#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২১
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মেহবিনের কথা শুনে মেহরব চৌধুরী অবাক হয়ে নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। লজ্জায় তার মেয়ে মাইশা মাথা নিচু করে রইল। তখন দেখে মেহবিন বলল,,
“কি হলো নিজের হবু জামাইকে দেখবে না নাকি?”
মেহরব চৌধুরী মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘হ্যা হ্যা তা তো দেখবোই। কোথায় সেই ভাগ্যবান পুরুষ? যিনি আমার মেয়ের নজরে এসেছে।”
মুখরদের পরিবারের সকলে বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠছিলেন। মুখরের মামারা চলে গেছেন এখন শুধু মুখররাই রয়েছে। তখন মেহবিন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,
“মিস্টার আলভি শাহরিয়ার একটু এখানে আসবেন?”
হুট করে নিজের নামে মেহবিন কে ডাকতে দেখে আলভি হকচকিয়ে গেল। ও কিছুটা আন্দাজ করেছে। ও উঠে দাঁড়াল আর বলল,,
‘জি আমাকে বলছেন?”
‘এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ আলভি শাহরিয়ার আছে কি?”
আলভি মেহবিনের কথায় অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলো মেহবিনদের টেবিলের কাছে। ও আসতেই মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘এই যে উনি আলভি শাহরিয়ার সন অফ আছলাম শাহরিয়ার। আর ইনিই সেই ব্যক্তি।”
আলভি সালাম দিল। মেহরব চৌধুরী হেঁসে সালামের জবাব দিল। আর মেয়ের দিকে তাকালো সে মুচকি হেসে তার বাবার দিকেই তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে তার পছন্দ হয়েছে দুজনেই ইস্টাবলিশ পরিবার ও ভালো তাই কোন কারন নেই না করার। তাই বলল,,
“তো আলভি আমি সহজ কথা সহজ ভাবেই শুনতে ভালোবাসি। তা তুমিও কি আমার মেয়েকে পছন্দ করো। মেহবিন যেভাবে বলল তা শুনে বুঝলাম এখানে শুধু আমার মেয়ে নয় তোমারও হাত আছে। তাই সরাসরিই বলো করবে আমার মেয়েকে বিয়ে?”
হুট করে মেয়ের বাবার এমন প্রস্তাব পেয়ে আলভি চমকে উঠলো। ওর ভেতরটা ধক ধক করছে। ও ওর পরিবারের দিকে তাকালো সকলে ওর দিকেই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ও সেদিকে একবার তাকিয়ে মাইশার দিকে তাকালো আর বলল,,
‘জি স্যার আমি আপনার মেয়েকে পছন্দ করি আর বিয়ে করতে চাই।”
‘আলহামদুলিল্লাহ এ তো ভালো কথা তাহলে তোমার পরিবারের সাথে আমি কথা বলছি।”
মেহরব চৌধুরী উঠে আছলাম আর মাহফুজ শাহরিয়ার এর কাছে গেলেন আর মেহবিনের কথা অনুযায়ী উনি প্রস্তাব রাখলেন তাদের কাছে। উনারা একদম অবাক হয়ে গেলেন এতোক্ষণ সবাই সব কথা শুনেছে তাই আরো অবাক হলেন একবার দেখায়ই তিনি তার মেয়েকে তাদের বাড়িতে দিতে প্রস্তুত। তারা বললেন কিছুটা সময় দিতে তারপর জানাবে। মেহরব চৌধুরী চলে এলেন ওখান থেকে। মুখরের পরিবারের সবাই ভাবলো আজ নাফিয়ার বিয়ের কথা বলার জন্য এখানে এসেছিল আর হচ্ছে আলভির বিয়ের কথা অবশ্য আলভি আর মুখর দু’জনেই সমান বয়সের। মুখর কিছু দিনের বড়। তখন নাফিয়াই বলল আলভির বিয়ের কথা পাকা করতে সকলের মতামত নিয়ে সবাই বলল কথাবার্তা বলতে কারন পরিবার ভালো সবথেকে বড় কথা তিনি একজন মন্ত্রী আর তার মেয়েও বিসনেস করে যদিও তার ভাই মিহির চৌধুরীর সাথে যৌথ ভাবে। তাতে কি মেয়ে ভালো। সকলে এক জায়গায় বসলো কথা বলার জন্য। তখন মেহবিন ওখান থেকে উঠে এলো আর রেস্টুরেন্টের ছাদে চলে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। আছিয়া খাতুন মাইশা কে নিজের কাছে বসিয়ে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। সবাই কথা বলছে মুখর মেহবিন কে খুঁজলো না পেয়ে সেও উঠে এলো। আর খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে এলো দেখলো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেহবিন। ছাদেই কতোগুলো ফুল গাছ ছিল মুখর সেখান থেকে কয়েকটা ফুল ছিঁড়ে মেহবিনের পাশে দাঁড়ালো। আর বলল,,
“আমায় অবিশ্বাস করো না বিহঙ্গিনী?”
মেহবিন মুখরের দিকে তাকালো আর মুচকি হেসে বলল,,
“যার প্রতিটা সাক্ষাতের ফুলে আমি, যার বর্ষনের ফোটায় আমি, যার অসীম ভালোবাসায় আমি, যার বিশ্বাসে আমি ,যার চাঁদমাখা রাতের অনুভূতিতে আমি,যার একাকী গহীন অনুভবে এ আমি,যার নির্ঘুম রাতের একাকী নিঃশ্বাসে আমি,যার আমায় ভেবে বিষাদে আমি, যার হুট করে মুচকি হাসির কারন আমি,যার আবেগ মাখা চিঠিতে আমি, যার কবিতায় আমি, যার যত্নে আমি, যার প্রাপ্তিতে আমি , যার প্রথম ও শেষ ভালোবাসায় আমি, যার পুরোনো প্রাপ্তির তারিখে আমি, তাকে কিভাবে অবিশ্বাস করি আমি।”
মেহবিনের কথায় মুখর মুগ্ধ হয়ে গেল আর মুচকি হেসে বলল,,
“তোমাকে যত দেখি তত অবাক হই তোমাকে বোঝা দায়। যাই হোক ফুলগুলো নিয়ে ধন্য করুন রানীসাহেবা।
মেহবিন হেঁসে ফুলগুলো নিলো। আর বলল,,
‘শুকরিয়া জনাব। এখন বলুন ঘটনা কি?
মুখর মেহবিন কে সব বলল তারপর এটাও বলল নাফিয়ার কথা। সব শুনে মেহবিন বলল,,
‘সমস্যা নেই। আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই নাফিয়া আপুর জন্য ভালো কিছু ভেবে রেখেছেন।”
“হুম অপেক্ষাটা ধীরে ধীরে দীর্ঘায়িত হচ্ছে বোধহয়।”
“আমি তো দেখছি ধীরে ধীরে কমে আসছে।”
“আমার কাছে দীর্ঘ লাগছে।”
‘সেই সারে চারটা বছর কাটিয়ে এসেছেন তখন দীর্ঘ লাগে নি। আর এখানে তো আর অল্প কয়েকটা দিন।আমার তো মনে হচ্ছে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনার অপেক্ষার অবসান ঘটবে ইনশাআল্লাহ।”
“ইনশাআল্লাহ অবশ্যই ঘটবে।”
তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,
‘এই যে মনি এখানে কি করছো তুমি? আমি কখন থেকে তোমায় খুঁজছি।”
মেহবিন আর মুখর তাকিয়ে দেখলো সেই দশ বছরের বাচ্চা। মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘কেন রাজকুমার আদর আমাকে খুঁজছিল কেন?”
“নিচে তোমায় বাবা আর দাদু ডাকছে। আর এই যে পুলিশ তোমাকেও তোমার বাবা ডাকছে তাড়াতাড়ি চলো।”
আদরের কথায় মুখর হাসলো আর বলল,,
“পুলিশ কি কথা আমি তোমার কি হই বলোতো সেই সম্মধোন করো না।”
‘মনি যদি আমার ফুপি হয় তাহলে তুমি হও ফুপা। আর আমি যদি ফুপিকে মনি বলি তাহলে তোমার সম্মধোন হয় মনা। তাহলে কি তোমায় মনা বলে ডাকবো পুলিশ?”
আদরের কথায় মুখর হা করে তাকিয়ে রইল আর মেহবিন হেঁসে উঠলো। মুখর নিজেকে সামলে বলল,,
‘না না থাক মনা বলতে হবে না। এর থেকে পুলিশই ঠিক আছে।”
“হয়েছে তোমাদের কথা এখন নিচে চলো।”
মেহবিন আর মুখর আদরের সাথে নিচে চলে গেল। ও যেতেই নাফিয়া হুট করেই মেহবিন কে জরিয়ে ধরলো। আর বলল,,
“তোমায় দেখে কতোটা খুশি হয়েছিলাম তা বলে বোঝাতে পারবো না মেহু। মনে হচ্ছিল এখনি জরিয়ে ধরি কিন্তু সবাই ছিল বলে আর ধরতে পারি নি। কেমন আছো তুমি?”
মেহবিন মুচকি হেসে নাফিয়া কে ছাড়িয়ে বলল,,
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।”
‘আজ যা হলো মন খারাপ করো না আপু।”
“ধুর কি যে বলো তুমি মন খারাপের কিছুই নেই। আল্লাহ তায়ালা সবসময় তার বান্দার জন্য ঠিকই করেন। ইনশাআল্লাহ আমার শেষটাও অনেক সুন্দর হবে।”
“ইনশাআল্লাহ আপু। হুম এখন চলো একটু দাদিশাশুড়ির সাথে দেখা করা যাক।”
“হুম কিন্তু মেহু মন্ত্রীসাহেবের পরিবারের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?”
“পরে জানা যাবে চলো।”
ওরা মেহরব চৌধুরীর ওখানে চলে গেল। মেহরব চৌধুরী হেঁসে মেহবিনের হাত ধরে বললেন,,
” ও হচ্ছে আমার ভাগ্নি মেহবিন। যদিও আপনারা ওকে চেনেন তবুও আমার ভাগ্নি হিসেবে তো চেনেন না তাই পরিচয় করিয়ে দিলাম।”
মেহবিনের পরিচয় টা শুধু মুখর আর মাহফুজ শাহরিয়ার এর কাছে ছাড়া সবার কাছে বিষ্ফোরণের ন্যায় ঘটলো। সবথেকে বেশি আছিয়া খাতুন তিনি বললেন,,
“তুমি মিথ্যা কথা বলতেছো না তো? তুমি মেহুর আসল মামা হও তো? কারন আমরা তো জানতাম ওর কেউ নেই ও এতিম।”
মেহরব চৌধুরী মুচকি হেসে বললেন,,
“না আমি সত্যিই বলছি।”
তখন মেহবিন বলল,,
“এসব ছাড়ো তো মামা তোমরা বিয়ের ডেট ফিক্সড করো।”
তখন আছিয়া খাতুন বললেন,,
“কেন ছাড়বে? তুমি জানাও নি কেন?”
“কারন তখন আপনারা আপনাদের মন মতো ভেবে নিয়েছিলেন আর যখন আপনাদের সাথে পরিচয় হয়েছিল তখন মামাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে বিয়ের আগে হয়েছিল কিন্তু বিয়ের পর আপনারা আমার ব্যাপারে জানতে বা শুনতে চান নি।যাক পুরোনো কথা বাদ মামা তুমি বিয়ের ডেট ফিক্সড করো।”
মেহবিনের কথায় পুরোনো কথা কেউ তুললো না তবে সবাই বেশ অবাক হয়েছে। সবাই দুই মাস পর আলভি আর মাইশার বিয়ের ডেট ঠিক করলো। সবাইকে বেশ খুশি দেখাচ্ছে শুধু আছিয়া খাতুন বাদে। তিনি একটু সরে গিয়ে অন্য একটা টেবিলে বসলো। মেহবিন সেখানে গিয়ে ওনার পাশে বসলো আর সালাম দিল,,
‘আসসালামু আলাইকুম দাদিজান!”
আছিয়া খাতুন মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
“কেমন আছেন আপনি? আপনাকে দেখে তো খুশি মনে হচ্ছে না।”
‘ভালো আছি। আর আমি খুশিই আছি আমার আরেক নাতির বিয়ে ঠিক হলো।”
“খুশি তো হতেই হবে মাইশা আপু তো আর আমার মতো এতিম নয়। তার স্ট্যাটাস আপনাদের থেকেও ওপরে। একজন মন্ত্রীর মেয়ে বলে কথা। আমার মতো কোন পরিবারহীন একাকী থাকা মেয়ে নয় সে।
মেহবিনের ঠান্ডা মাথায় অপমান টা বেশ প্রভাব ফেলল আছিয়া খাতুন এর ওপর। তিনি মাথা নিচু করে করলেন। তা দেখে মেহবিন বলল,,
“যাই হোক আপনাকে দেখে খুশি মনে হচ্ছে না। কিন্তু খুশি না হওয়ার কারন দেখছি কারন আমি তো রাজ রাজই রেখেছি আপনি বলেছিলেন কেউ যেন না জানে যে আপনার নাতি আমার হাজবেন্ড। আজ কিন্তু বাইরের কেউ জানতে পারে নি সে আমার হাজবেন্ড।”
এবার আছিয়া খাতুন মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
“তুমি ভালো আছো মেহু?”
মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,
‘আমি খারাপ থাকি না সবসময় ভালোই থাকি আলহামদুলিল্লাহ।’
‘আমার কথার সোজা উত্তর দিতে পারো না।”
‘আপনার ব্যবহারে আর আপনার জন্যই দিই না।”
‘তুমি এমন কেন?”
‘কেমন?”
‘বেয়াদপ।”
“এই বেয়াদপ মেয়েটাকেই তো একদিন ভালোবেসে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েটার কেউ নেই শুনেই ভালোবাসা কোথা দিয়ে পালালো বলুন তো।”
কথাটা শুনে আছিয়া খাতুন চুপ মেরে গেলেন তখন মেহবিন বলল,,
‘যাই হোক আসছি নিজের খেয়াল রাখবেন।”
‘আমি যদি আমার কথাটা ফিরিয়ে নেই। তুমি কি আমাদের বাড়িতে আমাদের সাথে থাকবে নাতবউ?”
আছিয়া খাতুনের মুখে নাতবউ শুনে মেহবিন হাসলো আর বলল,,
‘মন্ত্রীর ভাগ্নি বলে কি এরকম বলছেন দাদিজান?”
“না আমি এমনিই বললাম?”
“ওহ আচ্ছা তাহলে বলছি না এখনি নয়। নাফিয়া আপুর বিয়েটা হোক আপনার কথা অনুযায়ী তখনি সবার সামনে আপনার নাতির বউ হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে যাব আর থাকবো। আচ্ছা দাদিজান আমার একটা কথা বলুন তো সত্যিই কি শুধু আমি পরিবার হীন বলে ওরকম একটা কথা বলেছিলেন যে নাফিয়া আপুর বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি যেন কাউকে না জানাই যে মুখর শাহরিয়ার আমার হাজবেন্ড। আর কেউ যেন আমাদের ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে। সত্যিই কি ঐ একটা কারন নাকি অন্য কোন কারন ছিল?”
মেহবিনের কথা শুনে আছিয়া খাতুন অবাক চোখে তাকালো আর বলল,,
“এখন বাড়ি যাওয়া লাগবে আমি উঠি।”
“এটা কিন্তু আমার উত্তর নয় দাদিজান।”
“ঐ একটাই কারন আর কোন কারন নেই।”
“একটা মানুষের পরিচয় হিসেবে কি শুধু তার পরিবারই সবকিছু তাঁর নিজের কোন কিছু গ্ৰহনযোগ্য নয়।”
তিনি দাঁড়িয়ে বললেন,,
“একটা কথা মনে রেখো মেহবিন তোমারে আমি আগেও ভালোবাসতাম আর এখনো বাসি। তোমার পরিচয় বা পরিবার তোমার ভালোবাসায় কোন কমতি হতে দেয় নাই। তবে নাতবউ হিসেবে তোমারে আমি তখন মানতে পারি নাই। হয়তো আজও পারি না।
“না পারার তো কোন কারন দেখছি না দাদিজান আজ।”
“সেই জন্যই আজ বললাম বাড়ি যাওয়ার কথা।”
বলেই তিনি তাড়াতাড়ি করে চলে গেলেন। তা দেখে মেহবিন হাসলো আর বলল,,
” দাদিজান আপনি আমাদের এই সাময়িক বিচ্ছেদের কারন হওয়ার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন নি। এখনো আয়নায় নিজের চোখের সাথে নিজের চোখ মেলাতে পারেন না। এমনিতে ভালোবাসেন তবে নাতবউ হিসেবে কেন নয় এর পেছনের কারন টা কি ছিল দাদিজান?”
মেহবিন সবার কাছে গিয়ে বলল তার যেতে হবে নয়তো ফিরতে অনেক রাত হবে। মুখরের মা মেহবিন কে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। মাইশা আর আলভি মেহবিনকে ধন্যবাদ জানালো। আর আদর সে তো কেঁদেই ফেললো এখনি তার মনিকে সে ছাড়তে রাজি না। আদরের মা আদরের তিনবছর থাকতে একটা এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। আর যবে থেকে ওর মামার সাথে পরিচয় হয়েছে তবে থেকে মেহবিন ওকে অনেক আদর করে ওকে তাই আদর মনিকে চোখে হারায়। মেহবিন সবার থেকে বিদায় নিয়ে এগুতেই মুখর মেহবিনের কাছে গিয়ে বলল,,
“আজ আমরা একসাথেই যাই না।”
‘আমি এতোক্ষণ থাকবো কোথায় শুনি?’
“আমাদের বাড়িতে চলো না। দাদিজান কিছুই বলবে না।”
‘আমি জানি উনি কিছু বলবে না তবে আমি এখন আপনাদের বাড়িতে যেতে চাইছি না। একেবারে মাইশা আপুর বিয়ের মধ্যে যাবো।”
‘একটা জিনিস ভেবে দেখেছো আমরা কিন্তু এখন বিয়াই বিয়াইন।”
‘তো?”
“এইবার কিন্তু একটা লাইন মারাই যায়। কি বলেন বিয়াইন সাহেবা।”
“ফাউল কথা রাখেন তো।”
“এটা তোমার কাছে ফাউল কথা মনে হলো।”
“তা নয়তো কি? আপনি আপনার মতো আসুন আমি গেলাম আমার টেনের টিকিট রেডি।”
“তুমি ট্রেনে যাবে?”
“তো কি উড়ে উড়ে যাবো?”
“বিহঙ্গিনী সে উড়তেই পারে।”
“বিহঙ্গিনীর ডানা কোথায় যে সে উড়বে।”
“পয়েন্ট!”
“কাব্য আপনি কিন্তু!”
“আমি কি?”
“আস্ত একটা না থাক কিছু বললাম না। আমি গেলাম আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই মেহবিন চলে গেল আর মুখর একা একাই হাসতে লাগলো। একটু দূর থেকে মুখরের পুরো পরিবার মুখরকে হাসতে দেখলো। এমনিতে ও বেশি হাসে না তার ব্যক্তিত্ববজায় রেখে চলে এমনিতে বেশ রাগী তবে মেহবিনের কাছে সবসময়ই অন্যরকম।
সেদিনের মতো সবাই তার আপন নীড়ে ফিরে গেল। মুখর রাতেই রওনা দিয়েছিল পরের দিন থেকেই আবার জয়েন করবে। সাতটার দিকে মেহবিন গ্ৰামে পৌঁছালো ও পাকা রাস্তায় নেমে সামনে এগুতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল ওর বাড়ির সামনের বাড়ির থেকে আওয়াজ টা আসছিল। ও আর বাড়িতে না গিয়ে সেখানে গেল ওখানে গিয়ে দেখলো একজন মহিলা মারা গেছে। মেহবিন কে দেখে তাজেল আর নওশি এগিয়ে এলো। ওদের থেকে জানতে পারলো লোকটা এতোদিন হাসপাতালে ছিল আজ মারা গিয়েছে। মেহবিন বাড়ি আসতে নিল কিন্তু তখন চারজন মহিলা এলো একইরকম পোষাক পরা মেহবিন তাজেলকে জিজ্ঞেস করলে ও বলল এই এলাকায় কেউ মারা গেলে নাকি এই চারজনই গোসল করায়। মহিলাদের দের জন্য মহিলা চারজন আর পুরুষ দের জন্য পুরুষ চারজন রাখা হয়েছে এটা নাকি চেয়ারম্যান সাহেব করেছেন তাদের নাকি এই জন্য টাকাও দেওয়া হয়। সবার বাড়ির লোক গোসল করাতে পারে না বলে নাকি এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেহবিন এটা দেখে অবাক হলেও পরে ভাবলো বিষয়টা মন্দ নয় ভালোই। মেহবিনের সামনে দিয়েই মৃত লোকটাকে নিয়ে যেতে নিল কিন্তু মেহবিন তাতে অদ্ভুত কিছু দেখতে পেল । ও এগিয়ে গেল আর মৃত মহিলার কাছে গিয়ে চাদর একটু উঠালো চাদরটা উঠিয়ে ও পুরো অবাক হয়ে গেল। ও সবার দিকে একবার তাকালো আরেকবার বডিটার দিকে। সবই ওর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। মেহবিন রোবটের মতো ওখান থেকে উঠে এলো। ও কিছুই বুঝতে পারছে না ওর এখন কি করা উচিৎ।
~ চলবে,,
#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মেহবিন হুট করেই সবার দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘আমি এই মহিলাটিকে গোসল করাতে চাই।”
সঙ্গে সঙ্গে সবাই মেহবিনের দিকে তাকালো। তখন ঐ চারজন মহিলাদের একজন বলল,,
“এই কাজডা আমাগো কাজ তুমি করবা কেন?”
“দেখুন এমন কোন কথা নেই আপনাদের কাজ করতে দেওয়া হয়েছে দেখে আপনাদেরকেই করতে হবে অন্যরা কেউ করতে পারবে না। সবথেকে বড় কথা আমাকে একটা কথা বলুন তো, আপনারা গোসল দিয়ে টাকা নেন এটা কি আপনাদের এলাকার সবাই এ সিদ্ধান্ত গ্ৰহন করেছে নাকি শুধু চেয়ারম্যান সাহেব।
তখন একজন মাতব্বর টাইপ বয়স্ক লোক এগিয়ে এসে বলল,,
“কোন মৃত লোককে গোসল করানো বা কবর দেওয়া এটা এলাকাবাসীর কাজ বা কর্তব্য। তাই প্রফেশন হিসেবে কিংবা মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদের থেকে টাকা নেওয়া এটার টাকা নেওয়া জায়েজ নেই। তবে যদি পুরো এলাকাবাসী একটি উদ্যোগ নেয় সবার পক্ষ থেকে টাকা দেবেন তাহলে টাকা নিয়ে তাদের গোসল বা কবর দেওয়ার এটা জায়েজ আছে। (শায়খ আহমাদুল্লাহ এর একটা ওয়াজের মাধ্যমে জেনেছি)
চেয়ারম্যান সাহেব কথা বললে আমরা সবাই কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এদের কে আমরা সবাই মিলে টাকা উঠিয়ে তারপর টাকা দেব। মহিলাদের কম টাকা দেওয়া হয় কারন তারা শুধু গোসল করান।”
মেহবিন সব শুনে বলল,,
“ওহ আচ্ছা ওনারা যাই করুক না কেন আমার কোন আগ্রহ নেই। আমি ওনাকে গোসল করানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে চাই।”
এ কথা শুনে ঐ চারজন মহিলা বাঁধ সাধলো কিন্তু পরে মেহবিনের যুক্তিসম্মত কিছু কথা শুনে এলাকার সবাই সম্মতি দিল। মেহবিন ঐ চারজন মহিলাকেও কি যেন বলল যার জন্য তারা আর মানা করেনি। মেহবিন বাড়ি এসে তাড়াতাড়ি জামাকাপড় বদলে ঐ বাড়িতে চলে গেল। তারপর মহিলাটিকে গোসল করানো শুরু হলো। মেহবিন দেখলো মহিলাটির কিডনির ওখানে কাটা এমন কি হার্টের ওখানেও গলার কাছে কাটা চোখ দুটোও নেই। ও বুঝতে পারলো সবকিছু নিয়ে নেওয়া হয়েছে। মেহবিন সব দেখেও কিছু বললো না শুধু শান্ত চোখে তাদের দুজনের দিকে তাকালো দুজন ভেতরে আর দুজন বাইরে মশারি ধরে রেখেছে। মেহবিনের শান্ত দৃষ্টি দেখে মহিলা দুজন অবাক হলো। মেহবিন একটা কাজের বাইরে টু শব্দ করেনি। গোসল করানো শেষ হলে মৃত ব্যক্তিটাকে খাটে শোয়ানো হলো। মেহবিন সেই চারজন মহিলাকে তার সাথে আসতে বলল মহিলা চারজন মেহবিন এর শান্ত রুপ দেখে এমনিতেই ভয়ে আছে। এমনিতেও তারা এই গ্ৰামেই থাকে মেহবিনের সম্পর্কে হালকা পাতলা ধারনা আছে তাই তারা মানা না করে মেহবিনের সাথে চলল। মেহবিন ওদের নিয়ে সোজা ওর বাড়িতে ঢুকলো। দুয়ারে দার করিয়ে শান্ত স্বরে বলল,,
“এসব কবে থেকে করেন আপনারা?”
মেহবিনের কথায় চারজনই একটা ঢোক গিললো। তখন মেহবিন আবার বলল,,
“আপনারা জানেন আমি সবার সামনে কেন বলিনি যে, ওনার সবকিছু নিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু এই কারনে যদি কিছু বলি তাহলে হাঙ্গামা হয়ে যাবে আর মৃত ব্যক্তির জানাযা আর কবর দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে তার লাশটাকে টানা হ্যাছরা হবে। কারন তার মৃত্যুটা ব্রেন টিউমারের জন্য হয়েছে। মৃত ব্যাক্তিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফন করা ভালো । তার দেহখানি যেন তাড়াতাড়ি মাটি পায় এই জন্য কিছু বলিনি। এখন ভনিতা না করে সব বলবেন আপনারা নাকি আমার অন্য কোন ব্যবস্থা নিতে হবে।
মেহবিনের কথায় ওনারা ভয় পেয়ে যায়। তখন একজন বলল,,
“আমাগো কাজ শুধু কোন কথা না কইয়া লাশের গোসল করানো কে কেমনে মারা গেল তাতে আমাগো কিছু না।”
‘তারমানে আপনারা আগে থেকেই সব জানতেন । এখন আমাকে বলুন এই কাজে আপনাদের মাথা কে? যে এইসব কিছুর পেছনে সে নিশ্চয়ই বড় কোন মাথা নাহলে এতো সবকিছু প্ল্যান মাফিক করা সম্ভব নয়।”
“আমরা কিছুই জানি না আমাগো খালি এই কামে রাখছে তাই আমরা এই কাম করি।”
“সেটাই তো আপনাদের কে রাখছে চেয়ারম্যান সাহেব নাকি অন্যকেউ?”
“আমাগো তো আগে চেয়ারম্যানসাবই রাখছিল।”
মহিলার কথা শুনে মেহবিন একপ্রকার থমকে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব এর পেছনে আছে। তবুও ও ভালো করে কথাটা শোনার ফলে মনে পরলো আগে বলেছে তারমানে পরে কেউ এদেরকে হায়ার করেছে। ও তাড়াতাড়ি করে বলল,,
“আগে মানে পরে কে আপনাদের বলেছিল যে মৃত ব্যক্তি যেমনই হোক কোন কথা বলা যাবে না?”
“নামটা বলতে পারুম না নাইলে হেয় আমাগো ক্ষতি করবো।”
‘আর আপনারা যদি না বলেন তাহলে কালকেই আমি পুলিশ ডেকে আপনাদের সব কথা বলে দেব।”
পুলিশের কথা শুনে চারজনই ভয়ে কেঁদে উঠলো। তাদের মধ্যে একজন কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
“না না বইলেন না আমরা সব কমু আপনারে।”
“হুম বলুন?”
‘এই সবকিছু নিশাচর নামের কেউ একজন ফোন কইরা করতে কইছিল। কইছিল যদি সব তার কথামতো করতে কোন মৃত ব্যক্তির কোন খানে কাটাছেঁড়া থাহে তাইলে জানি আমরা কাউরে কিছু না কই। এই জন্য আমাগো মেলা ট্যাহা দিত আমরাও ট্যাহার লোভে পইরা এই কাম করছি। আমাগো পুলিশে দিয়েন না আমরা গরিব মানুষ কয়ডা ট্যাহাই আমাগো সুখ।”
‘আচ্ছা আপনাদের কিছুই করবো না যদি পুলিশের সামনে আপনারা যা দেখেন এবং জানেন সব বলেন তাহলে। মৃত ব্যক্তির লাশের কাটাছেঁড়া সম্পর্কে সব বলবেন।”
‘না না যদি হেয় জাইনা যায় তাইলে আমাগো ক্ষতি করবো।”
‘কেউ কিচ্ছু জানতে পারবে না আমি সিভিল ড্রেসে তাদের আসতে বলবো। অথবা আপনাদের অন্য কোথাও নিয়ে যাবো। কাল বিকেলে সব বলবেন সবকিছুর ব্যবস্থা আমি করবো।
তারা কিছুক্ষণ ভেবে বলে তারা বলবে। কথাটা শুনে মেহবিন একটু স্বস্তি পায় কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিশাচরের ওপর রাগতে থাকে।মেহবিন তাদের চারজন কে বলল সে তাদের আরো কিছু বলে চলে যেতে বলল। এতোক্ষণ কেউ আড়াল থেকে ওদের সব কথা শুনছিল। সে ওখান থেকে চলে গেল বাকি চারজন ও গেল । ওনারা চলে যেতেই মেহবিন নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার জন্য দেয়ালে দুইটা ঘুষি মারলো। আর বলল,,
‘একটা মানুষ কতোটা নিকৃষ্ট হলে এরকম করতে পারে। নিশাচর তোমায় আমি ছাড়বো না তোমার জন্য আর কতো মানুষ কে এভাবে নিজের জীবন দিতে হবে।”
বলেই মেহবিন ওয়াশরুমে ঢুকে গেল ও এখন গোসল করবে। ও গোসল করে বের হলো খাওয়ার কোন ইচ্ছাই এখন নেই।
________________
পরের দিন প্রতিদিনের ন্যয় সকাল হলো। মেহবিনের নামাজ পরে বাইরে বেরুতেই দেখলো কালকের বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। হয়তো কারো সকাল বেলা উঠেই মনে পরেছে তার প্রিয়জন কালকেই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেহবিন সে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল একটা মেয়ে তার বাড়ির মাটির বারান্দায় বসে কাঁদছে তারপাশে একজন মহিলা বসে আছে সে ওখানে গিয়ে জানতে পারলো মেয়েটার মা ছিল সে। মেহবিন মেয়েটাকে কিছু শান্তনা দিয়ে চলে এলো আর এটাও জেনে এল কোন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। সে জানালো এ.এস হাসপাতাল। ও নামটা শুনে অবাক হয়েছিল এ.এস হাসপাতাল। তার সন্দেহ এতোদিন ছিল এস.এস. হাসপাতালের ওপর তার মধ্যে এই এ.এস হাসপাতাল কোথা থেকে আবার নতুন একটা হাঙ্গামা দাড় করিয়ে দিল। ও বাড়ি এসে মুখরকে ব্যাপারটা জানালো আর এটাও বলল সব সিক্রেট ভাবে করতে হবে। মুখর বলল সে খোঁজ নিয়ে ওকে জানাচ্ছে। আজ শনিবার তাই হাসপাতাল নেই।
বেলা এগারোটার দিকে মেহবিন চেয়ারম্যান বাড়িতে গেল। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ও দেখলো মিশু আর আরবাজ দুজনে একে অপরের সাথে খুনশুটি করছে আর হাসছে। মিশু তো চুল ও টেনে দিচ্ছে আরবাজ ও কম যায়না সেও দিচ্ছে দুজনের মুখেই তৃপ্তির হাসি। আরবাজের নজর গেল মেহবিনের দিকে মেহবিন কে দেখেই আরবাজ সোজা হয়ে দাঁড়ালো হাঁসি মুখটাও একটু মূর্ছা গেল। ও বলল,,
“মিশু তোর ফুল এসেছে?’
মেহবিন তখনও ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মিশু দৌড়ে গিয়ে মেহবিনকে জরিয়ে ধরলো। তা দেখে মেহবিনের ধ্যান ভাঙলো। মেহবিন মুচকি হাসি ফুটিয়ে বলল,,
“বাহ আজ দেখছি ফুল খুব খুশি!”
মিশু আদুরে গলায় বলল,,
“তো খুশি হবো না বাড়িতে বিয়ে লেগেছে তো।’
“তাই বুঝি তা কার বিয়ে লাগলো?”
“কার আবার জিনিয়ার। তুমি জানো ওর বিয়ে না কাল ঠিক হয়ে গেছে দুই মাস পর ওদের বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে তার আগে কয়েকদিন পরেই নাকি এঙ্গেজমেন্ট।”
“ওহ আচ্ছা!”
তখন আরবাজ বলল,,
“কেমন আছেন ডক্টর?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”
“জি আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা অনেকদিন পর দেখা হলো আপনার সাথে।
“হুম আপনি বেশ ব্যস্ত মানুষ তাই দেখা হয় না। শুধু আপনি না এই বাড়ির সকল পুরুষ মানুষই ব্যস্ত শুধু শেখ শাহেনশাহ বাদে।”
“নামটাই যে শাহেনশাহ তাই শাহেনশাহ এর মতোই চলাফেরা।”
আরবাজের কথা শুনে মিশু হাসলো মেহবিন ও মুচকি হাসলো। ওখানে জিনিয়া মুনিয়া নুপুর আর রাইফা ছিল। এতোদিনে আসা যাওয়ায় জিনিয়া আর মুনিয়ার সাথে ভালো বন্ডিং হয়ে গেছে মেহবিনের। মেহবিন এগিয়ে গিয়ে জিনিয়াকে শুভেচ্ছা জানালো। জিনিয়াও মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানালো। তখন রাইফা সবার জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। মিশু বলল আজ সবার সাথে গল্প করবে মেহবিন কে নিয়ে তাই মেহবিন ও সবার সাথে বসলো। সবাই খাচ্ছে আর কথা বলছে মেহবিন ও বলছে তবে খাচ্ছে না। তা দেখে নুপুর বলল,,
“ডক্টর মেহবিন আপনাকে এই বাড়িতে অনেকবার আসা যাওয়া করতে দেখেছি কিন্তু কোনদিন কিছু খেতে দেখিনি।”
এ কথা শুনে মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“কারন এ বাড়িতে যখন আসি তখন সবসময় আমার পেট ভরা থাকে। আর আমি অতিরিক্ত খাবার খাইনা এই জন্যই খাওয়া হয় না। কারন অতিরিক্ত খাবার খাওয়াটা আমার পছন্দ নয়।”
“আসলেও কি তাই? অনেক সময় খাবারের সময় হয়েছে আপনি খান নি আপনাকে খালুজান খাওয়ার অফার করেছে তবুও আপনি এ বাড়িতে খান নি।”
“তখন খাইনি কারন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছিল তাছাড়া আমার খাবার সবসময় রেডি করাই থাকে তাই। বাই দা ওয়ে খাওয়ার টপিক ছাড়ুন এবার বলুন তো আপনি কোন হাসপাতালে জব করেন?”
“কেন?”
“এমনি জানতে চাইলাম আর কি?”
“ওহ আমি এ.এস হাসপাতালে ডক্টর হিসেবে আছি। মজার ব্যাপার জানেন ওটা আমারই বাবার হাসপাতাল।”
এ.এস হাসপাতালের কথা শুনে মেহবিন একটু অবাক হলেও পরে হাসলো। আর বলল,,
“ওহ আচ্ছা সেই জন্যই তো এখানে থাকলেও চাপ নেই আপনার। যখন তখন যাওয়া আসা করতে পারেন।”
“তা তো অবশ্যই নিজেদের জিনিসের ভাবটাই আলাদা। অবশ্য এটা সরকারি ডক্টরেরা বুঝবে না।”
নূপুরের সুক্ষ কথার ভাঁজে অপমানটা শুনে মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“হ্যা হ্যা তা ঠিকই বলেছেন। সরকারি ডক্টরেরা বুঝবে কিভাবে? তারা তো নিজেদের যোগ্যতার দ্বারা ডক্টর হয়েছে। বাবার টাকায় বা নামে ফুটানি মেরে ডক্টর হয় নি তাই না।”
মেহবিনের কথায় নুপুরের হাঁসি মুখটা মূর্ছা গেল আর অপমানে মুখটা থমথমে হয়ে গেল। তখন মিশু বলল,,
“ঐ তোমরা দুজন ডক্টর ফক্টর ছাড়ো তো। এই রাইফা তুমি না ভালো কফি বানাও ওটা বানিয়ে নিয়ে আসো তো। আজ ফুল কফি খাবে তাই না ফুল।”
হুট করে মিশুর কথায় মেহবিন ওর দিকে তাকালো। তারপর রাইফার দিকে তাকালো। রাইফা বলল,,
“ঠিক আছে আপু আমি যাচ্ছি।”
তখন মেহবিন বলল,,
“না না আমি খাবো না। আপনার কষ্ট করতে হবে না।”
তখন ওপর থেকে আরবাজ এলো একটা কফির কৌটা নিয়ে এসে রাইফার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,
‘এই যে রাইফা শুনলাম কফি নাকি শেষ হয়ে গেছে। তাই আমি এটা এনেছি। এটা আমার ফ্রেবারিট কফি তুমি এটা নাও ডক্টর নিশ্চয়ই এখন খাবেন কারন কফি কখনো অতিরিক্ত খাবার হয় না। আর হ্যা রাইফা আমার জন্যও বানিও কেমন?”
মেহবিন কিছু বললো না রাইফা কফির কৌটা নিয়ে চলে গেল। আরবাজ হেঁসে সবথেকে দূরের সোফাটায় বসলো। আজ চেয়ারম্যান সাহেব বাড়িতে নেই কোথায় যেন গিয়েছেন আর মহিলারাও কোথায় যেন গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর রাইফা কফি নিয়ে এলো প্রথমে মেহবিন কে দিল মেহবিন কিছু না বলেই তার দিকে একবার তাকিয়ে কফিটা নিল। তারপর আরবাজ কে দিল বাকি সবাইকেও দিল। কফিতে চুমুক দিয়ে মেহবিন বলল,,
“কফিটা অনেক ভালো হয়েছে।”
রাইফা মুচকি হেসে বলল,,
‘ধন্যবাদ।”
‘মিস্টার বাজপাখি সরি মিস্টার আরবাজ। আসলে মিশুর কাছে থেকে বাজপাখি শুনতে শুনতে ভুলে বেরিয়ে গেছে। কিছু মনে করবেন না।
আরবাজ মুচকি হেসে বলল,,
“কোন সমস্যা নেই আমি কিছু মনে করিনি।”
“আচ্ছা আপনার বাবা কখন আসবেন আমার উনার সাথে কিছু কথা ছিল।”
‘এই তো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন।”
“ওহ আচ্ছা।
এইটুকু বলে রাইফার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“রাইফা আপনি এখন কি করেন?
রাইফা শান্ত চোখে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আপতত সংসার করছি।”
“আমি আপনার পেশার কথা বলেছি?”
“পড়াশোনা শেষ করে এখন পেশা বলতে গেলে আমি হাউজ ওয়াইফ।”
মেহবিন রাইফার দিকে তাকালো।ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো ঐ চোখে অনেক কথা আছে যা ও কারো সাথে কখনো শেয়ার করেনি। অদ্ভুত একটা যন্ত্রনা আছে ঐ চোখে। মেহবিন আর কিছুই বললো। কিছুক্ষণ পর শেখ শাহনাওয়াজ এলেন মেহবিন কে কফি খেতে দেখে একটু অবাকই হলেন। তিনি নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হলেন তারপর নিচে এলেন। মেহবিন এবার বাড়ি ফিরবে তাই ও শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,
“চেয়ারম্যান সাহেব আপনার সাথে কিছু কথা ছিল আপনার সাথে কেউ না থাকলে ভালো হয়।”
মেহবিনের এমন কথা শুনে শেখ শাহনাওয়াজ উঠে বললেন,,
“তাহলে আমরা বাগানে গিয়ে কথা বলি।”
বলেই তিনি হাঁটা ধরলেন মেহবিন ও সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো। আর সে বাড়িতে ঢুকবে না। বাগানে যেতেই সেখানে বসার জায়গা আছে সেখানে শেখ শাহনাওয়াজ বসে আছেন। মেহবিন কে দেখে তিনি বললেন,,
“বলুন কি বলবেন?”
“আপনি যে গোসল ও কবর দেওয়ার জন্য লোক রেখেছেন তাদের বদলাতে হবে।”
“কেন? বদলানোর যথার্থ কারন দেখাতে হবে তো। সেই কারন কি?”
“আমি বলেছি এটা আপনার কাছে যথেষ্ট নয় কি?”
“না যথেষ্ট কারন নয় আপনি বলুন?”
মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব বললো সে শেখ শাহনাওয়াজ কে জানাতে চাইছিল না কিন্তু উনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে জানাতেই হলো।সব বলার এটা বলল,,
“আর আপনি এটা জানেন কি ঐ হাসপাতালের নাম কি? সেই হাসপাতালের নাম এ.এস হাসপাতাল যা কিনা ডক্টর নুপুরের বাবার মানে আপনার আত্মীয় এর।”
এ কথা শুনে শেখ শাহনাওয়াজ বিস্ফোরিত চোখে মেহবিনের দিকে তাকালো। আর বলল,,
“আপনার কাছে কোন প্রমান আছে যে নুপুরের বাবাই এই কাজ করে। উনি তো হাসপাতালের ওনার কতো ডাক্তার আছে সেখানে সেখানের কেউ তো করাপ্টেড হতে পারে। হয়তো উনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না।”
‘হ্যা হতেও পারে আপনার মতো!”
‘মানে?”
মেহবিন বুঝতে পারলো ও কি বলেছে। তাই কথা সামলাতে বলল,,
“কিছু না আর আমি তো বলিনি নুপুরের বাবাই এগুলোর মাথা।”
“তাহলে কে এগুলোর মাথা।”
“কখনো নিশাচর মানে অন্ধকারের রাজার নাম শুনেছেন?”
নিশাচর এর নামটা শুনেই শেখ শাহনাওয়াজ চমকে উঠলেন। তা দেখে মেহবিন বলল,,
“এই সবকিছুর একটাই মাথা নিশাচর। এবং সবকিছু তিনিই লোকদের দ্বারা প্ল্যানমাফিক করেন।”
“তাহলে তো আমাদের এই বিষয়ে কোন স্টেপ নেওয়া প্রয়োজন।”
“সেটাই তো প্রমান লাগবে এ.এস হাসপাতালের কে করছে এটা নিশাচর এর সাথে মিলে। আগেই আমি কোন স্টেপ নিচ্ছি না কারন আমি জানি না ঐ হাসপাতালের কে আছে যিনি এইসব কাজ করছে। তবে টেনশন নেই খুব তাড়াতাড়িই জানতে পারবো।”
‘আমার কোন সাহায্য লাগলে বলবেন।”
‘আপতত আপনি ঐ লোকগুলো কে বদলান। আর আমি দেখছি তাদের পুরুষদের মধ্যে কেউ কিছু জানে কি না। আপনি একটু তাদের নাম বলুন এবং বাড়িটা এই এলাকার কোথায় সেটাও বলুন আমি যাওয়ার পথে সবার সাথে দেখা করবো।”
শেখ শাহনাওয়াজ সবার বাড়ির ঠিকানা ও নাম বলে দিল। মেহবিন ওখান থেকে চলে গেল। আর শেখ শাহনাওয়াজ এর কথামতো বাড়ি বাড়ি গেল কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারলো তারা রাতেই হাওয়া হয়ে গেছে। ওর সন্দেহ গাঢ় হলো ও মহিলাদের ব্যাপারেও খোঁজ নিল তাদের বাড়িতেই গিয়ে দেখতে পেল তারাও নেই।সবাই নিখোঁজ এক রাতের ভেতরেই সবাই হাওয়া।মানে টা কি এসবের কালকেও মহিলারা সব বলার জন্য রেডি ছিল। না ওর আগে থেকেই অন্য একটা ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল। এখন ওর হাতে কোন প্রমান নেই যে কালকের মহিলার শরীরে কাটাছেঁড়া ছিল। নিজের ওপরেই খুব রাগ উঠলো ওর। তবুও ও হাল ছাড়লো না ও মুখরকে ফোন করে সেই আটজনের ব্যাপারে খোঁজ লাগাতে বলল। আর এটাও বলল সব তাড়াতাড়ি বের করতে। রাতে মেহবিনের ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এলো ও ফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,,
‘অতিরিক্ত কৌতুহল ভালো নয় ডাক্তার। কখনো কখনো এর কারনে মৃত্যু কে আলিঙ্গন করতে হয়।”
~ চলবে,,