#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৭
‘নয়না বারবার মোবাইলটার দিকে তাকাচ্ছে।নাহহ একটা কল ও আসেনি! এই লোকটা এমন রসকষহীন কেন!আরেহহ ভাই তোর প্রেমিকা পালিয়ে গেছে তাতে কি হইছে! দুনিয়ায় মেয়ের অভাব পরছে! আমার মত সুন্দরী একজনকে ভালোবাসলেই তো লেটা চুকে যায়। কত নিষ্ঠুর হলে একবারও কল না করে। নাহহ নয়না স্থীর হতে পারছে না৷ পায়চারি করছে সারা রুম জুড়ে। রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় আসলো। চোখ গেলো পশ্চিম কর্নারে চোখের সামনে ভেসে উঠলো জিয়ানের প্রতিচ্ছবি! এই তো মনে হচ্ছে তার অস্থিরতা দেখে লোকটা মুচকি হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। দ্রুত ছুটে গেলো চেয়ারের সামনে, একদম দাঁত ফেলে দেবো এভাবে হাসলে।
‘আশ্চর্য সামনে কেউ নেই! লোকটা থাকলে ঠিক বলতো ফেলো দাও দেখি তারপর খপকরে তাকে কোলে নিয়ে নিতো? উফফ এসব আর ভাবতে পারছে না নয়না৷ দ্রুত পায়ে বারান্দা থেকে বের হয়ে আসলো৷ রুমেও স্বস্তি পাচ্ছে না৷ রুম থেকে বের হয়ে টিভি অন করলো,সেখানে গান বাজচ্ছে, সখী তোরা প্রেম করিও না পিরিত ভালা না…
চ্যানেল পাল্টে চলেছে কোথাও স্থীর হতে পারছে৷ বিরক্তি নিয়ে কপাল কুঁচকে বলে,মহা মুশকিলে পরলাম তো!এই প্লেন ড্রাইভারতো কিছুতেই আমার মস্তিষ্ক আর হৃদয় থেকে সরছেই না।
‘আপিতা তুমি কার সাথে কথা ও।
‘নয়না সূচনার দিকে তাকিয়ে বলে,নট আপিতা ইট’স আপি।
‘ওকে পাপিতা।
‘তুই এতো বিচ্ছু কেন সূচনা? আমার মুড ভালো নেই সর এখান থেকে।
‘সূচনা হুট করে নয়নার হাত থেকে রিমোট কেড়ে নিয়ে বলে,তোর মুড দিয়ে আমি কি করবোরে আপিতা। আমি কার্টুন দেখবো সর তুই।
‘তোকে না কতবার বলছি আমাকে তুই করে বলবি না আর আপিতা বলবি না!
‘আপিতা, তুই আপিতা, তুই আপিতা।
‘চুপ করবি!
‘করবো না চুপ তুই করবি! চিনিস আবার বাবাকে?
‘নয়না সূচনার কান টেনে দিয়ে বলে,তুই মুচনা মুচনা।বলেই নিজের মায়ের রুমে চলে গেলো৷
‘সূচনা কাঁপাল কুঁচকে বলে,আমার সাথে এমন করেছিস দেখিস তোর সাথে কি করি আপিতা।
‘রুমে এসেই জাহানারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে,আম্মু আমার ভালো লাগছে না৷
‘জাহানারা বেগম নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,বাহিরে যাবি? চল আমরা ফুচকা খেয়ে আসি।
“,নয়না আনন্দিত হয়ে বলে সত্যি!
‘হুম সত্যি।
‘নয়নার তবুও মন ভালো হচ্ছে না। ওই লোকটা কল করবে কখন! একটা কল কি করা যেতো না! আরেহহ মানুষের জন্য একটু মায়া তো থাকবে! কি নিষ্ঠার মানব লোকটা!
‘কিরে মা এখন কি ভাবছিস? আমাকে বল।
‘কিছু না আম্মু।
‘কিছু না হলেই ভালো। এখন মাথা থেকে সব ভাবনা বাদ দিয়ে দিবি৷ একমাত্র পড়া ছাড়া। সামনে পরিক্ষা সেটাতে ফোকাস করতে হবে। শ্বশুর বাড়ির লোকদের কাছে নয়ত লজ্জায় পরতে হবে।
‘নয়না চট করে উঠে বসলো, জাহানারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,আম্মু আমার আরেকবার বিয়ে দিলে কেমন ছেলের কাছে দিবে? এবার বিয়েতে বর কি আমি চুজ করতে পারবো?
‘মেয়ের এমন বোকার মত প্রশ্ন শুনে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন৷
এসব তুই কি বলছিস? তোকে আবার বিয়ে কেন দেবো!বিবাহিতা মেয়েকে দ্বিতীয়বার বিয়ে কোন দুঃখে দিতে যাবো!তাছাড়া জামাই আমার ভিষণ পছন্দ হয়েছে। যেমন দেখতে তেমন কি অমায়িক তার ব্যবহার।
‘দেখতে রানবীর কাপুড়ে হলেই হয়!একদম ভালো না৷ এখনো একটা কল করলো না আমাকে! কেমন পাষাণ হৃদয়েে মানুষ! এমন মানুষ আমার মোটেই পছন্দ না৷
‘আরেহহ বোকা মেয়ে প্লেনে থাকলে কল কি করে করবে! ল্যান্ড করলে তারপর তোকে কল করতে পারবে৷ এখন তো ফোন এরোপ্লেন মুডে আছে। নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন।
‘নয়নার মন পুত হলো না কথাটা৷ কল করেনি সেটা মানলাম আমার শেষ কথাটাও তো শুনলো না!আস্তা হিটলার ড্রাইভার। আর একবার সামনে আসুন আপনাকে আমি উগান্ডা ভ্রমন করিয়ে আনবো।
‘এতো ভাবা বাদ দে। যা রেডি হয়ে আয়, ফুচকা খেয়ে আসি। আর হ্যা কাল থেকে কিন্তু স্যাররা আসা শুরু করবে পড়াতে। পরিক্ষার মাত্র সতেরোদিন বাকি।
‘তুমি না বলছিলা বিয়ে হলে আর পড়তে হবে না৷ তাহলে আর পড়বো না৷ আমার পড়াশোনা এখন বর, টিচার হলো শ্বশুর বাড়ির মানুষ, সংসার হলো ক্লাস রুম।
‘পরিক্ষা না দিলে জামাই মানুষদের কি বলবে, আমার বৌ আন্ডার মেট্রিক? জামাইয়ের যোগ্য হতে হবে না? উল্টোপাল্টা কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।
‘🌿জিয়ান চোখ বন্ধ করলেই নয়নার নিষ্পাপ মুখশ্রী ভেসে উঠে চোখের সামনে। শেষ চাহনি তার চোখের আকুলতা। চোখ খুলে ফেলে জিয়ান৷ ঘুম আসছে না তার৷ ইশশ কেনো যে তোমার কথাটা শুনলাম না! আচ্ছা এই পাঁচদিনে মেয়েটার প্রতি কেমন টান অনুভব করছি৷ আমার কি বৌ হিসেবে সুনয়নাকে মেনে নেয়া উচিৎ?
‘এই যে মিস্টার হ্যান্ডসাম।
‘হঠাৎ এমন সম্বোধনে জিয়ান পাশ ফিরে তাকালো৷ জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে?
‘আমি ইরা।
‘জিয়ান ভ্রু কুচকে আবার নিজের ধ্যানে মগ্ন হলো৷
‘ ও হ্যালো পাত্তা দিচ্ছি বলে ভাব নিচ্ছেন! আমি ইরা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আর তাছাড়া আমরা কানাডার সিটিজেন। ছেলেদের লাইন লেগে যায় আমার পিছনে কিন্তু আমি কাউকে পাত্তা দেইনা৷
‘জিয়ান কানের মধ্যে ইয়ারফোন গুঁজে নিলো৷
‘আপনি এমন একটা ভাব নিচ্ছেন মনে হচ্ছে আপনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে! আমার ভয় হচ্ছে তাই আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম৷ এতো এটিটিউট কিসের আপনার! চেহারা আর বডি থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না৷
‘জিয়ান আস্তে করে, বলল, আমি মানুষ না দানব, পিচাশ টাইপ দানব। আমি আমার বৌয়ের বিরহে বিলীন হয়ে যাচ্ছি তাই দয়া করে আমার বৌয়ের কল্পনায় বা’হাত ঢোকাবেন না৷
‘ছিহহহ আপনার বিহেভিয়ার এমন কেনো! আপনি দেখতে যতটা সুন্দর ব্যবহার ততটাই বাজে। সো কন্টিনিউ। ইরা ভেবেছিলো সুদর্শন এক যুবকের সাথে তার সিট পরেছে প্লেন জার্নিটা তার ভালোই কাটবে সতেরো ঘন্টার দীর্ঘ জার্নি কথা বলার মত একজন পাশে থাকলে একটু সহজ হতো৷ অদ্ভুত লোকটা।
‘জিয়ান মেজাজ হারাচ্ছে!বিরক্ত হচ্ছে নিজের উপর। ইচ্ছে করছে এখন এক দৌঁড় নয়নার কাছে যেয়ে নয়নাকে জড়িয়ে ধরতে। কপালে চুমু দিয়ে বলতে, বলো তুমি কি বলতে চাও তোমার কথা না শুনে কোথাও যাচ্ছি না৷ নয়নার প্রতি সে অন্যায় করেছে একে একে কতগুলো অন্যায় করে বসেছে বাচ্চা মেয়েটার প্রতি। বাচ্চা মেয়ে শব্দটা মনে আসতেই হেসে দিলো জিয়ান৷ নয়না এখন সামনে থাকলে নিশ্চিত কোমড়ে হাত রেখে বলতো, আমি মোটেও বাচ্চা মেয়ে না। আমি ষোড়শী বালিকা৷ আর কয়েকদিন পর কলেজে ভর্তি হবো৷
‘ইরা জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,লোকটার কি মাথায় সমস্যা আছে! একা একা পাগলের মত হাসছে?
🌿 মিজান তালুকদার মাহবুব তালুকদারের সামনে বসা।
‘কিছু বলবি?
‘ভাইজান আমি নীলাঞ্জনার খোঁজ পেয়েছি কিন্তু আমার মন পোড়ে তবুও আমার বিবেক তার দিকে ফিরতে দিচ্ছে না৷ আইরিন নীলাঞ্জনার জন্য কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
‘দেখ মিজান। ভুল করলে সেটা ধরে তো আর বসে থাকা যাবে না৷ যে ভুল করে তার ফল সেই ভোগ করে৷ এমন একটা ছেলেকে ছেড়ে ও যে ভুল করেছে একদিন ও নিজেই আফসোস করবে। তুইতো দেখেছিস রেজাকে কি সুদর্শন আর কর্মঠ ছেলে৷ নিজের মেয়েকে তো আমরা পর করে দিতে পারি না। তবে তুই আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধর ও নিজেই আসবে৷ আমরা সখ করে সমুদ্র ভ্রমণে যাই, হুট করে পঁচা সমুকে পা কাঁটলে তবেই টের পাই, সাবধানে চলাচল করতে হতো! অতি আবেগে আমরা ভুল করে বসি। ও পঁচা সুমুকে পা’ কেটে দগ্ধ হয়ে ঘরের মেয়ে ঘরেই ফিরে আসবে। চিন্তা করিস না৷
‘বিয়েটা টিকবে না বলছো?
‘আমি ছেলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে যা বুঝেছি টেকার সম্ভবনা খুব কম৷ যদি টিকে যায় তাহলে তো ভালোই৷ আইরিনকে সামলা। বড় মেয়ের শোকে ছোট মেয়েটাকে অযত্ন যেনো না করে৷ যে চলে যায় সে স্বার্থপর। স্বার্থপর মানুষের জন্য ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে দিতে হয় কারন এমন মানুষ ভালোবাসার কদর বুঝে না৷ কি না করেছি আমরা নীলাঞ্জনার জন্য! আমাদের সম্মানের কথা একটাবারও ভাবলো না! বাবা, মায়ের,পরিবারের ভালোবাসা সম্মানের চেয়ে নিজের ভালো থাকাটা বেছে নিলো!
🌿এক ছেলে চলে গেছে আরেক ছেলে আসতেছে৷ ছেলের রুম গুছিয়ে রাখলো নিজের হাতে। কিচেনে এসে নানারকম খাবার রান্না করলো ছেলের পছন্দের। ছেলেটা তো বাসায় তেমন থাকেই না। সারাক্ষণ তার মাথায় থাকে বাউণ্ডুলেপানা৷ কোন দেশ রেখে কোন দেশে ভ্রমন করবে সেই তাড়না। রেজা রাগি তবে মা’ভক্ত। জাহিন একরোখা তার মন মর্জি বোঝা মুশকিল৷
‘দীর্ঘ আটমাস পর দেশের মাটিতে পা’রাখলো জাহিন চৌধুরী। চৌধুরী বংশের ছোট নবাব৷ এশ কালার শার্ট, শার্টের হাতা ফোল্ড করা। কালো চশমা পরা,এক হাতে লাগেজ অন্য হাতে ব্লেজার। হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে এয়ারপোর্টের গেট দিয়ে বের হচ্ছে।
#চলবে