#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১৭]
-তামান্না
–আমি চাই আমার নিরুপমা আমার রাগকে পাত্তা না দিয়ে,, আমার বদমেজাজে গরম পানি ঢেলে দিয়ে একেবারে ঠান্ডা করে দিক।আমি জানি আমার মতো পুরুষ কে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা আমার নিরুপমার আছে। শুধু সেটা একটু প্রয়োগ করুক আমার বউ।
নিরু এবার শান্ত মেয়ের মতো কান্না করে শব্দ ছাড়া।রিহান বুঝতে পারছে কারণ তারপর টিশার্ট পুরো টা ভিজে যাচ্ছে।
–এভাবেই এক সময় দুজনে ঘুমিয়ে পড়ে।পরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে পড়ে রিহান।
–নিরুর মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে কপালে চুমু খেয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এতো দিনের ছটফটানি নিমিষেই দূর করে দিতে পারে এই সুন্দর অনুভূতি।পৃথিবীর সব থেকে স্বস্তির আর আরামের অনুভূতির মধ্যে এটা একটা।শুয়ে শুয়ে অনেক কিছু ভাবতে থাকে রিহান।
এরমধ্যে নিরুর ঘুম ভেঙে যায়।রিহান ঘুমের ভান করে থাকে।চুপিচুপি উঠে বসে নিরু,,রিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে হাসি দিতেই দেখে তাকিয়ে আছে রিহান। লজ্জায় তাড়াতাড়ি করে উঠে যেতে নিলে রিহান একটানে নিজের উপর এনে ফেলে।
–রিহান :লজ্জা নারীর ভূষণ তবে স্বামীর সামনে অতো দরকার নেই।নিরু লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে।রিহান ঠাট্টার ছলে বলে,, আমি একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিলাম।
–নিরু:কি বিষয়?
–রিহান :সব সময় ভাবতাম যা লাজুকে বউ আমার ধরা কি সহজে দিবে?এখন দেখছি ধরা আসলেই দিচ্ছে না।
নিরু হালকা কিল দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।খানিকটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,, রিফা?ওর ব্যবস্থা?
–রিহান :উঠে দাঁড়িয়ে বলে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।বাসায় ফিরবো তবে আশা করি ফিফটি পার্সেন্ট কাজ এগিয়ে আছে।তারপর রাফির কাহিনি খুলে বলে।
–এদিকে সকাল থেকে মনমরা হয়ে আছে রিফা।ফোন টা ও বন্ধ।সে পণ করেছে এই ফোন আর ব্যবহার করবে না।নিজের উপর রাগ হচ্ছে কেন এমন বাজে ভাবে জড়ালো বাজে লোকের সাথে?
*****************
–রিহান নিরু রাফি রিফা আর নিরব।সবাই মিলে উপস্থিত হয়েছে একটা রেস্টুরেন্টে।নিরব তো ভীষণ খুশি ভেবেছে রিফা রাজি করিয়ে ওদের এনেছে।রিহান আর নিরু খানিকটা দূরে অবস্থান করছে।ফোনে কিছু কথা বলছে এরপর সামনে আসবে।
–রাফি:তুই ওদের জন্য কেন রিফার দিকে হাত বাড়িয়েছিস?ওদের সামনে তো ভীতুর মতো চুপসে থাকিস,মেয়ে মানুষের দিকে নরম ভেবে চোখ তোলা তো?
–নিরব:তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই।রিফার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, কথিত প্রেমিককে নিয়ে কেন আসলা?রাফি শোন তোর চরিত্র সম্পর্কে জানা আছে।রিফা আমায় ভালোবাসে বলে হিংসা হচ্ছে তাই না?নিজে তো ধারে ও ঘেঁষতে পারলি না।
রাফি রাগে হাত মুষ্টি করে ফেলে।
–রিফা:তোমার সাথে সারাজীবন থাকবো তাই তো?
–নিরব:হুম অবশ্যই!
–রিফা:তাহলে শুরুতেই যদি আমার লোকের কথা সয্য না করতে পারো,, সারাজীবন কিভাবে থাকবো?
–নিরব:হাসার চেষ্টা করে বলে,,কোল বেবি।আর রাফি তো তোমার লোক নয়!
–রিফা:সেটা তুমি বললেই তো হবে না।আমার লোক কে সেটা আমি বলবো।
–নিরব:উঠে দাঁড়িয়ে রিফার হাত চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, এতো ত্যাড়া কথা কই থেকে শিখলি?
–রাফি:ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে বলে,, দূরত্ব বজায় রেখে কথা বল।মেয়ে মানুষ কে সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখ।
–নিরব:এগিয়ে আসতে আসতে বলে লাগে?খুব লাগে?সুন্দরী হাত ছাড়া হয়ে গেলো বলে?আহা রে মা*ল টারে আমি পেয়ে যাবো,,আফসোস হচ্ছে?
–রিফা:ছি ছি ছি!এগুলো কোনো মানুষের ভাষা?
–রাফি :দুই তিন টা ঘুষি মারে।এক পর্যায়ে ভালোই হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়।রিফা ভয়ে ওদের আটকাতে না পেরে কান্না করে দেয়।
–নিরব:তুই আমাদের মধ্যে আসিস না রাফি।জাস্ট কয়েক দিন আমার হাতে দে তারপর তোর হাতে দিয়ে দিবো।
আরও অনেক গুলো নোংরা ভাষা ইউজ করে।
–হিতে বিপরীত হওয়ার আগেই পুলিশ সহ এসে উপস্থিত হয় রিহান আর নিরু।
–নিরব:রিফার দিকে তাকিয়ে বলে ভাইয়ের মতো করলি তো?তোকে আমি দেখে নিবো।দেখবো জীবনে কিভাবে বিয়ে বসিস।
নিরু এগিয়ে গিয়ে রিফাকে জড়িয়ে ধরে।রিফা ভয়ে বাচ্চাদের মতো গুটিয়ে আছে।
–নিরব:পাগলের মতো হাসতে হাসতে বলে নিরু? আমি ফিরে আসলে তোর ভালো হবে না।শুধু সবুর কর তোর অস্তিত্ব মুছে দিবো।
–রিহান :হাতটা মুচড়ে কয়েক টা লাত্থি মেরে বলে আগে নিজের চিন্তা কর।পৃথিবীর বুকে রিহানের শেষ নিশ্বাস অব্দি তোর অস্তিত্ব সংকট হবে।নিরু আর রিফা আমার দুই পাশ ওদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর কল্পনা ও করবি না।আর রইলো রিফার বিয়ে তোকে আমি চ্যালেন্জ করলাম আগামী তিন দিনের ভিতর ওকে আমি বিয়ে দিবো।আর কানের ফিসফিস করে বলে,,আর আমার আর নিরুর অস্তিত্বের নতুন অতিথি আনার প্রসেসিং করবো।নেক্সট যেন মামা ডাক শুনতে পারিস ওখে?
–তারপর বিভিন্ন কথা-কাটাকাটির পর পুলিশ নিরবকে নিয়ে যায়।প্রমাণ স্বরুপ কিছু ভিডিও আর কল রেকর্ড জমা দেওয়া হয়।
–রাফি:রেগে বলে,, আমি আসছি।কালকে চলে যাবো।
–রিহান :কালকে কেন?তুই না বললি আরও দুই সপ্তাহ ছুটি আছে।
–রাফি:অন্য দিকে ঘুরে হাতটা মুষ্টি বদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলে,,আমার রাগ হচ্ছে রিহান।আমাকে যেতে দে নয়তো নিজেকে কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে যাবে।
–রিহান :হাত ধরে টেনে বলে চল।তুই আজকে আমার সাথে আমার বাসায় থাকবি।তারপর জোর করে গাড়িতে উঠায়।
*********
–ড্রয়িং রুমে সবাই মিলে বসে আছে।রিহান কিছু খাবার এনেছে সবাই এক সাথে খাবে বলে নিচে পাটি বিছিয়ে রেডি করছে।রিহানের আব্বু আম্মু রুমেই আছে।রেডি করে ওদের ডাক দিবে।এসে ফ্রেশ হয়ে খানিকটা রেস্ট নিয়ে এসেছে।
সোফায় এক কোণায় ভেজা চুল ছেড়ে মাথা হেলান দিয়ে বসে আছে রিফা।আর সামনাসামনি এই মাথায় বসে ফোন ঘাঁটছে রাফি।
–রাফি:এক কাজ কিন্তু বাকি রয়ে গেলো রিহান?
–রিহান :মাথা তুলে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে কি কাজ?
–রাফি:আসল কাজ টাই।নিরবের সাথে আরও একজন কে রেখে আসা উচিত ছিলো।সে যে দুঃখের সাগরে প্রেমিক বিহীন ভেসে যাচ্ছে।
–রিফা:সোজা হয়ে বসে।একবার আড় চোখে রাফিকে দেখে নেয়।নিরু এগিয়ে এসে বলে এমন করছেন কেন রাফি ভাইয়া?দেখতেই তো পাচ্ছেন মন খারাপ ওর।
–রাফি:কেমন করছি?মন ঠিক করার ব্যবস্থা করতে ভুল হয়ে গেছে সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছি।
–রিফা রাগে উঠে চলে যেতে নিলে রাফি বলে দেখলে যা বললাম তাই সত্যি।
–নিরু:এগিয়ে গিয়ে ধরে এনে বসায় ওদের সাথে।
.
.
–সবাই মিলে একসাথে বসে আছে।রিফা সোফায় বসে কার্টুন দেখছে পাশে সবাই।এরমধ্যে রিহান বলে।
–রিহান :এক সপ্তাহ হয়ে গেলো,,আমি বলেছিলাম তিন সপ্তাহের ভিতরে রিফার বিয়ে দিবো।
–আব্বু :হুম!ভালো পাত্র দেখে দিয়ে দেওয়ায় ভালো।
–রিহান :আমার কাছে ভালো পাত্র আছে আর সেটা তোমরা ও চেনো।
–রিফা এবার সোজা হয়ে বসে।মলিন চোখে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের মুখের দিকে।
–আম্মু :কে?
–রিহান :রাফি।আর রিফা কে খুব ভালো ও বাসে।
–রিফা:উঠে দাঁড়িয়ে কান্না করতে করতে বলে কখনোই না।আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না।আর রইলো রাফি ভাইয়ার কথা আমি একে বিয়ে করতে পারবো না।বিয়ের পর দাঁতে দাঁত চেপে বলে নিরইব্বা রে নিয়েই খোটা দিবে সারাক্ষণ।
রিহান নিরু সহ সবাই হেসে ওঠে।আর এদিকে মাত্রই বাসার ভিতরে প্রবেশ করেছিল রাফি।তাই রিফার প্রত্যেকটা কথা শুনে ফেলে।
–রাফি:খোঁটার কাজ করলে তো খোঁটা শুনতেই হবে।আচ্ছা মানুষ জন এতো বোকা আর গাধা কেন?নরমাল জিনিস বুঝতে পারে না?
–রিফা:রেগে কোনো কথা না বলে চলে যায় রুমে।
–রিহান :আমার প্রস্তাবে কি তুই রাজি?প্লিজ না করিস না।
–রাফি:হেসে বলে আগে রিফার সাথে কথা বলতে চাই সিরিয়াস মোডে।তারপর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,,তারপর রিকোয়েস্ট তুই নয় আমি করবো তোর কাছে।বাঁকা হেসে চলে যায় রিফার রুমে।
–রিফা রুমে এসে বসে বসে কান্না করছে।রাফি গলা খাঁকারি দিয়ে রুমে প্রবেশ করে।রিফা তাড়াতাড়ি করে উঠে চোখের পানি মুছে দাঁড়িয়ে থাকে।
–রাফি:তোমার রুমে এলাম।
–রিফা:জোর পূর্বক হেসে বলে,, স্বাগতম।
–রাফি:বিছানায় বসে চারপাশে তাকিয়ে বলে মন্দ না,চলবে।
–রিফা:কি চলবে? আর কিছু বলতে আসলেন নাকি?ভাইয়া রা কোথায়?
–রাফি:বলবো তো অবশ্যই।আর রইলো ভাইয়ারা,, ওরাই আমাকে পাঠিয়েছে এখানে।
–রিফা:একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের রুমে একা একজন ছেলেকে পাঠিয়ে দিলো?বাহ্ বাহ্ বেশ দায়িত্ব সচেতন মানুষ তো আমার পরিবার।
–রাফি:এক্সকিউজ মি!তুমি কি বলতে চাচ্ছো তোমার সাথে জোর পূর্বক রোমান্স করতে এসেছি?
–রিফা:ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।
–রাফি:উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,,আমি ও অলরেডি একজন কে ভালোবাসি আর সেটাই বলতে এসেছি।
রাফির এগিয়ে আসা দেখে রিফা ও পিছনে যাচ্ছিলো কিন্তু এই কথা শুনে থমকে দাঁড়ায়।চুপচাপ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ভীষণ ভয় হচ্ছিল।চোখ দিয়ে আপনা আপনি কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।অন্য দিকে ঘুরে চোখের পানি মুছে বলে আচ্ছা।
–রাফি:পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে শুধুই আচ্ছা?
–রিফা:কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে হুম সাথে শুভকামনা ও।
–রাফি:এদিকে তাকিয়ে বলো?আমার আবার মুখ না দেখে কথা বলতে ভালো লাগে না।
–রিফা:মাথা নুয়ে এদিকে ফিরে বলে বলুন।
–রাফি:বাহ্ বাহ্ বেশ তো বলুন?কিন্তু কথা তো আমি না আপনি বলবেন।
–রিফা:শুভকামনা রইলো।
–রাফি:হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের উপর এনে ফেলে রিফাকে।হঠাৎ টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলায় ভয় পেয়ে যায় রিফা।
#চলবে