সন্দেহ পর্বঃ ২৭

9
2364

সন্দেহ
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ ২৭
.
.
.
মাঝেমধ্যে কিছু আত্নার সম্পর্ক গিলে ফেলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে হয়।
সামাজিকতা, ধর্ম,মনুষ্যত্ব সব না হলে ঠুনকো হয়ে যায়।
এমন সম্পর্ক গুলোতে শারিরীক দূরত্ব মেনে নিলেও মানসিক ভাবে অনেক কাছাকাছি থাকে।
সামনাসামনি দুটো মানুষ দক্ষ অভিনয় করে চলে একে অপরের সাথে।
ভিতরে ভিতরে দুজনেই জানে কতটা অসহায় এক জন অপরজন কে ছাড়া তবুও যেনো এমন জঘন্য খেলায় মত্য থাকে দুজনে।
.
.
সারাটা দিন সাম্যর খুব উশখুশ করে কাটলো। কোন ভাবেই যোগাযোগ হয়নি অনুর সাথে।
মেয়েটা কেমন আছে কি করছে এসব ভাবাচ্ছে তাকে।
এদিকে কল দিলেও ফোন বন্ধ। বাধ্য হয়েই সে আশা কে কল দিলো।
.
– হ্যালো।?
– ইয়েস মিঃসাম্য বলুন।
– আপনি কোথায়?
– ক্লিনিকে..
– বাসায় যাবেন কখন? অনুর সাথে বাসায় কে?
-মানে?
– বাংলা বুঝেন না?
-মেঝভাবী তো আপনার বাড়ি…..
– না! আপনার গুণধর ভাই সকালে এসে নিয়ে গেছে৷
– তার মানে ভাবী বাসায় একা?
– একা মানে?
– আমরা যার যার কাজে, মা- আব্বা তো গ্রামে….
– আশ্চর্য তো! আপনারা এমন কেনো?
– রেগে যাচ্ছেন কেনো?.
– রাগবো না তো কি করবো? আদর করবো? রিডিকিউলাস পিপল!
.
.
সাম্য ফোন কেটে দেয়। আশা চুপচাপ বসে থাকে। আচ্ছা লোক টা কি কখনো ভালো ভাবে কথা বলতে পারে না??
.
.
নীল অফিস থেকে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে কেবলমাত্র।
ওমনি কারো বমি করার শব্দ শুনছে।
আপাতত বাসায় কেউ নেই হয়তো কাজের মেয়েটা টিভি দেখছে।
এই ভেবেই পাশ ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করছে।
ঘুমঘুম ভাব চলে এসেছে। এমন সময় কাজের মেয়ে দৌড়ে এসে নীল কে ডাকছে
.
– ছোট ভাইজান! ছোট ভাইজান! উঠেন উঠেন মেঝ ভাবী খুব বমি করতেছে। আর কেমন জানি করতাছে।
.
.
নীল বলে
– অনু ওর মামার বাড়িতে। এখানে আসবে কি করে?
.
-মেঝ ভাই হেন থেনে সকালে নিয়া আইছে।
.
নীল দ্রুত উঠে অনুর রুমে যেতেই দেখে ওয়াশ রুমে বেসিনের উপর দুহাতে ভর দিয়ে নিচু হয়ে আছে সে।
চুল ছাড়া। প্রায় ভিজে গেছে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
.
.
– আশাকে আসতে বল।আর শোন লেবুর শরবত নিয়ে আয়।
.
.
পাশে রাখা চুলের ক্লিপ দিয়ে কোন মতে চুল আটকে দেয়৷ চোখ মুখে পানি দিয়ে নিয়ে এসে বসিয়ে দিয়ে ফুল পাওয়ারে ফ্যান ছেড়ে দিছে।
অনুর শরীর ভালো না।
যেকোন সময় যে কিছু হতে পারে।
পড়নের মেক্সি,ওড়না সব ভিজে গেছে।
দ্রুত কাজের মেয়ের কাছে গিয়ে বলে
.
– তুই ওকে চেঞ্জড করে দে আমি শরবত নিয়ে আসছি।
.
বারবার আশার ফোনে কল দিয়েও পাচ্ছে না।
আশ্চর্য মেয়ে টা ফোন কেনো বন্ধ রেখেছে?
.
.
অনুর অবস্থা দেখে নিরুপায় হয়ে কল করলো ওদের মা কে৷
আশ্চর্য এদের সবার প্রব্লেম টা কি?
.
সাত পাঁচ না ভেবে নিজেই এগিয়ে গেলো অনুর রুমের দিকে।
অনু হেলান দিয়ে বসে আছে।

.
শ্বাসকষ্ট হচ্ছে মেয়েটার। বেশ দুর্বল মনে হচ্ছে। ওর পাশে গিয়ে বসে গ্লাস টা এগিয়ে দিলো নীল।
অনু চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে বললো খাবে না৷
নীল ওর মুখের সামনে গ্লাস ধরে এক হাতে খাইয়ে দিচ্ছিলো।
.
.
ইরা, নিলয় কেবল বাসায় ঢুকেছে। অনু আর নিলয় কে এভাবে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো নিলয়৷
.
– বাহ্! ভালোই তো সেবাযত্ন চলছে। তা অনু কেমন লাগছে?
– হুম! ভালো।
– ভালো তো লাগবেই। আফটার অল বাচ্চার বাবার সেবাযত্ন পাচ্ছো
.
.
কথা টা শুনে চমকে উঠে দুজনে। নিলয় কি বলছে? এদিকে কোন খেয়াল নেই৷
নিলয় বলেই চলেছে তার কথা গুলো।
কেনো অনু তাকে ঠকালো? সে কি ফিজিক্যালি এতই আনফিট?
.
নীল উত্তর দিতে গেলে প্রায় ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেছে।
এতক্ষণে সবাই এসে গেছে।
ওদের কথা শুনে সবাই বুঝেছে কি হচ্ছে।
.
কাজের মেয়েটা কেঁদেকেটে একাকার।
বার বার সে বলছে সে ছোটভাইজান জানে না ভাবী আইছে। হে খুব বমি করলো তাই ভাইজান দেখতে আইছে।
.
নিলয় মানতে নারাজ৷ সে বলেই চলেছে এ বাচ্চার বাবা নীল। বিয়ের আগে সাম্য এখন নীল। অনু শুধু ঠকিয়েছে। ও খারাপ। রাস্তার মেয়ে। যত খারাপ ভাষা আছে সব নিলয় ব্যবহার করছে৷
.
অনু আজ চাইছে জবাব দিতে সে দিবে আজ জবাব৷ কারণ নীল আর তার সম্পর্ক পবিত্র। ততটা পবিত্র যতটা পবিত্র থাকে কাফনের কাপর ।
.
.
.
নীলাভ্র বিষয় টা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। এক সময় গিয়ে নিলয় অনু কে ধাক্কা মারে। টাল সামলে নিয়ে অনু প্রতিবাদ করতে গিয়েও পারে না।
চিৎকার করে উঠে।কাজের মেয়ে ছাড়া কেউ ওকে ধরতে যাচ্ছে না। না ইরা না ওদের মা। ওর শ্বশুর তো মসজিদে।
নীল, নিলয়ের মধ্যে ঝামেলা চলছেই।
.
এদিকে অনু চিৎকার করছে বারবার। রহিমা খালা (কাজের লোক) চিৎকার শুনে দৌড়ে অনুর কাছে যায়। সে এতদিন নীলের মায়ের সাথে গ্রামে ছিলো।
.
.
বাবারা থামো এহন। বউ রে হাসপাতালে নিয়ন লাগে৷ পানির ঠুসা পইড়া গেছে।
.
নীল দৌড়ে অনুর রুমে গিয়ে তাকে নিয়ে আসতে নিলেই নিলয় বাধা দেয়।
.
অনুর চিৎকার গুলো সাম্যর বুকে এসে লাগছে । দ্রুত সিড়ি বেয়ে উঠছে সে।
ভিতরে গিয়ে দেখে অনু সোফায় বসে ব্যথায় কাঁদছে।
সাম্যর মন ঠিক বলেছে অনু ঠিক নেই।
সে এসে হাত বাড়াতেই অনু শক্ত করে ধরলো। কাউকে কিছু না বলেই অনুকে তুলে নিয়ে বাইরে পা বাড়ায় সে। নিলয় বাধা দেয়৷ সাম্য পিছন ফিরে যেভাবে তাকিয়েছিলো সে দৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিলয়ের সাধ্য নেই। নীল, সাম্য দুজনে বেরিয়ে গেলো অনুকে নিয়ে। রাস্তায় গিয়ে মসজিদের সামনে পায় নীল ওর বাবাকে৷
উনিও গাড়িতে উঠে বসে।
সাম্য অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করছে কিন্তু অনুর চিৎকার ধীরে ধীরে বাড়ছেই। রাস্তা যেনো শেষ হচ্ছে না………..
.
.
চলবে

9 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে