#চন্দ্রকণার_রাহা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৬(অন্তিম পর্ব)
নিত্তিকা কিছুটা দমে গিয়ে ধীর কন্ঠে বলল,
“আপু ছিলো ওই মেয়েটা তাই না।”
মিষ্টি হাসলো। চাপা হাসি, যা অগোচরেই রয়ে গেল। নিত্তিকা বড় বড় শ্বাস ফেলে বলল,
“আপু আপনার কাছে আছে তাই না। শাহিয়ান, উনি সবটা জেনেই এই কাজটা করেছিলো। কিন্তু আপাকে বিয়ে করার কারণটা কি?আর আপুর সাথে আপনারা কি করবেন?”
মিষ্টি দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট আকরে ধরে বলল,
“বেশিকিছু করবোনা। কারণ আমি এতোটাও পাষান না। দুইদিন পর বাড়িতে দিয়ে আসবো তোমার বোনকে। যেহেতু লোক জানাজানি হয়ে গেছে সেহেতু তোমার বোনের বিয়ে আর হচ্ছে না। আর হতে নিলেও আমি হতে দিবো না। ওকে আমি ক্ষণে ক্ষণে একাকিত্ব অনুভব করাবো। ওকে বুঝতে হবে একা হয়ে যাওয়ার কষ্টটা কতটুকু। আর শাহিয়ানের কথা বলছো ও তো তোমার বোনকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু..!”
মিষ্টি থেমে যেতেই নিত্তিকা বলে উঠলো,
“কিন্তু কি আপু, থেমে গেলেন কেন?”
মিষ্টি নিত্তিকার অস্থিরতা দেখে হাসলো। চেয়ার থেকে উঠে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। সকালের রক্তিম আভায় সূর্যকে যেন এক রহস্যময় চরিত্র লাগছে। মিষ্টি সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“জানো তো ভালোবাসা মানুষকে অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। সবাই কিন্তু ভালোবাসতে পারেনা। যারা পারে তারা বেশিরভাগই কষ্ট পায়। যেমন দেখ না আমি। তবে ভাগবান বা ভাগ্যবতী তারা যারা ভালোবাসা পায়। আমার মনে হয় ভালোবাসা পেলে তাকে আকড়ে ধরতে হয়। মনে অতল গহ্বরে যত্ন করে লুকিয়ে রাখতে হয় সেই মানুষটাকে। এই যে এতটা সময় চাঁদের কণা কেমন জ্বল জ্বল করছিলো আকাশ জুরে। আর এখনি আকাশে সূর্য তার দাপট দেখাতে শুরু করেছে। সূর্যের দাপট বেশি থাকলেও আমরা কিন্তু ওই চিকন চাঁদের কোণাটাকেই বেশি পছন্দ করি। কারণ সে স্নিগ্ধ। তেমনি ভালোবাসাও এক স্নিগ্ধ অনুভূতি। যাকে অনুভব করতে হয়।”
মিষ্টি চুপ হয়ে গেল। নিত্তিকাও চুপ হয়ে গেল। এতটা সময় সে খুব মনোযোগ দিয়ে মিষ্টির কথাগুলো শুনছিলো। কথাগুলো যেন তাকে অনুভব করাচ্ছে। একটা মানুষ এত ভালো করে কথা বলতে পারে। কিন্তু আজ তার বোনের জন্যই মানুষটার ভালোবাসার মানুষ চলে গেছে। যাকে ফিরিয়ে আনা কখনোই সম্ভব না। ঠোঁট ভেঙে কান্না এলো নিত্তিকার। নিত্তিকা সহজে কান্না করে না। তবে কেন তার সাথে এমন হচ্ছে। কথায় কথায় কেন এতো কান্না পাচ্ছে। সে কি ছিচকাদুনি হয়ে গেল। না না এ হতে পারে। ভাবতে ভাবতেই কান্না করে দিলো বেচারি। তখনি শাহিয়ানের কন্ঠ ভেসে এলো,
“এই মেয়ে তুমি কাঁদছো কেন?”
নিত্তিকা ঝট করে উল্টো করে শাহিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো। মিষ্টি হাসলো। মিষ্টি ফোনটা টেবিলের উপর রেখে পুনরায় তাকালো সূর্যের দিকে।
নিত্তিকা নাক টেনে বলল,
“আমি কি দিন দিন ছিচকাদুনি হয়ে যাচ্ছি বলুন না। আমার শুধু কান্না পায়।”
নিত্তিকার এমন কথায় কিছুটা ভরকালো শাহিয়ান। রাত জেগে মেয়েটা কি পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি। শাহিয়ান কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“তুমি কি ঠিক আছো?”
নিত্তিকা এবার শাহিয়ানের বুক থেকে মুখ তুলে ওরে চোখে চোখ রাখলো। শাহিয়ান এতটা সময় ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। নিত্তিকা চোখে চোখ রেখেই বলল,
“আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন শাহিয়ান?”
শাহিয়ান চমকে উঠলো নিত্তিকার বলা কথা। মিষ্টির তো এসব বলার কথা ছিলো না। তাহলে কি মেয়েটা বলে দিয়েছে? শাহিয়ানের চোখ মুখে প্রশ্নবোধক ভাব দেখে নিত্তিকার আর বুঝতে বাকি নেই। নিত্তিকা মুচকি হেসে বলে উঠলো,
“মিষ্টি আপু আমাকে বলেনি কিছু। চিন্তা করবেনা। তবে আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেছি।”
শাহিয়ান কপাল গুটিয়ে বলল,
“কি বুঝেছো?”
নিত্তিকা কিছু না বলে শাহিয়ানকে ছেড়ে চলে যেতে নিলে শাহিয়ান ওর কোমর পেঁচিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল,
“বললে না তো কি বুঝেছো?”
নিত্তিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ঘোড়ার আন্ডা।”
শাহিয়ান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
“একদম তেড়ামি করবে না। মিষ্টি কি তোমাকে….!”
নিত্তিকা শাহিয়ানের কথার মাঝেই বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
“আমি কি বললাম শুনতে পেলেননা। আপনি যা বলতে বলেছেন তাই বলেছে। বাড়তি কিছু বলেনি। আমাকে দেখলে কি আপনার অবুঝ মনে হয়।”
শাহিয়ান মনে মনে হাসলেও প্রকাশ না করে বলল,
“তা কি কি বুঝেন আপনি?”
নিত্তিকা দুইহাত দিয়ে শাহিয়ানের থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
“পরে বলবো এখন ছাড়ুন তো।”
শাহিয়ান কোলে তুলে নিলো নিত্তিকাকে। নিত্তিকা ভরকে গেলেও তীক্ষ্ণ চোখে শাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই আপনি এগুলো কি করছেন?”
শাহিয়ান ভাবলেশহীন ভাবে রুমে আসতে আসতে বলল,
“সব যখন বুঝেই গিয়েছো। তখন আরো ভালো করে না হয় বুঝিয়ে দেই সব।”
——————-
কেটে গেছে দুটো দিন। মিষ্টি নিজ দায়িত্বে নিত্তিকার বড় বোনকে তার বাড়িতে দিয়ে এসেছে। নিজে ফিরেছে তার বাসায়। শাহিয়ান আর নিত্তিকার সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। শাহিয়ান মুখে ভালোবাসি না বললেও তার সকল কাজকর্মে ঠিকিই প্রকাশ পায় সে কতটা ভালোবাসে নিত্তিকাকে।
নিত্তিকা আর শাহিয়ান একসাথে বসে আছে বারান্দায়। আকাশে অর্ধেক চাঁদ উঠেছে। নিত্তিকা সেদিকে তাকিয়ে বলল,
“ভালোবাসার পথ কোনদিকে বলুন তো!”
শাহিয়ান মুচকি হেসে বলল,
“চন্দ্রকণার রাহার দিকে। যেই দিন আমি আজীবন তোমার হাত ধরে এগিয়ে যেতে যাই। থাকবে তো পাশে।”
নিত্তিকা মুচকি হেসে তাকালো শাহিয়ানের দিকে। চোখাচোখি হতেই বলল,
“জানেন তো আমি সত্যিই ভাগ্যবাতী।”
শাহিয়ান নিত্তিকার কাধের একপাশ ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল,
“আমিও ভাগ্যবান।”
#সমাপ্ত