকে৷ নয়না জোড়ে জোড়ে নিঃস্বাস নিচ্ছে। একমন সুখকর অদ্ভুত অনুভূতি!
“জিয়ান নিজেও শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,ডিয়ার বাটার মাশরুম আজকে তোমাতে ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে।জানিনা কতক্ষণ নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারবো। তুমি বুঝতে পারছো আমি বলছি? আমার ভেতরের পুরুষসত্তা তীব্রতা ধারণ করছে সুইটহার্ট। তোমার কোন সমস্যা হোক আমি চাইনা৷ তোমার কষ্ট হলে বলে দিও রাঙাবৌ। আমি সারাজীবন অপেক্ষা করবো তবুও তোমার অমতে তোমার সাথে ঘনিষ্ঠ হবো না জান৷”

“নয়না এসবের মানে বুঝে। নয়নার গাল দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো,শরীরে বয়ে যেতে লাগলো অন্য রকম এক শিহরণ।”

” জিয়ান নয়নার চোখে হাত রেখে বলে,এই পূর্নিমা রাত তুমি আমি জোছনাস্নাত করবো। দেহের মিলন না আমি তোমার সাথে আমার আত্মার মিলন ঘটাতে চাই প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী। তুমি বাঁধা দিওনা আজ সব বাঁধা ছিন্ন করে আসো একে অপরকে শপে দেই৷ এই সময়টুকুতে ভুলে যাও সব৷ আমার ভালোবাসায় সাড়া দিয়ে উন্মাদ হও আমার সাথে। চলো হারিয়ে যাই উন্মাদনায়।”
“কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নয়না সুধালো, কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“তোমাকে ভালোবাসার সমুদ্রে ভাসিয়ে নিতে নিয়ে যাচ্ছি বাটার মাশরুম। প্লিজ তুমি করে বলো জান৷ তুমিময় ভালোবাসায় সিক্ত হতে চাই৷ আমি তোমার কন্ঠে আদুরে স্বরে তুমি সম্বোধন শুনতে চাই সখী।”

“জিয়ান সুইমিংপুলের কাছে এসে নয়নার চোখের সামনে থেকে হাত সরিয়ে নিলো৷ চারপাশে লাল,নীল, সবুজ, হলুদ নারা রঙের লাইটিং পুরো পুল জুড়ে লাল গোলাপের পাপড়ি। মাঝখানে হলুদ গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লেখা, শুভ জন্মদিন প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।”

“নয়নার ছোট হৃদয় জুড়ে রঙিন প্রজাপতি উড়তে লাগলো৷ মনে হচ্ছিলো সে যেনো কোন অষ্টাদশী কন্যা। জিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,ভালোবাসি তোমাকে৷ একটু বেশিই ভালোবাসি। আমি কি সত্যি তোমার! আমার নিজের এই ভাগ্য যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না!”

“জিয়ান কল্পনাও করেনি নয়না তার এতো কাছে এসে এভাবে তাকে প্রপোজ করে বসবে৷ জিয়ান দু’হাতে নয়নাকে নিজের বক্ষে জড়িয়ে নিয়ে বলে,তোমার প্লেন ড্রাইভার তোমাকে একটু বেশিই ভালোবাসে বাটার মাশরুম। আমার বাটার মাশরুম একান্ত ব্যাক্তিগত সুরভিত ফুল তুমি, যার মাতাল করা ঘ্রানে আমি সব সময় আসক্ত থাকতে চাই। ভালোবাসি, ভালোবাসি। ভালোবাসায় মোড়ানো আমার ছোট বাটার মাশরুম।”

“নয়না জিয়ানকে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷ তার যেনো ইচ্ছে করছে জিয়ানের ভেতরে নিজেকে আড়াল করে ফেলতে৷”

“জিয়ান নয়নাকে ঘুরিয়ে সামনে এনে নয়নার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে পুলে জাম্প মারলো। পানির শীতলতা যেনো আরো উত্তাপ জড়িয়ে দিলো দু’জন কপোত-কপোতীর দেহ-মন জুড়ে। গোলাপের সুভাষ আর প্রিয়তমার সান্নিধ্যে পাগল করে তুলেছে জিয়ানকে৷”
অবশেষে আজকের পূর্নিমার রাত আর এই শীতল বাতাস সাক্ষী হতে যাচ্ছে দু’জন কপোত-কপোতীর পবিত্র মিলনের।
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে