18.8 C
New York
Sunday, October 5, 2025

Buy now







রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন পর্ব-০৭

গল্পের নাম : #রাত_বিকেলে_প্রেমের_কুঞ্জন
লেখিকা: #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ৭

রাতের আকাশে আজ অর্ধ চাদঁ দেখা যাচ্ছে। বাসের লাইটটাও বন্ধ। মধুমিতা জানালার পাশের সিটটায় বসে এখনো হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছে। কিছু চুল উড়ে এসে কপালে পরছে বারবার। সোহান চুলগুলো কানের পিছে ঘুজে মাথাটা নিজের বুকের উপর রাখল। এমন কেয়ারলেস কেনো মেয়েটা? জানালার বাহিরে প্রায় অর্ধেক মাথা বের হয়ে ছিল।

সোহান মধুমিতাকে বুকে রেখে দেখে ওর শরীরটা হালকা গরম। জ্বর আসবে নাকি মেয়েটার। কপালে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দেখে আসলেই গরম হচ্ছে শরীরটা। কোর্টটা গায়ের উপর দিয়ে ঢেকে দিল। আর একটু ঘুমাক মেয়েটা। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেইন রাস্তা ছেড়ে চিকন রাস্তায় গিয়ে বাসটা থামবে। তখন নাহয় জাগাবে ওকে। কানে হেডফোন লাগিতে সোহান গান শুনতে লাগল।

রোদে পোড়ায় রোমিও চেহারা
তুমি বুঝলে না আমার ইশারা
……
লোকে পাগল বলুক মাতাল বলুক আমিইই
তোমার পিছু ছাড়ব না।
…..
“এই ভাই। আইয়া পড়ছি। নামেন কে কে নামবেন।” বাস হেল্পারের ডাক এ নড়ে বসে সোহান। মধুমিতাকে ডেকে তোলে। ইশারা দিয়ে বুঝায় নামতে হবে। মধুমিতাও আস্তে করে উঠে দাড়ায়। সোহান ওকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামে। সোজা অটোতে করে বাড়িতে গিয়ে পৌছে। বাড়ির সবাই হয়ত ভেবেছে এত দেরি যেহেতু হচ্ছে আসতে হয়ত ভোর হবে। তবে সোহানের মা এখনো ড্রয়িং রুমে বসে ঝিমুচ্ছে। মধুমিতাকে নিজের রুমে পাঠিয়ে সোহান ওর মায়ের সাথে কথা বলতে লাগল। মধুমিতার জ্বরের ব্যাপারেও বলল। সোহানের মা নিজে না গিয়ে সোহানের কাছে ঔষধ দিয়ে বলল মধুমিতাকে খাইয়ে দিতে। সোহান কিছুটা ইতস্তত বোধ করল। তার মা নিজে না গিয়ে সোহানকে কেনো এত রাতে অন্য মেয়ের রুমে পাঠাচ্ছে। মায়ের কথাবার্তা শুনে মনে হলো তার হাবভাব তেমন একটা ভালো না। কি মতলবে ডাকল কে জানে।

সোহান আর কিছু না ভেবে ঔষুধ নিয়ে মধুমিতার রুমে গেল। দরজাটাও খোলা। পরপর কয়েকবার নক করল কিন্তু কোনো আওয়াজ নেই। শেষে নিজেই দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকল। দেখে মধুমিতা গায়ে চাদর দিয়ে শুয়ে আছে। চুলগুলো পুরো ভিজা। এতরাতে আবার গোছল করতে কে বলল ওকে?

সোহান : মধুমিতা।
মধুমিতা :….
সোহান ( মাথায় হাত বুলিয়ে ) : মধুমিতা। উঠো।
মধুমিতা : উমম…
সোহান : আরে উঠো একটু। ঔষধ খেয়ে আবার ঘুমাবে।

মধুমিতা আস্তে আস্তে চোখ খুলল। ভালো করে খেয়াল করে দেখে এটা সোহান। চটজলদি উঠে বসে। মাত্র গোসল করে গেনজি আর স্কার্ট পড়ে বের হয়ে শুলো। গায়ে ওড়নাও নেই। চাদরটা গায়ের উপর আরেকটু টেনে উঠালো। সোহানও বুজতে পেরে অন্যদিকে তাকায়।

সোহান : ছরি। আমার এত রাতে তোমার রুমে আসা ঠিক হয়নি। আসলে মা পাঠিয়েছে। ঔষধটা খেয়ে নাও।
মধুমিতা : হুমম।
সোহান : আর আমি পাশের রুমে আছি। কিছু লাগলে ডাকবে। দরজাটা লাগিয়ে ঘুমাও।
মধুমিতা : হুম।

সোহান তাড়াতাড়ি উঠে নিজের রুমে চলে গেল। নিশ্বাস খুব জোড়ে জোড়ে চলছে। এমন লাগছে কেন তার? এই মেয়েটা যে খুব টানছে সোহানকে। সোহান নিজের ফোন বের করে গ্যালারির একটা ছবি দেখতে লাগল। মধুমিতার ঘুমন্ত ছবি।
সোহান : না নাহ। কাম ওন সোহান। নিজেকে কন্ট্রল করতে হবে। তোমার ওর প্রতি অনুভূতিটা ঠিক কি সেটা সম্পর্কে আগে তুমি নিজে সিউর হও। টিনেজার ছেলেমেয়ের মতো অল্পতেই এত আবেগি হওয়াটা তোমার মানায় না। কন্ট্রল ইওরসেলফ্।

সকালবেলা….

আজ সকাল সকাল বাড়িতে রান্নার আয়োজন শুরু হয়েছে। বাড়ির একমাত্র জামাই যে এতদিন পর মেয়ে নিয়ে আসবে। আপ্যয়নে যেন কোনো কমতি না হয়। মেয়ে জামাইর সাথে আবার তার কোন দূর সম্পর্কের ভাইও নাকি আসবে। মধুমিতা, ঝুমুর ওরাও কাজে সাহায্য করছে। মিরাব বাজারঘাট কি লাগবে বারবার এনে দিচ্ছে। সিনহা কোনো কারণবসত রুমে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কেউ না দেখলেও সোহান বিষয়টা খেয়াল করল। তাই সিনহার রুমে গেল ওর সাথে কথা বলতে।

সোহান : সিনহু..
সিনহা : হ্যাঁ ভাইয়া বলোহ
সোহান : কি হয়েছেরে তোর। মন খারাপ কেনো?
সিনহা ( মেকি হাসি দিয়ে ) : কই নাতো কিছু হয়নি।
সোহান : ভাইকে বলবি না।

সিনহা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর হঠাৎ সোহানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। সোহানের কলিজাটা যেন ছিড়ে যাচ্ছে সিনহার কান্না দেখে। বুঝ হওয়ার পর থেকে যতটা মনে পড়ে সিনহাকে কখনো কাধতে দেয়নি সোহান। তার কলিজার টুকরা হলো তার ছোট বোন।

সোহান : বলবি না কি হয়েছে।
সিনহা : ভাইয়া..
সোহান : বল।
সিনহা : আপু মনে হয় ভালো নেই। দুলাভাইকে আমার সুবিধার মনে হয়না।
সোহান : কি বলবি খুলে বল।
সিনহা : আপু বলতে বারণ করেছিল। কিন্তু আমি না বলে পারছি না। দুলাভাই মনে হয় আপুকে খুব কষ্টে রাখে। সবার সামনে শুধু ভালোবাসার অভিনয় করে। গতবার যখন আপু আসছিল, তখন একবার আমি আপুর পিঠ দেখেছিলাম। অনেক কাটাছেড়ার দাগ।
সোহান : তারপর?
সিনহা : আপুকে জিগ্যেস করলে আপু প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। তাছাড়া দুলাভাইকেও আমার ভালো লাগে না। সবার সামনে একরকম। আর একা থাকলে একরকম। আমাকে…।
সোহান : কি তোকে বল?
সিনহা : বাজে ইঙ্গিত দেয়।

সোহান আর কিছু বলছে না। রাগে তার রগগুলো যেন ছিড়ে যাচ্ছে। তবে রাগের বসে, প্রমাণ ছাড়া কিছু করা যাবে না। আর এসবের সত্যতা কতটুকু তাও বের করতে হবে। সোহান সিনহাকে শান্ত করে বলল আর কিছু হলে বা জানলে সাথে সাথে যেন সোহানকে জানায়।

দুপুরবেলা খাবার টেবিলে….

#চলবে….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......

Related Articles

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Stay Connected

20,625ভক্তমত
3,633অনুগামিবৃন্দঅনুসরণ করা
0গ্রাহকদেরসাবস্ক্রাইব
- Advertisement -spot_img

Latest Articles