জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২৪
–আপনার বিয়ে হলে পর বুঝবেন বাবার বাড়ি ছেড়ে শশুড় বাড়িতে থাকা কতো কষ্টের, মন কতটা ব্যাকুল হয় একবার বাড়িতে যাবার জন্য মা বাবা কে একনজর দেখার জন্য
–হুম
–আর আমি বুঝি না আপনি এতো সন্দেহ করেন কেন আমাদের কি একটু বিশ্বাসও করতে পারেন না (কথা গুলা রাগি কন্ঠে বললাম)
–আসলে তমা ওকে অনেক ভালবাসি পাঁচ বছর ধরে রিলেশন অনেক বেশি ভালবেসে পেলছি এখন যদি হারাতে হয় আমি মরেই যাবো
–হারাতে হবে না আমার উপর বিশ্বাস রাখুন প্লিজ
–হুম রাখি
আকাশ: মেঘার সন্দেহ দেখে রেগে গেলে তো আমিও মাঝে মাঝে রেগে যাই মেয়েটা খুব বেশি সন্দেহ করে, যখন এমন করে রেগে যাই ঝগড়া করি কিন্তু পরে বুঝতে পারি মেয়েটা আমাকে হারানোর ভয়ে যে এমন করে
–সন্দেহ করার মতো কাজ কর হয়তো তাই এমন করে
–হুম মাঝে মাঝে ওকে রাগানোর জন্য এমন করি পাগলীটা কে রাগাতে খুব ভালো লাগে
–ছয়টা মাস দেখতে দেখতে চলে যাবে চাকরির ব্যবস্থা করো
–আসলে আমি যেখানে চাকরি পাই মামা সেখানেই ভেজাল করে মামা চায় না আমি এই বাসা ছেড়ে যাই
–এতে উনার লাভ কি
–জানিনা
–চেষ্টা করে যাও সফল একদিন হবেই
–হুম
বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো রিয়া আর তুলি দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো,
আকাশের সাথে রিয়ার পরিচয় করিয়ে দিলাম, বাসায় ঢুকে আব্বুকে সালাম করতেই আব্বু জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন, আমিও আর চোখের পানি গুলো আটকিয়ে রাখতে পারলাম না আব্বুকে জরিয়ে ধরে অনেক কাঁদলাম
–বাবা কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি (কথাটা শুনে ফিছনে থাকালাম দেখি আম্মু)
–ভুলবো কেন (সালাম করলাম, আকাশও এসে আব্বু আম্মুকে সালাম করলো)
আব্বু: যা মা ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়
আমি: আচ্ছা
ফ্রেশ হয়ে সবাই একসাথে খেতে বসলাম, মনে হচ্ছে যেন কতো বছর পর আব্বুর সাথে বসে খাচ্ছি
আম্মু: কিরে তমা তোর শশুড় বাড়ির লোক কেমন তোকে ভালোবাসে তো
আমি: হুম সবাই অনেক ভালো
আব্বু: কোনো অসুবিধা হলে বলিস মা
আমি: আচ্ছা, আব্বু রিয়ার বাসায় ফোন করে বলে দাও ও আজ আমাদের বাসায় থাকবে
রিয়া: নারে থাকতে পারবো না
আমি: প্লিজ না করিস না
রিয়া: ঠিক আছে (আমার চোখের দিকে থাকিয়ে কি যেন ভেবে বললো, হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার কষ্ট গুলা)
আব্বু: ঠিক আছে আমি বলে দিব
সারা দিন সবাই মিলে অনেক আড্ডা দিলাম, রাতে খেয়ে রোমে আসলাম
আকাশ: তোমার রোমে তো সোফা নেই ঘুমাব কিভাবে
–আমি আজ ঘুমাব না তুমি খাটে ঘুমাও কাল কোনো ব্যবস্থা করে নিব
–আজ ঘুমাবে না মানে
–কিছু না
–কি করবে সারা রাত
–(মৃদু হাসলাম)
আকাশ আর কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়লো, আমি আলমারি থেকে শ্রাবনের দেয়া নীল রঙের শাড়িটা খুলে পড়লাম যদিও পারি না কোনো ভাবে পেছিয়ে পরে নিলাম হাতে নীল চুড়ি পরলাম, চোখে গারো করে কাজল দিলাম, ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিলাম, চোল গুলো ছেড়ে দিলাম, একদম সেদিনের মতো সাজলাম যেমনটা সেজেছিলাম আমার জন্মদিনের রাতে, সে রাতে শ্রাবন পাশে ছিল আর আজ কোথায় আছে কেমন আছে কিছুই জানিনা
ফোনটা হাতে নিয়ে ছাদে আসলাম, রিয়া তুলির কাছে ঘুমিয়েছে ওকে ফোন করে বললাম ছাদে আসতে, বেলি ফুলের গাছ গুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আজো ফুল ফুটেছে অনেক গুলো কিন্তু আমার উপর ছিটিয়ে দেয়ার মানুষটা আজ পাশে নেই, এই ছাদ জুরে শুধু ওর সৃতি, যেদিকে থাকাচ্ছি শুধু ওকেই দেখতে পাচ্ছি, চোখ দুটু কে আজ আর বাধা দিলাম না কাঁদুক না হয়তো জমানো কষ্ট গুলো উড়ে যাবে
–কিরে রাত ১১টা বাজে এখন ছাদে ডাকলি কেন আর তুই এতো রাতে ছাদে কেন
–(চোখ মুছে পিছনে রিয়ার দিকে থাকালাম)
–এই রাতের বেলা রুপা সাজতে ইচ্ছে হলো কেন
–আমি তো রুপা সাজিনি শ্রাবনের পাগলী সেজেছি
–যে তোকে ভুলে গেছে তাকে কেন মনে রেখেছিস
–চাইলেই কি ভুলা যায়
–ও কলেজেও আসে না ফোন বন্ধ কেন ওর কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস
–আমার জীবনে কষ্ট ছাড়া আর কিছু আছে নাকি
–তুই তো দাড়াতে পারতেছিস না বসে কথা বল
–হুম (বসে রিয়ার কাদে মাথা রাখলাম)
–যখন বলছিলি আমাকে আজ থাকতে তখন তোর চোখ দেখেই বুঝেছিলাম আজ পাগলামি করবি
–পাগলামি কই করলাম
–আকাশের সাথে তো ভালই আছিস মনে হলো তাহলে শ্রাবনের ভূত আবার মাথায় আসলো কেন
–শ্রাবনের ভূত মাথা থেকে কখনোই যাবে না আর আকাশের সাথে সব অভিনয় আমরা দুজন শুধুই ফ্রেন্ড
–অভিনয় মানে
–(রিয়া কে আকাশ আর মেঘার কথা সব বললাম)
–তার মানে আকাশ আর মেঘা কে মিলিয়ে দিবি বলে ঠিক করে নিয়েছিস
–হুম
–ডিভোর্স এর পর তুই কি করবি কোথায় যাবি
–কিছু একটা করে জীবন পার করে দিব
–এমনটা না করলেও হবে
–আমার জীবন নষ্ট হয়েছে মেঘার জীবনটা নষ্ট করতে চাই না, কি দরকার এতো গুলো জীবন নষ্ট করার
–হুম
–(অনেক সময় দুজন চুপচাপ বসে রইলাম)
–আচ্ছা শ্রাবন যদি কখনো ফিরে আসে (নীরবতা ভেঙ্গে রিয়া বললো)
–আসবে নারে
–যদি আসে
–আসলে শুধু জিজ্ঞেস করবো আমার কি অপরাধ ছিল
–ওর যদি কোনো দোষ না থেকে থাকে
–জানিনা বলেই রিয়াকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম
রিয়াকে জরিয়ে ধরে কতক্ষণ কেঁদেছি জানিনা হঠাৎ শুনলাম মসজিদে ফজরের আজান পড়তেছে
রিয়া: তমা এখন চল প্লিজ অনেক তো কাঁদলি এখন রোমে গিয়ে একটু ঘুমা
–তুলির রোমে ঘুমাবো চল
–হুম
তুলির রোমে গিয়ে শুয়ে পরলাম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অনেক কাঁদলাম, কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা
সকালে অনেক দেরিতে ঘুম ভাঙ্গলো ঘড়িতে চেয়ে দেখি ১১টা বাজে, ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম সবাই আড্ডা দিতেছে
রিয়া: উঠেছিস আমাকে এখন বাসায় যেতে হবে
–আমাকে ডাকলি না কেন এতো বেলা হয়েছে
–এমনি ডাকিনি এখন যাই
–আচ্ছা
রিয়া চলে গেলো, আকাশও রোমে চলে গেলো, আমি দুই মগ কপি বানিয়ে রোমে গেলাম, আকাশ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে
–কপি নাও
–এতো বেলা করে উঠলা যে
–এমনি
–শ্রাবনকে খুব বেশি ভালোবাস তাই না
–হঠাৎ এমন প্রশ্ন
–রাতে একবার ঘুম ভেঙ্গেছিল তোমাকে রোমে না দেখে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গিয়েছিলাম, গিয়ে দেখি তুমি রিয়ার কাদে মাথা রেখে কাঁদতেছ তাই আর কথা বলিনি
–হুম
–বিধাতার কি খেলা দেখেছ তুমি শ্রাবনকে ভালবাস আমি মেঘা কে ভালবাসি অথচ আল্লাহ আমাদের দুজনকে মিলিয়ে দিলেন
–হুম
–তমা আমি মেঘা কে সত্যি ফিরে পাবো তো
–আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো বাকিটা বিধাতার ইচ্ছা
–হুম
চলবে?