অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-১৫

1
116

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৫
“আমাকে বিদায় না দিয়ে এখানে কি করছো?
‘নয়না হুট করে জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে, নিম্ন স্বরে বলে,আপনি সুনামির মত এসে তুফানের মত কেনো চলে যাচ্ছেন?
‘কি কথা ছিলো?
‘নয়না চোখ মুছে বলে, আপনি এতো নিষ্ঠুরমানব!
‘নয়নার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো পরম মমতায়।
‘কপালে চুমু খাওয়া ভালোবাসার নিদর্শন। তারমানে আপনি ফিরবেন আমার জন্য? আমি কি আপনার অপেক্ষা করবো আপনার বিরহিণী হয়ে?
‘বাচ্চাদের কপালে চুমু খেতে হয় আদর করে৷ যাওয়ার সময় তোমাকে স্নেহের চাদরে মুড়িয়ে দিয়ে গেলাম।
‘আমাদের কি সত্যি আর দেখা হবে না মিস্টার পাইলট মহাশয়।
‘জিয়ান বেশ অবাক হলো নয়নার মুখে পাইলট ডাকটা শুনে! কেনো যেনো ইচ্ছে হচ্ছে প্লেন ড্রাইভার ডাকটা শুনতে! মানুষের মন মাঝে মাঝে অদ্ভুত আবদার করে বসে! নয়নার নয়ন কোনে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু নিজের হাতে মুছে দিয়ে বলে,তোমার নামের মতই তোমার চোখ দুটো সুনয়না। চোখের গভীরতা তোমার চোখদুটো আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
‘উত্তর দেবেন না?
‘যাচ্ছি। হয়ত দেখা হবে। ভালো থেকো। ঠিকমতো পড়ালেখা করবে। রেজাল্ট যেনো টপ লেভেলের হয়৷
‘ কথাটার উত্তর দিলেন না তো?
‘সব উত্তর জানা হয়ে গেলে আমাকে মনে করবে কিভাবে?কিছু উত্তর অজানা থাকুক আমাকে স্বরণ করার উৎস হিসেবে।
‘এখান থেকে সোজা এয়ারপোর্টে যাবেন?
‘হ্যা আমার ফ্লাইট একটা বাজে৷
‘আপনি কোন দেশের বিমান ড্রাইভার?
‘কানাডা টু আরব আমিরাত। আসছি সুকেশীনি।
‘নয়না দরজা পর্যন্ত আসলো না৷ এই কয়দিনে তার হৃদয়ে ভালোই জায়গা করে নিয়েছে লোকটা৷ নয়না মনযোগ বসালো আকাশ দেখায়। মানুষ ও কি আকাশের মতই ক্ষণে ক্ষণে রুপ বদল করে! হঠাৎ নিচে চোখ পরতেই চার চোখের মিলন ঘটালো। নিচ থেকে আরো দুটি নয়ন তার দিকে স্থীর করলো। হাত দিয়ে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে বসলো৷ গাড়ির গ্লাস দিয়ে তাকিয়ে আছে নয়নার দিকে। নয়নাও দৃষ্টি এদিক সেদিক করেনি। চোখে চোখে কথা হচ্ছে। যে কথা শব্দ হয়ে ফুটতা না ঠোঁটে।
নয়নার চোখের ভাষা বুঝতে পারছে জিয়ান৷ কিন্তু দ্বিতীয় বার ভালোবাসার মত ভুল করতে চায় না৷ ভালোবাসা মন্দবাসা খনিকের মোহ।জিয়ান চলে গেলো নয়নার দৃষ্টি সিমার বাহিরে।
‘নয়না কিছু সময় আকাশের পানে আনমনে তাকিয়ে থেকে রুমে আসলো।
‘কাল রাতে জিয়ানের হাতের উপর মাথা রেখে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছিলো নয়না৷ একদিনে নিজের রুম জুড়ে অন্য আরেকজন বাস জেনো ভিষন মিস করছে নয়না৷ বেডে এখনো ছড়িয়ে আছে জিয়ানের রেখে যাও শার্ট, জিন্স।শার্ট হাতে উঠালো নাকের সামনে নিয়ে অনুভব করতে লাগলো জিয়ানের অস্তিত্বের ঘ্রাণ। হঠাৎ নিজের অজান্তেই শার্টটা জড়িয়ে ধরল। চোখ থেকে দু’ফোটা অশ্রু গাড়িয়ে পরলো, শার্ট হাত থেকে ফেলে দিয়ে নিজের হৃদয়ে হাত রেখে বলে,আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারি না! এটা আমার ক্ষনিকের মোহ মায়া, নয়ত আবেগ। সাইড টেবিলের উপর নজর স্থীর হলো। দ্রুত যেয়ে জিয়ানের ওয়ালেট হাতে নিলো। আইডি কার্ড সহ আরো কিছু প্রয়োজনীয় কার্ড সাথে বেশ কিছু টাকা৷
নয়না নিজের ফোন থেকে জিয়ানকে কল করতে যেয়ে খেয়াল করলো নাম্বার নেয়া হয়নি। জব কার্ডে যে নাম্বার দেয়া সেটা এদেশের না। দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হলো৷
‘জাহানারা বেগম সোফায় বসে চা পান করছিলেন৷ মেয়েকে দেখে বলে,কিরে মা মন খারাপ?
‘আম্মু ওনার নাম্বার আছে তোমার কাছে?
‘কার? জামাইয়ের নাম্বার?
‘হ্যা।
‘আমার কাছে তো নেই। কোন প্রয়োজন?
‘আমারো খেয়াল ছিলো না নাম্বার রাখতে৷ ওনার ওয়ালেট রেখে গেছে। এটার মধ্যে অনেক দরকারী জিনিস আছে৷
‘নিচে ড্রাইভার আছে তুই রেডি হয়ে আয় আমি বোরখা পরছি।
‘রেডি হয়ে আসবো মানে?
‘এয়ারপোর্টে দিয়ে আসি৷
‘আচ্ছা দ্রুত করো।
‘জিয়ান কিছুদূর এসে বাসায় কল করলো,ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই মিতা বেগম বলেন, একবার আমার সাথে দেখা করবি না বাবা?
‘আমার সময় নেই আম্মু।শোন নয়নাকে কোন জোড়াজুড়ি করবে না৷ সামনে ওর এক্সাম সেখানে ফোকাস করতে দাও।
‘রেজা বিয়েটা কিন্তু পুতুল খেলা নয়। মেয়েটা তোর বৌ আল্লাহ তায়ালার কালাম পরে সবাইকে সাক্ষী রেখে তোদের বিয়েটা হয়েছে মাথায় রাখিস৷ নিজের দ্বায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়া যায় না।
‘আম্মু আমি ছোট বাচ্চা না৷ সো আমাকে লেকচার দিতে হবে না। বাবাকে বলে দিও কথাটা৷ তার বেহুদা রেপুটেশনের জন্য নয়নার এক্সামে কোন রকম ত্রুটি যেনো না হয়।
‘মিতা বেগম আর কিছু বলার আগেই খট করে কল কেটে গেলো। মিতা বেগম দ্রুত উঠে আসলো জিয়ানের রুমে। আজ সকালে অনিকেত এসেছিলো বাসায়। তারমানে পাসপোর্ট, টিকেট সব অনিকেত নিয়ে গেছে! জিয়ানের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে আসলো।নাজিম চৌধুরী খুব মনোযোগ দিয়ে কোন কাজ করছেন। মিতা বেগম বললেন, শুনছো রেজা চলে যাচ্ছে।
‘ছুটি শেষ যাচ্ছে মানে কি!যেতে তো হবেই!
‘আমাদের সাথে দেখা না করে!
‘মিতা ছেলে বড় হলো অযথা ইমোশনাল হবে না তাদের নিয়ে৷ ওরা বড় হয়েছে ওদের পার্সোনাল লাইফ আছে ওদের মত থাকতে দাও। আর হ্যা দু’দিন পর তালুকদার বাড়ি থেকে চৌধুরী বংশের বৌমাকে নিয়ে আসবে৷
‘রেজা কল করেছিলো৷ বলেছে সুনয়নার এক্সাম সামনে তাই ডিস্টার্ব করতে না৷
‘সব কথা শুনলে হবে? মন মর্জি মত বিয়ে করেছে। চৌধুরী বাড়ির বৌ বাপের বাড়িতে পরে থাকবে! আমি যেটা বললাম সেটাই শেষ কথা। আর হ্যা তোমার ছোট নবাবের খবর কি?
‘ আগামীকাল ফিরবে৷
‘তাকে বলে দিও দেশ ভ্রমণ শেষ হলে যেনো অফিস ভ্রমণে যায়। আমার বয়স হচ্ছে একা সম্ভব না পুরোটা হ্যান্ডেল করা৷
মিতা বেগম মনে মনে একটা মেয়ের কমতি অনুভব করছে। ছেলেরা যেমন তার হ্যাসবেন্ডও তেমন। তার মন কেউ বুঝতে চায় না৷ এই যে ছেলেটা তার সাথে দেখা না করে চলে গেলো?তার তো হৃদয় পুড়ছে! ইচ্ছে করছে নিজের ছেলের কপালে চুমু খেতে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে, ঠিকমত খাবার খাবি, ঠিকমত ঘুমাবি। নিজের খেয়াল রাখিস বাবা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রুম থেকে বের হয়ে জিয়ানের রুমে আসলো৷ ছোট বেলায় ছেলে দুটো তার আঁচল ধরে সারা বাড়ি ঘুরতো৷ কোন আবদার থাকলে সেদিন আর আঁচল ছাড়তো না আবদার পূরণ না হওয়া পর্যন্ত। তার হাতের রান্না ছাড়া পেট পুরতো না।খাবার খেয়ে হাত মোছার জন্য বেছে নিতো মায়ের আঁচল,পরে গিয়ে সামান্য কে’টে গেলেও সে কি বায়না! সন্তান বড় হলে তাদের ভালোবাসা কি কমে যায় বাবা মায়ের প্রতি! মিতা বেগম জিয়ানের বেডে বসলো,মনে মনে বলে,এবার তোকে তোর পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়ানো হলো না।আবার কবে ফিরবি বাবা!
🌿এই তোর বৌকে দেখা বিয়েতে যেতে পারিনি বৌ দেখা দ্রুত।
‘আমার বৌ দেখে তোর বুকে ব্যথা বাড়ুক আমি চাইনা৷
‘শা’লা বুকে ব্যথায় হার্ট অ্যাটাক হলেও ভাবিকে দেখবো৷
‘জিয়ান মেবাইল বের করে বলে এই দেখ আমার অস্থায়ী বৌ।
‘আরেহহহ বাহহহ ভাবি তো মাশা আল্লাহ কিউটের ড্রাম। অস্থায়ী বৌ মানে কি?
‘মেয়ের বয়স ষোল বছর। আর তাছাড়া নীলাঞ্জনার বোন৷ তাই এই বিয়ে বাতিল করে দিবো ওর আঠারো বছর হলেই।
‘আহ বুকে ব্যথা পেলুম! তোর কি কপাল এতো সুন্দর বৌ পেয়েও অস্থায়ী! আর এদিকে একটা প্রেমিকাও কপালে জুটলো না৷ স্থায়ী অস্থায়ী বৌ তো দূরের কথা।
‘তোর কপালে বিয়ে নাই। মেয়ে দেখলে তার একশটা খুঁত খোঁজা শুরু করিস!সিঙ্গেল মরবি এমন চলতে থাকলে৷
‘ইহা হতে পারে না। আমার বৌ চাই একদম পার্ফেক্ট বৌ।
‘বৌয়ের কি অভাব একটার সাথে থাকা শুরু করে কার বৌ দেখা দরকার নাই। বলে আওয়াজ করে আসলো৷
‘চুপ কর আমি নিজে বিয়ে করে নিজস্ব বৌ বানাবো।
‘সে কি? বৌ তৈরির ফ্যাক্টরি থাকতে তুই এখনো সিঙ্গেল!
🌿বাসে পাশাপাশি বসে আছে লাবিব আর নীলাঞ্জনা৷ জানালার সাথে হেলান দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে নীলঞ্জনা।
‘এভাবে মন মরা হয়ে আছো মনে হচ্ছে সদ্য বিধবা হয়েছো!
‘মুখে কিছু আটকায় না? আর কিছু না হোক নিজের মৃত্যু কামনা কি করে করো?
‘আরেহহহ বাহহহ বৌয়ের দেখছি আমার প্রতি ভালোবাসা উতলে পরছে! তা বিরহে অনলে এখনো পুরো পুরো পুড়িয়ে ফেলোনি নিজেকে! বেশ অবাক হলাম!বাইদা ওয়ে আমি মুখে যাই বলি থাকবো কিন্তু তোমার সাথেই।
‘সাথে থাকালেই হবে? ভালোবাসা ছাড়া সাথে থাকা তো যায় তবে শূন্যতা ঘিরে থাকে হৃদয় জুড়ে৷ শরীর তৃপ্ত হলেও মন অতৃপ্ত রয়ে যায়।
‘এতো সব ভাবার সময় কই? সারাদিন কাজ রাতে বেড রেস্ট। ব্যাস এতোটুকু হলেই হয়।
‘লাবিব মনে আছে তুমি বলেছিলে,আমায় ভালো না বেসে তুমি থাকতে পারো না তাই ভালোবাসো৷ নয়ত বন্ধুর প্রেমিক জানার পরেও আমার পিছু নিতে না?
‘আমার কথার ভ্যালু ততক্ষণ থাকে যতক্ষণ আমি যা চাই তা হাসিল না হয়। পেয়ে গেলেই কথা শেষ। আর শুনে রাখো রেজা যখন জানতে পারবে তুমি আমার সাথে পালিয়েছো তখন কি বলবে?
‘বলার কি আছে? আমরা একে অপরকে ভালোবাসি এই কথাটা ছাড়া?
‘উঁহু আমি তোমাকে ভালোবাসি না৷ তুমি জোড় করে আমাকে বাধ্য করেছো।
‘লাবিব!নিজেকে আর কত নিচে নামাবো তোমার জন্য!
#চলবে

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে