স্বপ্নপুরে পর্ব : ২

0
1120

স্বপ্নপুরে পর্ব : ২
গল্পবিলাসী – নিশি

তবে রাতে একটা ডিসিশন নিয়েছে ফাহাদ। এভাবে স্বপ্নের পেছন ছুটে নিজেকেও বোকা মনেহয় তার। তার নিজস্ব চেয়ারে না বসে মায়ের চেয়ারের পাশে গিয়ে বসলো ফাহাদ। কিছুক্ষন মায়ের দিক তাকিয়ে থেকে,
-“মা?”
-” হ্যা বল।”
-” মা! আমাকে আর মাত্র একমাস সময় দাও। আমি কথা দিচ্ছি এই একমাসে যদি ঐ মেয়েকে খুজেঁ না পাই তোমরা যে মেয়েকে বলবে আমি ঠিক সেই মেয়েকেই বিয়ে করবো। “ছেলের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থেকে আশা বলে উঠলো,
-“হঠাৎ এই ডিসিশন? “মায়ের দিক তাকিয়ে,
-” মা আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি।” ছেলের কন্ঠটা খুব ভারী শুনালো আশার কাছে।
-“বেশ তুই যা বলিস তাই হবে তাহলে।”
-“হুম। ”
-“আমার ছুটি লাগবে মা। এই একমাস আমি মন জুড়েঁ শুধু আমার সেই মানুষটিকে খুজেঁ বেড়াবো। ঠিক একত্রিশ দিনের দিন বাড়ি ফিরে আসবো আমি। হয়তো আমার প্রিয়তম কে নিয়ে আর নয়তো জীবন্ত লাশ হয়ে।শুধু একটা মাস।” ছেলের কথা শুনে অবাক হয়ে আছে আশা।
-“কোথায় যাবি তুই?”
-” জানিনা মা। কিন্তু আমি আমার স্বপ্নপুরের রাণীকে খুঁজতে চাই। প্লিজ না করোনা।”
-” যদি সেই মেয়েটা তোকে না ভালোবাসে? তখন কি করবি? তোর এই অনুভূতির কি হবে ভেবে দেখেছিস?”
-” মা আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার প্রেয়সীও হয়তো আমার মতোই আমাকে খুঁজে বেরাচ্ছে। “খুব জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে,
-” ওকে তোর ইচ্ছা। এতোটা বছর সহ্য করেছি বেচেঁ থাকলে একটা মাস ও হয়তো দেখতে দেখতে কেটে যাবে। আমার স্কুলের সময় হয়ে গেছে আমি বেরুলাম।”
-” মা আমি নামিয়ে দিচ্ছি তোমাকে চলো।”
-” নাহ থাক লাগবেনা। তোর অফিসে দেরি হয়ে যাবে।” ঘড়িতে তাকিয়ে
-” মাত্র নয়টা পনেরো বাজে মা। চলো।” একমনে ড্রাইভ করছে ফাহাদ। মাত্র একটা মাস। ত্রিশ দিন। সাতশত বিশ ঘন্টা মাত্র।এই সময়ের মধ্যেই খুজেঁ বের করতে হবে মেয়েটাকে। মাকে নামিয়ে দিয়ে অজানার উদ্দ্যেশে পা বাড়ালো ফাহাদ। গুগোলই একমাত্র সমাধান। গুগোল ম্যাপ থেকে প্রথমেই কিছু নদীএলাকা খুজেঁ নিলো। বেশিরভাগ জায়গাই খুঁজা হয়ে গেছে তারপরও আবার খুজেঁ যেগুলোতে এখনো যাওয়া হয়নি সেগুলোর উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে গেলো ফাহাদ।
কেটে গেলো মাঝখানে পুরো ঊনত্রিশটি দিন আজকে তাকে দেয়া সময় অনু্যায়ী ত্রিশতম দিন। এই মূহুর্তে ফাহাদ দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়ারর মোহনাস্থিত এলাকা চাঁদপুর। এই নিয়ে তিনবার এসেছে চাঁদপুর। তারপরও আবার আসলো। এখানে এলে কেমন জানি একটু শান্তি অনুভব হয়।মনেহয় যেনো আশেপাশেই মেয়েটা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজকের রাতটা পেরুলেই তার সময় শেষ। কোথায় না খুঁজেছে তাকে।কিন্তু না। কোথাও পায়নি তাকে। না তাকে খুজেঁ পেয়েছে আর না তাকে খুঁজে পাওয়ার কোনো সূত্র।
সূর্যের আলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মেঘনার বুকে। নদীতীরে সূর্যাস্তটা যে কতোটা মনকাড়া দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে কখনো বুঝতে পারবেনা কেউ।এই সময়টা যে কিভাবে এতো প্রিয় হয়ে উঠলো তার নিজেরও জানা নাই। এলোমেলো চুল, কালো একটা টিশার্ট সাথে সাদা রঙের থ্রিকোয়াটার পেন্ট পরে হেলেদুলে হেটে চলছে ফাহাদ। সব শেষ হয়ে গেছে আজ। হারিয়ে গেছে বুক ভরা ভালোবাসা। নিজের বিশ্বাসের কাছেও সে হেরে গেছে। মন জুড়েঁ একটা বিশ্বাস ছিলো সে খুজেঁ পাবে তার প্রেয়সীকে। কিন্তু না। কোথাও খুজেঁ পায়নি তাকে। আজকে রাতের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে বাড়িতে।একসপ্তাহের মধ্যে হয়তো মায়ের পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে।মেয়েটাকে কি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা সম্ভব? সম্ভব না হলেও যে বিয়েটা করতে হবে। সব সংসারে তো ভালোবাসা থাকেনা। হয়তো আমার সংসারটাও তাদের সংসারের মতোই হবে।শুধু দায়িত্বের সংসার।ভালোবাসার নয়। হয়তো দেখতে দেখতে একটা সময় ভালোবাসাও হয়ে যাবে। সূর্য ডুবে গেছে। শুধু তার লাল আভা ছড়িয়ে আছে এখনো পৃথিবীর বুকে। এক্ষনি হোটেলে গিয়ে রাতের মধ্যেই তাকে ফিরে যেতে হবে। এসব ভেবে আনমনে হাটতে গিয়েই পায়ের সাথে কিছু একটা বেধেঁ ঝুমঝুম করে বেজে উঠলো।। শব্দটা শুনে স্তব্ধ হয়ে রইলো। শব্দটা খুব পরিচিতো তার। হেলে দূলে হাটতে গিয়ে পা চলার সাথে সাথে কোথায় গিয়ে ছিটকে পরলো কে জানে। বুকটা ধুকপুক করছে। কিছুটা নিমজ্জিতো এই আভায় পাগলের মতো খুজেঁ বেড়াচ্ছে শব্দ হওয়া জিনিসটাকে।কিন্তু কোথাও পাচ্ছেনা। জায়গাটা থেকে চার পাঁচ হাত দুরুত্বে গিয়েও লন্ডভন্ড করে চারোদিকে খুজেঁ বেড়াচ্ছে ফাহাদ। প্রায় আধঘন্টা খুঁজাখুঁজি করেও কিছু পায়নি ফাহাদ। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো। তার কেনো জানি মনে হচ্ছে সে তার প্রেয়সীকে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছে। খুব কান্না পাচ্ছে তার খুব জোড়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো
-” এমন লুকোচুরি কেনো করছো আমার সাথে? মাত্র আজকের রাতটা আছে আমার হাতে প্রেয়সী। প্লিজ দেখা দাও। তোমাকে হারালে যে নিঃস্ব হয়ে যাবো। ভালোবাসাটাই মরে যাবে আমার। প্লিজ দেখা দাও। “চিৎকার করে বলে উঠলো ফাহাদ। আশেপাশের কিছু মানুষ তাকিয়ে আছে তার দিকে সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। বুক ভাঙা কান্না নিয়ে উঠে দাঁড়াতে গেলেই ঝাপসা চোখে তার থেকে কিছুটা দূরে কয়েকটা পাথর চিকচিক করে উঠলো।একলাফে সেখানে গিয়ে জিনিসটা হাতে তুলে নিলো। খুশিতে চোখের পানি গাল গড়িয়ে পরছে।এই যে সেই নূপুর। যা তার প্রেয়সীর পায়ে ছিলো। তারমানে আশেপাশে কোথাও আছে সে। কিন্তু কোথায়? মনে মনে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানিয়ে হাতে থাকা নূপুরের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে ফাহাদ। ফাহাদ শিয়র।এই নূপুরটা তারই প্রেয়সীর। এটা খুঁজতে নিশ্চয়ই এখানে আসবে। নূপুরটাতে এখন পযর্ন্ত ঠিক কতোটা চুমু খেয়েছে ফাহাদ নিজেও জানেনা। সে অপেক্ষা করবে। এখান থেকে তার প্রেয়সীকে না নিয়ে কোথাও যাবেনা সে। আশেপাশে হেটে পায়চারি করছে ফাহাদ। যদি নূপুরটা তার প্রেয়সীর হয় তাহলে নিশ্চয়ই সে এখানে আসবে। আমার মতো যদি তার মনেও এমন ভালোবাসা থাকে ছুটে আসবে নূপুরটার কাছে। এটা তার বিশ্বাস।
-“মাত্র একটা নূপুর ইতো উপমা। আই প্রমিজ আমি তোকে অর্ডার করে ঠিক একই রকম দেখতে একটা নূপুর ব্যবস্থা করে দিবো। তারপরও একটু শান্ত হ।” সেই কখন থেকে সামি আর ইশা উপমাকে বুঝিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কান্না করেই যাচ্ছে উপমা। কিছুতেই তার থামার নাম গন্ধ নেই।কারোর কথাই এইমূহুর্তে কানে তুলতে ইচ্ছে করছেনা উপমার। তার মন জুড়েঁ চলছে কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়। সেই মানুষটাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। যাকে স্বপ্নেই ভালোবেসে মেতে আছে সে। যাকে ঘিরে পুরো পৃথিবী একেঁ রেখেছে। একা হলেই যে মানুষটার সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেয়া অজানা অভিমান করতো , সে কিভাবে বুঝবে আমি তার প্রিয়তমা? নূপুরটা হারালো মানেই সেই মানুষটাকে হারিয়ে ফেললো উপমা। ভেবেই আরো কান্না পাচ্ছে তার।মনেহয় কানের কাছে যেনো ফিসফিসিয়ে বলছে,
” হারিয়ে ফেললে প্রেয়সী আমার ভালোবাসার চিহ্নটাকে? একটা মাত্র নূপুর। এটাকেও আগলে রাখতে পারলেনা?” ঢুকরে কেঁদে উঠলো উপমা।
-” আমি বোধহয় সেই মানুষটাকে আর খুজেঁ পাবোনা রে। ”
-“ওহ গড। আর ইউ সিরিয়াস উপো? তুই এখনো সেটা মাথায় নিয়ে ঘুরছিস? দোস্ত যাস্ট ড্রিম ছিলো ওইটা রাইট? এইটা নিয়ে এতোটা সিরিয়াস হওয়া কি তোর ঠিক হচ্ছে?”
-” আমি কিছু জানিনা আমার ওই নূপুরটাই চাই।প্লিজ দোস্ত আমি এক্ষনি ওই নদীর পার যাবো। তোরা থাক।”
-” পাগল তুই ? তুই এমন সময় নদীতীরে যাবি আর স্যার তোকে এমনিই যেতে দিবে? ” চিল্লিয়ে বলে উঠলো সামি। সামিকে হাত দিয়ে ইশারায় থামিয়ে দেয় ইশা। কেউ স্বর্ণের কোনো অলংকার হারালেও হয়তো এতোটা কষ্ট পেতোনা যতোটা এই সামান্য নূপুর হারিয়ে পাচ্ছে উপমা।ইশার খুব কষ্ট হচ্ছে। জানেনা আদৌকি স্বপ্নের ভালোবাসা সত্যি হওয়া সম্ভব? যদি সম্ভব হয় খুব শীগ্রই তাদেরকে এক করে দাও আল্লাহ। ইশা আর সামির দিকে তাকিয়ে কান্নাময়ী কন্ঠে বলে উঠলো উপমা,
-“আমরা ভোর ছয়টায় বেক করবো আর কখন খুঁজবো বল? প্লিজ আমি মেনেজ করে নিবো।” উপমার কথা শুনে ইশা বলে উঠলো,
-” ওকে তুই রেস্ট নে। তোর পায়ে এমনিতেই ব্যাথা আমরা দেখছি। ”
-“নাহ আমিও যাবো এটুকু ব্যাথা কিছু হবেনা। “বলেই লাফিয়ে উঠে পরলো উপমা। কলেজ থেকে তিনদিনের জন্য পিকনিকে এসেছে উপমা। বিকেলে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়েই হোচট খেয়ে পরে গিয়েছিলো আর তখনি হয়তো অজান্তেই নূপুরটাও পরে গেছে ।রুমে এসেই উপমার হুস হলো যে তার নূপুরটা নেই। রুমের আশেপাশে অনেক খুজেঁও পায়নি কেউ। ম্যামকে খুব কষ্টে মেনেজ করে মাত্র আধাঘন্টা সময় পেলো ওরা।খুব দ্রুতই বিকেলবেলার জায়গাটিতে চলে এলো ওরা। খুব কম মানুষের আনাগোনা। এর মধ্যে কেউ পেয়েছে কিনা কে জানে।মোবাইলের টর্চার দিয়েই খুব মনযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো তিনজন। পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে । সবাই সবার মতো হাটছে। হালকা হিমেল বাতাস ঝিরঝির করে বয়ে যাচ্ছে।
-” এই উপো পানির ঢেউয়ে আবার পানিতে নিয়ে যায়নিতো? “সামির দিক চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে ইশা বলে উঠলো ,
-এতো নেগেটিভ ক্যান তুই? পজেটিভ চিন্তা কি তোর মাথায় জায়গা পায়না?? এমনিতেই বেচারী মরাকান্না জুড়েঁ দিয়েছে তার উপর তুই এই কথা বলছিস।”
-” আরে এভাবে কেনো বলছিস নিতেওতো পারে।” হাত দুটো সামির সামনে জোড় করে,
-” আরে আমার মা চুপ কর তুই।” চোখের পানির গাল গড়িয়ে পরছে কিন্তু ঝাপসা চোখেই খুজেঁ বেড়াচ্ছে উপমা।আর মাত্র দুই মিনিট সময়। এর মধ্যেই হোটেলে ফিরে যেতে হবে চিৎকার দিয়ে বসে পরলো উপমা। উপমার চিৎকার শুনে আশেপাশের মানুষ বারবার তাকাচ্ছে তার দিকে। ইশা কেমন যেনো হয়ে গেলো। এই মূহুর্তে কি করা উচিত সে বুঝতে পারছেনা।
-“উপো প্লিজ বোন আমার একটু শান্ত হ। ”
-” আমি বোধহয় আর সেটা পাবোনা ইশ্যূ।”বলেই কাঁদছে উপমা।
-“প্লিজ শান্ত হ। দেখ আশেপাশের মানুষ কিভাবে দেখছে।” সামি বলে উঠলো। হঠাৎ করেই কিছু কথার শব্দ উপমার কানে ভেসে এলো।
চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে