18.8 C
New York
Sunday, October 5, 2025

Buy now







নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে পর্ব-০৯

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৯

“আরু আর তোর বাড়িতে যাবে না। ইমদাদুল আসলে এখানে পাঠিয়ে দিবি। ও যদি মেয়ের যত্ন নিতে পারে, তবেই আরু-কে ঐ বাড়িতে পাঠাবো। আরু ঘরে যা।” চম্পার স্পষ্ট বাক্য।

শত হোক মা! অয়ন আরুকে সহ্য করতে পারে না। ‘বাবা যে তার চেয়ে মেয়েকে বেশি ভালোবাসে’-এটাই তার অ/পরা/ধ। আরু ঘরে গেল না, উলটো পথে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরল। অপূর্ব মুষ্ঠিবদ্ধ করে গাছের সাথে আঘাত করে হাত। পেরিয়ে গেল কিছু মুহূর্ত। পিনপতন নীরবতা। নীরবতার ইতি টেনে অনিতা বলেন, “অপূর্ব যাবি না? সবাই এগো, আমি দরজায় তালা লাগিয়ে আসছি।”

“আমার বোন চলে গেছে, আর আমি ঐ বাড়িতে পাত্রী দেখতে যাবো? অসম্ভব। তোমার ননদ গেলে নিয়ে যাও।” বলেই অপূর্ব টিনের বেড়ায় লা/থি দিল। বেঁকে গেল তা। ধপাধপ পা ফেলে রাস্তার দিকে গেল অপূর্ব। আশেপাশে আরুর দেখা নেই। নদীর ওপারে ভেজা নীলপদ্ম-কে দেখা যাচ্ছে। সাঁতরে ওপাড়ে গেছে। অপূর্ব-র সাঁতার জানা নেই। নাহলে এই নদী সাঁতরে আরু-কে নিয়ে আসতো। নিজের উপর ঈষৎ রাগ জন্মালো। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শহরের মতো আলো নেই কোথাও। অপূর্ব-র মনে ভয় উঠল। তাই আর চলতিপথে এগোল না, ফিরতি পথ ধরল।

আকাশ কালো করে এসেছে। এই শীতে বৃষ্টির আগমন ঘটার সম্ভাবনা নেই, তবুও অন্তঃকরণ জানান দেয় বৃষ্টির অপ্রত্যাশিত আগমনের কথা। আরু ক্ষেতে নামতেই মিঠু ছুটে এলো নিকটে। ভেজা শাড়িতে ঘেঁষল ছাগল খানা‌। আরু আজ মিঠুকে কোলে তুলল না, হাত বুলিয়ে দিল না তার শরীরে। বড়ো ছাগলটা-কে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। গোয়ালে রাখতেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পতিত হলো। হাঁস-মুরগিগুলো খোপরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আরু আর জামা কাপড় পালটালো না। খোপরের দরজা খুলে দিল। গুনে গুনে হাঁস মুরগি ভেতরে ঢুকালো। নির্দিষ্ট সংখ্যায় আসতেই তালাবদ্ধ করে দিল দরজা। তখন বৃষ্টি ক্রমশ বাড়ছে। ধানগুলো ভালোভাবে পলিথিন দিয়ে ঢেকে কলস নিয়ে চলল দিঘির পাড়ে। প্রথম কলস পানি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেও দ্বিতীয় কলসের সময় ব্যতিক্রম হলো। বৃষ্টিতে ভিজে উঠান কর্দমময় হয়ে উঠেছে। পা পিছলে মাটির কলসখানা নিয়ে পড়ল। ভাঙল কলস। ভীত হলো আরু। পারুল আবার তার উপর..। মাটির কলসখানা স্পর্শ করে কান্নায় ভেঙে পড়ল আরু। স্থান পরিবর্তন করল না। বসে রইল। ময়নাপাখি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে এলো।
“আরুপাখি, আরুপাখি, আরুপাখি। বৃষ্টি, বৃষ্টি, বৃষ্টি। চল, চল, চল।”

ময়না আরুর কাঁধ দখল করে দিল। ময়নার শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আরু বলে, “আমি ইচ্ছে করে ভাঙিনি, মা দেখলে খুব মা/র/বে ময়না। আমার খুব ভয় করছে।”

“কিছু হবেনা, কিছু হবেনা, কিছু হবেনা।” ময়না তিনবার আওড়ালো। অয়ন ও পারুল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এসেছে। একটু আগে মায়ের কাছ থেকে শুনে আসা কটুক্তি, এখন নিজের কলস ভাঙা। রোষে শরীর ‘র-র’ করছে। শাড়িটা ঈষৎ উঁচু করে এগিয়ে গেলেন। আরুর মাথা ধরে একটা ধাক্কা দিতে রোষ মেজাজে বলে, “ইচ্ছে করছে, কলসের মতো তোকেও চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেই। একটা কাজও সাবধানে করতে পারিস না, না-কি আমার উপর রাগ দেখিয়ে আমার কলসখানা ভাঙলি?”

আরু হাঁচি দিল দু-বার। পারুল শাড়ির দিকে লক্ষ্য করল, ভেজা শাড়ি এখনো পালটায় নি। সব কাজ পরিপাটি করে শেষ করেছে। তুলনামূলক একটু শান্ত হয়ে বলে, “যা উদ্ধার করেছ, করেছ। বৃষ্টিতে না ভিজে জামা কাপড় পালটে নে। বাবাই ফোন করলে বলিস, ‘কলস ভেঙেছি। নতুন কলস নিয়ে এসো।’ যত্তসব।”

অতঃপর চলে গেল। আরুও উঠে চলে গেল। শাড়ি পালটে বিছানায় গাঁ হেলিয়ে দিল। ঠান্ডায় মাথা ভার হয়ে আসছে, জ্বর আসবে বোধহয়।
__

শীতকালে সূর্য মামার মাটি স্পর্শ করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। কুয়াশা ভেদ করা চাট্টিখানি কথা নয়। তবে এখন শীত শেষের দিকে। কুয়াশা ফিকে হয়ে উঠেছে। হাড় কাঁপানো শীতে আরুর গরম নিয়ন্ত্রণ পোশাকের প্রয়োজন হয়নি, কিন্তু জ্বরের কারণে আজ চাদর জড়িয়ে বসে আছে দিঘির পাড়ে। উঠানের শেষ প্রান্তে দিঘি। মিহির বসেছে পাশে।

অয়ন ছাই দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে আরুর কাছে এলো। মাধুর্যর্পূর্ণ কণ্ঠে বলে, “বুবু, পানি তুলে দে।”

জ্বরে মাথা ধরে যাওয়ার দরুন আরু চাম্পল গাছে ঠেস দিয়ে গ্ৰথন পল্লবে ছিল। অয়নের ডাকে বালতি হাতে নিয়ে দিঘিতে নামল। অয়ন সাঁতার জানে না, দিঘির কাছে যেতে ভয় পায়। অয়নের গোসলের যাবতীয় পানি আরু বহন করে দেয়।

বালতি ভর্তি পানি স্লাভের উপর রাখতেই পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে অয়ন। উষ্ণ শরীরে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে সর্ব বল প্রয়োগ করে চ/ড় লাগালো গালে। অয়ন তেজ দেখিয়ে বলে, “তুই আমকে মা/র/লি বুবু। আরেক‌ বালতি পানি এনে না দিলে মাকে বলব, তুই পানি ফেলে আমাকে মেরেছিস।”

আরু ফোঁস করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। একপেশে কাত হয়ে থাকা পানি শূন্য বালতিটা নিয়ে নেমে গেল দিঘিতে। পূর্ণ করে পূর্বের স্থানে রেখে বলে, “পানি এনে না দিলে কী করতি?”

“মায়ের কাছে বিচার দিয়ে তোকে মার খাওয়াতাম। পানি এনে দিয়েছিস, এখনও মার খাওয়াবো। দাঁড়া তুই।” নিজ সিদ্ধান্তে অনড় থেকে বলে অয়ন। আরু সময় নষ্ট করল না, অয়নের মাথা চেপে ধরল পানি ভর্তি বালতিতে। পারুল বের হয়েছে ঘর থেকে। ছেলেমেয়ের এই কাণ্ড দেখে অবিলম্বে ছুটে‌ এলো। অয়নকে আরুর থেকে ছাড়িয়ে চ/ড় লাগালো আরুর গালে। অতঃপর সে নিজেও হতভম্ব হলো। এক সেকেন্ডের মতো আরুর সংস্পর্শ লেগেছিল, এতেই জ্বরের প্রভাব হাতে লেগেছে। চোখ মুখটাও অতি শুষ্ক। আরুর ললাট স্পর্শ করে জ্বরের তীব্রতা পরীক্ষা করল পারুল। পারুল অনুভব করল, মেয়েটা জ্বরের ঘোরে এরূপ করেছে। কারণ ভাইকে সে প্রাণের চেয়ে বেশি স্নেহ করে। তবুও থমথমে গলায় প্রশ্ন করে, “কী হয়েছে এখানে?”

ক্রন্দনরত অবস্থায় অয়ন বলে, “পানি তুলে দিতে বলেছিলাম। বুবু পানি তুলে তা ফেলে দেয়। আমি পানি তুলে দিতে বলেছি বলে আমাকে চ/ড় মে/রে/ছে। নতুন পানি এনে চুবিয়ে..
অয়নের বাক্যের ইতি ঘটার পূর্বেই হুংকার দিল আরু, “খবরদার অয়ন, একটা মিথ্যা মুখ থেকে বের হলে খবর আছে। আগে বালতিতে চুবিয়ে রেখেছি এখন পুকুরে চুবিয়ে রাখব।”

ময়না পাখিটা তাল মিলিয়ে বলে, “খবরদার অয়ন। খবরদার অয়ন। খবরদার অয়ন।”

আরুর মুখের কথা অবিকল নকল করেছে ময়না। এতে ভীত হলো অয়ন। কিছু বলে না। মিহির আরুকে সঙ্গ দিয়ে বলে, “মামি, তোমার ছেলেকে সহবত শিখাও। সবটা তো নিজেকে চোখেই দেখলাম। আরুর জ্বর এসেছে। ও দৌড়ে কলতলায় যেতে পারত। আরুকে কেন হুকুম দিবে?”

তদানীং উপস্থিত হলো আরুর নানা ও অপূর্ব। আরুকে নিতে এসেছে। পারুল সালাম দিল। অতঃপর আরুকে বলে, “বাজানের জন্য চেয়ে নিয়ে আয়।”

“মেয়েটার শরীরে জ্বর। ছেলেটাকে বলতে পারো না?” বিরাগী হয়ে বলে মিহির। অপূর্ব এক ধ্যানে চেয়ে আছে আরুর দিকে। শেষ দেখা আর বর্তমানের মধ্যে কত ফারাক। লালচে আভা জমেছে মুখমণ্ডলে। অপূর্ব আরুর ললাট স্পর্শ করে জ্বরের মাত্রা পরীক্ষা করে বলে, “গাঁ পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। কখন জ্বর এসেছে, ওষুধ খেয়েছিস?”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......

Related Articles

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Stay Connected

20,625ভক্তমত
3,633অনুগামিবৃন্দঅনুসরণ করা
0গ্রাহকদেরসাবস্ক্রাইব
- Advertisement -spot_img

Latest Articles