#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব১৪
জড়িয়ে ধরবেন ঠিক আছে কিন্তু নো কিসমিস
কিসমিস না খেলে মিষ্টিমুখ কি করে হবে! কিসমিস তো খেতেই হবে।
মিষ্টি ফ্রিজে রয়েছে এনে দিচ্ছি। ঠোঁটে মিষ্টি থাকে সেটা আপনাকে কে বললো মিস্টার পাইলট। ওপসস স্যরি মিস্টার প্লেন ড্রাইভার।
‘তা আমি কখন বললাম ঠোঁটে কিস করবো! মনে মনে এসব উল্টোপাল্টা ভাবো।
‘একদম আমাকে বোকা বানাবেন না।আপনার কাজই ওইটা৷
‘কোনটা বেবিডল?
‘কিসমিস খাওয়া। আপনার মিষ্টি দরকার হলে চকোলেট খান,রসগোল্লা খান,গোলাপজাম খান,রসমালাই খান, চমচম খান,বাতাসা খান, লাড্ডু খান,সন্দেশ খান।
‘আরে বাহহহ এতো খানদের নাম মুখস্থ তোমার!তা খান রেখে চৌধুরী সাহেবে মজলে কেন?
‘একদম ঠিক হচ্ছে না কিন্তু! আমি বলেছি খেতে।
‘উপসস স্যরি তবে, হুদা বিউটির স্টবেরি ফ্লেভারের গ্লাসি লিপস্টিকের টেস্ট সব মিষ্টির মিষ্টতাকে হার মানায়।
‘ওয়েট বলেই। নয়না নিজের রুম থেকে লিপস্টিক এনে জিয়ানের সামনে ধরে বলে,প্লিজ টেস্ট।
‘তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া না পেলে মিষ্টি লাগবে না তো?
‘দেরি হচ্ছে না আপনার?
‘তোমার বাবা মাকে কি বলবে?
‘বলব জামাই গেছে বিদ্যাশে। আমার পরিক্ষার পর আসবে।
‘তারপর।
‘তারপর পরিক্ষার পর একটা প্রেম করবো। এরপর তাকে বিয়ে করে নেবো৷ ব্যস কাহিনি খতম।
‘এতো সহজ সব কিছু?
‘হয়ত সহজ না। কারন মুখ দিয়ে বলে তো চাঁদেও ভ্রমন করা যায়। অথচ চাঁদে ভ্রমণ করা তো সহজ না!তবে চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে তো বাঁধা নেই।আমিও স্বপ্ন দেখছি। চেষ্টা করবো পূর্ণ করার৷
‘জিয়ান নয়নার দিকে দৃষ্টি দিলো,বেগুনি রঙের সেলোয়ার-কামিজ। কোমড় ছাড়িয়ে লম্বা চুলগুলো ছড়িয়ে আছে এলোমেলো হয়ে। স্নিগ্ধ শিশিরে ভেজা সদ্য ফোঁটা গোলাপের মত মায়াবী মুখখানা!
‘এভাবে কি দেখছেন? যাওয়ার আগে নজর দিচ্ছেন?
‘আর তো তোমাকে দেখা হবে না তাই দেখে নিচ্ছি৷
‘ভুলে যাবেন!তাহলে এভাবে দেখছেন কেনো? আপনার কি মনে হয় আপনি আমাকে ভুলতে পারবেন?
‘পারবো না?
‘আমার চেহারার দিকে তাকান৷ এই চেহারা দেখার পর ভোলা সম্ভব? সুনয়না তালুকদারকে যে একবার দেখেছে সে কখনো তাকে ভুলতে পারবে না৷
‘জিয়ান নয়নার নাক টেনে বলে,হয়ত অসম্ভব। আমাকে বের হতে হবে পিচ্চি তোমার আম্মুকে ডাকো।
‘আপনি ড্রয়িং রুমের সোফায় এসে বসুন মুরুব্বি আমি আম্মুকে ডাকছি।
‘মুরুব্বি? আমার মত ইয়াংম্যানকে তোমার মুরুব্বি মনে হচ্ছে!
‘আমার মত সুন্দরী ষোড়শী বালিকাকে যদি আপনার পিচ্চি মনে হয় তাহলে আপনি তো আমার দৃষ্টিতে মুরুব্বি তাই নয় কি?
‘ডিয়ার আদুরে পাখি আপনার আম্মুকে একটু ডেকে পাঠাবেন?
‘ঊখে দ্যা মোস্ট হ্যান্ডসাম বয় যাস্ট ওয়েট৷
‘জিয়ান সোফায় বসে আছে,শ্বশুরের দেয়া ব্ল্যাক ব্লেজার, হোয়াইট শার্ট, চুলগুলো সেট করা। কড়া পারফিউমের স্মেল। হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ।
‘হুট করে একটা বাচ্চা এসে বলে,এই তুই কেরে? আমার বাসায় বসে আছিস হিরো সেজে?
‘জিয়ান তাকিয়ে দেখে সাত/আট বছরের এক বাচ্চা মেয়ে। কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
‘আপনি কে গো দাদি আম্মা!
‘চুপ কর এতো বড় সাহস আমাকে দাদি আম্মা বলিস? আমার বাবাকে চিনিস?
‘স্যরি ভয় পাচ্ছি তো। আপনার বাবার নাম কি?
‘মাহবুব তালুকদার।
‘জাহানারা বেগম এসে বলেন, সূচনা তুমি এখানে কি করছো?
‘আম্মু এটা কে?
‘তোমার ভাইয়া।এবার যাও নিজের রুমে।
‘সূচনা দৌঁড়ে চলে গেলো।
‘কেমন আছো বাবা? আমাদের বাসায় কোন সমস্যা হয়নি তো?
‘ভালো আছি৷ নাহহ।
‘তুমি বস আমি নাস্তা রেডি করে আসছি ।
‘আমাকে বের হতে হবে। কাল থেকে আমার ফ্লাইট তাই আজ পৌঁছাতে হবে।
‘আবার ফিরবে কবে বাবা?
‘তিন চারমাস পর মেবি।
‘নাস্তা করে যাও বাবা।
‘জিয়ান সম্মতি জানাতেই জাহানারা বেগম নাস্তা রেডি করতে চলে গেলো৷
‘নয়না এসে জিয়ানের সামনে দাঁড়ালো। জিয়ানের দিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,’ছেলেদের একটু কম সুন্দর হতে হয়।এমন ধবধবে সাদা হলে মেয়েদের নজর বেশি পরে, তার উপর ধুসর রঙের চোখ! আপনার উচিৎ নজর টিকা লাগিয়ে ঘোরা।
‘তোমার নজর কি আমার উপর আটকে গেলো নাকি সুনয়না চৌধুরী!
‘বিগ মিস্টেক মিস্টার প্লেন ড্রাইভার, আমি সুনয়না তালুকদার। মাহবুব তালুকদারের একমাত্র মেয়ে। আর আমার বয়েই গেছে আপনার উপর নজর দিতে! নজর দেয়ার জন্য বিলাল আব্বাস আছে তো। আমার নজর তার দিকে।
‘জিয়ান বসা থেকে উঠে এসে নয়নার সামনে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,সেটা আবার কোন ক্ষেতের মুলা?
‘সে আমার পার্মানেন্ট ক্রাশ একদম তার ব্যাপারে আজেবাজে বকবেন না! নিজেই তো ধলা মূলা৷
‘তা তোমর ক্রাশ কি ক্ষণে ক্ষণে চেঞ্জ হতে থাকে! এবার কও এই আব্বাসটা আবার কে?
‘আর ইউ জেলাস মিস্টার চৌধুরী?
‘আমার মত সুদর্শন ইয়াং পাইলট চোখের সামনে থাকতে অন্য কাউকে দেখে ক্রাশ খেলে জেলাস হবো না!
‘আপনি থ্রি মাচ সুদর্শন। তবে আমার বিল্লু বেস্ট।
‘বিল্লু!বাহহহ এতো প্রেম? তো রাতে বললা প্রেমিক নাই৷
‘কি শুরু করলেন মিস্টার ড্রাইভার? ও থাকে পাকিস্তান আমি বাংলাদেশে প্রেমটা হবে কি করে!
‘জিয়ান অট্টহাসি দিয়ে বলে,পাগলের সুখ মনে মনে৷
‘আপনার বৌ পাগল৷
‘আপাতত আমি পাগলের জামাই৷ এইযে বন্দী খাঁচার আদুরে পাখি।
‘মাজ নিচ্ছেন এটা বলে!
‘উঁহু মজা নেবো কেনো আদুরে পাখি! এই ডায়লগ ভালো লেগেছে। এই তোমার বোন আছে বললে না তো?
‘আমার বোন! আমি তো ওয়ান এন্ড অনলি।
‘সূচনা কে?
‘চাচ্চুর মেয়ে৷ নিশ্চিত বলেছে ওর বাবার নাম মাহবুব তালুকদার! ছোট বেলা থেকেই এমনটা বলে৷ আমার সাথে হিংসে করে। ওতো আপনার অর্ধেক বলে চুপ করে রইলো।
‘জিয়ান জিজ্ঞেস করতে যেয়েও চুপসে গেলো। সূচনা নীলাঞ্জনার বোন৷
‘আপনার মুখটা পেঁচার মত করে রেখেছেন কেনো?আপনার শ্বাশুড়ি আপনার জন্য হরেকরকম পিঠা নানা রকম নাস্তার ব্যবস্থা করেছে৷
‘আমাকে বের হতে হবে সময় নেই আমার৷
‘খেতে আসুন৷ শুনুন আমার আম্মু অনেক কষ্ট করে এতো সব কাল রাত থেকে নিজের হাতে বানিয়েছে।আমাদের মধ্যে যা কথা হয়েছে সেটা কাউকে জানাতে হবেনা। অনুগ্রহ করে আম্মুর কষ্টের মূল্য রাখবেন।
‘খাবার টেবিলে এতো খাবার দেখে জিয়ান বেশ অবাক হলো। এভাবে বিয়ে হওয়ার পরেও এতো ভালোবাসা!
যতটুকু সম্ভব খেলো। নয়নার আম্মুর রান্নার প্রশংসা করলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হবে৷সেসময় মাহমুব তালুকদার জিয়ানের হাতটা ধরে বলে,আমার মেয়েটাকে কখন কষ্ট দিওনা। বাহিরের দুনিয়া ও জানেনা৷ ওর দুনিয়ায় আমি কখনো দুঃখ স্পর্শ করতে দেইনি আজ থেকে এটা তোমার দ্বায়িত্ব।
জিয়ানের হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলে,এটা তোমার জন্য। যা হয়েছে সব ভুলে যেও। নতুন ভাবে তোমাদের জীবনটা গুছিয়ে নিও।
‘নয়না নিজের রুমের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে৷ মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলো কেনো!মন খারাপ হলেই নয়নার আকাশ দেখতে ইচ্ছে করে৷ উদাস মনে দৃষ্টি স্থীর করে তাকিয়ে আছে কুয়াশার চাদার কে’টে ঝলমলে রোদের দিকে। কে বলবে,ঘন কুয়াশায় মোড়ানো শহরটা এভাবে আলোকিত হয়ে যাচ্ছে! একটু আগেই শহর জুড়ে আয়ত্ত করেছিলো ঘন কুয়াশা। অথচ রোদের ঝলকে এখন তার অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে!
🌿তোর বি লাভ বয়ফ্রেন্ড রেজা এই পাঁচদিন ধরে তোর কচি বোনের সাথে ফুলসজ্জা সেরেছে। আর তুই কিনা তার বিরহে বিভোর!
‘কি বলছো এসব তুমি? মাথা ঠিক আছে তোমার! নিজের রাগ জেদে নিজেকে কত নিচে নামাবে? আমার বোনের বয়স সবে মাত্র আট।
‘লাবিব নয়নার সামনে মোবাইলটা ধরলো। জিয়ান আর নয়নার রিসিপশনের পিক।
‘নীলাঞ্জনার নজর গেলো জিয়ানের ঠোঁটে। দেখেই বোঝাচ্ছে লাভ বাইটের চিহ্ন। তারমানে সত্যি পুরুষ মানুষের শরীর ছাড়া আর কিছু প্রয়োজন নেই!আমি নাহয় তাকে ঠকিয়েছি কিন্তু সে তো বলতো আমাকে ভালোবাসে? এই ভালোবাসার নমুনা! ভালোবাসা বলতে আদৌও কিছু আছে! নাকি ক্ষণিকের মোহকেই সবাই ভালোবাসার নাম দেয়?
‘কি ভাবছো ডার্লিং?
‘ওর বয়স ষোল। নাম সুনয়না। তোমার সাথে ওর একবার দেখা হয়েছিলো। কিন্তু বড় আব্বু এটা কিভাবে করলো!
‘খুব কষ্ট হচ্ছে বেবি! নিজের প্রাক্তনকে নিজের বোনের হ্যাসবেন্ড হিসেবে দেখে?
‘লাবিব তুমি বারবার তোমার লিমিট ক্রস করো? আমার চরিত্রে আঙ্গুল তুললে আমি সেটা সহ্য করবো না৷ তোমাকে ছেড়ে চলে যেতেও দু’বার ভাববো না ।
‘লাবিব নীলাঞ্জনার মুখ ধরে বলে,উপসসস বেবি আমি তো ভয় পাচ্ছি! ইউ নো তুমি এখন যাস্ট ব্যবহারিত টিস্যুর মত। তাই ছেড়ে যাওয়ার ভয় আমাকে দেখাতে এসো না৷ ব্যাগ গুছিয়ে রেখো আজ আমরা ঢাকা ব্যাক করবো৷
‘নীলাঞ্জনা লাবীবের হাত ধরলো৷ করুন দৃষ্টিতে লাবিবের দিকে তাকিয়ে বলে,তুমি কি আমাকে কখনো ভালোবাসোনি?ভালো যদি নাই বাসো তাহলে আমাকে কলঙ্কিত করলে কেনো! আমি কাকে বলবো এই দুঃখ? তুমি আমাকে একা করে দিচ্ছো কেনো। সবাইকে ছেড়ে আমি তোমার হাত ধরেছি, আজ বিয়ের দুদিন যেতে না যেতেই আমি তোমার কাছে ইউজ করা টিস্যু! এই প্রতিশ্রুতি তো ছিলো না!
‘প্রতিশ্রুতি মাই ফুট। ওসব প্রতিশ্রুতি আমার পায়ের তলায় রোজ পিষ্ট হয়। সো ন্যাকা কান্না আর ইমোশনাল কথাবার্তা শুনে লাবিব গলে যায় না৷ মনে রেখো বেব।
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক দেয়ার সময় পাইনি৷
হ্যাপি রিডিং 🥰