#তোমার_জন্য_সব -১৬
✍️ #রেহানা_পুতুল
পরক্ষণেই পিছন হতে কলির পিঠের উপর দিয়ে বুকের উপর ওড়নাটি মেলে দিলো মাহমুদ। কলি বিস্ময় ভরা কন্ঠে কাঁপা কাঁপা অধরে শুধালো,
“স্যার আপনিই? আমার ওড়না কোথায় পেলেন? ”
“হ্যাঁ আমি। বাইকে উঠে আসুন।”
গাম্ভীর্যপূর্ণ কন্ঠে আদেশ করে বলল মাহমুদ।
মাহমুদ বাইকে চড়ে বসলো। কলি বিব্রত গলায় আবারো জানতে চাইলো,
“স্যার ওড়নাতো ওরা নিয়ে গিয়েছিলো। কিভাবে পেলেন?”
“আশ্চর্য কলি! পথের উপর থেকে সব বলবো? বাইকে চড়ুন। বলছি। স্প্রীড ব্রেকার দেখলে স্লো চলবে বাইক। নো টেনস।”
শক্ত চোয়ালে বলল মাহমুদ।
কলি দোনোমোনো করতে করতে বাইকে মাহমুদের পিছনে গিয়ে বসলো। মাহমুদ কলিকে নিয়ে লালবাগ চৌরাস্তার মোড়ে চলে গেলো। বাইক থামালো একটি নিরিবিলি হোটেলের সামনে।
” আসুন লাঞ্চ করতে করতে বিষয়টা বলি।”
বলেই মাহমুদ বীরের মতো গটগট পায়ে হোটেলের ভিতরে চলে গেলো। বেসিন থেকে হাত ধুয়ে ফ্যান বরাবর একটি টেবিলে বসলো। কলিও হাত ধুয়ে এসে মুখোমুখি চেয়ারে বসলো। দুটো বিফ খিচুড়ির অর্ডার দিলো মাহমুদ। কলি মনে মনে আওড়ালো,
বিয়ে ঠিক না হতেই অধিকার খাটানো শুরু করেছে। আমার অনুমতির তোয়াক্কা না করেই। কলি বলে উঠলো,
“স্যার আমার বাসাতো এই সামনেই। আমি বাসায় গিয়েই লাঞ্চ করতাম। দরকার কি ছিলো।”
” আপনার বাসা এখানে। এটা আমি জানি না? ওড়না উদ্ধারের কাহিনী শুনবেন না?”
“অবশ্যই স্যার। বলুন?”
“তো শুনতে হলে কোথাও বসতে হচ্ছে। নয়তো আমিও বাসায় চলে যেতাম।”
কলি চুপ রইলো।
মাহমুদের মোবাইলে বেজে উঠলো।
“হ্যাঁ মা বলো?”
” আসতে ওই চিকন কাটা সুপারিগুলো এক কেজি নিয়ে আসিস। সুপারি শেষ। তুই কোথায় এখন?”
“তোমার অভিমানীনি ছাত্রীর সঙ্গে। লালবাগ।”
“কলিকে ফোনটা দে।”
কলি নারভাস হয়ে গেলো। মাহমুদ ফোন বাড়িয়ে দিলো কলিকে।
“হ্যালো আন্টি আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মা। যাক তোমার স্যারের সঙ্গে আছো শুনে ভালো লাগলো। কিছুদিন পরেই তার বউ হবা। জড়তা কাটানো দরকার।”
বন্ধুসুলভ কন্ঠে বলল মাহফুজা।
কলি কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেও মাহফুজাকে বুঝতে দিল না। ছোট্র করে ‘হুঁ’ বলল। স্পিকার অফ ছিলো। তবুও মাহমুদ মায়ের কথা শুনতে পেলো। কেননা তার মোবাইলের ভলিউম ফুল ছিলো। এবং সে কান পেতেও ছিলো শোনার জন্য।
“মা খুব ওপেন মাইন্ডের। ডোন্ট মাইন্ড।”
মাহমুদ ইচ্ছে করেই কলির অভিব্যক্তি দেখার জন্য কথাটা বলল। কলি হতবাক চোখে মাহমুদের দিকে চাইলো।
“ওভাবে চেয়ে লাভ নেই। আমার এই সেটের দোষ। আমার কানের দোষ।”
“আন্টি অতিরিক্ত করে ফেলছে। এটা অবাস্তব।”
“মানলাম। যুক্তিতে না যাই।খেয়ে নিন। খাবার চলে এসেছে। ”
চাপাস্বরে বলল মাহমুদ।
বিফ খিচুড়ি, সালাদ,কোক এসে গেলো। খাওয়া শেষে মাহমুদ বলল,
আমি বাইক নিয়ে বাস স্টপেজের কাছাকাছি এসে একটু থামলাম। ফটোকপির দোকানে কাজ ছিলো বলে। সেখান থেকেই আমার চোখ পড়লো চায়ের টং দোকানে দুজন ছেলের দিকে। তারা গ্যাসলাইট দিয়ে সিগারেট জ্বালাচ্ছিলো। একজনের হাতে চোখ যেতেই দেখলাম এটা আপনার ওড়না। ভালো করে চেয়ে দেখলাম আবার। ভুলও হতে পারে। আপনার ওড়না কেন ওদের হাতে আসবে। আমার তীক্ষ্ণভাবে তাকানো দেখেই ফটোকপির দোকানের অন্য একটা ছেলে বলল,
“স্যার এরা নষ্ট ছেলে। বখাটে! দেখেন কোন মেয়ের ওড়না ছিনিয়ে নিলো। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাই এদের কাজ।”
আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“সত্যি বলছ তুমি?”
“একদম সত্য স্যার। আমি চিনি। প্রায় রাতে মদ খেয়ে এসে এইখানে মাতলামো করে । চা,সিগারেটের বিল দেয়না।”
” আমি তড়িতেই ছেলে দুটোর কাছে চলে গেলাম। ছেলেটার হাত থেকে ওড়না কেড়ে নিতে হলো। তারা ভয়ানক ক্ষেপে গেলো। হাতাহাতি শুরু করলো আমার সঙ্গে। লোক জড়ো হয়ে গেলো। তারা আমার পক্ষ নিলো। এবং তাদের ধরে ফেলল। তারা প্রাণপণ চেষ্টা করেও পালাতে পারেনি। বাস স্টপেজে পুলিশ ছিলো। ফটোকপি দোকানের সেই ছেলেটা গিয়ে দুজন পুলিশ নিয়ে এলো। উপস্থিত সবার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিলো। আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে জানতে চাইলো ওড়না কার? বললাম,আমার ডিপার্টমেন্টের এক ছাত্রীর। সেজন্যই আমার চিনতে অসুবিধা হয়নি। মাহমুদ থামলো। ভরা গ্লাসের অর্ধেক পানি খেয়ে জোরালো নিঃস্বাস ফেলল।
কলি মনে মনে উচ্চারণ করলো, আমার দিকে কতটা খেয়াল করলে উনি আমার ওড়না চিনতে পারলো। তারমানে ক্লাসে গেলে চোরাচোখে কেবল আমাকেই দেখে নাকি। উফফস!
” ধন্যবাদ স্যার। আপনাকে বারবার
আমার জন্য কষ্ট ও ঝামেলার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”
নিচু মাথায় কৃতজ্ঞতার স্বরে বলল কলি।
“আগের এক্সিডেন্ট, আজকের ঘটনার জন্য শুধু ধন্যবাদ?”
বিরস কন্ঠে শুধালো মাহমুদ।
“অনেক ধন্যবাদ স্যার।”
“অনেক ধন্যবাদ?”
কলির চোখে ঠায় চেয়ে থেকে বলল মাহমুদ।
“আন্তরিক ধন্যবাদ স্যার।”
“কেবল আন্তরিক ধন্যবাদই প্রাপ্য আমি?”
ভারমুখে বলল মাহমুদ।
“বিশেষ ধন্যবাদ স্যার।”
“বিশেষ ধন্যবাদ ত দূরের মানুষকেও দেয়। কাছের মানুষকে আরো কিছু দিতে হয়।”
কলি চমকানো দৃষ্টিতে তাকালো মাহমুদের দিকে। বলল,
“কাছের?”
“ভার্সিটির টিচার স্টুডেন্টের সম্পর্ক কাছের নয়? ফ্রেন্ডলি নয়?”
“ওহ বুঝলাম। হয়তো। ”
মাহমুদ কলির হাতের দিকে খেয়াল করলো। তার দেওয়া আংটিটা নেই কোন আঙ্গুলেই। তার খারাপ লাগলো। কিন্তু কলিকে বুঝতে দিল না। প্রসঙ্গ চেঞ্জ করে বলল,
“এবার বলুল, তারা কেন আপনার ওড়না ছিনতাই করলো। পথ দিয়ে আর মেয়ে চলাফেরা করে না?”
“স্যার এই দুজন ছেলে আমাকে মাঝে মাঝে বিরক্ত করেছিলো। হাত ধরতে চেয়েছিলো। শেষদিন আমি স্যান্ডেল খুলে মারতে চেয়েছি। তাই এমন করেছে আজ।”
“হুম। শিক্ষক হিসেবে আমাকে জানাতে পারতেন। যাইহোক। সাবধানে পথ চলবেন। সবসময় ইগো নিয়ে থাকলে চলে না।”
কলি শান্ত মেজাজে বলল,
“দুজন বখাটেকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন। এতে অনেকের অনেক উপকার হলো। সেই চা বিক্রেতা মামাও রক্ষা পেলো। তারজন্য আপনাকে স্পেশাল থ্যাংকস।”
” শুধু থ্যাংকসে আমার পোষাবে না।”
“তো?”
” আপনি সেটা দিবেন না। যেটা আমি চাইবো। বাদ দেন। খাল্লি বাল্লি। আসুন। পৌঁছে দিই বাসায়।”
মাহমুদ কলিকে বাসার নিচে পৌঁছে দিলো। বাইক ঘুরিয়ে চলে গেলো।
এ এক আজব চিজ। কোন ধাতু দিয়ে বিধাতা তাকে গড়ালো। কি নিরস রসকষহীন নারীরে ভাই। কিছু বললে তার কারণ জানার জন্য নুন্যতম কৌতুহলের আভাস তার মাঝে দেখা যায় না।
কলি বাসায় গিয়ে আংটিটা নিয়ে অনামিকায় পরে নিলো। আবার খুলে ফেলল কিছু একটা ভেবেই। নেড়েচেড়ে দেখলো আংটিটা। ভারি সুন্দর। তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আজকের বিফ খিচুড়িটাও দারুণ ছিলো। বিফ খিচুড়ি তার ভীষণ পছন্দ। কিছু বিষয়ে ভাবলে তার হ্যাঁ বলতে ইচ্ছে করে মাহমুদকে। আবার শুরুর দিনের অপমানের কথা ভাবলে মানা করতে ইচ্ছে করে। দ্বিধাদ্বন্ধের দোলায় অনবরত দুলছে কলি। এত কনফিউশানে থেকে কিভাবে হ্যাঁ বা না বলবে সে। সে বাসার কাউকে এই বিষয়ে মত জানায়নি। তারাও তারকাছে মত জানতে চায়নি।
সাতদিন পর আবদুর রহমান ফোন দিলো নুরুল হককে। জানতে চাইলো কলির মতামত এবং তারা কবে আসবে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে।
নুরুল হককে পাশে বসা থেকে রেবেকা ফিসফিসিয়ে বলে দিলো,
বলেন কলি হ্যাঁ বলেছে। সমস্যা নেই।
নুরুল হক তাই জানিয়ে দিলো।
আবদুর রহমান মুঠোফোনের ওপ্রান্ত হতে সন্তুষ্টির হাসি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।
জিজ্ঞেস করলো,
“ভাই সাহেব তাহলে আমরা কবে আসবো বিয়ের তারিখ ফেলতে?”
“ভাই সাহেব সামনের সপ্তাহে আসুন। শুক্রবারে। সেদিন আমার অফিস বন্ধ থাকে। আমি বাসায় থাকি।”
তারা দুজন ফোন থেকে বিদায় নিলো। মাহফুজা ছোট বাচ্চার মতো ছুটে এসে মাহমুদকে সংবাদটা জানালো।
“সুখবর আছে মাহমুদ। কঠিন সুখবর!”
” বলে ফেলো জননী?”
“তোর অভিমানীনি ফুলকলি রাজী বিয়েতে।”
“ফুলকলি! মজাতো নামটা। ফুলকলি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার নামে বিখ্যাত মিষ্টির দোকান আছে ঢাকার কয়েক স্থানে।”
” শোন,সে এক সপ্তাহের সময় নিয়েছে না। সেটাতো আরো আগেই ফুরিয়ে গেলো। তারাতো কিছুই জানাচ্ছে না। হয়তো সংকোচে। তাই আমি তোর বাবাকে দিয়ে একটু আগে ফোন করালাম। কলির বাবা বলল বিয়ের ডেট ফেলার জন্য সামনের শুক্রবারে যেতে তাদের বাসায়। তুই থাক। আমি আনুশকাকে ফোন করি।”
মাহমুদা উৎফুল্ল মনে চলে গেলো নিজের রুমে। মাহমুদের অশান্ত হৃদয় শান্ত হলো। হৃদয়ের পুরো আঙিনা জুড়ে সুখের বারতা ঝরে পড়ছে শিউলি ফুলের মতো। অনুভূতির বেহাল দশা। মাহমুদ মনে মনে ধন্যবাদ দিলো কলির ওড়না নিয়ে যাওয়া সেই বখাটে দুজন ছেলেকে।
কারণ দিনের আলোয় প্রকাশ্যে একটা মেয়ের বুক খালি করে ওড়না নিয়ে চলে গেলো কেউ। এটা সেই মেয়ের জন্য কতখানি দূর্বিষহ ও লজ্জার তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না। মাহমুদ কলিকে সেদিন ওড়না ফিরিয়ে এনে না দিলে খালি বুকেই কলির বাসায় যেতে হতো। তাই মাহমুদ বিশ্বাস করলো তার কাছে বিয়ে বসতে কলির রাজী হওয়ার পিছনে এই ঘটনা বড় ভূমিকা রেখেছে।
সে কলিকে নিয়ে হারিয়ে গেলো কল্পলোকের অন্তপুরে। ডায়েরিতে লিখে ফেলল,
“ওহে ফুলকলি,তুমি আমার কাছে অনেক ঋণী হয়ে গিয়েছো। একবার বুকের মাঝে পাই। নিংড়ে নিংড়ে সুদসমেত পুষিয়ে নিবো। তোমার ঋণের বোঝা কমানোর গুরুদায়িত্ব শুধুই আমার। কেবইলই আমার। বাকির খাতায় নাম রাখব না তোমার।”
মাহমুদের ভীষণ ইচ্ছে করছে কলির হাতটা একটু ছুঁয়ে দেখতে। কলির মুখোমুখি হতে। কলির মুখ থেকে অন্তত ভালোলাগে কথাটি শুনতে। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। কলি আর তার স্বভাব প্রায় একইরকম। ইগো! ব্যক্তিত্ব! মৃদুভাষী! চাপা,স্বভাবের! তবে তার রাগ মনে হয় কলির চেয়ে বেশী। এমন এলোমেলো ভাবনায় ডুবে গেলো মাহমুদ।
শুক্রবারের দুইদিন আগে রেবেকা কলিকে জানালো,
” এই কলি, পরশু তারা বিয়ের তারিখ ফেলতে আসবে। বাগদান অনুষ্ঠান আরকি।”
কলি চকিতে চাইলো মায়ের মুখপানে।
“আমি ত মত জানাইনি আম্মু।”
“তোর আব্বু তাদেরকে তারিখ বলল। বলে বিবাহের মতো শুভকাজে ঢিলেমি করা ঠিক নয়। আর তারাও ফোন দিয়ে জানতে চাইলো মতামত।”
পিতার কথার উপরে কলির কিছুই বলার রইলো না। সে অন্তঃসারশূন্য মুখে বলল,
“আচ্ছা আম্মু। ঠিকাছে।”
বৃহস্পতিবার ক্লাস শেষে মাহমুদ অফিসে কাজ করছে। তার মোবাইলে জ্বলে উঠলো। মেসেজের রিংটোন বেজে উঠলো।
“স্যার একটু দরকার ছিলো। আসবো?”
মাহমুদের মন অদ্ভুত আনন্দে নেচে উঠলো ময়ুরের পেখম ছড়িয়ে নাচার মতো। কাল বাগদান। আজ কলি দেখা করতে চাচ্ছে। নিশ্চয়ই ভালো কিছু বলবে। সে দ্রুত টাইপ করে মেসেজ সেন্ড করে দিলো।
“আমার কাছে আসতে আপনার অনুমতির প্রয়োজন নেই। আসুন।”
সত্যিই কি মাহমুদের ভাবনার মতই কলি কিছু বলবে? নাকি ভিন্ন কিছু বলবে। যা শোনার জন্য মাহমুদ কখনোই প্রস্তুত ছিল না।
চলবে…১৬
#ড়মান্তিচ
#তোমার_জন্য_সব -১৭
✍️ #রেহানা_পুতুল
“আমার কাছে আসতে আপনার অনুমতির প্রয়োজন নেই। আসুন।”
সত্যিই কি মাহমুদের ভাবনার মতই কলি কিছু বলবে? নাকি ভিন্ন কিছু বলবে। যা শোনার জন্য মাহমুদ কখনোই প্রস্তুত ছিল না।
মাহমুদ ভাবছে,কলির সঙ্গে ভালো করে সখ্যতা গড়ে উঠেনি। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও নয়। প্রেম সেতো আমার এক পাক্ষিক। সেই মানবীর বাস আমার কল্পনাতেই। সরাসরি বিয়ে ঠিক হলো। কিন্তু তা নিয়েও তার সঙ্গে সরাসরি কোন আলাপ হয়নি। কাল সবাই যাবে তাদের বাসায়। আমি যাব না। পাত্রের থাকাটা এত গুরুত্বপূর্ণ না। কলি আমাকে স্যার হিসেবে দেখে আসছে। নিজের বাসায় হবু বর হিসেবে দেখতে পেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে যাবে সবার সামনে।
কলিও দোটানায় পড়ে গেলো। যেখানে স্যারের সঙ্গে কিছুই না তার। সেখানের বিয়ের প্রসঙ্গ তুলবে কিভাবে। কিন্তু যেতেই হচ্ছে। কি পেয়েছে উনি। সবকিছু উনাদের মর্জিমতেই হবে? তার চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য নেই? কলি আসলো মাহমুদের অফিস রুমে। মাহমুদ চেয়ারে দেখিয়ে বসতে অনুরোধ করল কলিকে। কলি বসল না। মাহমুদের মুখোমুখি চেয়ারের হাতল ধরে
দাঁড়িয়ে আছে ঝিম মেরে।
কিছু বলতে পারছে না। সংকোচে, বিরক্তিতে, ভিতরটা ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে। এটা মাহমুদ বেশ অনুধাবন করতে পারলো। মাহমুদ টেবিলে থাকা নিজের গ্লাসটাতে ওয়াটার পট থেকে পানি ঢেলে নিলো। কলির দিকে বাড়িয়ে ধরলো। বলল,
“কিছুটা পানি খেয়ে নিন। গলা শুকিয়ে গিয়েছে।”
কলির নাকের ডগা লাল হয়ে গেলো শুনে। কোমল মুখে কাঠিন্যতা ভর করলো আংশিক। গোপনে আওড়লো,
এতো দেখি মেনকার শয়তান। গুরুগম্ভীর অথচ ঠোঁটকাটা স্বভাবের। কথা কম বললেও যেটা বলে ভিতরটা এফোঁড়ওফোঁড় করে দেয়। একদিন খেয়াকে বুকের ওড়না নিয়ে কিসব বলে ফেলল। সবটা সে শুনে ফেলল। মনে হলে এখনো তার মাটির নিচে গায়েব হয়ে যেতে ইচ্ছে করে। কলি গ্লাস হাতে নিলো। দু’তিন ঢোক পানি খেয়ে রেখে দিলো।
মাহমুদ গ্লাসের বাকি পানিটুকু খেয়ে নিলো। বলল,
“আপনাকে দেখে আমার গলাও শুকিয়ে চৈত্রের কাঠ হয়ে যাচ্ছে।”
মাহমুদের বিশ্বাস ছিলো কলি একটু হলেও হেসে ফেলবে এখন। কিন্তু তার বিশ্বাস অবিশ্বাসে রূপ নিলো। কলি পূর্বের ন্যায় মেঘমুখে দাঁড়িয়ে রইলো। এতো দেখি রোবট। কিভাবে সংসার করবো। কাকে মন দিলাম। মাহমুদ কলির চোখের দিকে তাকালো। কলি চোখ সরিয়ে নিলো।
“কলি,কাউকে দেখতে এসেছেন না কিছু বলতে এসেছেন?”
কলিকে একটু এগিয়ে দিলো কথাটা বলে মাহমুদ। কলি হাতের মুঠি হতে একটা কাগজ মাহমুদের সামনে রাখলো।
কাগজটা হাতে নিলো মাহমুদ। অল্প হেসে বলল,
“শুনেছি নব্বই দশকের প্রেম এভাবে হতো। পত্র বাহক না পেলে প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরের হাতে চিঠি দিয়ে পালিয়ে যেতো। ব্যাপারটা ভালো লাগলো। থ্যাংকস।”
কলির চোখের কোণে প্রগাঢ় বিরক্তি খেলা করছে। এই লোকের আজ হয়েছে কি। নাকি কাল বিয়ের দিন ঠিক হবে বলে আজ মৌজে আছে। কলি টু শব্দটিও করল না মাহমুদের সঙ্গে। বোবা মুখে এলো। আবার বোবামুখেই বের হয়ে গেলো ঘুরিয়ে।
মাহমুদ ঝটপট কাগজটা মেলে পড়তে লাগলো।
” স্যার, আমি জানি আন্টি আমাকে খুব পছন্দ করেছে। আপনি মায়ের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য সহমত জানিয়েছেন। একইভাবে আমিও আমার বাবা,মায়ের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে মত দিয়েছি। এর বাইরে কিছুই না। সবই ঠিকাছে। কাল বাগদান অনুষ্ঠানে যেন বিয়ের ডেট ফেলা হয় এক বছর পরে। অর্থাৎ আমার অনার্স কমপ্লিট হলে। কারণ ক্লাসে,ভার্সিটিতে এটা জানাজানি হলে আমি মরে যাবো। নানান সমালোচনার ঝড় উঠবে। আমি নিতে পারব না এসব। প্লিইজ স্যার।”
“তোমার ধারণা ও বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভুল কলি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
বাক্যটি মনে মনে উচ্চারণ করে মাহমুদ তড়িতেই কলিকে ফোন দিলো। কলির ফোন সুইচড অফ। একটু পর পর মাহমুদ ট্রাই করে যাচ্ছে৷ বাট সুইচড় অফ৷ এভাবে মাহমুদ রাতে ঘুমানোর সময় পর্যন্ত ফোন দিলো। কিন্তু কলিকে রিচ করা গেল না৷ মাহমুদ প্রচন্ডভাবে ক্ষেপে গেলো কলির উপর৷ সে বুঝলো কলি ইচ্ছে করেই মোবাইল বন্ধ রেখেছে৷ যেন তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা না করা যায় বিয়ে আরো আগে করার জন্য৷ মাহমুদ দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
বিয়ে হবে। খুব সহসাই হবে। এই বর্ষাতেই হবে। অনেক জ্বালিয়েছো। তোমার জন্য অনেক করেছি। সব উসুল করতে হলে তোমাকে কাছে চাই। ফাজিল, অসভ্য মেয়ে কোথাকার। ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে মাহমুদ ঘুমিয়ে পড়লো।
আজ শুক্রবার। বিকেলে মাহমুদের পরিবারের সবাই বসলো। কিছু ঘনিষ্ঠজনও রয়েছে। স্বল্প আলোচনা হলো তাদের মাঝে। মাহফুজা ছেলেকে বলল,
“তোর কবে সুবিধা হয়? সেই অনুযায়ী তারিখ ফেলতে হবে।”
“কলির সেমিস্টার ফাইনাল পনেরোদিন পরে। উমম.. এক মাস পর যেকোন শুক্রবার।”
জানালো মাহমুদ।
আনুষকা বলল,
“বুধবার পাত্রীর সন্ধ্যা কোটাই। বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ। শুক্রবার বিয়ে। শনিবার বৌভাত। আর পরিক্ষার পর কয়দিন পড়ার প্রেশার থাকে না। রিলাক্স থাকে সবাই। সো সেমিস্টার ফাইনালের পর পরেই বিয়ের ডেট ফেলতে হবে।”
আবদুর রহমান বলে উঠলো,
“আরেক কাজ করা যায়। কাবিন করে রাখলে অনার্স শেষ হলে একবারে অনুষ্ঠান করে তুলে আনা যায়।”
মাহফুজা বলল,
“এটাও মন্দ বলেন নি। বিয়ে ত হয়েই গেলো। চিন্তা মুক্ত। কিন্তু সেটা হলেত আবার অন্যরকম প্রস্তুতি নিতে হবে দুই পক্ষেরই। মাহমুদের যেতে হবে। দুই রাত মেয়ের বাসায় থাকতে হয় কাবিনের পরে। তাদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। তারা কিভাবে কি চায়। সবারই সুবিধা অসুবিধা আছে।”
মাহমুদ ছোট মামা বলে উঠলো,
“দুলাভাই তারা পিপারেশন নিয়ে ফেলেছে পানচিনির হিসেবে। তারমধ্যে কাবিনের কথা তুললে প্যাঁচগোছ লেগে যাবে। মাহমুদের কথাই আমার কথা। আজ বিয়ের দিন পাকা হবে। এবং মেয়ের পরিক্ষা শেষ হলেই। এটাই ফাইনাল করবো আমরা। এখানে থেকেও মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবে। মাহমুদের বাইকে করে যাওয়া আসা করবে। সমস্যা ত দেখি না আমি।”
সঙ্গে সঙ্গে আমিন বলে উঠলো আবদুর রহমান ও মাহফুজা।
সন্ধ্যার পর পাত্রপক্ষ এলো। পাত্র এলোনা। হাসি ঠাট্টায় বিয়ের দিন ধার্য হলো। সবাই রাতের খাবার খেলো। শরবত থেকে শুরু করে আয়োজনের কমতি করেনি নুরুল, রেবেকা দম্পতি। শাড়ি পরিহিত কলি মাথা ঢেকে সবাইকে সালাম দিলো। যেহেতু আংটি আগেই দেওয়া হলো তাকে। তাই আজ দুটো নোজ পিন উপহার দিলো পাত্রপক্ষ। একটা সোনার আরেকটা ডায়মন্ডের।
জুলি বলে উঠলো,
“আপাতো নাক ফোটায়নি। কিভাবে নাকফুল পরবে?”
“নো প্রবলেম হবু বেয়াইন। এখন প্রযুক্তির যুগ। বিয়ের আগে পার্লারে গিয়ে টুক করে ফুটো করে আসলেই হবে। দুদিনেই নাক শুকিয়ে যাবে।”
বলল আনুশকা।
“হুম সেটাই। বিয়ের সময় নাক খালি থাকলে অসুন্দর লাগবে। সব সাজ ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যাবে। মেয়েদের মুখের শ্রী হলো নাকফুল।”
বলল মাহফুজা।
দুই পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে সব পাকা করতে সময় লেগে গেলো। কলি মাকে দিয়ে বাবাকে জানালো বিয়ের তারিখ তার পড়াশোনা শেষ হলে ফেলার জন্য। নুরুল হক মেয়ের কথাকে গ্রাহ্য করলেন। আবদারের সুরে তাদের বললেন কথাটা। তারা মানলই না। উপযুক্ত যুক্তি উপস্থাপন করে দেখালো এক মাস পরে হলে কোন সমস্যা নেই। কলি তার মতো করেই চলতে পারবে। চাইলে নিজের বাসায়ও থাকতে পারবে। তবুও বিয়ে হয়ে যাক। পিছানোর দরকার নেই।
পাত্রপক্ষ বিদায় নিতে নিতে রাত হয়ে গেলো। কলি নিজের রুমে গিয়ে আজ আর কাঁদল না। ক্ষেপে গেলো মাহমুদের উপরে। গজগজ করে বলতে লাগলো,
“আপনি আমাকে পাবেন না মিস্টার মাহমুদ। এত রিকুয়েষ্ট করে লিখলাম। তবুও আমার চাওয়ার গুরুত্ব পেল না আপনার কাছে। দ্রুত বিয়ে করতে চাওয়া আপনার ভালোবাসা হতেই পারে না। এসব আপনার একরোখা মনোভাবের প্রতিফলন। একপ্রকার জেদও বটে। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাঁই করে ফেলব আপনার অন্তরকে। অভদ্র পুরুষ। ছাত্রীকে বিয়ে করার সাধ মিটিয়ে দিব। আমিও কম যাই না। আমার ঘাড়ের র*গ ও ত্যাড়া আছে।”
বোমের মতো তেতে আছে কলি। ফোঁস করে একটা আওয়াজ করলো মুখ দিয়ে। শাড়ি চেঞ্জ করে সামান্য খেয়ে নিলো ক্ষুধার যন্ত্রণায়। ঘুমিয়ে গেলো চটে যাওয়া মেজাজ নিয়ে।
মাহমুদের অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে কলির অভিব্যক্তি দেখার জন্য। নিঃশব্দে হেসে বলল,
ওহে, ফাইনালি আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো আপনার অপছন্দের শিক্ষক মাহমুদের সঙ্গে। যে কিনা আপনাকে কঠিনভাবে ইনসাল্ট করলো। রুক্ষ ভাষায় কথা বলল। আমার অধিকার প্রাপ্তিতে বাধা দিলে সামনে আরো শাসানিতে রাখবো আপনাকে। প্রয়োজনে বন্য হবো। সব ক্ষেত্রে ভদ্র টিচার হয়ে থাকবো নাকি। আমি পুরুষ। আমারও আছে একটা প্রেমিক হৃদয়।
আবার কলি ভার্সিটি আসা বন্ধ করে দিলো। মাহমুদের মেজাজ বিগড়ে গেলো। তবুও নিজের অনুভব, অনভূতিকে সংযত রাখলো। দাঁত কামড়ে ধৈর্যের পরিচয় দিতে লাগলো। কলিকে ফোন করল না। কোন রকমের যোগাযোগ করার চেষ্টা করল না।
অবশ্য তিনদিন পর কলি ক্লাসে এলো। কারণ সামনে পরিক্ষা। গ্যাপ দিলে সমস্যা আছে। এটা স্কুল, কলেজ নয়। কোচিং, প্রাইভেট পড়ে কাবার দিবে। ভার্সিটিতে ডিপেন্ডেড থাকতে হয় অধ্যাপকদের লেকচারের উপরে।
মাহমুদ ক্লাসে গিয়ে তৃষিত নয়নে কলির দিকে তাকালো। যেন মরুর বুকের পিপাসিত পথিক বহু প্রতিক্ষার পরে কিছু জলের ফোঁটার নাগাল পেলো। কলি ভুলেও চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। মাহমুদ কলিকে তার চোখাচোখি করার ব্যবস্থা করলো। সে সাহিত্যের নানা প্রসঙ্গ টেনে জিজ্ঞেস করলো সবাইকে,
“বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক একটা উক্তি বলেন। যার কাছে যেটা সেরা মনে হয় সেটাই বলেন।”
একজন একেকটা বলতে লাগলো। কেউ হুমায়ুন আহমেদের, কেউ বংকিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, কেউ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের,কেউ শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের জনপ্রিয় রোমান্টিক উক্তি বলল।
“কলি আপনি দাঁড়ান। আপনার কাছে কোনটা মনে হয়? বলেন।”
“স্যার আমি জানিনা। খুব গল্প,উপন্যাস পড়িনি আমি।”
দাঁড়িয়ে চোখ নামিয়ে বিরস গলায় বলল কলি। কলির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মাহমুদ ব্যর্থ হলো। তার বিরক্তির সীমা রইল না। কড়া স্বরে বলল,
“বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হয়ে একটা উক্তিও বলতে পারলেন না। আপনার বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়া উচিত হয়নি।”
কলির সারাগাল মরিচ লাল হয়ে গেলো। চনচনে সুরে বলল,
“স্যার আমি বহু উদ্ধৃতি জানি। আপনি রোমান্টিক উক্তি শুনতে চেয়েছেন। সেটা আমি পারিনা।”
“হ্যাঁ চেয়েছি। রোমান্টিক বা ভালোবাসার উদ্ধৃতি কি সাহিত্যের বাইরের পার্ট নাকি?”
এমন সময় আমান স্যার কোন একটা কাজে মাহমুদ স্যারের কাছে এলো। তিনি আলোচনা শুনলেন দরজায় দাঁড়িয়েই। রসিকতা করে বললেন,
“যারা প্রেমের উক্তি জানেন না। তাদের জন্য শিখে নেওয়া অপরিহার্য। নয়তো তাদের দাম্পত্যজীবন অন্ধকার।
-হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন।
“প্রেম শুধু দেখা ও চোখের ভাল লাগা থেকেই হয় না, রাগ থেকে প্রেম হয়, ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, প্রেম হয় অপমান থেকে, এমনকি প্রেম হয় লজ্জা থেকেও। প্রেম আসলে লুকিয়ে আছে মানবসম্প্রদায়ের প্রতিটি ক্রোমসমে। একটু সুযোগ পেলেই সে জেগে উঠে।”
রসিক আমান স্যার আরো বললেন,
” অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
প্রেমের মাঝেই লুকায়িত কামনার বীজ।”
ক্লাসের কয়েকজন চাপাস্বরে হেসে উঠলো। মাহমুদ সজোরে ডাস্টার দিয়ে টেবিলে আঘাত করলো। সবাই চুপ হয়ে গেলো।
ক্লাস শেষে মাহমুদের খুব ইচ্ছে করছে কলিকে ডেকে কাছে আনতে। একটু কথা বলতে। তার কথা শুনতে। কিন্তু ক্লাসে যেভাবে ক্ষেপিয়ে দেওয়া হলো তাকে। এখন ডাকা ঠিক হবে না। দাউদাউ করে জ্বলে উঠতে পারে। মাহমুদ বেরিয়ে গেলো বাইক নিয়ে।
এদিকে মাহমুদের উপরে প্রবল বিতৃষ্ণায় কলির অন্তর ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এই পুরুষের সঙ্গে চলবে কিভাবে সে। এতো দারুণ ঠোঁটকাটা স্বভাবের। চোখের সামনেই লজ্জা দিয়ে ফেলে। তখন এমন ভাব যেন চেনেই না। কলি বেখেয়ালিভাবে ঢুলে ঢুলে হাঁটছে। আচমকা রাস্তায় পড়ে থাকা ভাঙ্গা ইটের টুকরোয় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। ব্যথায় উঁহু করে কুঁকিয়ে উঠলো। পাশ থেকে কলির দুজন ক্লাসমেট দেখে দৌড়ে এলো। কলিকে ধরে উঠালো। মাহমুদ তাদের দেখে বাইক থামালো।
“কি হয়েছে রিমি?”
“স্যার কলি উষ্ঠা খেয়ে পড়ে গেলো। পায়ের পাতা ছিলে গিয়েছে। ব্লাড যাচ্ছে।”
“ওহ শিট!এখানে আমার পরিচিত ফার্মেসী আছে। আপনারা নিয়ে আসুন।আমি যাচ্ছি।”
তাদের আগেই বাইক টেনে মাহমুদ ফার্মেসীতে চলে গেলো। তারা কলিকে ধরে ফার্মেসীর ভিতরে নিয়ে লম্বা বেঞ্চটিতে বসিয়ে দিলো।
” ফার্মেসীতে কেউ নেই। হয়তো কোনদিকে গেলো। আপনারা তাড়া থাকলে যেতে পারেন। কলিকে আমি দেখছি।”
“আচ্ছা স্যার বলে ওরা দুজন চলে গেলো।”
খালি ফার্মেসি। মাহমুদ ফার্মেসী থেকে তুলা, স্যাভলন নিয়ে কলির পাশে বসলো। কিছু তুলা ছিঁড়ে নিলো। বলল,
“পা টা বেঞ্চের উপরে তুলুন। ব্লাড মুছে দিই।”
“একদম না। ডোন্ট টাচ মি। আপনার জন্যই এই অবস্থা আমার। উঁহু মা!”
ঝাঁঝালো স্বরে চেঁচিয়ে উঠে বলল কলি।
এই প্রথম কলির রণমুর্তি দেখে মাহমুদ ভড়কে না গেলেও থমকে গেলো। একদৃষ্টিতে সে কলির দিকে চেয়ে রইলো।
চলবে…১৭
#Romantic