হ্যাকারের_লুকোচুরি
সিজন_৩
পর্ব_৪
রাফি – এটা কিভাবে সম্ভব! স্যাটেলাইট এন্টেনাটি ট্রান্সমিট করছে অথচো তার আশে পাশে কোন কন্ট্রোলরুম থাকবে না! কন্ট্রোলরুম না থাকলে কে ট্রান্সমিট করছে ডেটাগুলো!!!! পিকাচু, স্যাটেলাইটের ইনফ্রারেড ক্যামেরা মোড অন করো।
হয়তো কোন সিক্রেট চেম্বার নেই এন্টেনার আশেপাশে কিন্তু এতো বড় একটা এন্টেনা আর সাথে এত পাওয়ারফুল সিগন্যাল কোন মোববাইল ডিভাইস দিয়ে কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়, অবশ্যই ক্যাবল কানেকশন দিয়ে সার্ভারের সাথে কানেক্ট আছে ভাঙ্গা এন্টেনাটি। ইনফ্রারেড ক্যামেরা দিয়ে এক্সরে করলে মাটির নীচ দিয়ে কোন ক্যাবল নেয়া হয়েছে কিনা তা দেখা যাবে।
পিকাচু – switching infrared mode…..
Scanning ……..
রাফি মনিটরে দেখতে পায় মাটির নীচ দিয়ে খুব সন্তর্পণে কেবল কানেকশন টেনে নেয়া হয়েছে।
রাফি – পিকাচু, ক্যাবল লাইন ফলো করো, এই ক্যাবলের শেষ প্রান্তেই আছে কমিউনিকেশন সার্ভারটি।
পিকাচু – পিকা পিকা। ।।।।
পিকাচু স্যাটেলাইটের ক্যামেরা জুম আউট করে ক্যাবলের অপরপ্রান্ত খুঁজে পায় একটা পোড়া ৫ তলা ভাংগা বাড়ির মুখে।
পিকাচু – ক্যাবলের শেষপ্রান্তে চলে এসেছি।
পিকাচু স্যাটেলাইট দিয়ে পোড়া বাড়িটার একটা ৫ডি ইমেজ তৈরী করে রাফিকে দেখালো।
রাফি ভালোভাবে দেখে বুঝলো যে বাড়িটা কোন এক সময় বোমার আঘাতে ভয়ংকর আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। রং জ্বলে গেছে আগুনে পুড়ে। ভারী তুষারপাতের কারনে বাড়িটির অধিকাংশ জায়গা বরফের তলায় ঢাকা পড়েছে।
রাফি – পিকাচু, স্যাটেলাইট দিয়ে থার্মাল ইমেজ শো করো বাড়িটার। বেশ বড়সড় সার্ভার দিয়ে কন্ট্রোল করতে হবে এই স্যাটেলাইট তিনটিকে। আর সার্ভার এবং মানবদেহ দুইটাই উত্তপ্ত যা থার্মাল ইমেজে ধরা পড়বে। এই কনকনে ঠান্ডা এলাকায় কেউ একটা দিয়াশলাই কাঠি জ্বালালেও তা থার্মাল মোডে ধরা পড়বে।
পিকাচু – switching to thermal……..
Scanning …..
রাফি দেখতে পায় বাড়িটার ২য় তলায় থার্মাল মুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটা খুব বড়সড় নয়। একজন মানুষ আর তার সামনে একটা পিসি অথবা ল্যাপটপ জাতীয় কিছু আর একটা মাত্র কানেক্টর হার্ব যা ল্যাপটপ থেকে সিগন্যাল ভাঙ্গা এন্টেনায় পৌছে দিচ্ছে।
রাফি – তারমানে কেউ একজন একটা মাত্র ল্যাপটপ দিয়ে তিনটা স্যাটেলাইট চেইন নিয়ে খেলা করছে! পিকাচু, ওই ঘরের ভেতরের সামান্যতম মুভভমেন্টের আপডেট ও আমার চাই। কড়া নজরদারি চালাও ওই পোড়া বাড়ির উপর।
রাফি চোখ সরাতে পারে না স্ক্রীন থেকে। থার্মাল ইমেজে শুধু তাপের উৎস হিসেবে তিনটে বস্তু শো করছে। অবয়ব দেখে মানুষ ল্যাপটপ আর কানেকশন হার্ব বোঝা যাচ্ছে, এছাড়া তাদের চেহারা দেখার কোন সিস্টেম নেই। রাফি অপেক্ষা করতে থাকে কখন ঘরের ভেতরে থাকা মানুষের নড়াচড়া দেখতে পাবে।
কিন্তু এভাবে বসে থাকলে কি আর অপরাধীর কিছু করা যাবে! রাফি ভাবতে থাকে এখন রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স কে ইনফরমেশন দেয়া উচিৎ হবে কি না। আর রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স কে জানাবেই বা কি রাফি। এখন পর্যন্ত কোন পাকাপোক্ত প্রমান যোগাড় করা সম্ভব হয় নি রাফির পক্ষে। আর এই ভাংগা এন্টেনার ট্রান্সমিশন ও যেভাবে ধরা হয়েছে সেটা বেআইনী তো বটেই সাথে অবৈধ নজরদারি রাখার কারনে হীতে বিপরীত হতে পারে। তারপরও রাফি একটা চেষ্টা করতেই চায়।
রাফি – পিকাচু, থার্মাল ইমেজ আর ইনফ্রারেড ইমেজগুলি রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স এর সার্ভারে টপ প্রায়রিটি হিসেবে শো করো। যেহেতু কোন পোক্ত প্রমান নেই সেহেতু ঘরে বসে থাকা ওই ব্যক্তি ধরা পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্সের হাতে ওই ল্যাপটপ ধরা পড়লেই সব প্রমান পাওয়া যাবে।
পিকাচু – transmitting signals …….
Showing security protocol ……
পিকাচু রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স সার্ভারের একটা টপ লেভেল কেস হিসেবে ওই থার্মাল ইমেজ শো করে যাতে এজেন্সি কোন ধরনের ইতস্তত বোধ না করে।
কিন্তু এজেন্সি থেকে রেড জোন এলার্ট রয়েছে ওই এলাকায়। প্রচুর পরিমানে ল্যান্ডমাইইন রয়েছে যেগুলো গৃহযুদ্ধের সময় স্থাপন করা হয়েছিলো, আর ল্যান্ডমাইন বহু বছর ধরে সক্রিয় থাকতে পারে। যেখানে রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স সক্রিয় ল্যান্ডমাইনের জন্য রেডজোন করে রাখছে সেখানে একজন মানুষ কিভাবে এখানে ঢুকে এসব কর্মকান্ড চালাচ্ছে।।।
পিকাচু – রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স ড্রোন দিয়ে দেখার চেষ্টা করবে ওখানে কে আছে। ড্রোনকে ছাড়া হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স বেস থেকে।
রাফি মনে মনে ভাবে যে সে তো ড্রোনের কথা ভাবেই নি। আর ভেবেই বা কি করবে। নিজের ঘরের বেডরুমে বসে কি আর ফিল্ড এজেন্ট এর মত কাজ করা যাবে!
রাফি – পিকাচু, ড্রোনের ট্রান্সমিশন থেকে লাইভ ফিড আমাকে শো করো।
পিকাচু – লাইভ ট্রান্সমিশন এখনো শুরু হয় নি। শুরু হলে পিকাচু ফিড শো করবে।
রাফি অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু স্যাটেলাইটের থার্মাল ক্যামেরায় পোড়া বাড়িতে একটা মুভমেট ধরা পড়ছে। কানেক্টর হার্ব এবং কম্পিউটারটির মার্কিংস থার্মাল ক্যামেরা থেকে উধাও হয়ে যেতে লাগলো, অর্থাৎ কম্পিউটারটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এদিকে ড্রোনটি পোড়া বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে । থার্মাল ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে লোকটি বিল্ডিং থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে।
রাফি – পিকাচু, ওই পোড়া বাড়ি থেকে যে ই বের হোক না কেন তাকে ফলো করবে তুমি।
পিকাচু – একটা সমস্যা রয়েছে, যে স্যাটেলাইট দিয়ে বাড়িটার উপর নজরদারি রাখা হচ্ছিলো, সেই স্যাটেলাইটটি রাশিয়ান ইন্টেলিজেন্স এর এবং এলার্ট পাবার পর থেকে তারা এই স্যাটেলাইটের থার্মাল ইমেজিং ফলো করছে, এখন যদি পিকাচু স্যাটেলাইটটিকে নিজের মত কন্ট্রোল করতে চায় তাহলে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০% যে স্যাটেলাইটটি অন্য কেউ ও নিয়ন্ত্রণ করছে। সম্ভাবনা রয়েছে স্যাটেলাইট ব্লাকআউট করে দেয়ার যাতে অন্য কেউ স্যাটেলাইটের একসেস নিয়ে থাকলেও তা বন্ধ হয়ে যাবে।
রাফি – তাহলে তাদের পর্যবেক্ষণই ফলো করতে থাকো পিকাচু।
পিকাচু – পিকা পিকা।
বিল্ডিং থেকে বের হয়ে এঁকেবেঁকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সেই ব্যক্তিটি আর তার হাঁটার কোন নিদৃষ্ট প্যাটার্ন ও নেই। রাফি ভাবতে থাকে হয়তো লোকটি জানে কোথায় কোথায় মাইনগুলো পোতা আছে যার থেকে বাঁচতে সে এঁকেবেঁকে পথ ধরে হাঁটছে।
পিকাচু – হাটার ধরন এ্যানালাইসিস করে বোঝা যাচ্ছে ব্যক্তিটি একজন নারী এবং বয়স ২০ থেকে ৩০ এর ভেতর।
রাফি গম্ভীর হয়ে যায়। ২০ থেকে ৩০ বছরের একটি মেয়ে একটা মাত্র ল্যাপটপ আর ভাংগা একটি স্যাটেলাইট এন্টেনা দিয়ে এই পুরো মিশন চালাচ্ছে!! কে এই মেয়ে?
ড্রোনটি প্রায় ঘটনাস্থলে পৌছে গেছে, কিন্তু হঠাৎ মেয়েটির হাঁটার গতি বেড়ে যায়, তুষারঢাকা পথে হঠাৎ করেই মেয়েটি উধাও হয়ে যায়। রাফি আর তাকে ল্যাপটপের স্ক্রীনে দেখতে পায় না।
রাফি – পিকাচু? কোথায় গেলো মেয়েটি?
পিকাচু – সিগনেচার লষ্ট। মেয়েটিকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না আর।
রাফি – লাষ্ট ফুটেজ শো করো যেখানে মেয়েটিকে শেষবারের মত দেখা গেছে।
পিকাচু – পিকা পিকা।
পিকাচু রাফিকে দেখায় যে মেয়েটি পকেট থেকে কিছু একটা বের করে হাতে নিয়েছে আর তার পরমুহূর্তে স্যাটেলাইট স্ক্যানারের বাইরে। কিভাবে সম্ভব।!!!!!
পিকাচু – মেয়েটি ক্লোকিং ডিভাইস ব্যবহার করার সম্ভাবনা ৮৭%.
রাফি টেবিলে একটা চাপড় দিয়ে মাথায় হাত দেয়। মেয়েটির কাছে ক্লোকিং ডিভাইস ও আছে যা একটা ডিজিটাল সুরক্ষা চাদর তৈরী করে যা স্যাটেলাইট এবং রাডারের নজর এড়াতে সক্ষম, অনেকটা তুষার রংএর চাদর গায়ে জড়িয়ে তুষারের উপর শুয়ে পড়ার মত। চোখের সামনে থাকলেও দেখে বোঝার উপায় নেই। ড্রোন ঘটনাস্থলে পৌছায়, পুরো জায়গাটি ঘুরে ঘুরে খুঁজেও কিছু দেখতে পেলো না। তুষারপাত হতে থাকার জন্য পায়ের নিশানাও মুছে গেছে।
এ তো মহা মুসিবত হলো। ক্লোকিং ডিভাইসের ব্যাটারি ব্যাকআপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই মেয়েকে আর খুজে পাওয়া যাবে না কিন্তু ততক্ষণে কি আর সে বসে থাকবে? ড্রোনের খোঁজাখুঁজি শেষ হতে হতে ওই মেয়ে বাতাসে মিশে যাবে। আর একবার যেহেতু এই ফ্যাসিলিটি কম্প্রোমাইজ হয়ে গেছে ওই মেয়ে ২য় বার এই ফ্যাসিলিটিতে ফেরৎ আসবে না। এই লিড নষ্ট হলে রাফির পক্ষে আবার নতুন করে খুঁজতে অনেক সময় নষ্ট হবে।
পিকাচু – নিউক্লিয়ার স্যাটেলাইটটি আবারো ডাটা রিসিভ করছে। তবে এবার তিনটি স্যাটেলাইট ই নিজেদের মধ্যে ডেটা আদানপ্রদান করছে।
রাফি – তার মানে আরো ফ্যাসিলিটি আছে? পিকাচু তুমি কি সিগন্যাল লোকেট করতে পেরেছো?
পিকাচু – সাবমেরিন থেকে সিগন্যাল ট্রান্সমিট হচ্ছে।
রাফি – তার মানে সাবমেরিনটি পানির উপরে ভেসে আছে! পিকাচু, তুমি কি খুঁজে পেয়েছো সাবমেরিনটিকে?
পিকাচু – লোকেট করা হয়ে গেছে। Do you want me to tag it?
রাফি – Yes, please.
পিকাচু – সার্ভেইল্যান্স স্যাটেলাইটে লেজার ট্যাগিং সিস্টেম রয়েছে। firing laser beam….
রাফির ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন লেজার বীম টেকনোলজি সম্পর্কে ধারনা রয়েছে তাই বুঝতে বাকী রইলো না যে পিকাচু কি করতে চলেছে।