মাতৃত্ব ৩ তথা শেষ পর্ব

0
3488

মাতৃত্ব

৩ তথা শেষ পর্ব

#Rabeya Sultana Nipa

_আয়ান -না করে আর উপায় কি।তোদের কে তো সব আগেই বলেছি।

রিমন-তুই কপাল করে একটা বউ পেয়েছিসরে,, ।

আয়ান – ঠিক বলছিস তাই নিজের স্বামীকে অন্যজনের হাতে তুলে দেয়।তোরা বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

প্রাপ্তি নাস্তা নিয়ে এসে আয়ানকে না দেখে বললো।
আয়ান ফ্রেশ হতে গেছে?
ও আসলে নাস্তা খাইয়ে রেডি করে দিবেন।
আয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে তুমি কই যাচ্ছো? আমাকে নাস্তা খাইয়ে তারপর যাবে।
প্রাপ্তি একটু লজ্জা পেয়ে, মাথা ঠিক আছে তোমার?

নিহাদ-আরে ভাবী সমস্যা নেই খাইয়ে দেন।কার এমন কপাল, বিয়ের দিন বউয়ের হাতে খায়। লজ্জা পাওয়ার কোনো কারন নাই আমরাই তো।কথাটা বলেই নিহাদ আর রিমন হেঁসে উঠলো।

প্রাপ্তি কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেলো।

রিমন -প্রাপ্তি মনে হয় কষ্ট পাইছে।এই কথা বলা তোর উচিত হয়নি।

আয়ান -কষ্ট দেবার জন্যই তো বলছি।কেমন লাগে একটু দেখুক।অনেক উদার মনে করে নিজেকে।তার উদারতা ছুটাতে হবেনা?

নিহাদ-প্রাপ্তি কি তোর সাথে আজ যাবে মেয়েদের বাড়িতে।

আয়ান-যাবেনা মানে? ও এতো কিছু করেছে এইটুকু আর বাকী থাকবে কেন?
প্রাপ্তি !প্রাপ্তি ! এইখানে আসো তো।আয়ানের ডাকে দৌড়ে এলো প্রাপ্তি।
প্রাপ্তি -ডাকছো কেন? তুমি এখনো রেডি হওনি তাড়াতাড়ি করো।

আয়ান -তুমিও তো এখনো রেডি হওনি।

প্রাপ্তি -আমি রেডি হবো কেন? আমি যেতে পারবোনা, লোকে কি বলবে?

আয়ান -এতো কিছু করার পরও যখন লোকে কিছু বলে নাই তাহলে এখন কিছু বললে আমি আছি।আর আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে যাচ্ছি কার কি বলার আছে?

প্রাপ্তি -আচ্ছা তুমি রেডি হও আমি দেখছি।
কথাটা বলেই রুম থেকে আসার সময় আছমা বেগম বললেন
আয়ান যখন তোমাকে ছাড়া যাবে না তখন রেডি হয়ে নাও।

প্রাপ্তি -(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে)ঠিক আছে।আপনিও যখন বলছেন তাহলে আমি যাবো।দেখেছেন মা? আমার কপাল টা অনেক ভালো, নিজের স্বামীর বরযাত্রী হয়ে যাচ্ছি।আর কিছু না বলে প্রাপ্তি কান্না করতে করতে তার মায়ের কাছে গেলো।

প্রাপ্তির মা-আমার মেয়ে যে এতো উদার আমরা জানতামই না।আজ আমরা গর্ববোধ করি তোর মতো একটা মেয়ে আমরা জন্ম দিয়েছি।

প্রাপ্তি -মা! অন্তত তুমি আর কিছু বলো না।আমার ভাগ্যেই আয়ান নেই।যদি থাকতো ১৪ বছর পরে ওকে হারাতে হতো না।
আচ্ছা আমি রেডি হয়েনি।আমি যাওয়ার পর সব কিছু গুছিয়ে নিও।আমরা কাল সকালেই চলে যাবো।
প্রাপ্তি রেডি হচ্ছে এইদিকে মাথাটাও কেমন ঝিমঝিম করছে।হয়তো কাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নাই তাই। আমি খেয়েছি কিনা আয়ান একবারও জিজ্ঞাস করলোনা।বিয়ে করবে না বলে বলে সবকিছু তার ঠিকি চলছে। শরীরটাও কেমন জানি ভালো লাগছেনা। কিন্তু কিছু করার নেই আমাকে যেতেই হবে আয়ানের সাথে।না হলে সে যাবেনা।

আয়ান ও রেডি হয়ে বেরিয়ে আসলো।
প্রাপ্তি কই তুমি এখনো হয়নি?

প্রাপ্তি -(মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে এসে) হ্যাঁ, চলো।

সবাই যখন বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ীতে উঠতে যাবে তখনি প্রাপ্তি মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার আগেই আয়ান প্রাপ্তি ধরে পেলে।
প্রাপ্তি কি হয়েছে?প্রাপ্তি !প্রাপ্তি !আয়ানের ডাকে প্রাপ্তির কোনো সাড়া নেই।

নিহাদ, রিমন ওকে হসপিটাল নিতে হবে।

আছমা বেগম-ওর মা বাবাই ওকে হসপিটালে নিতে পারবে।তুই এখন বিয়েবাড়িতে যাবি।

আয়ান -মা! আজ আর চুপ হয়ে থাকতে পারছি না।আমি তোমার কথায় বিয়ে করতে রাজি হয়নি।শুধু প্রাপ্তি বলাতে আজ আমি এই পর্যন্ত এসেছি।আর প্রাপ্তি যতক্ষন না সুস্থ হচ্ছে এই বিয়েটা আমি কিছুতেই করবোনা।
আছমা বেগমকে কথা গুলো বলেই প্রাপ্তিকে গাড়ীতে উঠিয়ে আয়ান নিহাদ,রিমন, প্রাপ্তির বাবা,মা সবাই হসপিটালে চলে গেলো।
প্রাপ্তির বাবা যাওয়ার সময় আছমা বেগম কে বলেছেন ওনার মেয়ের কিছু হলে কাউকেই ছেড়ে কথা বলবে না।

ডাক্তার প্রাপ্তিকে খুব ভালো করে দেখলেন।
অনেক গুলো টেস্ট করাতে দিলেন।
ডাক্তার রিপোর্ট গুলো দেখে,
ডাক্তার -ওনার বাড়ীর লোক কে আছেন?

আয়ান -জ্বী আমি আছি।

ডাক্তার -কি হন আপনি?

আয়ান – ওর হ্যাজবেন্ড।

ডাক্তার-আপনি কি রকম হ্যাজবেন্ড।আমার মনে হয় আপনার ওয়াইফ কিছুদিন থেকে খাওয়া ধাওয়া ঠিকমতো করছে না।আর অনেক চিন্তিত থাকেন।আর এইসময় যদি এইভাবে চলতে থাকে মায়ের তো ক্ষতি হবেই সেই সাথে বাচ্চারও ক্ষতি হবে।

আয়ান -বাচ্চা!!! (অবাক হয়ে)ডাক্তার আপনি কি বলছেন? আমি কিছুই বুজতেছিনা।প্লিজ আমাকে একটু বুজিয়ে বলুন।

ডাক্তার -আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট। কেন, আপনি জানেননা?

আয়ান খুশিতে ডাক্তারকে জড়িয়ে ধরে thanks, thanks

ডাক্তার অবাক হয়ে আরে আপনি করছেন কি?

আয়ান -আমি আপনাকে বলে বুজাতে পারবো না আজ আমি কতোটা খুশি।

ডাক্তারে রুম থেকে বেরিয়ে আয়ান নিহাদ আর রিমন কে জড়িয়ে ধরলো।
রিমন -কিরে ডাক্তার কি বলেছে? প্রাপ্তির কি অবস্থা?

প্রাপ্তির মা -কি হয়েছে বাবা তুমি এতো খুশি কেন?

আয়ান -মা! কি হয়নি সেটা বলুন।আপনি তো নানি হচ্ছেন।
সবাই অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু অবাকের মাঝেও আনন্দের সীমা নেই।

প্রাপ্তির জ্ঞান ফিরেই দেখ সবাই তার পাশে বসে আছে।চারদিক তাকিয়ে বুজতে পারলো সে হসপিটালে আছে।
কি ব্যাপার তুমি এইখানে বসে আছো।তোমার না বিয়ে করতে যাবার কথা।

আয়ান-হ্যাঁ,ঠিকি বলেছো তবে আমি আর করছিনা।কিছুদিন পর আমাদের ছেলেমেয়েকে বিয়ে দিবো।

প্রাপ্তি – আমাদের ছেলেমেয়ে মানে? কি বলতে চাইছো?

প্রাপ্তির মা সব কিছু খুলে বললো প্রাপ্তিকে।
প্রাপ্তি মা হবে এইকথা শুনার পর থেকেই শুধু কান্না করছে আর কিছুই বলছেনা।

আয়ান-এইভাবে কান্নাকাটি করছো কেন?এমন একটা খুশির খবর শুনে কান্নাকাটি করছো?

প্রাপ্তি -আয়ান! মা কে সব বলেছো?মা শুনে কি বলেছে?
আয়ান -আমি খবরটা শুনার পর এতো এক্সাইটেড ছিলাম মাকে জানানোর কথা ভুলেই গেছি।
আচ্ছা ঠিকাছে মাকে ফোন দিয়ে এখনি বলছি।

আছমা বেগম-(দরজায় দাঁড়িয়ে)আমাকে আর ফোন দিতে হবে না।আমি নিজেই এসেছি।নিহাদ ফোন করে আমাকে সব বলেছে।এখন যতো কিছুই হয়ে যাকনা কেন কথা একটাই, বিয়ে আজকে হবেই।

আয়ান -(অবাক হয়ে)মানে? কি বলছো এইসব।আর মা যেই মেয়েকে বিয়ে করার কথা ছিলো তারা ফোন দিয়েছে ওই মেয়ে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে।কেউ জেনে শুনে তোমার ছেলেকে বিয়ে করতে আসবেনা।

আছমা বেগম -তা ঠিক বউ পাগলকে কে আর বিয়ে করতে আসবে। তারপরেও বিয়ে হবে।আর যার সাথে হবে সে হলো প্রাপ্তি।

প্রাপ্তি -আবার বিয়ে? মা! বিয়েটা যখন ঠিক করেছেনই এই বলদটার সাথে?যেই বউয়ের কথায় বিয়ে করতে চলে যায়।

আয়ান -এই ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু।আমি নিজের ইচ্ছায় যায়নি।তুমি বলেছো তাই।(প্রাপ্তির মায়ের দিকে তাকয়ে)মা আপনি বলেন আমি কি নিজের ইচ্ছায় বিয়ের কথা বলছি?

প্রাপ্তি -আমি বলেছি বলে বিয়ে করতে চলে যাবে? না! না!আমি মানবোনা,,,,,
এই ঝগড়া চলছে চলবে।যেই ঝগড়ার মাঝে ভালোবাসা আছে সেই ঝগড়া সারাজীবন চললেও অসুবিধে নেই।সবার ভালোবাসা এইভাবেই বেঁচে থাকুক সবার জীবনে।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে