অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-৪৪

0
7

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৪৪
নয়না চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে কোথায় আছে? তার পাশেই জিয়ান ঘুমিয়ে আছে৷ নয়না বেড থেকে নেমে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলো৷ ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে লম্বা চুলগুলোতে তোয়ালে প্যাঁচিয়ে নিলো।বেডে তাকিয়ে দেখে জিয়ান ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত জিয়ানকে হ্যান্ডসাম লাগছে। নয়না গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো জিয়ানের দিকে৷ জিয়ানের চুলগুলো নয়নার ভিষণ পছন্দের হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো চুলগুলো। নয়না মুচকি হাসছে, কি যে অদ্ভুত ভালোলাগা ছুঁয়ে গেলো তার দেহ মন জুড়ে তা প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না৷ এবার আরো ভয়ংকর ইচ্ছে হচ্ছে নয়নার সাহস করে জিয়ানের ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে লজ্জায় মুখ ডাকলো দু’হাতে। লজ্জা রাঙ্গা মুখটা লুকিয়ে রাখলো হাতের আড়ালে। আবার উঠে আসলো রুমের একপাশে সোফা রাখা আছে। নয়না সেখানে বসলো। মনের মধ্যে লাল, নীল, হরেকরকম আনন্দ ঝলকাচ্ছে। নিজের মোবাইল বের করে রুম থেকে বের হয়ে আসলো, বাড়িটা একদম রাজকীয় দুইপাশে রুম মাঝখানে রুফটপের মত সেখানে নানারকম ফুলগাছ সুন্দর করে সাজানো। বসার জন্য টেবিল চেয়ার সুন্দর এক মনোরম পরিবেশ।নয়না সেখানে যেয়ে বসলো, কল লিস্টে যেয়ে তুষিকে কল করলো৷
ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই নয়না বলে,”এই তুই কই মরেছিলি এতোদিন! তোর ফোন বন্ধ ছিলো কেন?”
“তুষি স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো ব্রেকআপ হয়েছে আমার৷”
নয়না হেসে বলে,”এটা নিয়ে একশ পঁচিশতম ব্রেকআপ। একজনের সাথে এতোবার ব্রেকআপ করতে তোর লজ্জা লাগে না ভুষি!”
“নন্টু এবার সিরিয়াস ব্রেকআপ করেছি৷”
“শোন কাল রেজাল্ট দিবে ভয় হচ্ছে ভুষি। আগে রেজাল্ট বাবা, মা দেখতো এখন শ্বশুর, শ্বাশুড়ি জামাই সবাই দেখবে।”
“নাটক কম করো প্রিয় তুমি এমনেও গোল্ডেন পাবা। ডাব্বা মারবো আমি।”
“বেশি করে ডাব্বা মার এরপর বিয়ে করবি রিকশা ওয়ালা মামাকে। তারপর তোর জামাই গান গাইবে ও সকিনা গেছো কিনা ভুইলা আমারে আমি এখন রিকশা চালাই ঢাকা শহরে৷”

“নন্টু চুপ কর আজকে আমার মন ভালো নেই।”
” আমার বাসায় চলে আয় মন ভালো হয়ে যাবে।”
“তোর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা কিছু মনে করবে না?”
” আরেহহহ নাহহ আমার শ্বশুর বাড়ির লোকগুলো পুরাই রসমালাই। খালি ওই প্লেন ড্রাইভার করলার জুস।”
“লোকেশন সেন্ট কর আসতেছি।”
” নয়নার হাঁটু অব্দি লম্বা চুলগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। নয়না কথা বলছে আর হাঁটছে। ওড়না গলায় ঝুলছে৷”

জাহিন করিডোরে এসে থমকে দাঁড়ালো এলোকেশী রমনীকে দেখে এখনো চেহারা দেখেনি৷ জাহিন পেছন থেকে বলল,*কে তুমি নন্দিনী আগে তো দেখিনি?”

“নয়না সামনের দিকে ঘুরে জিয়ানকে ভেবে বলে,সারাক্ষণ এই মেয়ে সেই মেয়েকে দেখলে ঘরের বৌকে তো নন্দিনী মনে হবেই।”
“জাহিন হতাশ। না মানে এই মেয়ে এতো কিউট কেন! এতো সুন্দরী মনে হয় যেনো আসমান থেকে নেমে আসা পরি! নয়না ওড়ানার একটা অংশ মাথায় তুলে নিয়ে বলে,শালা ড্রাইভার জীবনে ভালো হবে না৷ এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে অস্বস্তি লাগে তো।”
” নয়না সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
“এই যে মিস সুনয়না তালুকদার আমি জাহিন চৌধুরী নাম তো শুনা হোগ্যা?”
“নয়না থমকে দাঁড়ালো৷ পেছন ঘুরে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দু’জন মানুষের মধ্যে এতো মিল! কন্ঠও সেম প্রায় কেউ না জানলে বোঝার উপায় নেই এরা দুজন ভিন্ন মানুষ।”
“কি হলো মিস এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? বিশ্বাস হচ্ছে না?”
“প্রথম কথা হলো আমি মিস না মিসেস জিয়ান রেজা চৌধুরী। দ্বিতীয় কথা হলো আমি আপনার ভাবি সো সম্মান দিয়ে কথা বলবেন।”
“ডিয়ার মিসেস রেজা চৌধুরী আপনার বয়স আমার অর্ধেক সো আপনাকে নাম ধরে ডাকবো এসব ভাবি টাবি আমার দ্বারা ডাকা সম্ভব না।”
“নয়না কোন কথা না বলে রুমে চলে আসলো৷ রুমে এসে দেখে জিয়ান নেই! মাত্র লোকটা ঘুমিয়ে ছিলো আর এইটুকু সময়ের মধ্যে গায়েব! সাথে সাথে জিয়ানকে কল করলো৷”
“জিয়ান কল কেটে ব্যাক করলো।
“মানলাম আপনি প্লেন ড্রাইভার তাই বলে সারাক্ষণ ঊড়তে থাকবেন!”
“উড়ে আর কই যাবো বলো,আমি তো তোমার পিঞ্জরের বন্দী খাঁচার পাখি।”
“কোথায় আছেন এখন?”
“তোমার জন্য মেডিসিন নিলাম এখন চলে আসবো, আচ্ছা বলো তো তোমার কোন ফ্লেভার পছন্দ, স্ট্রবেরি নাকি চকোলেট?”
“হোয়াট! আপনি এতো অসভ্য কেনো?”
” অসভ্য মানে! তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসতাম ফ্লেভার বলো।”
“অসভ্য লোক এই কথাটা আগে বলা যেতো না!”
“তোমার চিন্তাভাবনা চেঞ্জ করো বেব বাসর করার জন্য এতোই উতলা হয়ে আছো আগে বলবা তো জানেমান।”
” নয়না ফোন কেটে দিলো। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,ছিহহহ নয়না চিন্তাভাবনা পরিবর্তন কর৷ এই লোকের সাথে থেকে থেকে তুইও লুচু হয়ে যাচ্ছিস!”

🌿

মিতা বেগম নয়না আর জিয়ানের জন্য খাবার নিয়ে এসে দেখেন দরজা খোলা, বেডে তার ছেলে আর বৌ ঘুমিয়ে আছে৷ মিতা বেগম খাবারের ট্রে নিয়ে বের হয়ে আসার সময় বা’হাত দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসলো৷
“মেহনুর মিতা বেগমকে দেখে বলে,আম্মি এই খাবার কার জন্য?”
“মিতা বেগম বলল,এতো সকালে তুই! রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি বুঝি?”
“মেহনুর মিতা বেগমের হাত থেকে খাবার ট্রে নিয়ে বলে,আসো তো আমার রুমে গল্প করি তোমার সাথে।”
“মিতা বেগম রুমে ঢুকে বলেন, আমার ছেলে আর বৌমা ফিরেছে সকাল সকাল ওদের জন্য খাবার নিয়ে যেয়ে দেখি দু’জনে ঘুমাচ্ছে। মিতা বেগম চলে যাওয়ার পর থেকে মেহনূর আর স্থীর হতে পারেনি৷ রুমের মধ্যে পায়চারি করছে। চোখ থেকে না চাইতেও অশ্রু ঝরছে। নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করছে কিন্তু কোনভাবে স্বাভাবিক হতে পারছে না৷”

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে স্থীর হলো,হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে নিয়ে বলে,স্ট্রং হতে হবে তোকে। পরক্ষণেই চুল খামচে ধরে বলে,কিভাবে আমি রেজার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করবো! মেহনুরের শরীর কাঁপছে ফ্লাওয়ার ভাস উঠিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ছুড়ে মারলো,সাথে সাথে আয়নার কাঁচগুলো আওয়াজ তুলে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পরলো৷
“আওয়াজ পেয়ে জাহিন রুমে এসে বলে,কোন মোন্টালি সমস্যা আছে নাকি আপনার?”
” মেহনূর কাঁপছে তখনো কিছুতেই রাগ কমছে না তার৷”
“ও হ্যালো মিস বিদেশিনী ডাক্তার ডাকবো নাকি পাবনা পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। আমি কিছু বলছি শুনতে পাচ্ছেন?”
” মেহনুর হুট করে এসে জাহিনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।”
“জাহিন বেশ অবাক হলো!”
” আমি একটু ভালোবাসা চাই কেনো সেটুকুও পেলাম না! কেনো চলে গেলো আমার মম আমাকে ছেড়ে। আমি চাইলেও আর কোনদিন মমকে ফিরে পাবো না৷ আমি কাউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে চাই কিন্তু কেউ নেই যে আমার মাথায় হাত রেখে একটু স্বান্তনা দেবে। চোখের জলটুকু মুছে দিয়ে হাতটা শক্ত করে ধরে বলবে আমি আছি তো৷”
“জাহিন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার লাইফে এখন পর্যন্ত কোন মেয়ে আসেনি গার্লফ্রেন্ড হয়ে এসব থেকে সব সময় দূরেই থেকেছে জাহিন। কি করা উচিৎ ভাবতে ভাবতে মেহনুরের মাথায় হাত রেখে বলে,কান্না করবেন না প্লিজ। আপনি আমাকে ছাড়ুন আমি আম্মুকে পাঠাচ্ছি।”
“মেহনুর মনে মনে হাসলো। জাহিনের কাছ থেকে সরে এসে বলে,স্যরি এভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য।”
“ইট’স ওকে। আপনি রিলাক্স হোন পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী হয় না। ভেঙে পড়লে তো চলবে না৷ আপনি বসুন আমি আম্মুকে পাঠাচ্ছি।”

জাহিন কোনমতে রুম থেকে বের হয়ে আসলো,নিজের দিকে তাকিয়ে বলে,সারাজীবন শুনলাম মেয়েরা জড়িয়ে ধরলে ভালো লাগে! কি অদ্ভুত, এই মেয়ে জড়িয়ে ধরলো, এখন মনে হচ্ছে আমি ডোবা থেকে উঠে এসেছি!
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে