#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩০
এক্সাম শেষ করে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে নয়না৷ প্রখর রোদের তাপ মনে হচ্ছে ঝলসে দিতে চাইছে প্রকৃতিকে। নয়না গেটের বাহিরে এসে একটা স্ট্রবেরী কোন আইসক্রিম কিনে খেতে ব্যস্ত৷ আর মাত্র তিনটা এক্সাম বাকি। নয়না আইসক্রিম খেতে খেতে ভাবতে লাগলো। দু’টো মানুষ একি সময় দুই প্রান্তে কি করে থাকতে পারে? আমার স্বপ্ন সত্যি নাকি আমার বাস্তবতা? যদি ভিন্ন মানুষ হয়ে থাকে তাহলে কন্ঠ কিভাবে এক হয়! আমি জানিনা কেন আপনি আমার সাথে মাইন্ড গেমস খেলছেন! এসব করে কি লাভ হচ্ছে আপনার? নয়না গাড়ি আসার আগেই রিকশা ডেকে তাতে উঠে বসলো৷ উদ্দেশ্য চৌধুরী বাড়ি। মনে মনে বলে,আপনার সত্যি আমি উদঘাটন করেই ছাড়বো৷ নয়না গেটের সামনে এসে নামলো৷ ব্যাগ থেকে ভাড়া পরিশোধ করে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। দারোয়ান এক মিনিটের জন্য ও নড়ছে না! তাকে তো যে কোন উপায়ে ঢুকতে হবেই! কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দারোয়ান সরলো, নয়না টুপ করে ভেতরে ঢুকে পরলো আস্তে আস্তে মেইন দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। হাত দিতেই বুঝে গেলো দরজা খোলা নয়না ভেতরে ঢুকলো।
হঠাৎ মুখোমুখি হলো এক সার্ভেন্টের৷ নয়নাকে দেখে বলে,”বৌমনি আপনি!বড় ম্যাডাম তো আজ বাসায় নেই৷”
“নয়না নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,কখন আসবে?”
” সে বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা৷”
“আচ্ছা আমি রুমে যেয়ে কল করে জিজ্ঞেস করে নেবো৷”
” আপনার জন্য কোল্ড ড্রিংকস বা অন্য কিছু দেবো?”
“লেমনজুস।” বলেই নয়না দ্রুত পায়ে জিয়ানের রুমে চলে আসলো। রুমটা দেখে মনে হচ্ছে এখানে কেউ ছিলো৷ ভালো ভাবে পরখ করতেই সেখানে মেয়েদের ওড়না আবিস্কার করলো, নয়নার ছোট হৃদয়টা মুচড়ে উঠলো। চোখের জল মুছে নিলে হাতের উল্টো পিঠে।হঠাৎ খেয়াল করলো ওয়াশরুম থেকে কেউ বের হচ্ছে। নয়না দ্রুত পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পরলো। নয়না তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে খেয়াল করেনি পর্দা সাদা কালার ওপাশ থেকে খেয়াল করলেই বোঝা যায় এখানে কেউ আছে।
“নিজের হ্যসবেন্ডের রুমে অন্য একজন নারীর উপস্থিতি নয়নার ছোট হৃদয়টাকে গুড়িয়ে দিচ্ছে৷ মানুষটা তাকে কত যত্ন করেই না ঠকাচ্ছে! আমার সাথে একসপ্তাহ কথা না বলায় যে মানুষটার সামান্য হাঁচি পর্যন্ত আসেনি, সে আমাকে ভালোবাসে এটা কিভাবে মেনে নিলাম আমি! আমি আসলেই বোকা, বোকাদের মানুষ সহজে ঠকাতে পারে, টুপটুপ করে ঝরতে থাকলে নীল নদের পানি।
🌿
মান্নাত খুব ক্লান্ত। রাতের শেষ প্রহরে জাহিন থাকে ফেরেশতা রুপে উদ্ধার করেছে বলতে গেলে। মাথা চেপে ধরে কান্না করছে মান্নাত। জীবন তার সাথে এ’কোন খেলা খেলছে!
গত রাত….
রাত যত গভীর হচ্ছিলো মান্নাতের মনে হচ্ছিলো মৃত্যু ততই নিকটে। লোকগুলো ঘরের কোনা কোনা খুঁজে বেরাচ্ছে ইঁদুরগুলো পা কেটে রক্ত বের করে ফেলছে!
হঠাৎ বাহিরে শোরগোল শোনা গেলো। বাসার ভেতরের লোকগুলোও হয়ত বের হয়ে যাচ্ছে। কোন শব্দ আসছে না কানে। সাহস করে নয়না বেরিয়ে আসলো। ধীর পায়ে দরজার কাছে এসে চিৎকার করলো বাঁচাও কেউ আছো৷
পেছন থেকে কেউ তার মুখ চেপে ধরলো। ছুড়ি বসিয়ে দিলো কাঁধ বরাবর। গল গল করে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগলো৷ মান্নাতের বেঁচে থাকার শেষ আশা টুকুও ফুরিয়ে এলো বুঝি?হঠাৎ কেউ গর্জন করে বললো,কে রে তুই ধস্তাধস্তির আওয়াজ কানে আসছে৷ ধীরে ধীরে সে আওয়াজ বন্ধ হয়ে আসছে,ঢলে পরছে মান্নাত। মাটিতে পরার আগেই জাহিন তুলে নিলো কোলে। মোবাইলের টর্চের আলোয় চেহারা দেখে বেশ অবাক হলো। অন্তর বাসার ভেতর টর্চ জ্বালিয়ে ঘুরে এসে বলে,বাসায় কেউ নেই দেখে মনে হচ্ছে এখানে ভয়ংকর কিছু ঘটেছে যেখানে আমরা চোরকে ছাড়িনা সেখানে এতো বড় ঘটনা কিভাবে সম্ভব!
এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে আগে মেয়েটাকে সুস্থ করতে হবে। মান্নাতকে বাসায় নিয়ে এসে জিয়ানের রুমে রাখলো।
অনিকেতকে কল করে ডাকলো, অনিকেত প্রাথমিক চিকিৎসা ও বেন্ডেজ করে দিয়ে গেলো৷ কিছু মেডিসিন সাজেস্ট করলো। এরপর যে যার মত নিজেদের রুমে চলে গেছে৷ মান্নাত দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। চোখ মেলে সামনে তাকাতেই সাদা পর্দার আড়ালে নারীমূর্তি দেখে বলে কে ওখানে?
‘নয়না বাহিরে এসে বলে,তোর জম। তোর সাহস কি করে হয় আমার হ্যসবেন্ডের রুমে আসার? আজকে হয় তোকে মারবো নয়তো ওই ছেমড়ারে মারবো।
” মান্নাত অবাক হয়ে বলে?রিলাক্স আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না? আপনি কে আর আপনার হ্যাসবেন্ডই বা কে?
“নয়না মোবাইল বের করে বলে,চোখ খুলে ভালো ভাবে দেখ এটা আমার হ্যাসবেন্ড।
” আপনার মাথা ঠিক আছে? এ আপনার হ্যাসবেন্ড কি করে হয়!ও তো আমার বয়ফ্রেন্ড।
“বয়ফ্রেন্ড! লজ্জা লাগে না বিবাহত ছেলের গলার ঝুলতে! আমি কি কম সুন্দরী? আমার মত সুন্দরী বৌ রেখে কিসের প্রেম? আজকে আমি তোকে মেরেই ফেলবো। বলেই মান্নাতের গলা টিপে ধরতে নিলো৷
” জাহিন এসে বলে,আপনি কে?
“নয়না সামনের দিকে ঘুরে বলে,আপনার যম।
” জাহিন অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,তা মিস যম আপনি আমার বাসায় এসে আমার গেস্টকে কেনো আঘাত করছেন?
“নয়না নিজের রাগ সংযাত করতে না পেরে, জাহিনের দিকে পারফিউমের বোতল ছুড়ে মারতে লাগলো। আজকে আপনাকে মেরেই ফেলবো। আমাকে ঠকানো! এতো সাহস? সুনয়না তালুকদারকে ঠকাবে?
” জাহিন দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বলে,মিন ধানিলঙ্কা আপনার নিশ্চিত কোথায়ও ভুল হচ্ছে ।
নয়না রুম থেকে বের হতে হতে বলে,আপনাকে আমি ডিভোর্স দেবো৷ আপনার নামে মেয়ে ঠকানোর মামলা করবো৷ নয়না গটগট করে বের হয়ে গেলো৷
“জাহিন মান্নাতকে বলল,স্যরি আমি বুঝতে পারছিনা এসব কি হচ্ছে। আপনি রেস্ট নিন আমি দেখছি। জাহিন নিচে এসে দেখে নয়না নেই।
” জাহিন সোফায় বসে ভাবছে কোন ভাবে এই মেয়ে আমার ভাবি নয়ত!না না এটা হতেই পারে না! ভাইয়া এমন বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করবে?
“সার্ভেন্ট ট্রেতে করে লেমনজুস নিয়ে কিচেন থেকে বের হলো।
” জাহিন বলল,লেমনজুস কার জন্য?
“বৌমনির জন্য।
” বৌমনি আবার কে?
“আপনার বড় ভাইয়ের বৌ। কিছুক্ষণ আগেই এসেছে।
” জাহিন অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছে গেলো! এটাও কি সম্ভব! জাহিন জুসের গ্লাসটা নিয়ে ঠকঠক করে পান করে বলে,সে চলে গেছে। জাহিন অন্তরে কল করে,
“অন্তর রিসিভ করে কানে ধরতেই. ওপাশ থেকে জাহিন বলে,সুমুন্দি স্যাড গান লাগা জীবনের দ্বিতীয় ক্রাশ আমার নিজের ভাবি! এই দুঃখে বুড়িগঙ্গার কালো জলে স্নান কইরা আহি চল সুমুন্দি।
“অন্তর নিজের হাসি চেপে রেখে বলে,তাইলে এহন কোন গানডা বাজামু মামা, চাচা হেনা কোথায়? এই ভার্সন চলবে?প্রেমের সমাধি ভেঙ্গে মনের শিকল ছিড়ে ক্রাশ যায় উড়ে যায়।
” রাখ শা’লা তাত্তাড়ি বাইক নিয়া আয় বুড়িগঙ্গা কালা পানিতে ডুব দিয়া হৃদয়ের সুদ্ধি করণ করমু। ছিহহহ শেষ পর্যন্ত ভাবির উপরে ক্রাশ! এই চোখ আমি কেম্নে রাখমু! পেস্টিজ পাঞ্চার কইরা দিলো মাইয়াডায়। ধুর ভাবিজ্বি।
🌿
জিয়ানের আবেদন মঞ্জুর হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগলো। অবশেষে সে ছুটি পেলে পাঁচদিনের আগামী মাসের তিন তারিখ তার ফ্লাইট। কতবার যে কল করেছে নয়নাকে ফোন সুইচড অফ। মনে মনে কয় ছেমড়ির এমন রাগ! মনে হয় পাঁচফুট হাইটের দশফুট রাগ! এইবার আহি তোমারে খাঁচায় বন্দি কইরা রাখমু রাঙা বৌ। গুন গুন করছে, সোনা বৌ শুনছ নি গো,সোনা বৌ শুনছোনি, নিতে আইলে নাইওর যাইবা নি? জানালার পর্দা সরিয়ে দেখে আজ কানাডার শহর জুড়ে চকচকে রোদ৷ এমন দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না৷ জিয়ান যেখানে থাকে বেশিরভাগ সময় এখানটাতে তুষারপাত হয়। ছুটি মঞ্জুর হওয়ায় মনের মধ্যে কেমন একটা দোল দিচ্ছে জিয়ানের। মনে মনে বলে,ওরে মন কথা শোন,এতো দ্রুত গতিতে এগোস না। হোচট খেলে ভেঙে পড়বি এবার কিন্তু আর গড়তেই পারবি না নিজেকে।
🌿
অনিকেতের সাথে সায়নার সেদিনের পর আর কোন যোগাযোগ হয়নি৷ আজ সকালে হঠাৎ সায়না উপস্থিত সোজা অনিকেতের হসপিটালে৷
“অনিকেতে গম্ভীর কন্ঠে বলে,আপনি আবার এখানে?
” আপনি কোন কচুর হার্ট সার্জন? একটা মেয়ে আপনার ঠোঁটের দফারফা করে দিলো,এরপরেও আপনার হার্ট সুস্থ! এমন পঁচা হার্ট কোন মানুষের থাকতে পারে?”
“অনিকেত ভিষণ লজ্জা পেলেও তা প্রকাশ করলো না, আপনার কি লজ্জা বলতে কিছু নেই নাকি? কোন যুগে আসলাম আমি? কোথায় ছেলেরা মেয়েদের ইভটিজিং করতো আর এখন মেয়েরা ছেলেদের ইভটিজিং করে৷”
“কাজি অফিসে চলুন আর সমস্যার সমাধান করে ফেলুন৷ রোজ রোজ ইভটিজিং সহ্য করার চেয়ে বিয়ে করা বেটার অপশন কিন্তু। মিস্টার হার্ট সার্জন আপনি রাজি থাকলে আমি হসপিটালে কাজি নিয়ে হাজির হতেও রাজি আছি৷”
” চুপ করুন আমার সহকর্মীরা শুনে ফেলবে।”
“চুপ করবো এক শর্তে”
” কিসের শর্ত বলে,বিদেয় হোন।”
“বিকেল পাঁচটায় বকুলতলা কফিশপে দেখা করবেন।”
” পাঁচটায় আমার চেম্বার আছে।”
“তাহলে রাত ন’টায়।”
” আচ্ছা ঠিক আছে পাঁচটায় আসবো। এবার যান৷”
“আসার সময় ফুল নিয়ে আসবেন সাথে রেশমি কাচের চুড়ি ও হ্যা একটা ডাক্তারি বাজে রাইটিংয়ের চিরকুট। না আনলে কিন্তু সবার সামনেই কিসটিস করে বসবো।”
#চলবে