?বউ?
#Writer_Hridoy_Drz
পিচ্চি একটা মেয়েকে ঘরের বউ করে নিয়ে এসেছি, লাল টুকটুকে একটা বেনারসি পরে আমার সামনে বসে আছে গুটিসুটি হয়ে, চোখ মুখে কি ভয়…আমি কাছে গিয়ে বসতেই সরে গেল, ঘোমটা টা তুলতেই যেন চোখ জুড়িয়ে গেল ! মাশাআল্লাহ কি অপুর্ব সৌন্দর্য তার, অনেক সময় ধরে তার ঐ দুটি নেশা লাগানো তাকিয়ে ছিলাম…বউয়ের গালে হাত দিতেই দূরে গিয়ে বসলো, দেখলাম ফুফিয়েঁ ফুফিঁয়ে কাদঁছে। ওর চোখের পানি দেখে বুকের ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে গেলো, মনে হলো সে কি তাহলে আমাকে বিয়ে করে সুখী না? সে কি অন্য কাউকে ভালোবাসে, এরকম হলে আমাকে বিয়ের আগে একবার জানাতে পারতো তাহলে তো আমি এই বিয়েটা করতাম না; আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো তখন যখন বউ আরো জোরে কান্না করতে শুরু করলো….
– আরে আরে কি হয়েছে কান্নাকাটি করছো কেন?
– আ্যআ্যআ্যআ্য
– আরে বাবা বলবে তো কান্না করছো কেন
– বললেই কি আমার কান্না থামাতে পারবেন? ( অভিমানভরা কন্ঠে )
– বলেই দেখো, চেষ্টা করবো।
– আমার মায়ের কথা খুব মনে পরছে, আমি মায়ের কাছে যাবো, আমাকে নিয়ে যাবেন? আমি না মাকে কখনো একা এভাবে কোথাও থাকি নি…. ( আবার ফুফিঁয়ে কেদেঁ উঠলো )
– আচ্ছা শোনো এখন তো রাত অনেক হয়ে গেছে আর তাছাড়া আজ আমাদের বাসর রাত, এখন যদি আমরা তোমাদের বাসায় যাই সবাই খারাপ ভাববে, আমি তোমাকে কাল নিয়ে যাবো প্রমিজ।
– সত্যি নিয়ে যাবেন তো?
– হুম বাবু তিন সত্যি।
– এই আমি মোটেও বাবু না, আমি অনেক বড়।
– তাই নাকি? তা আমার বউ কত্ত বড় দেখিতো.।
– হিহিহি আপনার থেকে একটু ছোট। আমাকে একটা জিনিস দিবেন?
– হুম বলো।
– আমাকে এত্তগুলো চকলেট আর আইসক্রীম কিনে দিবেন?
– এখন? এতো রাতে? দোকান তো সব বন্ধ
– আমি জানিনা কিছু ( মুখ ফুলিয়ে )
– আচ্ছা বাবা যাচ্ছি যাচ্ছি আর মুখ ফুলাতে হবে না।
কি করার বউয়ের আবদার মিটাতে বাসর ঘরে বউ রেখে গেলাম বৃষ্টির ভিতর আইসক্রীম আর চকলেট আনতে। এগুলো এনে বউয়ের হাতে দিতে বউ তো খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো।
– আমাকে ছাদে নিয়ে যাবেন?
– এই বৃষ্টি তে ছাদে যাবে….!
– হুম, বৃষ্টিতে আপনার সাথে ভিজে ভিজে চকলেট আর আইসক্রীম খাবো।
– আচ্ছা চলো।
– কিন্তু আমিতো শাড়ি পরে হাটতে পারিনা
– আমি বউকে কোলে তুলে নিলাম, আর ও আমার টি-শার্ট এর কলার টা আকড়ে ধরলো।
ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে দুজনে দাড়িয়ে আছি, ও একদম বাচ্চাদের মতো করে বৃষ্টি তে ভিজে ভিজে আইসক্রীম খেয়ে চলছে আমি এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি, ঠোঁটের চারপাশ লেগে আছে অজান্তেই ওর একদম কাছে চলে গেলাম; নিজের ঠোঁট দিয়ে ওর এইটুকু মিষ্টির সাদ আমি নিলাম, মেঘ মানে আমার বউ একটু কেপে উঠলো আর বলল এটা কি করলেন? আমার আইসক্রীম কেন খেয়ে নিলেন।
– এভাবে যদি খেতে দাও তাহলে আরো অনেক আইসক্রীম কিনে দিবো।
– সত্যি?
– হুম সত্যি।
– আচ্ছা বাসর রাত মানে কি?
– ওর এরকম প্রশ্নে একটু লজ্জা পেলাম, তারপর বললাম বাসর রাত মানে আমরা যা করছি সেটাই, এই যে বৃষ্টি তে ভেজা, তোমার সাথে দাড়িয়ে গল্প করা, আইসক্রীম খাওয়া এটাই বাসর রাত আর বাদবাকিটা সময় হলে বুঝবা বুঝেছ পিচ্চি বউ আমার।
– হুম বুজলাম। আমার ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমাবো।
– হুম রূমে গিয়ে কাপড় বদলে ঘুমাবো চলো
।
।
।
।
– কি হলো পিচ্চি ঘুম আসছে না
– না
– কেন?
– সবসময় মা আমাকে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিতো।
– ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার? এদিকে আসো
– কেন?
– আসোই না
মেঘকে নিজের বুকের ভিতরে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম আর ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। রোদের বুকে আজ শুধুই মেঘের বসবাস, আজ অন্যরকম এক শান্তি লাগছে আমার…..!
এরপর থেকে মেঘ আর আমি এক নতুন সংসার শুরু করলাম, যেখানে ভালোবাসার কোনো অভাব ছিলো না, ওর এই বাচ্চা বাচ্চা আবদার গুলো আমার খুব ভালো লাগতো, মাঝে মাঝে ওর সাথে বৃষ্টি তে হাত ধরে খালি পায়ে হাটা, ছাদে বসে জোসনা দেখা, ওর ঠোঁটের আইসক্রীম টুকু খেয়ে নিয়া, শীতের দিনে নিজের শার্টের ভিতরে ওকে নিয়ে জড়িয়ে থাকা সব মিলিয়ে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ছিলো আমাদের জীবন। আমি চাই আমার এই পিচ্চি বউটা সবসময় এমন পিচ্চি থাকুক।
%শরীরের চাহিদা মেটানো খুব সহজ কিন্তু এই ছোট ছোট ভালোবাসা গুলো পাওয়া খুব কঠিন, তাই নিজের শারীরিক লালসা না মিটিয়ে একটু ভালোবাসতে শিখুন খুব সুখী হবেন নাহলে দুদিন পর শারীরিক লালসা ঠিকই মিটে যাবে কিন্তু ভালোবাসা আর খুজে পাবেন না….. কেমন লাগলো জানাবেন। %
কিছু গল্প লেখার সময় জানিনা কেন নিজের চোখ থেকেই পানি ঝরে
আর মনটা কেদে কেদে বলে যদি এমন কেও জীবনে আসতো
অপেক্ষায় আছি কেও একদিন আসবে
#সমাপ্ত