তখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি ।
শীতের পিঠা নিয়ে মায়ের সাথে বোনের শ্বশুড় বাড়িতে বেড়াতে গেলাম। সেখানে গিয়ে আমার সমবয়সী মিতু নামের এক মেয়ের সাথে পরিচয় হল । সারা বিকাল ওর বন্ধু বান্ধবীদের সাথেই খেললাম ।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে দাদার রুমে শুয়ে পড়লাম ।দুইজন আলাদা আলাদা কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমালাম । ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখলাম আমি সবার সাথে নদীতে নেমে বল খেলছি । হঠাৎ-ই প্রবল স্রোতে আমার লুঙ্গি পানিতে ভেসে গেল ।
সকালে দাদার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। বেড়ার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকছে ঘরে । আমি আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসলাম । কম্বল থেকে বের হতে গিয়েই বিপত্তি বাঁধলো । হাত দিয়ে দেখি আমার লুঙ্গি নেই । কম্বলের ভেতরে হাতরে কোথাও লুঙ্গিটা খুঁজে পেলাম না । অবাক হলাম খুব । আমার লুঙ্গী নিল কে ? কেউ কি চুরি করলো নাকি !! এদিকে দাদা পাশে বসে আছেন তাই ভালো করে খুঁজতেও পারছি না । অগত্যা চুপচাপ শুয়ে রইলাম । কিছুক্ষণ পর দাদা চলে গেলে লুঙ্গী খোঁজা শুরু করলাম ।হঠাৎ কারো পদশব্দ শুনে আবার কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম ।
মিতু এসে বলল, ভাইয়া চল । সবাই আসছে । আমরা খেলবো ।’
আমি বললাম,’না, না আমি খেলবো না । তুমি যাও ।’
মিতু চলে যেতেই আবার লুঙ্গী খোঁজা শুরু করলাম ।কিন্তু কোথাও পেলাম না । তখনি আবার কিছু মহিলার কথা শোনলাম । ওরা এদিকেই আসছে । দ্রুত আমি আবার কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম । দেখি মা কিছু মহিলাকে নিয়ে আসছে । বিছানায় বসলো সবাই ।
মা আমাকে দেখিয়ে বলল,’এটাই আমার বড় ছেলে ।’
একজন মহিলা তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলল,’কিসে পড়ো তুমি ?’
আমি অস্বস্তি নিয়ে বললাম,’অষ্টম শ্রেণীতে ।’
মহিলটা তখন একটু হেসে বলল, ‘সেই ছোটবেলায় তোমাকে দেখেছিলাম । কম্বল থেকে বের হও তো দেখি কত বড় হয়েছো তুমি ।’
আমি দ্রুত হাত নেড়ে বললাম,’ না, আন্টি অনেক শীত তো । এখন বের হতে পারবো না ।’
মা বলল,’ও একটু লাজুক তো । তারপর সবাই একসাথে বসে দুনিয়ার যত কথা আছে সব বলতে লাগলো । এদিকে আমি লুঙ্গীর চিন্তায় বাঁচতেছি না ।
আধঘণ্টা পর সবাই গেল । আমি আবারও খোঁজা শরু করলাম । কোথাও না পেয়ে এবার আমার চোখে পানি চলে আসো । হতচ্ছাড়া লুঙ্গীটা গেল কোথায় !
তখনি মা আবার আসলেন । বললেন,’ কী রে ঘুম থেকে উঠছিস না কেন ? নাস্তা করবি না ?
আমি বললাম,’ রাখো তো তোমার নাস্তা; বিপদে পড়ছি আম্মু ।
কী হয়েছে, মা জিজ্ঞাসা করলো ।
আমি আমার দুর্দশার কথা খুলে বললাম । মা তখন এদিক সেদিক খুঁজে খাটের তলা থেকে লুঙ্গী বের করে এনে দিলেন । মা যেতেই আমি কম্বল থেকে বের হয়ে লুঙ্গী পরে বাইরে বেরিয়ে আসলাম ।
বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে মনে মনে বললাম,”আজ আম্মু না থাকলে কী যে হতো । এরপর থেকে আর কখনও লুঙ্গী গিট্টু না দিয়ে ঘুমাবো না ।”
(লুঙ্গী বিড়ম্বনা)