#নৈশব্দে_নিরুপমা
[১১]
-তামান্না
–নিরু রান্না শেষ করে রুমে এসে শুয়ে আছে।ভয় হচ্ছে সব কিছু ঠিকঠাক হলো তো?রিফা তো বললো হয়েছে। রিহান ও বাসায় নেই কোথায় গেছে বলে ও যায় নি।শ্বশুর বাড়িতে যতই বিশ্বস্ত মানুষ থাকুক না কেন।স্বামী ছাড়া কি থাকা যায়? স্বামী বিহীন শ্বশুর বাড়ি তে কেমন জানি এতিম এতিম লাগে।
–রিহান বাসায় পৌঁছে সবাই কে ড্রয়িং রুম অব্দি নিয়ে এসে তুলে দেয় মা আর আর বোনের দায়িত্বে আড্ডা দেওয়ার জন্য।গোসল করতে হবে তারপর আবার বউয়ের মুখ টা ও তো পরিদর্শন করতে হবে।
–রুমে এসে দেখে শাড়ী পড়ে ঘোমটা টেনে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে নিরু।ভিতরে প্রবেশ করে ফেললে ও আবার বেরিয়ে গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দেয়।
–নিরু:পিছনে ফিরে বলে,, এমন করার কি আছে আপনার ই তো রুম।
–রিহান :ভিতরে প্রবেশ করে আলমারি থেকে কাপড় বের করে বলে,, নাহ মানে হাত দিয়ে দূরত্ব দেখিয়ে বলে,,ঘরে দূরত্বশীল বউ থাকলে অনুমতি লাগে।কথাটা শেষ হতে দেরি হয় নি এর আগেই ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ।
–রিহান ওয়াশরুমে যেতেই রুমে রিফার সাথে নিশা আর নীলা দৌড়ে এসে নিরুকে ঝাপটায় ধরে।
–নিরু:অবাক হয়ে বলে তোমরা এখানে?কখন এলে?
–রিফা:হাসতে হাসতে বিছানায় বসে বলে,, তোমার প্রাণপ্রিয় বর তোমার হাতের শ্বশুর বাড়ি তে প্রথম রান্না খাওয়াতে গিয়ে নিয়ে এসেছে।সাথে মন ভালো করার বিষয়টা ও সাইডে রেখেছে আরকি।
–নিশা হাসতে হাসতে রিফার পাশে বসে বলে,, বুড়ি হয়ে যাচ্ছে মেয়ে টা ওকে ও একটা জামাইয়ের ব্যবস্থা করে দে না আপু!নিশার কথায় সবাই হাসলে ও রিফা বালিশ নিয়ে দৌড়াতে থাকে।
–এরমধ্যে রিহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ওদের কান্ড দেখে বলে কি হয়েছে?
–নিশা:তোমার বোন কে জামাই দিচ্ছি না দেখে মারছে আমায়!
–রিহান:কেন?তুই কি রিফার জামাই নিয়ে নিছিস নাকি??ছিছিছি এটা করতে পারলি?
এবার সবার হাসির শব্দ আরও বেড়ে যায়।নিশা রিফা নীলা বিরবির করতে করতে বের হয়ে যায়। রিহান তোয়ালে টা হাতে নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে নিরুর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,, হাসলে কিন্তু আগের থেকে ও দারুণ লাগে। রিহানের কথা শুনে হাসি বন্ধ হয়ে যায়।তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে আঁচল টা মাথায় টেনে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
–নিরু:রুমের বাইরে এসে হাসি আটকে রেখে বলে এই লোকের সামনে বেশিক্ষণ থাকলে মনে হয় না রাগ আমার থাকবে।
–সবাই মিলে একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করার জন্য আজকে সব কিছু গুছিয়েছে নিরু। সবাই কে সুন্দর ভাবে খাবার সার্ভ করে।অনেক দিন পর এতো উৎসাহ এবং হাসোজ্জল চারপাশ দেখে দারুণ লাগছে নিরুর।সবাই খাওয়া শুরু করলে রিহান বলে,,তুমি ও বসে পরো নিরু একা খেতে ভালো লাগবে না।
