কাছে_আসার_গল্প পার্ট ২০+২১
লেখা আশিকা
হিমেল দরজা খোলে না।
কাঁদতে কাদতে একসময় আমি ঘুমিয়ে পড়ি…
সকালে হিমেল দরজা খুলে দেখে আমি রুমের সামনে বসে বসে ঘুমুচ্ছি….
হিমেল আমাকে ডাকে কিন্তু আমি কোন শারা দিচ্ছিলাম না…
হিমেল আমাকে উঠানোর জন্য গায়ে হাত দেয়…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
দেখে আমার শরির জরে পুড়ে যাচ্ছে….
হিমেল আমাকে তাড়াতাড়ি কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয়..
তাড়াতাড়ি আমায় মাথায় পানি ঢালে, জরের ঘোরে আমি আবুল তাবুল বলা শুরু করি…
শুধু একটা কথায় বলছিলাম বারবার…
হিমেল বিশ্বাস করো সব মিথ্যে কথা। তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা…
এর মাঝে আবার আমার শ্বশুর ফোন করে বলে হিমেলের মামা মারা গেছে…
সে যেন তাড়াতাড়ি আসে….
হিমেল বুঝতে পারছিলো না আমকে এইভাবে একা কি করে রেখে যাবে??
তখন সে আমাদের বাসায় ফোন করে বলে আমাকে এসে যেন নিয়ে যায়…
তারপর আম্মু আর ভাইয়া আসে আমাকে নিতে।
এসে দেখে
আমার মাথায় জলপট্টি দেয়া পাশে হিমেল বসা।
তারপর হিমেল বিছানা থেকে উঠে পড়ে…
মা কে বসতে বলে আমার পাশে…
হিমেল চলে যেতে লাগলে আমি জরের ঘোরে ওর হাতটা ধরি…
প্লিজ হিমেল আমাকে ছেড়ে যেওনা.
মা তাড়াতাড়ি আমার পাশে বসে হিমেলের হাতটা ছাড়িয়ে দেয়..
— কি হইছে?? ও কোথায় যাবেনা। আমরা সবাই তোমার পাশে আছি..
এই দেখ..
মা আমার মাথায় পানি ঢেলে দেয়। জ্বর কিছুটা কমলো ওষুধ খাইয়ে দেয়াতে
এরপর বলল.
এখন তাহলে ওকে নিয়ে যাই.
মা আমাকে বিছানা থেকে ধরে ধরে উঠালেন..
এরপর তারা আমাকে নিয়ে যেতে লাগল..
আমি বার বার পিছনে তাকাচ্ছিলাম…
কেন যানি মনে হচ্ছিলো.
আমি হিমেলের থেকে দূরে সরে যাচ্ছি..
আমি মার হাত ছাড়িয়ে দৌড় দিলাম জাস্ট পড়েই যাচ্ছিলাম, হিমেল এসে আমাকে ধরলো…
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে..
কাদতে লাগলাম..
–আমি যাবনা তোমাকে ছেড়ে।
তুমি আমাকে এইভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন। আমি তোমার সাথে যাবো…
আমি ওর শার্ট শক্ত করে ধরে আরো কাঁদতে লাগলাম..
— কিছু বলো না কেন??.
বল না মাকে আমি যাবোনা।
মা এসে আমাকে একটা ধমক দেয়…
— এইগুলা কি ধরনের ছেলে মানুষী হচ্ছে??
তুমি ছেলেটার শার্ট নষ্ট করে দিচ্ছো??
নিজেও যাচ্ছ না ছেলেটাকেও যেতে দিচ্ছো না….
— মা আপনি ওকে নিয়ে যান।
বলেই হিমেল আমাকে সরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
মা আমাকে বাসায় নিয়া আসলো।
রাতে আমার জ্বর আরো বাড়লো…
হিমেল মার কাছে ফোন করে আমার খবর নিয়েছে…
সকালে আমার জ্বর কমলো..
কিছুই ভালো লাগছে না…
সারাদিন মন মরা থাকি, মনটা শুধু হিমেলের কাছে পড়ে থাকে।
পরদিন সবাই বাসায় ফিরে আসে।
শ্বশুর শ্বাশুড়ি ফোন করে করে আমার খবর নেয় কিন্তু হিমেল ফোন দেয় না।
আমি দিলেও কেমন আছি??
কি করছি??
খাওয়া দাওয়া করছি কিনা??
এইগুলা জিজ্ঞাস করে??
তারপর চুপ..
কোন কথা বলে না..
কেমন ছাড়া ছাড়া ভাব।
তারপর শ্বশুর বলে হিমেলকে আমাকে নিয়ে আসার জন্য।
হিমেল কোন কথা না বলেই চলে যায়।
সবাই তাকে অনেক জিজ্ঞাস করে আমাদের মধ্যে কি হইছে??
হিমেল বলে কিছুই হয় নাই।
এরপর মা আমাকে ফোন করে বলে, তোমাদের কি হইছে??
হিমেল আমার সারাক্ষণ চুপচাপ থাকে ক্যান??
কি হইছে আমাকে খুলে বলো।
আমি কাদতে কাদতে বলি মা কিছুই হয় নাই।
তারপর তারা খুব চিন্তায় পড়ে যায়…
কি হচ্ছে এইসব??
আর আমরা কেউ কিছু না বলাতে তারা আরো চিন্তায় পড়ে যায়।
এরপর হিমেল এর ছুটি শেষ হয়ে যায় তাই চলে যায়…
আর এইটা আমাকে একবার জানাইও নাই..
আমি মিথির কাছে ফোন করে জানতে পারি এইটা…
আমি হিমেলকে ফোন করি..
— হ্যালো…
— তোমার খুব ভাব তাই না…
নিজেকে কি মনে করো তুমি দুধের ধোয়া তুলসী পাতা..
আমাকে এইভাবে ইগনোর তুমি করতে পারো না।
আমার জীবনটা নিয়ে এইভাবে খেলতে তুমি পারো না…
— এইবার উল্টাটা যদি আমি বলি…
দেখ এখন আর এইগুলা বলো না প্লিজ..
আমি জানি তুমি আমাকে কোনদিন ও ভালো বাসনি..
যে ভালবাসা তুমি আমাকে দেখিওছো সেগুলা জাস্ট ফ্যামিলির চাপে পড়ে..
প্লিজ আর কোন এক্সপ্লেনেশন দিও না।
— তুমি ভুল ভাবছো…
— বাই দ্যা ওয়ে তোমার তুষার ফোন করেছিলো আমাকে
হয়তবা তুমি জানো তাও বলছি.
ও আমার কাছে অনেক কান্নাকাটি করেছে তোমাকে পাওয়ার জন্য।
ও আরো অনেক কিছুই বলেছে যেগুলো আমি তোমাকে বলতে পারবো না…
তুমি তুষারকে বলে দিও আমাকে এইভাবে বার বার ফোন করে প্রোভ দিতে হবে না যে তোমরা দুজন দুজনকে কতটা চাও।
আমার মনে হয় তুষার তোমার জন্য বেটার চয়েজ…
সো তুমি অন্তত তুষারকে নিয়েই এখন ভাবো…
সেটাই তোমার জন্য ভালো হবে।
— হুয়াট??
তুমি ভুলে যাচ্ছ যে আমি তোমার স্রী..
এইগুলা তূমি বলতে পারো না।
আর তুমি তুষারের সব কথা বিশ্বাস করলা আর আমার কোন কথাই তুমি বিশ্বাস করলা না। তুমি যেহেতু আমাকে বিশ্বাসই করোনা তখন আমাদের একসাথে থেকে আর কি হবে??
— কাম টু দ্যা পয়েন্ট, ম্যাম
আমি সত্যিই তোমাকে বিশ্বাস করিনা। তুমি বলতে পারো তুষার তোমার রুমে কেনো আসতো??
একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে অন্য আরেকটা মেয়ের রুমে কিভাবে ঢুকে টাইম পাস করতে পারে??
আর কেমন ফ্যামিলি সেটা এলাউ করে??
— হিমেল ও আমার রুমে সেই ছোট থেকে আসে। আর আমাদের মাঝে এমন কোন রিলেশন হই নাই যার জন্য ও আমার রুমে আসতে পারে। আর তোমার মাইন্ড এত খারাপ তুমি আমাকে যাতা বলে যাচ্ছ..
— ইয়েস আমি খারাপ
তুমি অস্বিকার করলে কি হবে??
তোমার উনি তো স্বিকার করছে বিশেষ রিলেশনের কথা.
এইবার কি বলবা??
— আমার কিছু স্বিকার করার নাই। আমি কেমন সেটা আমি তোমার কাছে এক্সপ্লেইন করবোনা। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসা নেই। ওকে কারো ঘৃনার পাত্রী হয়ে আমি থাকতে চাই নাহ।
কাপা কাপা গলায় বললাম
সব কাগজ পাঠিয়ে দিও আমি সাইন করে দিবো…
হিমেল হিয়া বলে চিৎকার করে উঠল।
আমি ফোন কেটে দিলাম…
#পার্ট_২১
আমি ফ্লোরে বসে লুটিয়ে পড়ে কাদছিলাম।
মা এসে আমাকে এমনভাবে জেরা করতে থাকে আমি আর পারছিলাম না সব লুকিয়ে রাখতে।
মা তোমার মেয়ের জীবনের সবচেয়ে ভুল কি জানো, কেন জীবনে কোন প্রেম করলাম না।
তাহলে অন্তত আজকে এই দিনটা দেখতে হত না।
— কি হইছে খুলে বল?? বল মা??
— মা হিমেল আমাকে বিশ্বাস করে না।
ও মনে করে তুষার আর আমার আমার মাঝে একটা অবৈধ রিলেশন আছে??
তবে এর জন্য তুষার দায়ী।
মাঝখানে আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। মা আমি আর পারছি না।
— সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই চিন্তা করিস না। দেখিস কিছুই হবে না। ধুর পাগলি
— নাহ মা কিছু আর ঠিক হবার নেই। হিমেল আমার সাথে থাকতে চায় না…
মা।
আমি আর জোর করে এই রিলেশন টা ঠিক করতে চাই না। জোর করে আর যাই হোক কখনো বিশ্বাস পাওয়া যায় না।
— হিমেল তোর সাথে এমন করবে সেটা আমরা কোনদিনো ভাবি নাই। আর শোন তোর নামে কোন মিথ্যা অপবাদ তোর বাবা সহ্য করতে পারবে না। তোর বাবার রাগতো তুই জানিস। মা আমি পাগল হয়ে যাবো কেন যে সেদিন হিমেলের বাবার কথা শুনে তোকে এইভাবে বিয়ে দিয়েছিলাম।
আসলে সব দোষ আমার কেনো যে তোর বিয়ে বিয়ে করে তোর বাবার মাথাটা খাইছিলাম।
মা কাঁদতে লাগলো।
আমি মাকে জড়িয়ে ধরলাম
— মা তুমি এইভাবে নিজেকে দোষারোপ করলে আমার খুব খারাপ লাগবে। যা হইছে তা আমার কপালের দোষ।তুমি এখন যাও আমি একটু ঘুমাবো…
মিথ্যে বলে মাকে চলে যেতে বললাম।
যার জীবনে এত অশান্তি সে কি ঘুমাতে পারে…
অঝর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে…
হয়তবা এর কোন শেষ নেই…
সেইদিনের পর থেকে তুষার আমাকে অনেক ফোন করেছে আমি ওর নাম্বার ব্লক লিস্টে রেখেছি।
আর কোথাও আমি বের হই না। ভালো লাগে না।
কলিং বেল্টা বাজছে…
কেউ দরজা খুলছে না।
আমিই গেলাম খুলতে গিয়ে দেখি
মা আর বাবা।
আমি উনাদের সালাম করলাম।
উনাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে…
আমি সালাম করাতে বললেন থাক আর সালাম লাগবে না।
বসতে বললাম বললাম বললো তোমার বাবাকে ডাকো…
আমি ডাকার আগেই দেখি বাবা আর মা হাজির…
মা উনাদের দেখে বলে উঠলেন..
— আরে আপনারা, বসুন.
তারা বসে পড়লো..
বাবা বললো..
— কি রে নিখিল সব কিছু মিলিয়ে ভালো তো…
— হুম ভালোই থাকতে চেয়েছিলাম তাই তোর মেয়েকে নিজের মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু তোর মেয়ে এসব কি করলো??
আমি ভয়ে পুরা জমে যাচ্ছিলাম..
— আমার মেয়ে কি করেছে??
— কি করেছে মানে??
তোর মেয়ের জন্য হিমেলকে আমরা অনেক বকেছি, ওর মা ওর সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিছিলো…
আমরা কি ভুলটাই বুঝেছিলাম আমাদের ছেলেকে…
— হেয়ালি না করে বল??
হিমেল আমার মেয়ের সম্বন্ধে কি বলেছে তোকে??
— তোর মেয়ে আমার ছেলেকে ভালোবাসে না। ও ডিভোর্স চায়
হিমেল আজকে আমাকে জানিয়েছে এই কথা।
ওকে জিজ্ঞাস কর ও এত বড় কথা কি করে বলতে পারলো??
আমার ছেলের কি ফেলনা নাকি??
ও যা ইচ্ছা তাই করবে…
মা পুরা রাগে লাল হয়ে যায়..
— আমার মেয়ের আপনার ছেলেকে ভালোবাসেনাতো কাকে ভালোবাসে??
একদম অপবাদ দিবেন না আমার মেয়ের সম্পর্কে, বড়ই যত্ন সহকারে মানুষ করেছি।
আমার মেয়ের অসুস্থতার সু্যোগ নিয়ে ওকে বাসায় পাঠাই দিয়া এখন নাটক করছে আপনার ছেলে।
তুমুল একটা জগড়া হয়ে গেলো বাসায়…
কত কি বলে গেলো আমায়।
সব হিমেলের জন্য।
প্রচণ্ড ঘৃনা লাগছে হিমেলের প্রতি।
আমাকে সবার সামনে এইভাবে ছোট করলো ও…
আমি ওকে যতটা ভালোবেসেছি
ঠিক ততটাই দূরে চলে যাব, হাজার খুজলেও আমি আর ধরা দিবো না। আমি আর ওর কথা ভাববো না…
হিমেলের অস্তিত্ব আমি চিরতরে মুছে ফেলবো…
নিজেকে আমি অনেকটাই সামলে নিয়েছিলাম। এই এক মাস আমি হিমেলের কথা খুব একটা মনে করিনি।
শুধু গভীর রাতে একটা কষ্ট আমাকে কুড়ে কুড়ে খেত…
তুষার এখন খুব রিলাক্স মুডে থাকে ওর উদ্দেশ্য সফল হইছে তাই।
আমি আর ওকে কিছুই বলি না আসলে আমার রুচিতে বাধে।
সে ছেছড়ার মত বাসার নিচে প্রায়শই দাঁড়িয়ে থাকে..
যেখানে যাব সেখানেই তাকে দেখতে পাই..
তাই খুব কম বের হই।
এভাবেই চলছিলো কিন্তু সামনে একটা বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য…
চলবে
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/