#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২০
“আসলেই আপনি বিবাহিত! আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না৷”
“তো এখন কি বৌ নিয়ে আপনার সামনে বাসর সারলে তারপর বিশ্বাস করবেন!”
ইরা বিরক্ত নিয়ে বলে, “ছিহহ কেমন ভাষা এসব?”
“আপনার যেমন প্রশ্ন আমার তেমন উত্তর। নিজের রাস্তা মাপুন৷”
“ধন্যবাদ আমাকে এই পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য।”
“আপনার ধন্যবাদ রোদে শুকিয়ে বৈয়ামে ভরে রেখে দিন, অন্য কাউকে বিরক্ত করার পর আবার কাজে আসবে৷ বাই দা ওয়ে আপনাকে আপনার বাবার জন্য এতোটুকু হেল্প করেছি৷ ড্রাইভার গাড়ি ঘোরাও৷”
ইরা গম্ভীর মুখে গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,এতো এটিটিউড কিসের ভাই! তবে দেখতে হ্যান্ডসাম, ইশশ অবিবাহিত হলে এমন ভাবে পিছু নিতাম বৌ হয়ে তবেই ছাড়তাম।
এমন গায়ে পড়া স্বাভাবের মেয়ে জিয়ানের একদম পছন্দ না। জিয়ান বাসায় এসে ড্রেস খুলে খালি গায়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে গেলো, শাওয়ার নিয়ে তোয়ালে জড়িয়ে রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিয়ে, বডি স্প্রে করলো। আয়নায় তাকতেই নিজেকে দেখে বলে,আমি এই পাঁচটা দিনে পাঁচবারও নীলাঞ্জনার কথা ভাবিনি! আচ্ছা নয়না কি আমার মনে কোনভাবে জায়গা করে নিয়েছে? নাকি এসব সাময়িক মোহ ? জিয়ানের ভাবনার ছেদ ঘটলো ফোনের রিংটোনে। সাত পাঁচ না ভেবেই রিসিভ করলো জিয়ান৷
‘নয়নার চোখের সামনে জিয়ানের অর্ধনগ্ন শরীর ভেসে উঠলো৷ নয়না সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো একহাত নিজের বুকের বা’পাশে রাখলো। মনে হচ্ছে হৃদপিণ্ড এখনি বের হয়ে আসবে ভেতর থেকে। এই লোকটা আমাকে মেরেই ফেলবে এভাবে!
জিয়ান টিশার্ট পরতে পরতে বলে,”চোখ বন্ধ করে রেখেছো কেনো? কয়েকদিন আগেই কে যেনো বলেছিলো দেখার মত জিনিস চোখের সামনে থাকলে তো দেখবোই৷ তা এখন চোখ বন্ধ কেনো?”
“আপনার লজ্জা কই?”
“বেচে দিয়েছি,ওসব লজ্জা টজ্জা ছেলেদের মানায় নাকি!”
“লজ্জা কেউ বেচে দিতে পারে! নিজের জন্য একটু তো রেখে দিতে পারতেন৷”
“বেবি এখন চোখ খুলো আমি শার্ট পরেছি।”
নয়না চোখ খুললো কিন্তু জিয়ানের দিকে সরাসরি তাকাচ্ছে না।
“কিগো দৃষ্টি নিচে রেখে আমার তোয়ালের ফাঁকফোকর খুঁজছো নাকি?”
‘নয়না এবার বুঝি লজ্জায় মিলিয়েই যাবে৷ খট করে ফোনটা কেটে দিলো।
“ধুর কে বলেছিলো এই প্লেন ড্রাইভারকে এতো হ্যান্ডসাম হতে! চোখ মেললেও এখন প্লেন ড্রাইভার চোখ বন্ধ করলেও প্লেন ড্রাইভার! পরিক্ষার খাতায় কি লিখবো?
‘জিয়ান হাসতে লাগলো। পিচ্চি বৌ তো দারুন উপভোগ্য! কেনো যে প্রেম করে দেবদাস হওয়ার দারপ্রান্তে পৌঁছালাম! থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরে নয়নাকে আবার কল করলো। নয়না পিটপিট করে জিয়ানকে দেখছে।
“মিস ষোড়শী বালিকা আপনি পুরোপুরি ভাবে তাকাতে পারেন এখন আপনার কোন ডিস্টার্ব হবে না৷”
“নয়না তাকালো।মনে মনে, ইশশ ব্লু রঙের টিশার্টে এতো হ্যান্ডসাম লাগছে কেনো!কোন মেয়ের দৃষ্টি পরলে তো ক্রাশ খাবে।”
“এভাবে তাকিয়ে কি দেখো?আমি কি তোমার ক্রাশ বিলাল আব্বাসের চেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম?”
“নিজেকে কি মনে করেন আপনি? আমি মোটেও আপনাকে দেখছি না। আমি দেখছিলাম আপনার পেছনে থাকা মিরর, কি সুন্দর মিররের ডিজাইনটা! আবার আসলে এটা আমার জন্য নিয়ে আসবেন।”
“আপনি আমার কে?”
“আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী।”
“সত্যি?”
‘ নয়না মাথায় হাত দিলো৷ এসব কি হচ্ছে তার সাথে! জিয়ান ঠোঁট টিপে হাসলো। নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,তুমি কি আদৌও অন্য কোন ছেলের সাথে রিলেশন করতে পারবে?
“পারবো না কেন! একশবার পারবো। আমি কি কম সুন্দর নাকি!”
“তোমাকে অসুন্দর কে বলল?”
“আপনি বলছেন, আমি কি আসলেই অসুন্দরী?”
“এমন ভুল ধারনা পোষণ কইরো না, ময়নার মা৷ তুমি দেখতে ভুতনীর মত।”
”আপনি দেখতে ভুতের মত।”
‘আরেহহ বাহহ ভুত আর ভুতনী দারুন কম্বিনেশন তো!”
“আপনি কি সত্যি কানাডা আছেন? মানে আমাদের সত্যি আর দেখা হওয়ার চান্স নেই!”
“দেখা করতে ইচ্ছে করছে বুঝি? আসলে দোষটা তোমার না দোষটা তোমার বয়সের। কয়েকদিন পর আর আমার কথা মনেও থাকবে না৷”
“আসলেই আপনাকে ভুলে যাবো,এটা কি সম্ভব?”
“অনেক বেশি মিস করছো বুঝি?”
“নয়না আপনাকে মিস করবে কেনো!আপনি আসলেই প্লেন ড্রাইভার নাকি তা দেখার জন্য কল করেছি।”
“ইট’স পাইলট, নট প্লেন ড্রাইভার।”
“আপনার রুমে আপনি একা থাকেন?”
“নাহহ আমার চারটা বৌ আর গোটা কয়েক বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে থাকি।”
“সোজা কথা বলা যায় না?”
”সমস্যা কি তোমার সুনয়না? পড়তে না বসে মোবাইল নিয়ে পরে আছো কেনো?”
“সমস্যা কি মানে!সমস্যা হলেন আপনি। সমস্যার মা, সমস্যার বাপ,সমস্যার চৌদ্দগুষ্টি সব আপনি। কোথাকার প্লেন ড্রাইভার আমার মাথাটা খেয়ে ফেলছে!”
“কোথাকার প্লেন ড্রাইভার মানে! আমি জিয়ান রেজা চৌধুরী, ক্যাপ্টেন রেজা চৌধুরী মানে বুঝো? ফার্স্ট আফিসার আমি, সো রেসপেক্ট। আর ফোন রাখো পড়তে বসো আমার কাল ফ্লাইট, সো রেস্ট নিতে হবে। শরীর ফিট রাখতে হয় বেবি।”
নয়না ফোন কেটে দিলো৷ কি পেয়েছে আমাকে! যখন তখন, ‘বাবু, বেবি, বাচ্চা বলবে!সামনে পেলে একদম নাগা মরিচের আচার বানিয়ে রেখে দিতাম।
🌿
জাহিন ব্ল্যাকশার্ট সাথে ব্ল্যাক ব্লেজার পরা,হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ। চুলগুলো স্পাইক করা৷ নিজেকে আয়নায় শেষবারের মত দেখে নিয়ে নিজের সবচেয়ে পছন্দের পারফিউম ‘(ভারসাচি ইরস ফর মেন’)স্প্রে করে নিলো। এটার স্মেল ভিষন পছন্দ জাহিনের। রেডি হয়ে নিচে আসতেই। মিতা বেগম বললেন, রাত ন’টায় তুই এতো সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছিস?
“আম্মু কি যে বলো না! আমি কি মেয়ে নাকি সাজগোছ করবো! তোমার ছেলেরা এমনিতেই হ্যান্ডসাম।”
“এসব পাম না দিয়ে আসল কথা বলো?”
“আম্মু আজ পার্টি আছে অন্তরের বাসায় একটার মধ্যে বাসায় চলে আসবো।”
“দেখ জাহিন এবার কিন্তু তোর স্থির হতে হবে অনেক হয়েছে এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি।”
“ওকেএএ আম্মিজান ভেবে দেখছি।”
“জাহিন গাড়ি না নিয়ে তার শখের বাইক নিয়ে বের হলো৷”
অন্তরের বোনের বার্থডে অন্তর বারবার রিতুর পিছু পিছু ঘুরছে আর বলছে, একটা বান্ধবী দে তোর। যদি ভাইয়ের জন্য এতোটুকু না করতে পারিস তাহলে কেমন বোন তুই? একটা মেয়ে দে সিঙ্গেল লাইফ আর ভাল্লাগে না কতকাল একা থাকবো বল!
“আমাকে দেখে কি তোমার মেয়ে পাচারকারি মনে হয়!”
“ওকে ভালো কথা শুনলি নাতো? আজকে জাহিনকে আসতে বলেছিলাম তোর বার্থডেতে থাক মানা করে দেই৷”
“জাহিননননন!ও চলে আসছে?”
“চলে আসলেও কি ও তো তোকে পাত্তাও দেয় না৷”
“ভাই তুমি আমাকে এভাবে অপমান করছো! তোমার বন্ধুর যে প্রেমে এলার্জি সেটা দেখছো না৷”
“তোর সবচেয়ে সুন্দরী বান্ধবীর নামটা বল।”
“নাম বলে কি হবে? আসলেই দেখে নিও৷”
মান্নাত ব্ল্যাক আর গোল্ডেন শেডের আনারকলি পরেছে, সাথে হালকা অর্নামেন্টস, চুলগুলো কার্ল করেছে। আয়নায় তাকিয়ে বলে,হায় নিজেই নিজের প্রেমে পড়ে যাচ্ছি সবাই তো বেহুশ হয়ে যাবে৷ কালো বোরকা পরে রুম থেকে বের হলো মান্নাত। জামাল সাহেব ড্রয়িংরুমে বসে খবর দেখতে বিজি। মান্নাত ধীর পায়ে বের হয়ে গেলো৷ বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য। গিফটের প্যাকেটটা এমন ভাবে বোরকার উপর রেখেছে দেখে মনে হচ্ছে প্রেগন্যান্ট মহিলা। রিকশা না পেয়ে হেঁটেই রওনা হলো বেশি দূরে না রিতুর বাসা, হেঁটে গেলে মাত্র বিশ মিনিট লাগবে।
“মান্নাত রিতুর বাসায় ঢুকতেই সবাই বোকার মত তাকে আছে মান্নাতের দিকে।
“অন্তর এসে বলে,আপনি কে খালাম্মা?”
“মান্নাত নরম স্বরে বলে রিতু কোথায়? আমি ওর ফ্রেন্ড।”
‘অন্তর রিতুর রুম দেখিয়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে বলে,এই নয়মাসের বাচ্চা নিয়ে কে বার্থডে পার্টিতে আসে!এখন এখানেই ডেলিভারি হলে পার্টি ছেড়ে মাটি করতে হবে। মান্নাত রিতুর রুমে ঢুকতেই রিতু চিৎকার দিয়ে বলে,কে আপনি?
‘মান্নাত গিফটের প্যাকেট বেডের উপর রেখে বোরকার নেকাব সরিয়ে বলে,আমি?
“রিতু আরেক দফা অবাক হয়!কে আপনি?”
“মান্নাত বোরকা খুলে চুলগুলো ঠিক করে বলে, সাবকি হোশ উড়ানে ওয়ালি মান্নাত হু।”
“আরেহহহ ইয়ার! তোকে চেনাই যাচ্ছে না! দাদিআম্মা থেকে সোজা হটনেসের দোকান! কিভাবে সম্ভব!”
“সেসব বিরাট কাহিনি পরে বলবো,এখন বল সারপ্রাইজ কেমন লাগলো৷”
“হার্ট এটাক হতে হতে হয়নি৷ মান্নাত ইয়ার এতো রূপবতী হয়ে এমন গাইয়া ভুত হয়ে কলেজে কেন আসিস?”
“কলেজে পড়তে যাই রুপ দেখাতে না। এবার বল বাকিরা কোথায়?”
“সব ছাদে। চল আমরাও যাই। জানিস আজ আমার জান্টুসও আসবে পার্টিতে।”
“তোর আবার জান্টুস আসলো কোথা থেকে? তুই না পিউর সিঙ্গেল একদম হট চিলি সসের মত পিউর?”
“জান্টুসকে তো পটাতে পারিনি।”
“ওহহহ এই কেস। এখন চল বাকিদের শক দেই।”
“যারা এসেছে তোকে দেখলে সত্যিই চারশ চল্লিশ ভোল্টের শক খাবে।”
🌿
লাবিব নীলাঞ্জনার কাছে এসে নীলাঞ্জনার ঘাড়ের চুল সরিয়ে কিস করতে লাগলো৷
‘নীলাঞ্জনা সরে দাঁড়ালো।
‘ লাবিব এবার আরো গভীর ভাবে স্পর্শ করতে লাগলো৷
“নীলাঞ্জনা সরে যেয়ে বলে,সব সময় এসব ভালো লাগে না। আমার কি মন নেই? ফিলিংস নেই? তোমার ইচ্ছে করলেই এসব করতে চলে আসো!”
“লাবিব নীলাঞ্জনার চুল মুঠ করে ধরে বলে,বাবা তোকে মেনে নিয়েছে এরজন্য উড়ছিস? আমি ছুড়ে ফেলে দিলে সব পাখা ভেঙে মুখ থুবড়ে পড়বি৷ আমার তোকে এখন চাই মানে চাই৷ চাহিদা পূরন করবি নয়ত এই দেশে টাকা ছিটালে মেয়ের অভাব হয়না।”
‘নীলাঞ্জনা লাবিবের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো! একটা মানুষ এতো নিচু মাইন্ডের কিভাবে হতে পারে! আমি সত্যিই এই মানুষটাকে ভালোবেসে ছিলাম!
‘লাবিব নীলাঞ্জনাকে জড়িয়ে ধরে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলো৷
‘নীলাঞ্জনার চোখ থেকে বোবা অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ যে ভুল সে করেছে তার মাশুল তাকেই দিতে হবে৷ এই মুখ নিয়ে ফিরে যাওয়ার রাস্তা যে বন্ধ! না সমাজ,আর না পরিবার তাকে কেউ আর গ্রহণ করবে না৷
#চলবে
হ্যাপি রিডিং 🥰