–শ্বাশুড়ি :বসে পড় একসাথে দারুণ লাগবে।
–শ্বশুর :অনেক দিন পর সবাই একসাথে খেতে বসলাম এতো সুন্দর আনন্দ হয় না বহুবছর।নিরুর বাবা বেঁচে থাকতে সবাই একসাথে হতাম আর নিরু রিহান পাশে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতো।আর নিশা ছোট ছিলো ঘুম পাড়িয়ে খেতে আসতো মিতা।
নিরুর এসব কথা শুনে ভীষণ লজ্জা লাগছে।রিহান আর ও একসাথে থাকতো ভাবা যায়?রিহান মুখ টিপে হাসছে আর খাচ্ছে সাথে বাবা মা শ্বাশুড়ির কথা শুনছে।
অবশেষে সবাই কে জোরে জোরে হাসতে দেখে নিরু ও হাসি আঁটকে রাখতে পারে নি।রিহান মুচকি হাসলে ও শব্দ করে হাসছে না।বউয়ের সাথে আগেই বোধহয় রোমান্স ভালো ছিলো পাশাপাশি থাকা হতো।হাত ধরা হতো ঝগড়া ও হতো আর বড় হয়ে রোমান্সের র ও হচ্ছে না।
–সারাদিন মিতা নিশা নীলা সবাই থাকে।সন্ধ্যা বেলা সবাই চলে যায়।কালকে আবার নিরুরা যাবে।বিয়ের পর এই সময়টাই যেতে হয় এটা নিয়ম।
–সারাদিন সবার সাথে থাকলে ও সন্ধ্যার পর রুমে আসে নিরু।খুব ভালো কেটেছে আজকের দিন।শাড়ী পাল্টে আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়।রিহান এখনো রুমে আসে নি।রিফা ও নিজের রুমে আছে।শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও সারাদিন ভীষণ খুশি ছিলেন।
–রিহান বাইরে গেয়েছিলো আসার সময় ফুসকা নিয়ে এসেছে।এসে কাউকে পায়নি আর রিফা এসব পছন্দ করে না আব্বু আম্মু তো না-ই।নিরুর আবার সব সময় এসব পছন্দ। কতো বকেছে ওকে তারপর ও অভ্যাস পাল্টায় নি।তাই আজকে নিয়ে এসেছে।রুমে এসে দেখে নিরু উপন্যাস নিয়ে বসেছে।লাইব্রেরি রুমে অনেক গুলো উপন্যাসের বই রাখা আছে তাছাড়া আরও অনেক বই আছে কিছু নিজে সাজেস্ট করে কেনা কিছু রিভিউ দেখে আর কিছু নিরুর কথায় কেনা হয়েছিল।
নিরুর সামনে ফুসকার প্যাকেট টা রেখে রিহান লাইব্রেরি রুমে চলে যায়।নিরু দেখলে ও হাতে নেয় নি।
–রিহান:ফিরে এসে বলে,,কেউ চাইলে খেতে পারে আমরা এসব খাই না।
–নিরু:বইয়ের দিকেই তাকিয়ে বলে,,কেউ অতোটাও রাক্ষস নই যে উড়া উড়া বললেই লম্বা জিহ্বা বের করে খেতে বসবে।
–রিহান:হাসতে হাসতে সোফায় বসে বলে, তোমার জিহ্বা লম্বা নিরু?না মানে কখনো দেখিনি তো!
–নিরু:ভ্রু কুঁচকে বলে মিল দেওয়ার ধান্দা!
–রিহান:হয়েছে!তবে খেতে পারো তোমার জন্যই আনলাম।
–নিরু:হাতে নিয়ে বলে কতো টাকা?একসময় দিয়ে দিবো!
–রিহান:উঠে দাঁড়িয়ে রাগ দেখিয়ে বলে কয়েকশো কোটি!এরপর আর দাঁড়ায় নি বের হয়ে যায়।নিরু পিছন থেকে বলে, দিয়ে দিবো আমার বরের থেকে নিয়ে।ফিসফিস করে বলে বরের থেকে নিয়ে বরকে দিবো হাহাহা।
*********
–রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই শুয়ে পড়লে রিফা ভাইয়ের রুমে আসে। ঘুম আসছে না তার।
–রিফা:ভাবি চলো আমরা আজকে একটু লুডু খেলি।
–নিরু:ফিসফিস করে বলে তোমার ভাইয়া কে বলো!এসব খেলায় মজার মানুষ না থাকলে জমে না।
–রিহান:ছোট মানুষের সাথে এসব খেলি না লুডু হচ্ছে বড়দের খেলা।ছোট মানুষ ছোট ব্রেণ দেত!
–নিরু:মোটেও না রিফা।তুমি বলে দাও যে এসব বলছে আমি তার সমবয়সী।মোটেও ছোট মানুষ না।
–রিহান:গুনে গুনে আমি তিন মাসের বড় হুম।
–রিফা দুজনকে থামিয়ে বসে।নিরু বসে মাথায় ওড়না সুন্দর করে দিয়ে বালিশে হাত গুঁজে বসে আছে।
রিহান একটু পরপর নিরুকে দেখছে।রিফা বুঝতে পারলে ও নিরু বুঝতে পারছে না।রিফা সারাক্ষণ মিটিমিটি হাসে।অবশেষে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় রিহান মাথায় গাট্টি মেরে বলে,, ফাজিল বের হ।রিফা হাসতে হাসতে বলে,,এনজয় ব্রো হাহাহা হাহাহা!
–নিরু:রিহান পাশের রুমে চলে যাওয়ার সময় বলে ধন্যবাদ।এতো সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য।
–রিহান:আহা এই ধন্যবাদ দিবে বলে কাছের মানুষের সাথে ভালো সময় কাটালাম বুঝলে!
–নিরু:সোজা কথা বেশি সুন্দর কঠিন এবং জটিল হলেও।এমনিতেই ঘুরানো পেচানো কথা সোজা করতে লাগে কষ্ট সোজা করার পর মানে বুঝতে পেরে লাগে আরেক কষ্ট।
–রিহান:হেসে আবার থেমে বলে,,নিরব পাগল হয়ে গেছে আমাদের ক্ষতি করার জন্য সুতরাং খুব সাবধান।
–নিরু:যার যার কর্মফল ঠিক তাকেই ভোগ করতে হবে করুক না।
–রিহান:কর্মফল যেন পায় সেজন্যই তো সাবধানে থাকতে হবে।তাছাড়া সে কতোটা হিংস্র তা তো তুমি জানো।ইদানীং বুদ্ধি ব্রেণ আরও খেয়ে ফেলেছে আর মানুষ নেই।
–নিরু:বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,বাড়ি ছাড়া করেছে আমাদের ইজ্জত নিয়ে খেলেছে আর কি বা ক্ষতি করবে?
–রিহান:আমাকে,,একেবারে মেরে ফেলার ফন্দি নাকি আঁটছে।ওর টার্গেট আমি এবং একমাত্র আমি।আর সে খবর আমার কাছের একজন ওর সাথে মিশে জানিয়েছে।
–নিরুর বুকটা কেঁপে ওঠে।বুকে হাত দিয়ে বলে,, এতো জঘন্য?এখন কি করা উচিত?বড় বড় করে নিশ্বাস নিতে থাকে।
–রিহান:এতো হাইপার হচ্ছো কেন?এতো সহজ নাকি?একটা ধ্বংস স্তুপের ও শেষ ধ্বংস আছে আর সেটা আমার হাতেই ধ্বংস হবে।নিরবের বিকৃত মন আমি উপরে ফেলবো।আমি জানি ও কতোটা আমার লাইফের ক্ষতি করেছে।
–নিরু:সে খুব খারাপ তার সাথে লাগতে যাওয়া টা ও বোকামি।নিজের চাচা চাচি চাচাতো বোনকে পর্যন্ত ছাড় দিতে জানে না।
–রিহান:ফোন হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বলে তোমার ই তো ভালো আমার ক্ষতি হলে,,আমি তো আর তোমার কেউ না।কথাটা বলে লাইব্রেরি রুমে চলে যায়।
–নিরু ফুঁসতে ফুঁসতে পিছন পিছন এসে বলে এতোই যখন কিছু না তবে বিয়ে কেন করলি? আমি পিছন পিছন এসে বলি নি বিয়ে কর আমায় বিয়ে কর।
–রিহান:ইশশ! ভুল হয়ে গেছে।আর একটু অপেক্ষা করলে বোধহয় শুনতে পেতাম তাই না?
–নিরু:এরচেয়ে ভালো নিরব ভাইয়াই ঠিক আছে শায়েস্তা করুক।
–রিহান:শায়েস্তা না মেরে ফেলবে। সাথে সাথে মুখটা মলিন হয়ে যায় নিরুর।মৃত্যু শব্দ টা ভীষণ যন্ত্রণার নিজের বাবা আর নানু নানার মৃত্যুতে বুঝে গেছে।ভালোবাসার মানুষ বলতে এরাই ছিলো এখন কয়েক জন আছে।ওঁরা ও থাকবে না ভাবতে ও পারে না নিরু।
#চলবে