তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১৮

0
526

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৮(মহাধামাকা)
#দিশা_মনি

রিমির হবু স্বামীর দিকে তাকাতেই চমকে যায় স্নেহা। তার চোখ বিস্ময়ে থ বনে যায়। রিমি তার হবু স্বামীকে টেনে স্নেহার সামনে এনে বলে,
“ও হলো আমার উডবি হাজবেন্ড ওর নাম…”

“অনীল মাহবুব। আমার নাম অনীল মাহবুব।”

স্নেহা আপাদমস্তক পরখ করে নিল অনীল মাহবুব নামের এই লোকটিকে। ঘন লম্বা চুল, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মুখে মাস্ক। স্নেহা আজ ভালো করে শুনে দেখল গলার স্বরটাও একদম অন্য লাগছিল। তাহলে কি সে ভুল শুনেছিল?

স্নেহা সামান্য হেসে অনীল মাহবুবের সাথে পরিচিত হয়ে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অভিক, অনিল আর তার রিমি স্নেহার কাছ থেকে বিদায় নেয়। স্নেহার মনে সন্দেহ কোথাও একটা থেকেই যায়। অনীল মাহবুবের মাস্কটা সরিয়ে নিতে পারলে বোধহয় ভালো হতো। এরূপ নানা ভাবনা থেকে সে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়। হাসপাতালে পৌঁছে স্নেহা তার বাবার খোঁজ নেয়। ডাক্তার জানায় অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। স্নেহা এবারে অনেকটা স্বস্তি পায়।

★★★
নিপুণ হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুক লোক গুলোর দিকে। নিপুণের মাথায় বন্দুক তা’ক করে থাকা লোকটি ট্রিগারে চাপ দিতেই যাবে তার আগেই হঠাৎ করে কেউ এসে তার হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নেয়। নিপুণ রুদ্রকে হঠাৎ দেখে চমকে যায়। রুদ্রর সাথে তার কিছু বডিগার্ডও এসেছিল৷ তারা সবাই মিলে গু*ন্ডাগুলোর সাথে ফাইট করতে থাকে। এদিকে রুদ্র নিপুণের মাথায় বন্দুক ধরা লোকটির হাত মুচড়ে দিয়ে বলে,
“তোর সাহস কি করে হলো রুদ্র চৌধুরীর স্ত্রীর মাথায় বন্দুক ধরার? যেই হাত দিয়ে তুই আমার স্ত্রীর মাথায় বন্দুক ধরেছিস সেই হাত আজ আমি গুড়িয়ে দেব।”

বলেই হাতটা জোরে মুচড়ে দেয় রুদ্র। নিপুণ রুদ্রর দিকে বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে থাকে। রুদ্রর আজ এ কোন রূপ দেখছে সে! আচমকা রুদ্র নিপুণের সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর নিপুণের হাত শক্ত করে ধরে তাকে শাসানি দিয়ে বলে,
“বলেছিলাম না তোমায় আমার কথার অবাধ্য হবে না? তবুও তুমি দুঃসাহস দেখালে। দেখলে তো এর ফল কি হলো?”

“আমার মা কোথায়।”

“বাড়ি ফিরে চলো।”

“আমি কিছু জানতে চেয়েছি।”

“তোমার মা যেখানেই আছেন একদম নিরাপদ আছেন। তোমাকে ওনাকে নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না।”

নিপুণ রুদ্রর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে,
“আমি আপনাকে একদম বিশ্বাস করি না। আপনি নিশ্চয়ই আমার মায়ের বড় কোন ক্ষতি করে দিয়েছেন তাইনা? আমি আপনাকে ছাড়ব না। আপনাকে তো আমি…”

রুদ্র নিপুণের হাত আরো শক্ত করে ধরে জোরপূর্বক তাকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে থাকে। নিপুণ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। রুদ্রের ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে যায়৷ সে নিপুণকে নিজের গাড়িতে বসিয়ে তাকে ভিডিও কলে শাহিনা খাতুনকে দেখায়। তাকে কোন একটা অচেনা যায়গায় গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। রুদ্র নিপুণকে তার মায়ের ছবি দেখিয়ে বলে,
“যদি তুমি চাও তোমার মা ভালো থাকুক তাহলে আমার কথা মেনে নাও।”

নিপুণ আবেগঘন চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। রুদ্র বাঁকা হেসে বলে,
“তুমি কি আমাকে এতটাই বোকা ভেবেছ নাকি নিপুণ? আমি খুব ভালো করেই জানতাম তুমি কোন চালাকি করার চেষ্টা করবে। এইজন্যই তো তোমার মাকে সরিয়ে দিয়েছি৷ এখন তুমি আমার কথা মেনে চলতে বাধ্য থাকবে তুমি।”

“কতদিন? আর কতদিন আর আপনি আমাকে এভাবে কন্ট্রোল করবেন?”

“বেশি দিন না। জাস্ট এক মাস।”

“এক মাস পর কি হবে?”

“সেটা নিজেই দেখতে পারবে।”

নিপুণ আর কিছু বলে না।

★★★
অনুপম পপকর্ন খাচ্ছে আর খিকখিক করে হাসছে। আজ কি সুন্দর অভিনয়টাই না করল সে! অনুপম স্বগোতক্তি করে বলতে থাকে,
“এতটা কাঁচা খেলোয়াড় নই আমি স্নেহা। একই শহরে যখন দুটি ভিন্ন মেয়ের সাথে প্রতারণা করছি তখন তো তাদের কাছে একই নাম, একই লুকে নিজের পরিচয় দিতে পারি না! তাই তো আমি তোমার কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছি অনুপম রূপে। আর রিমির কাছে আমি ডাক্তার অনীল মাহবুব। নাম, লুকস সব ভিন্ন। ভাগ্য ভালো আমি দূর থেকে তোমায় দেখে ফেলেছিলাম তাই মাস্ক পড়ে নিয়েছিলাম। এছাড়া আমার তো একটা গড গিফটেড পাওয়ারও আছে নিজের গলার স্বর পরিবর্তন করার।”

এসব বলেই সে অন্য ভাবনায় মগ্ন হোক। যতই সে আজ স্নেহাকে বোকা বানিয়ে নিক এভাবে বেশিদিন চলা যাবে না। অনুপম বেশ ধূর্ত প্রকৃতির হওয়ায় খুব ভালো করেই জানে, “চোরের দশ দিন, গৃহস্থের এক দিন।”

তাই অনুপম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিমির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে এই শহর থেকে চলে যেতে চায় আর সেটা আজকেই। এমন ভাবনা থেকেই সে রিমিকে ফোন করে। রিমি ফোন রিসিভ করতেই অনুপম নাটক করে বলতে শুরু করে,
“রিমি আমি অনেক বড় বিপদে আছি। তুমি প্লিজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রোয়েরিটা পার্কে চলে আসো। সাথে আমাদের বিয়ের জন্য তোমার পরিবার যেই গহনাগুলো তৈরি করেছে সেগুলোও নিয়ে এসো।”

“কেন? গহনা নিয়ে তুমি কি করবে?”

” আমার ওগুলোর খুব প্রয়োজন। তোমায় বলেছিলাম আমার উপর একজন পেশেন্টের ফ্যামিলি কেস করে দিয়েছে। তাদেরকে আজ টাকা দিতে না পারলে আমায় জেলে নিয়ে যাবে।”

“ঠিক আছে। তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি গহনাগুলো নিয়ে এখনই পৌঁছে যাচ্ছি।”

বলেই রিমি ফোন কে’টে দেয়। অনুপম বাকা হেসে বলে,
“আজ আবার আরেকটা বুদ্ধু মেয়ে আমার শিকার হবে।”

প্রোয়েরিটা পার্কে এসে দাঁড়িয়ে আছে অনুপম। রিমির জন্য অনেকক্ষণ থেকে অপেক্ষা করছে কিন্তু তার আসার কোন খবর নেই। অনুপম ভীষণ ভাবে বিরক্ত হয়ে ওঠে। নিজের ফোন বের করে রিমিকে ফোন করতে যাবে এমন সময় রিমি চলে আসে। রিমিকে দেখে অনুপম তার দিকে এগিয়ে যায়৷ রিমিকে খালি হাতে দেখে অনুপমের ভ্রু কুচকে যায়। সে বলে ওঠে,
“তুমি খালি হাতে এসেছ কেন রিমি? তোমাকে না বলেছিলাম আমাদের বিয়ের জন্য বানানো গহনা গুলো নিয়ে আসতে। সেগুলো কোথায়?”

“এইদিকে।”

স্নেহার গলা শুনে সেদিকে তাকাতেই চমকে ওঠে অনুপম। স্নেহা একা আসে নি সাথে পুলিশও নিয়ে এসেছে। পুলিশ দেখেই অনুপম পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। স্নেহা অনুপমের সামনে এসে বলে,
“কি বলে ডাকব তোমায়? অনুপম নাকি অনল মাহবুব? তোমার তো একটি মুখের পেছনে হাজারটা মুখোশ রয়েছে। না জানি কত মেয়ের আবেগ নিয়ে খেলে তাদের সাথে প্রতারণা করেছ তুমি। তোমার মতো ছেলেদের তো জু*** খুলে পে*–নো উচিৎ।”

অনুপম স্নেহাকে জিজ্ঞেস করে,
“তার মানে তুমি আমায় তখন চিনতে পেরেছিলে?”

“অবশ্যই। তুমি কি ভেবেছ তুমি একাই শুধু বুদ্ধিমান? আমি তোমায় প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেছি৷ তাহলে ভাবছ তো আমি কেন তোমায় না চেনার ভাব করেছিলাম? কারণ আমি তোমায় হাতে নাতে প্রমাণসহ ধরতে চেয়েছিলাম। যাতে তোমায় আইনের হাতে তুলে দিতে পারি।”

অতঃপর স্নেহা অনুপমের গালে ঠা**স করে কয়েকটা চ**ড় বসিয়ে দেয়। স্নেহার পরে রিমি এগিয়ে আসে। অনুপমের গা*লে ঠাস করে থা**প্পড় মে***রে বলে,
“ভাগ্য ভালো স্নেহার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। নাহলে তো আজ আমিও ওনার মতো ঠকে যেতাম। তোমার মতো ছেলেদের তো জেলে পচে ম*রা উচিৎ। ফ্রড একটা।”

রিমি মনে করে আজ দুপুরে স্নেহা তার সাথে দেখা করতে এসেছিল। মূলত অভীকের মায়ের মাধ্যমেই তার সাথে যোগাযোগ করে। অতঃপর অনুপনের ব্যাপারে সব বলে। প্রথমে তো রিমির বিশ্বাসই হয়নি কিন্তু তারপর যখন অনুপম তার কাছে ফোন করে টাকার জন্য বলে তখন রিমি নিশ্চিত হয়ে যায় স্নেহা সত্যিই বলছে। তাই সে স্নেহার সাথে যোগাযোগ করে এবং পুলিশ নিয়ে এখানে হাজির হয়।

পুলিশ অনুপমকে নিয়ে যেতে থাকে। যাওয়ার আগে একজন পুলিশ অফিসার বলে যায়,
“আপনি চিন্তা করবেন না মিস স্নেহা৷ আমরা ঐ অনুপমের পেট থেকে ঠিকই আপনার টাকা উদ্ধার করে দেব।”

“আমার টাকা পাওয়াটা বড় ব্যাপার না। এইরকম একটা ফ্রড ছেলেকে যে পুলিশে সোপর্দ করতে পেরেছি সেটাই অনেক। নাহলে না জানি এ আরো কত মেয়ের সাথে এমন করত।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে