অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৬

0
14

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪৬

জিয়ান নয়নার হাতটা ধরে বলে, “তুমি শুধু আমার, আমি কোন কিছুর বিনিময়ে তোমাকে হারাতে পারবো না৷”
“এতো ইমোশনাল হতে হবে না।এসব আমি নাটক সিনেমা দেখে শিখেছি হু।”
“আরেহহহ নায়িকা সুনয়না চৌধুরী অটোগ্রাফ প্লিজ৷”
“সুনয়না চৌধুরী যাকে তাকে অটোগ্রাফ দেয়না।”
“ম্যাডাম আপনি অটোগ্রাফ না দিলে আমার ভবিষ্যতে বাচ্চারা বলবে ছিহহহ বাবা সামান্য একটা অটোগ্রাফ ও নিতে পারোনি!”
“তেল মারা বন্ধ করুন। কেক, একটা ফুলের বুকে আর কি পছন্দ করে অনিকেত ভাইয়া৷”
“ও তোমার কোন জন্মের ভাই?”
“যে জন্মে আপনি আমার হ্যাসবেন্ড সেই জন্মের।”
“জিয়ান আড়চোখে চেয়ে দেখে নয়না হলুদ গোলাপগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে৷ জিয়ান দোকানি কে বলল,মামা এখানে কয় পিস ইয়োলো গোলাপ আছে?”
“সাতশ বা ছয়শ হবে। আপনার কতগুলো লাগবে স্যার?”
“সবগুলো দিয়ে দিন মামা।”

নয়না একটা গাজরা নিয়ে হাতে বাঁধার চেষ্টা করছিলো কিন্তু সে ব্যর্থ হচ্ছে বাঁধতে।

“জিয়ান নয়নার হাত ধরে গাজরাটা বেঁধে দিলো৷ নয়নার হাত ধরে রেখে বলে,বেলিফুল কি জানে তার সৌন্দর্য বর্ধন করছে কারো প্রিয়তমা! সে কি জানে তার শুভ্রতাকে হার মানাচ্ছে কারো মুচকি হাসি! হতাম যদি বেলিফুলের মালা তোমার গলাজুড়ে জড়িয়ে থকতাম সারাবেলা।”

“নয়না মৃদু স্বরে বলে,আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন মিস্টার রোমিও এটা আপনার বাসা না। আর বেলিফুলের গাজরা হাতে থাকে গলায় না৷”

“জিয়ান নয়নার হাত ছেড়ে বলে, শোনো বৌ পুরুষ মানুষ প্রেমে পড়লে ভুলভাল বকবে ইট’স নরমাল, বোঝেনা বৌ আমরা আমি তার প্রেমে উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি। এই তুমি শাড়ি পরে বের হওনি কেন! তুমি শাড়ি পরে বের হলে আমি তোমার কুচি ঠিক করে দিতাম। তোমার শাড়ীর আঁচলে আমার হাত বেঁধে সারা শহর ঘুরে বেড়াতাম। সবাই ভাবতো বৌ পাগল জামাই। কেউ কেউ ভাবতো এমন জামাই কই পাওয়া যায়?”
“দোকানদার ফুল বেঁধে দিয়ে বলে,সাহেব কি নতুন বিয়ে করছেন? আপনাকে আর ম্যাডামকে দারুণ মানিয়েছে। মনে হচ্ছে মানিকজোড়া৷ সব সময় ভালা থাহেন৷ আগের দিনে এমনই বিয়া হইতো জামাইয়ের তন বৌয়ের বয়সের পার্থক্য কম থাকতো।”
“জিয়ান হেসে বলে হ্যা মামা নতুন বিয়ে হইছে,তবে বৌ আমার বোঝে কম চিল্লায় বেশি। বাচ্চা মানুষ তো তবে আক্কেল ম্যালা ভালা আছে।”
“বৌ জ্বালাইবোই। আপনাগো চাচি আমারে কি কম জ্বালায়! তবুও হের ভালোবাসা অসীম আমি জানি৷ আমি না খাইলে খাইতো না৷ যত রাইতে দোকান বন্ধ করি যাইয়া দেখমু আমার লাইগা বইসা আছে। বুড়ির লগে দুইডা কথা কইলেই পরাণডা ঠান্ডা হইয়া যায়।”
“জিয়ান টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,বাকি টাকা দিয়ে চাচিরে একটা শাড়ি কিনা দিয়েন৷ দোয়া কইরেন আমাদের জন্য।”
“নয়না জিয়ানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে জিঙ্গেসু দৃষ্টিতে।
“এই যে এভাবে তাকালে কিন্তু ভরা রাস্তায় চুমুটুমু খেয়ে বসবো।”
“রিকশায় আমি বসবো নাকি ফুল বসবে?”
“তুমি তো নিজেই একটা জ্যান্ত ফুল। ফুলের মাঝে জ্যান্ত ফুলকে দারুণ লাগবে।”
“এতোগুলা ফুল কেনো কিনেছেন!”
“ভাবছি এসব নিয়ে সোজা বাসায় যাবো৷ বাসরটা সেরেই ফেলবো আজ। তাজা গোলাপের সুবাস সাথে সদ্য ফোটা জীবন্ত ফুলের নেশায় বুদ হবো,মাতাল হবো তার ভালোবাসায়।”
“আজেবাজে কথা বন্ধ করেন আমরা কিন্তু অনিকেত ভাইয়ার বার্থডেতে যাচ্ছি। দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ করেন, ভুলে যাবেননা ফুলে কিন্তু কাটাও থাকে।”
“ফুলের কোমল স্পর্শ আর মাতাল করা ঘ্রাণ সহ্য করার জন্য কাটার আঘাত সহ্য করা কোন ব্যাপারনা জান৷”
“চুপ করুন। সময় যাচ্ছে না হচ্ছে!”
” সবকিছু কিনে নিয়ে অনিকেতের বাসার উদ্যেশে রওনা দিলো দু’জনে।”

🌿

কলিংবেলের আওয়াজে বিরক্ত হয়ে অনিকেত দরজা খুলল,সামনে থাকা রমনিকে দেখে চশমা ঠিক করে বলে,আপনি এখানেও?
“জলে স্থলে,জঙ্গলে যেখানে থাকবেন আমাকে পাবেন।”
“কেনো এসেছেন?”
“আহাগো সখের নাগরের ভাব দেখলে বাঁচিনা৷ আজকে আমার একমাত্র সখের বেডার বার্থডে আসবো না! তোমার জন্য পুরো ঢাকার শহর ঘুরে দোলনচাঁপা ফুল নিয়ে আসলাম কই জড়িয়ে ধরে দুইচারটা চুমু খাবা তা’না আবার জেরা করছো! সরো সাইডে চাপো।”
“দেখুন মিস সায়না এসব একদম ঠিক হচ্ছে না।”
“সায়না সোফায় বসে চারপাশ ভালোভাবে লক্ষ্য করে বলে,আরেহহহ বাহহহ বিয়ের পর তো আরামে থাকতে পারবো৷ তুমি আমি আর আমাদের ভালোবাসার সংসার৷”
” শোন।”
“শোনাও আমি তো তোমাকেই শুনতে চাই।”
” কেন করছেন এমন?”
“আমি তো করবো না যা করার তুমি করবে। মেয়েরা কিছু করে নাকি লজ্জা লাগে না বুঝি!তোমার বাসার কিচেন কোনদিকে?”
“কিচেনে কি?”
“আজ দেড় ঘন্টা ব্যয় করে তোমার জন্য রান্না শিখেছি বিফ তেহারি রান্না করবো।”
“আমার বাসায় কিচেন নেই। আমি বাহির থেকে খাবার অর্ডার করি।”
” ওভেন আছে?”
“সায়না ওভেন খুঁজে পেলো। সাইড ব্যগ থেকে একটা বক্স বের করলো তেহারী প্লেটে ঢেলে গরম করতে দিলো ওভেনে। শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুঁজে রাখা। পিঠ জুড়ে খোলা চুলগুলো বারংবার দোলখাচ্ছে অনিকেত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে নব বিবাহিতা কোন রমনী। তার এতোদিনের স্বপ্ন যেনো বাস্তবে এসে ধরা দিয়েছে।”
“সায়না তেহারির প্লেট নিয়ে এসে বলে,লুকিয়ে দেখতে মজা তাই না।”
“আমি আপনাকে দেখছিলাম না আমি তো দেখছিলাম আমার ওভেন।”
“আমি কখন বললাম তুমি আমাকে দেখছো! রান্না ঘরে কে? আমি তো গুঁড়োদুধ খাইনি। এমন হয়ে গেলো না ব্যাপারটা?”
“চাইছো টা কি?”
” তোমার বৌ হতে চাইছি।”
“আবার কলিং বেল বেজে উঠলো।”
” অনিকেত দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে দেখে জিয়ান আর নয়না। অনিকেত হতবুদ্ধি হয়ে যায়। এখন সে কি করবে! তুই এসেছিস ভাবিকে নিয়ে?”
“হ্যা এসেছি। এখন কি বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি ভেতরে আসতে দিবি?”
“আয়। অনিকেত সরে যেতেই দেখে নাহিদও এসেছে সাথে। রুমে ঢুকেই সবাই একত্রে বলে উঠলো হ্যাপি বার্থডে ডাক্তার সাহেব।”
“অনিকেতের চক্ষু টলমল করছে। এই মানুষ দু’টো সেই কলেজ লাইফ থেকে তাকে কখনো ফিল করতে দেয়নি সে অনাথ! সব সময় আগলে রেখেছে নিজের ভাইয়ের মত।”
” অনিকেত নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,নাহিদ্দা ভাবি কই?”
“ভাবি এখন তোদের চাচ্চু বানানোর কাজে ব্যস্ত৷”
” নয়না সাইডে যেয়ে দাঁড়ালো।
“অনিকেত যেয়ে বলে,ভাবি আজকে তো আপনি আমাদের চিফ গেস্ট। প্লিজ আপনার আসন গ্রহন করুন।”
“সায়না কিচেন থেকে চানাচুর, বিস্কুট, ফল ট্রে তে করে সাজিয়ে নিয়ে এসে বলে,ডিয়ার দেবরগন আপনাদের ভাবির তরফ থেকে সামান্য খাতির যত্ন গ্রহণ করুন৷”
“জিয়ান হেসে বলে,বাহহ আমার আলাভোলা বন্ধুটাকে ফাঁসাচ্ছিস?”
” নাহিদ ভ্রু কুঁচকে বলে,এটা তোর বোন না?”
“জিয়ান হেসে বলে,আগে বোন ছিলো এখন ভাবি হয়ে গেছে।”
ওরা দু’জন হেসে উঠলো৷
“অনিকেত চোখের চশমা ঠিক করে বলে,আপনি এখানে এসেছেন কেনো? বললাম না, আসতে না।”
“নাহিদ বলল,চুপ কর শা’লা ফ্রীতে বৌ পাচ্ছিস চুপচাপ গ্রহণ করে নে। এরকম বৌ এতো সহজে পাওয়া যায় না।”
সবাই মিলে খাবার খেতে খেতে আড্ডা দিলো। এরপর কেক দুটো কাটা হলো কেক নিয়ে মজা হলো। অনিকেত বলল,”সব ঠিক থাকলে লাবিবও এখানে থাকতো আজ৷ কেনো যে নিজেকে ধ্বংস করলো ও!”
“জিয়ান বলল,আমি কখনো ভাবিনি আমার সাথে লাবিব গাদ্দারি করবে! তোরা আমার কাছে কিভাবে আড়াল করলি এতো বড় কথাটা! তবে ওরে তো আমার ট্রিট দেয়া উচিৎ ওর জন্য এতো সুইট কিউট একটা বৌ পেলাম।”
“নয়না লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে নখ খুটছে। মনে মনে বলে,এই লোকটার কোন লজ্জা টজ্জা নেই অসভ্য লোক একটা।”
“নাহিদ বলল,লাবিব তো জেলে নারী নির্যাতন মামলা খেয়েছে। তবে যাই বলিস নীলাঞ্জনা মেয়েটারও দোষ ছিলো৷ ছেলেদের মেয়েরা সুযোগ না দিলে তারা কোন মেয়ের কাছে ঘেঁষেতে পারে না।”
“অনিকেত বলল,দু’টোই একি কোয়ালিটির বাদ দে ওদের কথা। চল মুভি দেখে আসি সবাই মিলে।”
“বৌটাকে বাসায় রেখে আমরা তিনজন বের হবো। ব্যাচালার লাইফের মজা নেবো একটা দিন।”
“অনিকেত বলল,ডাক্তার অপর্ণা ঘোষ নিউরোলজিস্ট ওনাকে আসতে বলেছি। এসে পরবে কিছুক্ষণের মধ্যে। ভাবির মস্তিষ্ক থেকে তোর প্রতি ভয়টাকে বিদায় করতে হবে তো? নয়ত এজন্মে চাচ্চু হতে পারবো না৷”
“নয়না লজ্জায় এখন মিয়ে যাচ্ছে।”
“জিয়ান বলল,এই যে সায়না ভাবি আমার বৌটাকে নিয়ে আপনাদের বেডরুমে চলে যান।”
“ওরা দুজন রুমে এসে বসলো,সায়না বলল,বয়স কত তোমার?”
“আর একদিন পর সতেরো হবে।”
“তোমার কি সমস্যা আমাকে বলতে পারো। আমি শুধু অনিকেতের হবু বৌ না তোমার আদরের ননদিনী ও।”
“নয়না সে-সব কথা এখন মনে করতে চাইছে না৷ এমননা এখন জিয়ানের স্পর্শ তার খারাপ লাগে কিন্তু হঠাৎ কি যে হয়ে যায় লোকটা কাছে আসলে!”
“সায়না নয়নার কাঁধে হাত রেখে বলে,ইতস্তত না হয়ে বলে,ফেলো।সমস্যা না বললে সমাধান পাবে কই?”
” নয়না বেডসিট খামচে ধরে বলা শুরু করলো,চোখ বন্ধ করে সবটা বলে ফেললো গল গল করে,কপালে জমা হয়েছে বিন্দু বিন্দুঘাম।”
“সায়না নয়নাকে বলল,স্বাভাবিক হও নয়না৷ আমি জানি হুট করে তোমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা তুমি কেনো! কোন মেয়েই মেনে নিতে পারবে না। কিন্তু এখন তো তোমাকে সামনে আগাতে হবে ওই রাতটাকে ভুলে যেয়ে। জিয়ান খুব ভালো ছেলে কিন্তু রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনি হয়ত। আমি জানি কাজটা অন্যায় করেছে। আচ্ছা ওইরাতে সবটা হয়েছে তোমাদের মধ্যে?”
” নয়না এসব বুঝে তবুও একরাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরেছে তাকে।”
“এমন সময় ডাক্তার অপর্ণা ঘোষ আসলো৷ নয়নার সাথে একান্তে কথা বলল,কিছু পরামর্শ দিলো সাথে তিনটা মেডিসিন দিলো।”

🌿

জাহিন ফাঁকা রুমে একটা চেয়ারের উপর পায় তুলে বসে আছে চোখ বন্ধ করে,তার কানে ভেসে আসছে তার বাবার কথাগুলো,তোকে দিয়ে কিছু হবে না৷ তুই কোন কাজের যোগ্য না। অপদার্থ একটা। জাহিন কপালে আঙ্গুল ঘষছে। এমন সময় ফোনটা স্ব শব্দে বেজে উঠলো৷ বিরক্ত নিয়ে চোখ খুলে দেখে অন্তরের কল,রিসিভ করে বলে,”কিরে শালা ডিস্টার্ব করার আর সময় পেলিনা!”

“অন্তর কাতর কন্ঠে বলে,রিতু সুইসাইড করেছে৷ প্লিজ স্কয়ার হসপিটালে চলে আয় দ্রুত।”
“জাহিন সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। রুমটা লক করে ছুটে বের হলো৷”
“মেহনুর হাত ধরে বলে এভাবে কোথায় যাচ্ছো?”
“জাহিন এক ঝটকায় হাত সরিয়ে বলে,জাহান্নামে যাচ্ছি তুই যাবি তাহলে আয়।জাহিন ততক্ষণে গেট ক্রস করেছে৷”
“মেহনুর কান্নার নাটক করে মিতা বেগমকে বলল,তোমার ছেলে আমাকে অসম্মান করেছে এবাড়িতে আমি আর থাকবো না।”
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে