অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৭

0
18

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪৭
নয়না ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে৷ তার হলুদ গোলাপ পছন্দ ভিষণ রকমের পছন্দ। আচ্ছা না বলতেই সে বুঝলো কি করে! ওই প্লেন ড্রাইভারও কি আমাকে ভালোবাসে?বলেই নয়না দু’হাতে মুখ ঢাকলো৷ নয়না মনে মনে আওড়ালো ভালো যখন বাসেন তখন মুখে বললে কি হয়!ইশশ এই পাইলট মহাশয় এতো কিউট কেন? আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে, ফুলগুলো বৃত্তের মত তার চারো সাইডে রেখে নয়না মাঝখানে শুয়ে পরলো। গোলাপের ঘ্রাণ আর প্রিয় মানুষের ভালোবাসা অনুভব করছে নয়না। অদ্ভুত রকমের অনুভূতি ছড়িয়ে পরছে নয়নার দেহমন জুড়ে! যে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না!
নয়না বেডের উপর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে৷ তার দৃষ্টি স্থীর চলন্ত পাখার দিকে। মনের মধ্যে কেমন যেনো করছে। অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হচ্ছে নয়নার৷ ভয়ে কপালে ঘাম জমেছে, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে বার্থডে আর রেজাল্ট একি দিনে হতে হলো! হাসফাস লাগছে নয়নার৷ দ্রুত বেড ছেড়ে উঠলো। ওড়না গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বের হতেই মিতা বেগমের সাথে দেখা হলো৷
“মিতা বেগম বলে, সুনয়না কিছু লাগবে তোমার আম্মু?”
“নয়নার লম্বা চুলগুলো ওড়না গলিয়ে বাহির হয়ে আছে।”
“মিতা বেগম নয়নাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন। নয়নার মাথাভর্তি রেশমি চুলগুলো তার ভিষণ পছন্দ হলো৷ তোমাকে তো দেখে শুনে আনতে পারিনি তবুও তুমি আমাদের মনের মত হয়েছো আলহামদুলিল্লাহ । মনে হয় শত জনমের সম্পর্ক তোমার সাথে আমাদের।”
‘মেহনুর মিতা বেগমের রুমে এসে এই দৃশ্য দেখে মনে মনে রেগে গেলো। মেয়েটাকে সবাই এতো প্রায়োরিটি কেন দেয়! নিজের ঠোঁটে মেকি হাসি টেনে বলল,আম্মি আমাদের রেজার বৌ কি একদম পরীর মতো৷ কিউট একটা বাচ্চা পরী।”
“ঠিক বলেছিস৷ ওর চুলগুলো দেখ?রুপাঞ্জেলের মত। ঘন সিল্কি,লম্বা, মসৃণ। আমার রেজা একদম লক্ষী একটা পরীবৌ পেয়েছে যেমন দেখতে মিষ্টি তেমনি মধুর মত ব্যবহার৷”
“মেহনূর বলল একদম ঠিম বলেছো। আর কতক্ষণ লাগবে তোমাদের আম্মি? আমার তোমার সাথে কথা ছিলো৷”
“কি কথা বলে ফেল। সুনয়নাতো আমাদেরই মানুষ ওর থেকে লুকানোর কিছু নেই৷”
“নয়না বলল,আম্মু আমি একটু ঘুমাবো। তোমরা কথা বলো৷ নয়না রুম থেকে বের হয়ে আসলো৷ জিয়ানের সাথে এখনো নয়নার একবারও দেখা হয়নি৷ কই গেলো লোকটা? নয়না নিচে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির দিকে যাচ্ছিলো৷ হঠাৎ গানের আওয়াজ পেয়ে নয়না স্থীর হলো।”

“জাহিন গিটারে সুর তুলে,গাইছে এলোকেশী কন্যারে তুই সদ্য ফোটা ফুল,তোরে দেখিয়া আমার মন হইলো ব্যাকুল।
তুই হাসলে যেনো মুক্ত ঝড়ে, তুই তাকালে ফোটে ফুল, এলোকেশী কন্যারে তুই সদ্য ফোটা ফুল৷”
“নয়না উঁকি দিতে যেয়ে সরে গেলো। জাহিনকে তার বিশেষ পছন্দ হয়নি। নয়না রুমে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে বারোটা সতেরো বাজে। নয়না বারান্দায় যেয়ে বসলো,মনে মনে বলে,কারো মনে নেই আমার বার্থডের কথা! রেজাল্ট দিলে তো সবাই ঠিক কল করে করে পাগল করে ফেলবে এখন একটা বার্থডে উইশ করতে পারছে না!”
“নয়না ফোনটা বেজে উঠলো, তুষির কল দেখে নয়না খুশি হয়ে গেলো৷ নিশ্চয়ই উইশ করবে।উৎসাহ নিয়ে কল রিসিভ করলো৷”
“কিরে কি করছিস! তোর টেনশন হচ্ছে না! আমার তো টেনশনে ঘুম আসছে না। পেটের ভেতর গুড়গুড় করছে।”
“তুই কি এসব বলার জন্য কল করেছিস তুষি?”
“হ্যা টেনশনে ঘুম আসছিলো না। তাই ভাবলাম তোর খোঁজ নেই৷”
” আর কিছু বলবি?”
“নাহহ আর কি বলবো৷ ওহহ হ্যা মনে পড়েছে৷”
“বল”
“দুলাব্রো কই?”
“নয়না খট করে কল কেটে দিলো। রাগ হচ্ছে তার৷”
নয়না রুমে এসে সোফায় শুয়ে আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে ঝিমাচ্ছে।
“এমন সময় কেউ দরজায় নক করে বলে,আসতে পারি?”
“কন্ঠ শুনে মনে হলো জিয়ান৷ তবুও বেড থেকে ওড়না নিয়ে, উঁকি দিয়ে বলে,আপনি কি জাহিন?”
“নাহহ জাহিন না আপনার বর।”
“নয়না দ্রুত দরজা বন্ধ করে বলে,আপনার ভাই রুমে নেই সে না আসলে এখানে আসবেন না। এইটুকু ম্যানারস নেই নাকি!”
“জাহিন বলল,মজা করছিলাম ওকে গুডনাইট প্রিটিগার্ল।”
“জাহিনকে দেখলেই নয়নার রাগ হয়। নয়না আবার এসে শুয়ে মোবাইল হাতে নিলো। রাত দেড়টা বাজে এখনো কোন খোঁজ নেই লোকটার! বৌ রেখে কোন বেডা মানুষ এমন টো টো করে রাত বিরতে! আবার কথায় কথায় বলে,বাসর সেরে ফেলবো। যাহহ এই জন্মে তোর বাসর করার শখ মিটবে না বদদোয়া দিলাম প্লেন ড্রাইভারের বাচ্চা।”

নয়না মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলো তার আইডির নাম, সিরাত চৌধুরী। নয়না ঘেটে ঘেটে জিয়ানের আইডি খুঁজে বের করলো।লক করা৷ প্রোফাইল। নয়না রেগে বলে,প্লেন ড্রাইভারের ভাব তো কম না! খোমাটা একটু সুন্দর বলে,প্রোফাইল লক করে রাখবে! তাহলে হ্যান্ডসাম হয়ে লাভটা কি!হ্যান্ডসাম ছেলে প্রোফাইল পাবলিক করে রাখবে মেয়েরা ক্রাশ খাবে। লাবি’ডাবি কমেন্ট করবে,ইনবক্সে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। প্লেন ড্রাইভার আসলে মাথা মোটা৷ নয়ত এতো সুদর্শন হয়ে প্রোফাইল লক রাখে গাধা ছাড়া কেউ! নয়না উঠে এসে কাভার্ড খুললো সেদিন জিয়ান তার জন্য অনেকগুলো শাড়ি অর্ডার করেছে নয়না সেগুলো বের করে আনলো। সব ঘেটে ঘেটে দেখছে,লাল পাড় সাদা জমিন সুন্দর এই জামদানী শাড়িতে নয়নার দৃষ্টি স্থীর হলো। শাড়ীর সাথে লাল কালার ম্যাচিং রেডিমেড ব্লাউজ। নয়না ফোন হাতে নিয়ে জিয়ানকে কল করলো৷
“ওপাশ থেকে রিসিভ হলো৷ নয়না বলল,আপনি কই?”
“বাটার মাশরুম খুব বেশি মিস করছো বুঝি আমাকে?”
“মোটেই না৷ আপনি না আসলে আমি ঘুমাবো।”
“ঘুমিয়ে পরো লিলিপুট আজ আমি ফিরবো না৷”
“নয়না কল কেটে দিলো৷ এখন তার শাড়ি পরার নেশা জেগেছে তাই কথা না বাড়িয়ে শাড়িটা পরে নিলো৷ লম্বা চুলগুলো খোলা রেখে কানে গুঁজে নিলো দু’টো হলুদ গোলাপ। লাল রঙের লিপস্টিক লাগালো,ঠোঁটে। নিজেকে নিজে আয়নায় দেখে নয়না নিজের মুখ ডেকে বলে, তোমার কোন অধিকার নেই এতো সুন্দর হওয়ার! উফফ নিজেই না নিজেকে নজর দিয়ে বসি। নয়নার ইচ্ছে করছে নাচতে। এতো সুন্দর লাগছে তাকে! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দেড়টা ছাড়িয়ে গেছে। হঠাৎ চোখ গেলো সোফার উপর পরে থাকা জিয়ানের ব্লেজারের উপর। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যেয়ে তুলি নিলো ব্লেজার। নাক ডুবিয়ে দিলো ব্লেজারে। কেমন মাতাল করা একটা ঘ্রাণ। ইশশ কারো শরীরের ঘ্রাণেও বুঝি মাদকতা থাকে! নয়না ব্লেজারে চুমু খেয়ে বলে,আপনি কি জানেন আমার এই ছোট হৃদয়ে আপনার ভালোবাসার অঙ্কুর গজিয়েছে। তারা কেমন ডাল-পালা ছড়িয়ে আপনার প্রতি আমাকে দূর্বল করে দিচ্ছে! জানেন তো কম বয়সের প্রেম মারাত্মক ভয়ংকর। অসম প্রেম যা নিজেকে ভুলিয়ে দেয় তবুও ভালোবাসার মানুষকে ভুলতে পারে না। নয়না আনমনে জড়িয়ে নিলো জিয়ানের ব্লেজার। অদ্ভুত অনুভূতিরা ঘিরে ধরেছে তাকে।হৃদয় জুড়ে বয়ে যাচ্ছে শীতল প্রবাহ স্নায়ু জুড়ে ছড়িয়ে পরছে প্রিয় পুরুষের স্পর্শের মাদকতা। ইশশ কাউকে স্পর্শ না করেও এতো গভীর ভাবে অনুভব করা যায়! আজকের এই মূহুর্ত না আসলে হয়ত নয়না বুঝতো না৷ হৃদযন্ত্র ধীরে ধীরে কেমন বেসামাল হচ্ছে। নয়না চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো পরম আবেশে। দ্রুত চোখ খুলে ব্লেজার ছুড়ে ফেললো বেডে। জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,একেমন সুখকর দমবন্ধ মুগ্ধতার মোহজালে ঘেরা অনুভূতি!শাড়ি খামচে ধরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। শরীর জুড়ে বয়ে চলেছে অদ্ভুত শিহরন, হৃদয় জুড়ে বইছে ভালোবাসার মোহমায়া।

🌿

জিয়ান বাসায় এসেছে ঘন্টা খানেক আগে। বাসায় এসে তার প্রিয়তমার জন্য বার্থডে সারপ্রাইজ প্ল্যান করছে,তাদের ছাদে সুইমিংপুল আছে একপাশে আরেক পাশে সুন্দর বসার জায়গা বেশ সাজানো পরিপাটি ছাদটা।
“পুরো সুইমিংপুলের পানির উপরে,লাল আর হলুদ গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। মাঝখানে লেখা শুভ জন্মদিন ডিয়ার বাটার মাশরুম। জিয়ানের সাথে অনিকেত আর একজন ডেকোরেশনের লোক সব কিছু গুছিয়ে দিচ্ছে৷ কাজ শেষ হতেই। জিয়ান বলল,অনি এবার যাহহ তোর কাজটা করে আয়। উইশটা আবার চেঞ্জ করলো জিয়ান৷

🌿

নীলাঞ্জনা জানালায় মাথা ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে দূরের আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা চাঁদের দিকে।মনে মনে বলে,আজকের চাঁদটা এতো সুন্দর কেনো!নীলাঞ্জনার মনে পড়লো জিয়ানের বলা একটা কথা, ” পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর তার অর্ধেকটা জুড়ে নারী। নারী ছাড়া সৌন্দর্য তার পূর্নতা মেলে ধরতে পারে না। কোন এক পূর্নিমা রাতে পূর্ন চাঁদকে দেখাবো আমার পাশে তারচেয়ে উজ্জ্বল চাঁদ আছে৷ তখন মোবাইলের অপরপাশ থেকে এমন কথা শুনে নীলাঞ্জনা বলেছিল, এতো বেহুদা কথা কোথায় পাও তুমি! তুমি এতো,বোরিং কেন রেজা! আজ মনে হচ্ছে পৃথিবীতে এরচেয়ে সুন্দর কথা হয়ত নেই। চোখের অশ্রু মুছে নিয়ে বলে,আমি তোমাকে ডিজার্ভ করি না। তাই তোমাকে অবহেলায় হারিয়েছি। যে প্রেম আমি চেয়েছিলাম সেই কলুষিত প্রেমিক তুমি ছিলে না। তাই আমি তোমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে কলুষিত মানুষের প্রেমে পরে ছিলাম। তার প্রেমে পড়ে মনে হয়েছিলো আমি এমন প্রেম চাইছিলাম৷ অথচ সে শুধু আমার দেহের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রেমে মত্ত ছিলো। আমি তোমাকে হারিয়েছি আমি জীবনের সব সুখ হারিয়েছি। আমি কি করবো এই সন্তানের?একা একা কিভাবে সামলাবো তাকে! কাউকে ঠকিয়ে কেউ সুখী হতে পারে না৷ তোমাকে ঠকাতে যেয়ে নিজের জীবন ধ্বংস হয়ে গেলো। তুমি ভালো আছো আমি ভালো নেই রেজা৷ একবারও কি আমার কথা তোমার মনে পরে না! একটুও তোমার মন পোড়ে না আমার জন্য! এটা যে আমি মেনে নিতে পারছিনা খুব কষ্ট হচ্ছে আমার খুব বেশি। তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারলে হয়ত এই কষ্টের ভার সামান্য কমতো।
তুমি আমাকে ভুলে যেয়ে ভালো আছে এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। কেনো পারছি না বলতে পারবে রেজ!
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে