হেমন্তের নীড় পর্ব-০৩

0
8

#হেমন্তের_নীড়
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-০৩
৫.
সময় গড়ালো তার সাথে আমার ভাব আরো জমলো। এরপর আমার ঠিক মনে নেই তবে আনুমানিক আমি তখন ভার্সিটি উঠেছি। কোনো এক গোধূলি লগ্নে বৃষ্টি শেষে ঠান্ডা বাতাসের কনে দেখা কমলা রঙের আলোয় আমি শুদ্ধকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,

‘আপনার বর্ষাকাল কেমন লাগে?’

‘বিশ্রী৷ সাপ-পোকামাকড়, কাদা, রাস্তার ধারে ধারে জমে থাকা পানি, মশা। বিচ্ছিরি একটা অবস্থা।’

‘বসন্ত?’

‘চৈত্রের গরম চেনো?’

‘গ্রীষ্ম?’

‘আই হেইট কাঠাঁল এন্ড ইট’স স্মেল।’

‘আম ভালো লাগে?’

‘না।’

‘তো কি ভালো লাগে?’

‘নিজেকে।’

‘আচ্ছা, শীতকাল কেমন লাগে?’

‘আসলে তীব্র গরম, শীত কোনোটাই আমার পছন্দ নয়।’

‘হেমন্ত?’

‘ভালো বলেছো। হেমন্ত আমার প্রিয়। একটি আরাম আরাম ঋতু।’

‘শরৎ ভালোলাগে না কেনো?’

‘কারন কাশফুল আমার একদম পছন্দ নয়। ওটা একটা ফুল হলো?’

‘তবে আমি কি আপনাকে হেমন্ত প্রেমিক বলে ডাকবো?’

‘হ্যাঁ, ডাকতে পারো তো। ভালো লাগবে শুনতে।’

এই বলে আমি-তিনি দুজনেই থামলাম। কয়েক মিনিট চোখ বন্ধ করে পার করার পর এক বাক্যের একটি কথা আমাকে এক মুহূর্তের মধ্যে রাত-দিন তাকে নিয়ে ভাবতে তার বাধ্য করেছিলো সেদিন। তিনি যেনো খুব আবেগ নিয়ে বলেছিলেন,

‘শুনো, তরু। তুমি আমার কাছে হেমন্তের মতো।’

সেই শুরু! সেই এক বাক্যের লাইন সেই সন্ধ্যায় আমার শরীরে বিদ্যুৎ এর ঝিলিক বইয়ে দিলো। আমি তার গভীর প্রেমে পরলাম ধীরে ধীরে কিন্তু তার সেই আবেগ বাণীর প্রেমে পড়লাম তৎক্ষণাৎ। আমি মনে করেছিলাম সে মন থেকে বলেছে কিন্তু এই বয়সটাই এসে বুঝতে পারছি সেই বাক্য কেবল একটা সুন্দর বন্ধনের খাতিরে ছিলো। এর বেশি আর কিচ্ছু নয়। আমার চোখ ছাপিয়ে জল আসতে চাইছে। আমি কেনো সেই বাক্যটা শুনলাম? সেই সময় কোনো শব্দে আমার কানে তালা লেগে গেলো না কেনো? সেই এক বাক্য আমার জীবনে কাল হয়ে দাড়ালো। আমি কলম চালালাম খাতায়। লেখলাম আর ফিসফিসিয়ে বললাম,

‘তাই তো আমি আপনার কাছে হেমন্তের নীড় খুঁজতে এসেছি।’

তারপর? তারপর তার খুকি ডাক ঘুচে গেলো। তার সাথে আমার পরামর্শের পাট চুকে গেলো। যে বিরক্তি একসময় আমাকে ঘিরে ধরতো তা এখন তাকে ঘিরলো।

চলবে

#হেমন্তের_নীড়
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-৩ (এর অংশবিশেষ)
৬.
আমি তার প্রতি কেমন কন্সার্ন পাঠকদের তার একটা উদাহরণ দেই। আমি ভার্সিটি গিয়ে তথাকথিত আমার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খোলা মাঠে আড্ডা দিচ্ছি। এরমধ্যে স্নেহা আমাকে ফোন দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি বিরক্তিতে দিলাম এক ধমক। ধমক খেয়ে ও শুধু কান্নার মাঝে বলতে পারলো শুদ্ধ ভাইয়া। ব্যস! এতোটুকুতেই! তারপরের সেই লজ্জার বিষয়টুকু বলতে গেলে আমার নিজের প্রতি এখনো চরম ক্রোধ আসে। বস্তুত, আমি ওর কান্নারত গলায় ‘শুদ্ধ ভাইয়া’ এটুকু শুনে ধরেই নিয়েছিলাম শুদ্ধ হয় এক্সিডেন্ট করেছে, নাহলে মরে টরে গিয়েছে কিংবা অসুস্থ হয়েছে। আমি নেহাত’ই একজন ধীর-স্থির মেয়ে। নেগেটিভিটি মনে স্থান দেই না। কিন্তু তা শুদ্ধর বেলায় অন্য হিসাব। সেই মূহুর্তে আমার মাথায় সব নেগেটিভিটির স্তূপ এসে ভিড়লো। আমি ফোন কেটে শান্ত চিত্তে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে দৌড়ে বাড়ি এসে দেখি……….

পাঠকরা আমাকে গাধা ভেবে ভুল করবেন না। ওরকম সিচুয়েশনে পরলে আমি হলফ করে বলতে পারি আপনি আমার থেকেও গাধার মতোন কাজ করতেন। দেখা গেলো অতিরিক্ত প্যানিক থেকে নিজেই অসুস্থ হয়ে গেলেন কিংবা রাস্তায় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নিজেই একটা অঘটন ঘটিয়ে বসলেন। সে যাই হোক, বাড়ি এসে আমি কি দেখলাম সেটা শুনুন,

আমি বাড়ি এসে দেখলাম শুদ্ধ স্নেহা’র নরম তুলতুলে ফর্সা সুন্দর গাল’টাকে চেরি ফলের মতো লাল বানিয়ে দিয়েছে। কারন’টা হলো সেদিন বাসায় শুভ্র ভাই আর ধ্রুব ভাই অনুপস্থিত। স্নেহা অংক বই খাতা নিয়ে গিয়েছে শুদ্ধর কাছে। শুদ্ধ’র আবার বিরাট ধৈর্য্য আর আমাদের স্নেহা বিরাট মেধাবী কী না! তিন চারবার এক অংক বুঝাতেই স্নেহা যখন এক অক্ষরও বুঝলো না তখন একটা সপাট চর এসে লাগলো ওর কপোলে। লিটরেলি মেয়েটা যোগ পর্যন্ত ঠিকমতো করতে পারছিলো না। অথচ কাল ওর ম্যাথ টিউটোরিয়াল পরীক্ষা আছে। হাহ! থাপ্পড় খেয়ে আহ্লাদী বাচ্চা আহ্লাদিত হয়ে এরজন্যই আমাকে কেঁদে কেঁদে ফোন দিয়েছে। ওর মেলোড্রামা আমি জন্মের মতোই আজ ঘুচিয়ে দিলাম। সব শুনে ওর আরেক গালকে বিটরুটের মতোন লাল বানিয়ে দিলাম। ও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কতক্ষণ আমার দিকে চেয়ে থেকে বাসা মাথায় তুলে কেঁদে গেলো জেঠির কাছে বিচার দিতে। আমি নিশ্চিত ওর ভ্যাবানো দেখে জেঠি নিশ্চয়ই আরেকটা চপেটাঘাত লাগাবে।

স্নেহার কান্না থামলো না। বাড়িসুদ্ধ সবাইকে কান্নার কারণ বলে বলে বেড়ালেও শুভ্র কিংবা ধ্রুব ভাইকে বললো না। এদিক থেকে স্নেহা একটা সুইটেস্ট পার্সন। ওর মতো কিউট মেয়ে আমি দুনিয়াতে দেখিনি। বস্তুত, আমার মনে থাকা শুদ্ধর প্রতি বছরের প্রথম বৃষ্টির ঝমঝমানোর ন্যায় অনুভূতির স্নেহা সবটুকুই জানে। আমি ওকে পইপই করে সব বলেও দেই কখন কি হয় না হয়। কিন্তু এই সফট হার্টের মেয়েটা কাউকে কক্ষনো কিছু বলেনি। সে জানে শুভ্র আর ধ্রুব ভাই শুদ্ধকে পছন্দ করে না তাই ওদের সামনে শুদ্ধর পার্টটুকু এড়িয়ে বাকিটুকু বললো। কোনো এক কারনে শুদ্ধর মুখোমুখি ওরা হয় না। ওদের মুখোমুখিও শুদ্ধ হয় না। শুভ্র ভাই এসে আদরের বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে আহ্লাদ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘এতো কাদে না, সোনা? আইসক্রিম খাবে?’

ন্যাকামো! কেউ কাদলেই আদর উপচিয়ে পরে। আর তখন ‘তুমি ডাক’ আদরের মাত্রা’টাকে পুরা আহ্লাদের চরম পর্যায়ে নিয়ে যায়। এসব আহ্লাদ আমার একদম পছন্দ হয় না। স্নেহা হেচকি তুলতে তুলতে বললো,

”তরু আপু, আমার গালে কেনো মারলো?’

বলেই আবার জোরেসোরে কান্না। আমি বিরক্তিতে কপাল কুচকে বললাম,

‘একটাই তো মেরেছি। এতো নাটক করছিস কেনো? নাকি আরেকটা খেতে চাস? কান্না থামা, ভ্যাবানি।’

শুভ্র ভাই আমার দিকে কড়া চোখে তাকালেন। আমি বিশেষ পাত্তা না দিয়ে উপর দিকে চোখ নিক্ষেপ করে শীষ বাজালাম। ধ্রুব ভাইয়ের আপন বোন স্নেহা। কিন্তু ওর প্রতি শুভ্র ভাইয়ের আদরের পাল্লাটুকু বেশি ভারী। যদিও ধ্রুব ভাই যথেষ্ট আদর করেন নিজের বোনকে। তবুও মায়ের থেকে বরাবর মাসির দরদ একটু বেশিই থাকে। ধ্রুব ভাই এবার বিরক্তে এক রাম ধমক দিলেন,

‘এই, এটাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসো তো। কি শুরু করেছে? একটা সিম্পল অংক পারে না। মাথা ভর্তি গোবর। মেরেছে বেশ করেছে।’

শুভ্র ভাই বললেন, ‘কি করলে কান্না থামবে, বাবু?’

স্নেহা কাদতে কাদতে উত্তর দিলো, ‘শপিং এ গেলে।’

সাথে সাথে আমি ফট করে বলে উঠলাম,

‘এ্যাহ! জাতে মাতাল তালে ঠিক। একটা চর খেয়ে সারাদিন নাটক বুঝি এরজন্য করছিলি?’

শুভ্র ভাই আমাকে আবার চোখ রাঙানি দিয়ে বললেন,

‘যা, রেডি হয়ে আয়। শপিং এ যাবো আমরা।’

‘আমি কোথাও যাচ্ছি না।’

আমি মুখে না করলাম ঠিকই কিন্তু আমি জানি আমাকে যেতেই হবে কারণ শুভ্র ভাই আমাকে বাড়িতে ফেলে কিছুতেই শপিং এ যাবেন না। ধ্রুব ভাই কিছু বললেন না। উনার ভাবমূর্তি দেখে মনে হলো উনি যাবেন না। কিন্তু আমি লিখে দিতে পারি এখন যদি আমি বলি আমি যাবো তাহলে ধ্রুব ভাইও পেছন পেছন লেজ নাড়তে নাড়তে যাবেন। এরা দুজন কি আমার বডিগার্ড নাকি? একজন বাড়িতে একা ছেড়ে দিয়ে যেতে রাজি নন আরেকজন একা বাইরে ছাড়তে রাজি নন। যতক্ষণ বাড়িতে দুজন থাকবে আমার পেছনে আঠার মতো লেগে থাকবে। অসহ্য যন্ত্রণা! অগ্যতা আমি রেডি হতে গেলাম। কারণ লাভ নেই তো! কথায় শুধু কথা বাড়বে। শেষে গিয়ে দেখা যাবে দাদুভাইয়ের কাছে দুজন নালিশ ঠুকে এক মাসের বিচার একবারে বসাবে।

চলবে

#হেমন্তের_নীড়
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-৩ (এর অংশবিশেষ)
৬.
আমি তার প্রতি কেমন কন্সার্ন পাঠকদের তার একটা উদাহরণ দেই। আমি ভার্সিটি গিয়ে তথাকথিত আমার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খোলা মাঠে আড্ডা দিচ্ছি। এরমধ্যে স্নেহা আমাকে ফোন দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি বিরক্তিতে দিলাম এক ধমক। ধমক খেয়ে ও শুধু কান্নার মাঝে বলতে পারলো শুদ্ধ ভাইয়া। ব্যস! এতোটুকুতেই! তারপরের সেই লজ্জার বিষয়টুকু বলতে গেলে আমার নিজের প্রতি এখনো চরম ক্রোধ আসে। বস্তুত, আমি ওর কান্নারত গলায় ‘শুদ্ধ ভাইয়া’ এটুকু শুনে ধরেই নিয়েছিলাম শুদ্ধ হয় এক্সিডেন্ট করেছে, নাহলে মরে টরে গিয়েছে কিংবা অসুস্থ হয়েছে। আমি নেহাত’ই একজন ধীর-স্থির মেয়ে। নেগেটিভিটি মনে স্থান দেই না। কিন্তু তা শুদ্ধর বেলায় অন্য হিসাব। সেই মূহুর্তে আমার মাথায় সব নেগেটিভিটির স্তূপ এসে ভিড়লো। আমি ফোন কেটে শান্ত চিত্তে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে দৌড়ে বাড়ি এসে দেখি……….

পাঠকরা আমাকে গাধা ভেবে ভুল করবেন না। ওরকম সিচুয়েশনে পরলে আমি হলফ করে বলতে পারি আপনি আমার থেকেও গাধার মতোন কাজ করতেন। দেখা গেলো অতিরিক্ত প্যানিক থেকে নিজেই অসুস্থ হয়ে গেলেন কিংবা রাস্তায় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নিজেই একটা অঘটন ঘটিয়ে বসলেন। সে যাই হোক, বাড়ি এসে আমি কি দেখলাম সেটা শুনুন,

আমি বাড়ি এসে দেখলাম শুদ্ধ স্নেহা’র নরম তুলতুলে ফর্সা সুন্দর গাল’টাকে চেরি ফলের মতো লাল বানিয়ে দিয়েছে। কারন’টা হলো সেদিন বাসায় শুভ্র ভাই আর ধ্রুব ভাই অনুপস্থিত। স্নেহা অংক বই খাতা নিয়ে গিয়েছে শুদ্ধর কাছে। শুদ্ধ’র আবার বিরাট ধৈর্য্য আর আমাদের স্নেহা বিরাট মেধাবী কী না! তিন চারবার এক অংক বুঝাতেই স্নেহা যখন এক অক্ষরও বুঝলো না তখন একটা সপাট চর এসে লাগলো ওর কপোলে। লিটরেলি মেয়েটা যোগ পর্যন্ত ঠিকমতো করতে পারছিলো না। অথচ কাল ওর ম্যাথ টিউটোরিয়াল পরীক্ষা আছে। হাহ! থাপ্পড় খেয়ে আহ্লাদী বাচ্চা আহ্লাদিত হয়ে এরজন্যই আমাকে কেঁদে কেঁদে ফোন দিয়েছে। ওর মেলোড্রামা আমি জন্মের মতোই আজ ঘুচিয়ে দিলাম। সব শুনে ওর আরেক গালকে বিটরুটের মতোন লাল বানিয়ে দিলাম। ও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কতক্ষণ আমার দিকে চেয়ে থেকে বাসা মাথায় তুলে কেঁদে গেলো জেঠির কাছে বিচার দিতে। আমি নিশ্চিত ওর ভ্যাবানো দেখে জেঠি নিশ্চয়ই আরেকটা চপেটাঘাত লাগাবে।

স্নেহার কান্না থামলো না। বাড়িসুদ্ধ সবাইকে কান্নার কারণ বলে বলে বেড়ালেও শুভ্র কিংবা ধ্রুব ভাইকে বললো না। এদিক থেকে স্নেহা একটা সুইটেস্ট পার্সন। ওর মতো কিউট মেয়ে আমি দুনিয়াতে দেখিনি। বস্তুত, আমার মনে থাকা শুদ্ধর প্রতি বছরের প্রথম বৃষ্টির ঝমঝমানোর ন্যায় অনুভূতির স্নেহা সবটুকুই জানে। আমি ওকে পইপই করে সব বলেও দেই কখন কি হয় না হয়। কিন্তু এই সফট হার্টের মেয়েটা কাউকে কক্ষনো কিছু বলেনি। সে জানে শুভ্র আর ধ্রুব ভাই শুদ্ধকে পছন্দ করে না তাই ওদের সামনে শুদ্ধর পার্টটুকু এড়িয়ে বাকিটুকু বললো। কোনো এক কারনে শুদ্ধর মুখোমুখি ওরা হয় না। ওদের মুখোমুখিও শুদ্ধ হয় না। শুভ্র ভাই এসে আদরের বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে আহ্লাদ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘এতো কাদে না, সোনা? আইসক্রিম খাবে?’

ন্যাকামো! কেউ কাদলেই আদর উপচিয়ে পরে। আর তখন ‘তুমি ডাক’ আদরের মাত্রা’টাকে পুরা আহ্লাদের চরম পর্যায়ে নিয়ে যায়। এসব আহ্লাদ আমার একদম পছন্দ হয় না। স্নেহা হেচকি তুলতে তুলতে বললো,

”তরু আপু, আমার গালে কেনো মারলো?’

বলেই আবার জোরেসোরে কান্না। আমি বিরক্তিতে কপাল কুচকে বললাম,

‘একটাই তো মেরেছি। এতো নাটক করছিস কেনো? নাকি আরেকটা খেতে চাস? কান্না থামা, ভ্যাবানি।’

শুভ্র ভাই আমার দিকে কড়া চোখে তাকালেন। আমি বিশেষ পাত্তা না দিয়ে উপর দিকে চোখ নিক্ষেপ করে শীষ বাজালাম। ধ্রুব ভাইয়ের আপন বোন স্নেহা। কিন্তু ওর প্রতি শুভ্র ভাইয়ের আদরের পাল্লাটুকু বেশি ভারী। যদিও ধ্রুব ভাই যথেষ্ট আদর করেন নিজের বোনকে। তবুও মায়ের থেকে বরাবর মাসির দরদ একটু বেশিই থাকে। ধ্রুব ভাই এবার বিরক্তে এক রাম ধমক দিলেন,

‘এই, এটাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসো তো। কি শুরু করেছে? একটা সিম্পল অংক পারে না। মাথা ভর্তি গোবর। মেরেছে বেশ করেছে।’

শুভ্র ভাই বললেন, ‘কি করলে কান্না থামবে, বাবু?’

স্নেহা কাদতে কাদতে উত্তর দিলো, ‘শপিং এ গেলে।’

সাথে সাথে আমি ফট করে বলে উঠলাম,

‘এ্যাহ! জাতে মাতাল তালে ঠিক। একটা চর খেয়ে সারাদিন নাটক বুঝি এরজন্য করছিলি?’

শুভ্র ভাই আমাকে আবার চোখ রাঙানি দিয়ে বললেন,

‘যা, রেডি হয়ে আয়। শপিং এ যাবো আমরা।’

‘আমি কোথাও যাচ্ছি না।’

আমি মুখে না করলাম ঠিকই কিন্তু আমি জানি আমাকে যেতেই হবে কারণ শুভ্র ভাই আমাকে বাড়িতে ফেলে কিছুতেই শপিং এ যাবেন না। ধ্রুব ভাই কিছু বললেন না। উনার ভাবমূর্তি দেখে মনে হলো উনি যাবেন না। কিন্তু আমি লিখে দিতে পারি এখন যদি আমি বলি আমি যাবো তাহলে ধ্রুব ভাইও পেছন পেছন লেজ নাড়তে নাড়তে যাবেন। এরা দুজন কি আমার বডিগার্ড নাকি? একজন বাড়িতে একা ছেড়ে দিয়ে যেতে রাজি নন আরেকজন একা বাইরে ছাড়তে রাজি নন। যতক্ষণ বাড়িতে দুজন থাকবে আমার পেছনে আঠার মতো লেগে থাকবে। অসহ্য যন্ত্রণা! অগ্যতা আমি রেডি হতে গেলাম। কারণ লাভ নেই তো! কথায় শুধু কথা বাড়বে। শেষে গিয়ে দেখা যাবে দাদুভাইয়ের কাছে দুজন নালিশ ঠুকে এক মাসের বিচার একবারে বসাবে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে