প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর
পার্ট: ৩
দোলনা নিজে নিজে দোলতেছে দেখে তো আমার ভয়ে চিৎকার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে, তাও কোনো ভাবে দারিয়ে রইলাম কি হচ্ছে দেখার জন্য, একটু পর দেখলাম ফুল গাছ থেকে একটা সাদা গোলাপ নিজে থেকেই ছিড়ে উড়ে উড়ে আমার দিকে আসছে, ফুল আমার কাছে আসার আগেই এক দৌড়ে রোমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম, ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে এক গ্লাস পানি খেয়ে বসে বসে ভাবতে শুরু করলাম এইটা কিভাবে সম্ভব ফুল নিজে থেকে ছিড়ে উড়ে উড়ে আমার দিকে আসছিল কিভাবে তাহলে কি সত্যি এই বাসায় ভূত আছে, থাকলেও আব্বু আম্মু কে বলা যাবে না বললে বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে এই বাসা ছেড়ে আমি যাচ্ছি না থাকুক ভূত আমার কি
সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে আছি তখন আবার গিটার বাজতে শুরু করলো সাথে গুনগুন গানও ভালই লাগছে শুনতে কন্ঠটা খুব মিষ্টি তাই আজকে আর ছাদে গেলাম না গেলে তো গান গাওয়া গিটার বাজানো বন্ধ হয়ে যাবে, বারান্দায় বসে বসে গান শুনতে থাকলাম, প্রায় এক ঘন্টা গিটার বাজালো তারপর বন্ধ হয়ে গেলো আমিও গিয়ে পড়তে বসলাম
মাঝ রাতে গুনগুন গানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, শুয়ে শুয়ে গান শুনতে থাকলাম ভূত হলেও কন্ঠটা তো খুব মিষ্টি তো গান শুনে ভয় পাবো কেন, আচ্ছা ভূতরা কি গান গায় গিটার বাজায় গল্পের বই পড়ে হয়তো এইটা অন্য রকম ভূত তাই এসব করে
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দেখি টেবিলের উপর একটা সাদা গোলাপ রাখা, এখানে কে গোলাপ রাখবে ভাবতেছি হঠাৎ মনে পরলো গতকালের গোলাপটা মনে হয় উড়ে উড়ে টেবিলে এসে পরে গেছে তাই গোলাপটা আর হাতে নিলাম না, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কলেজে চলে গেলাম
কলেজে এসে তো ক্লাসে মন বসছে না বার বার গান আর গিটারের কথা মনে পড়ছে ইচ্ছে হচ্ছে বাসায় চলে যাই আর ভূতকে গিয়ে বলি গান শুনাও আমি শুনবো কিন্তু ভূত কি আমার কথা শুনবে ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরে আসলাম, আম্মু তো দেখে অভাক অনেক প্রশ্ন করলো কেন চলে এলাম ক্লাস করলাম না কেন আমি কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা চিলকোঠোর ঘরে চলে গেলাম, খাটে বসে শান্ত গলায় আস্তে আস্তে বললাম, ভূত তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো আমি জানি তুমি এই রোমেই থাকো যদি আমার কথা শুনতে পাও তাহলে প্লিজ গিটার বাজাও আর গান শুনাও তোমার গান শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে
অনেক সময় রোমে বসে রইলাম কিন্তু ভূত গান গাইল না তাই রাগ করে রোমে চলে আসলাম, রোমে আসতেই গিটারের টুংটাং শব্দ শুনতে পেলাম, আস্তে আস্তে শব্দ বাড়ছে তারপর গান শুনতে পেলাম তারমানে ভূত আমার কথা শুনেছে কিন্তু আমি ওখানে থাকতে গান গাইল না কেন, ওহ বুঝেছি আমার সামনে গান গাইতে ভূত লজ্জা পাচ্ছিল হিহিহি
এক সপ্তাহ কেটে গেলো এভাবে ভূতের সাথে আমার লুকোচুরি খেলা চলছে, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই টেবিলে একটি সাদা গোলাপ পাই, যখন তখন ভূতের গিটারের শব্দ না শুনলে যেন ভালোই লাগে না আর মাঝ রাতে ভূতের মিষ্টি কন্ঠে গান না শুনলেও ভালো লাগে না, আচ্ছা ভূতের গান না শুনলে ভালো লাগে না কেন তাহলে কি আমি ভূতের প্রেমে পড়ে গেছি কিন্তু ভূত কে তো কখনো দেখিনি অদৃশ্য কিছুর প্রেমে পরা কিভাবে সম্ভব, দ্যাত কি ভাবছি এসব পৃথিবীতে এতো মানুষ থাকতে আমি ভূতের প্রেমে পড়তে যাবো কেন
সন্ধ্যায় ভূতের গান শুনার জন্য বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছি, অনেক সময় অপেক্ষা করলাম কিন্তু ভূতে গান গাইল না, আচ্ছা ভূত কি আমার উপর রাগ করেছে নাকি ভূত অসুস্থ, সত্যি কি ভূতের অসুখ হয় কি জানি
তিন দিন কেটে গেলো ভূত গান গাইল না, গিটার বাজালো না সকালে আমার টেবিলের উপর সাদা গোলাপও রাখলো না, কি যে হলো ভূতের বুঝতেছি না, ভূত কি বুঝে না যে আমার ভূতের গান না শুনলে ভালো লাগে না
দুপুরে বারান্দায় বসে আছি আম্মু এসে বললো সবাই মিলে মামার বাড়ি যাবে কিন্তু আমি কলেজে প্রয়োজন আছে বলে না করলাম, আসলে তো ভূতের কোনো খুঁজ নেই বলে আমার মন খারাপ
বিকেলে আম্মুরা সবাই চলে গেলো বাসায় এখন আমি একা, সন্ধ্যায় খুব মন খারাপ লাগছে তাই ছাদে দোলনায় গিয়ে বসলাম, হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো আমি বৃষ্টিতে ভিজলেই ঠান্ডা লেগে যায় তাই ভাবলাম বৃষ্টিতে ভিজবো আর ভূত কে ডাকবো আমার নিজের ক্ষতি করছি দেখলে অবশ্যই ভূত আসবে কারন এতো দিনে যতোটুকু বুঝেছি এই ভূতটা অনেক ভালো
বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করলাম আর জোরে জোরে ভূত কে বললাম “ভূত আজকে যদি তুমি না আসো আমাকে দেখা না দাও তাহলে আমি নিজেকে অনেক কষ্ট দিবো”
অনেক সময় বৃষ্টিতে ভিজলাম কিন্তু ভূত আসার নামই নেই তাই রাগ করে বৃষ্টির মধ্যেই ছাদে বসে রইলাম, কিছুক্ষণ পর মনে হলো মাথাটা কেমন যেন করছে তারপর আর কিছু মনে নেই…..
চলবে?