পথের দাবি
~আসিফ মাহমুদ
বহুদিন ধরে বহুদূর গেছে যে পথ,
তারো যেন ক্লান্তি ভীষণ!
চুপি চুপি জিরিয়ে নেয় শতবর্ষী বটগাছটির নিচে,
আর পথিক, সে তো প্রেমের কাঙাল!
হাওয়ার দোলে মন নড়ে না,
প্রাচুর্যে তার মন ভরে না,
তার মুখে অস্ফুটে ফোটে,
আমার একটা মানুষ হইল না,
যে ছেড়ে দিলেম বলেও কভু নাহি ছাড়ে !
আমার একটা মানুষ হইল না,
যে চোখ বুলিয়ে ভেতর বাহির পড়তে পারে।
অথচ কি আশ্চর্য এ পথ,
বাঁকে বাঁকে যার শিল্পীর তুলির উচ্ছিষ্ট রঙের ছিঁটেফোঁটার মতন
উঁকি দেয় নতুন গল্প !
সেই যে প্রথম দেখা !
তাকে দেখে পথিক থমকে গেছিল মূহুর্তকাল।
মনে হয়েছিল এক উচ্ছ্বল কিশোরী !
যে সবে আবিষ্কার করেছে বাতাসে প্রেম প্রেম গুঞ্জন।
তার মনে হয় প্রজাপতির পাখায় সে উড়ে চলে যাবে কোথাও,
যেখানে গেলে সে পাবে এক ঝাঁক শালিক !
যার কলরব ঘুচিয়ে দেবে তার মনের ভেতরকার থমথম নিরবতা।
অথচ সে কখনো জানেনি,
কিছু বিষন্নতা কাটেনা উৎসবে,
কিছু একাকীত্ব ভরেনা কলরবে,
জীবনটাকে খুঁজতে যাওয়ার আগে
নিজের একটা মানুষ সবার লাগে।
শব্দ যতটা কথা বলে তার চাইতে বহুগুণ বেশি বলে নিরব মাটি,
সে মাটি শুঁকে মেয়েটি জেনে গিয়েছিল
এই পথে আছে প্রেম !
দোলনচাঁপার শাখে,
নয়ত ঐ পুরুষের বুকে।
নির্বাক দুটি মানুষ বুকে প্রেম জমিয়ে দূর হতে ভাবে,
তুমিও কি ভাবো ঠিক আমার মত করে ?
আমি আড়চোখে চাইলে তোমারো কি হৃদয় খানিক নড়ে ?
দুটি বোবা শরীর হতে বেরিয়ে আসে দুটি বাৎসল হৃদয়,
যে জানেনি, শোনেনি, মানেনি,
এ পৃথিবীর কোন নিয়মপ্রথা, সমাজগাঁথা।
দুটি বাৎসল হৃদয় চোখের পলকে মিশে যায়,
কখনো কলকল হেসে যায়,
কখনো বা দখিনা বাতাসে ভেসে যায়।
কিছু কথা কণ্ঠনালী বেয়ে ওপরে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টায়
ব্যর্থ হয়ে বুকের মাঝে আন্দোলনের ঝড় তোলে,
সে ঝড় আপাত সামাল দিতে মেয়েটি বলেই ফেলে,
“কোন পথে যাবেন?”
“আমি সেই পথে যাব, যেই পথে গেলে পথ আমায় অভিশাপ দেবেনা”
“পথের অভিশাপ ভয় পান, মনের পান না?”
পথিক সহাস্যে বলে ওঠে,
“একটা নতুন তারা কিনবো বলে,
মন আকাশে অমাবস্যা আঁকি,
একটা নিজের মানুষ পাব বলে,
হৃদয়টাকে দমিয়ে আমি রাখি”
মেয়েটির আধো আধো হাসিমুখ
অঙ্গভঙ্গিতে খানিক কাঁচুমাচু ভাব
যেন সশব্দে বলে ওঠে,
“এত বড় রক্তমাংসের মানুষ বুঝি চোখে পড়ে না!”
মুখে বলেনা কিছুই, হাতের চুড়ি বাজিয়ে বলে,
“আপনাকে আমি অতিথি পাখির ঝাঁক দেখাবো,
ভরা নদীর বাঁক দেখাবো,
আকাশ ভরা তারা দেখাবো,
পথ হারা প্রাণ দেখাবো !”
শেষ কথাটি বলেই মেয়েটি চুপসে যায়।
পথিক হাত বাড়িয়েও ক্ষণিকেই গুটিয়ে ফেলে,
তার যেতে হবে অনেক পথ !
জিরিয়ে নিতেই মন হারালে,
পথের মায়ায় আটকে গেলে,
যাত্রা হবে শ্লথ।
তাই সে শশব্যস্ত নাবিকের মত বিক্ষিপ্ত দৃষ্টি বোলায় চারিদিক,
চারিদিকে বহুকূল, বহুদেশ,
শুধু আপন কোন মানুষের নেই লেশ !
সেদিকে এগিয়ে গিয়েও পথিক ক্ষণিক আটকায়,
কিছু ফেলে আসার ছলে পেছনে চায় বারবার,
মেয়েটি ডাকেনা, অবলা পথও বলে ওঠে,
“তুমি ফেলে যাচ্ছ পথিক, যা ফেলনা নয় মোটেই !”
নিঠুর পথিক সে আওয়াজ শোনেনা,
মেয়েটির মনের ঝড় থেমে গিয়ে
ততক্ষণে জমেছে অভিমানের ঘন মেঘ,
যে চায় ঝলমল রোদ্দুর, সেই বোধহয় বেশী মেঘ পায় !
সরু পথ যেদিকে গিয়ে দু’ভাগ হয়েছে,
সেখানে পড়ে থাকে পথিকের পদচিহ্ন,
তাতে আছে অপেক্ষার দাগ,
সেই সাথে পথ পাড়ি দেয়ার তাগিদ।
বহুদিন কেটে গেছে !
মেয়েটির মনের মেঘও কেটে গেছে বহুকাল আগেই !
পথিকও পা রেখেছে কত শত পথে !
শুধু এই পথ দাবি ছাড়েনি,
তার গায়ে যে এখনো লেগে আছে প্রেম প্রেম গন্ধ !