হেমন্তের নীড় পর্ব-৪+৫

0
6

#হেমন্তের_নীড়
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-০৪
৭.
তাবদাহের তীব্রতায় ২০২৪ সালের জুলাইয়ের এক জ্যোৎস্নার রাতে তরু বিমর্ষ ভঙ্গিমায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো। সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা। ‘ছাত্রদের নিরাপত্তার জন্য এই কর্মসূচির উদ্যোগ’ এ বাণী সরকার জানালেও আসলে যে কীসের উদ্যোগ তা আমরা ভালোভাবেই বুঝতে পারি। দেশে নেট কানেকশন অফ আটদিন যাবৎ। শুনেছি, নিহতের সংখ্যা ছাড়াবে হাজারের ঘর। আহত প্রায় চল্লিশ হাজারের উপরে।

আমার মনে তখন নব্য প্রেমের ক্ষুধা। তাকে বারবার দেখতে চাওয়ার তৃষ্ণা। আমি তখনো বুঝিনি তাকে আমি ভালোবাসি। বুঝলাম সেদিনই,

ছাদে গিয়ে দেখে এলাম রাত ১১ টা বাজে তবুও তিনি তার চিলেকোঠায় ফিরেননি। অথচ রাত ৯ টার মধ্যে বাড়ি ফেরা তার অভ্যাস। দেশের এমন পরিস্থিতিতে তার এতো রাত পর্যন্ত বাইরে থাকা মোটেও ভালো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। আগেও বলেছি আমি খুব শান্ত মেয়ে। সব ঘটনা আমি প্রতিক্রিয়াহীন হ্যান্ডেল করতে পারি। কোনোকিছুর নেগেটিভিটি সহজে আমার মনে স্থান দেই না। কাজেই আমি স্থির হয়ে বারান্দায় বসে গেটের দিকে তাকিয়ে তার আসার অপেক্ষায় রইলাম।

রাত ২ টার দিকে সে ফিরলো। আমি অন্ধকারে দেখলাম দুই তিন জন ছেলে তাকে ধরে নামিয়ে দিয়ে গেলো। ভ্রু কুচকে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম। যেই দেখলাম সে ধীর-স্থির পায়ে পিঠ বাঁকিয়ে খুব কষ্টে হেটে আসছে অমনি দৌড়ে নিচে চলে আসলাম। আমার বড় জেঠু আজমল রহিম অর্থাৎ শুভ্র ভাইয়ার বাবা খুব রাত করে হাসপাতাল থেকে ফিরেন। তিনি ঘুমোতে যানও দেরি করেই। সেদিন ভাগ্য সহায় ছিলো, রাত দুইটার সময়ও জেঠু জেগে ছিলেন। সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন। আমি গিয়ে ধীর কণ্ঠে বললাম,

‘বড় জেঠু। একটু চিলেকোঠায় চলো।’

বলে রাখা ভালো আমার জেঠুর খুব পছন্দের ছেলে হলেন শুদ্ধ এবং এতো পছন্দের কারনটাও বলছি। জেঠু আমার দিকে ভ্রু কুচকে বললেন,

‘এতো রাতে ওই ছেলের কাছে কি?’

‘উঠো আগে, এতো কথা না বলে।’

জেঠু উঠলেন। জেঠুকে ম্যানেজ করে বাইরে নিয়ে এসে দেখি বাইরের সিড়ির সামনে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন শুদ্ধ। রক্তাক্ত শার্ট। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করা। জেঠু হালকা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন,

‘ওহ মাই গড। ইউ আর ব্লিডিং।’

শুদ্ধ চমকে গেলেন না। অসহ্য ব্যথায় তার দিন দুনিয়ার কোনো হুশ ছিলো না। তবে এই অসময়ে আমাদের উপস্থিতি যে তিনি আশা করেননি তা তার চোখ মুখ দেখে বোঝা গেলো। জেঠু গিয়ে শুদ্ধর এক হাত কাধে তুলে নিলেন আর গলার স্বরের উচ্চতার সতর্কতা বজায় রেখে বললেন,

‘ধর ধর তরু। ছেলেটা শরীরের ভর ছেড়ে দিচ্ছে। পরে যাবে।’

আমি তৎক্ষণাৎ ধরলাম। সিড়ি বেয়ে চিলেকোঠায় নিয়ে গিয়ে তার গায়ের শার্ট খুলে জেঠু তৎক্ষণাৎ আবার নিচে নেমে এলেন তার ডাক্তারি জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য। আমাকে বলে গেলেন একটা ভেজা কাপড় দিয়ে শরীরের ক্ষত স্থান ব্যতীত লেগে থাকা রক্ত গুলো মুছিয়ে দিতে। আমি বাইরে নিজেকে দেখাচ্ছি নদীর মতো শান্ত কিন্তু আমার হাত পায়ে অবিরাম কাঁপন। শুদ্ধ বললেন,

‘তুমি বারান্দায় বসেছিলে, তরু?’

আমি উত্তর দিলাম না। তার পিঠ মুছে দিতে গিয়ে দেখলাম পিঠের অবস্থা বেহাল। মারের দাগে একটুখানি জায়গা ফাঁকা নেই। তা দেখে এতোক্ষণে আমার চোখ টলমল হয়ে এলো। সেভলন দিয়ে মারের চোটে ফেটে যাওয়া জায়গাগুলো পরিষ্কার করে দিতে লাগলাম। শুদ্ধ বুঝে আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন,

‘ভয় পেয়ো না। একটুখানি পিটানি খেয়েছি। ব্যথা পাইনি। রক্ত কিন্তু আমার না রক্ত আমার এক বন্ধুর। জানো, আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমার বন্ধু গুলি খেয়েছে। মনে হয় বাঁচবে না, তরু।’

তার তরু বলে ডাকটা এতো করুন শোনা গেলো আমার কানে যা আমি বলে বোঝাতে পারছি না। কাজেই নিজের করুণতা ঢাকতে আমি মাথা নিচু করে কাজ করে গেলাম। এটা নাকি একটুখানি? তার নাকি ব্যথা লাগেনি! সে অনবরত আরো কিছু কপট মিথ্যা বলে গেলো অথচ আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি তার কাধের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে। ওই ক্ষত বিক্ষত শরীরটা দেখে আমার শক্ত করে ধরে রাখা হৃদয়ের শেষ রক্ষা আর হলো না। চোখ থেকে পানি নিঃশব্দে টুপ করে তার পিঠের উপর পরলো। শুদ্ধ টের পেলেন না। আমি নিজেকে সামলে শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,

‘আন্দোলনে গিয়েছিলেন, না?’

‘হ্যাঁ। কুকুরদের অতর্কিত হামলায় পরলাম, বুঝলে? এ কয়েকদিন তক্কেতক্কে থেকে আজ ঝোপ বুঝে কোপ মারলো আমার উপর। তারউপর কাল ওদের এক লিডারকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছি কি না! হলগুলোর সামনে ককটেল ফেলছে, গুলি করছে। প্রশাসন তাকিয়ে দেখছে।’

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধালাম,

‘আপনি কি একটু শুবেন?’

বলতে বলতেই জেঠু চলে এলেন। ড্রেসিং করতে করতে তিনি প্রশ্ন করলেন,

‘বাংলার বাঘ তোমরাই। চালিয়ে যাও বাংলার রণসূর্য’রা।’

শুদ্ধ মাথা দুলিয়ে বললো,

‘চালাতে আর পারছি কই। নেট কানেকশন সব অফ। 4g কানেকশন অফ। কারফিউ জারি। সাধারণ জনগণের চরম ভোগান্তি।’

‘এই গোটা একটা দেশের সাধারণ জনগণের ছেলে-পেলেদের জন্যই তোমরা মার খাচ্ছো, প্রাণ দিচ্ছো। প্রাউড ফিল কর গিল্টি নয়। মানুষ তোমাদের পাশে আছে। তোমার বাবা -মা জানে তোমার এই অবস্থা?’

‘জি না। শুধু আন্দোলনে যাই এটুকুই জানে।’

‘পিছু হটতে বলে না?’

‘কখনো না। বললেও পিছু হটবো কেনো? বাঁচলে সিংহের মতো বাঁচবো। আমি মাকে বললাম, ভয় পাও কেনো? আমি মরলে তুমি হবে শহিদের মা। তুমি হবে গর্বিত মা। বাবা বললেন, ভয় পাবা না। বাংলার দামাল ছেলে তো তোমরাই। ক্যাম্পাস উড়ে যাক, হল উড়ে যাক, বৃহদাংশ দেহ মাটিতে লুটিয়ে যাক। তবু গুটি কয়েক একজোট হয়েই লড়ে যাও।’

শুদ্ধ আরো বলে গেলেন, ‘ওই যে একদম ছোট বেলায় কাজী নজরুল ইসলাম এর লেখা ‘আমি হব’ কবিতায় পড়েছিলাম না, আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে? তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে।’

জেঠু শুদ্ধর বাহুতে চাপর মেরে বললেন,

‘বাঘের বাচ্চা। বাংলার মূল চালিকা শক্তি তো ছাত্ররাই। কোটা প্রথা নিপাত যাক। মেধাবীরা মুক্তি পাক।’

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমি আর্তনাদ করে বললাম, ‘আস্তে জেঠু। মেরো না।’

‘আরে বেটি, সাহস দিচ্ছি।’

‘তুমি তার পিঠের অবস্থা দেখো। শুধু তো হাতই দেখছো।’

জেঠু ক্ষত স্থানগুলো ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। তার ক্ষতের একেকটা জ্বলন্তির অস্ফুট আর্তনাদ আমার মন দগ্ধ করলো। কাজ শেষ করে জেঠু, আমি ফিরে আসতে গেলে শুদ্ধ আমাকে ডেকে বললেন টেবিল থেকে পানির জগটা তার মাথার কাছে দিয়ে যেতে। জেঠু চলে গেলো। আমি জগ তার মাথার কাছে দিয়ে চলে আসতে নিলেই তিনি মেঘমন্দ্র স্বরে বললেন,

‘তরু, যখন তখন এই চিলেকোঠার দরজায় এসো না তুমি।’

আমি স্তব্ধ দাঁড়িয়ে থেকে তার কথা মর্মার্থ টা বুঝলাম। তারপর ধীর হাতে লাইট টা অফ করে দরজা চাপিয়ে এসে পরলাম। সেদিন প্রথম বুঝেছিলাম আমি তাকে বস্তুত ভীষণভাবেই ভালোবেসে ফেলেছি এবং আমার এই ভালোবাসার প্রথম দিনেই তার কাছে বাজে ভাবে ধরা খেয়ে গিয়েছি। তখন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছি আমার চোখের পানির উষ্ণতা তিনি অনুভব করেছেন এবং সেই সাথে আমাকে অনুভব করিয়েছেন একপাক্ষিক ব্যর্থ ভালোবাসার অধ্যায়ের সূচনা। সেই থেকেই মূলত আমার খুকি ডাকের নিপাত হয়েছিলো। এতো বিশ্রীভাবে তার মুখের ‘তরু’ হতে তো আমি চাইনি।

চলবে

#হেমন্তের_নীড়
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-০৫
৮.
ধ্রুব ভাই হলেন শান্ত। কথা কম, তার কাজ বেশি। নিজে যেটা ঠিক মনে করবেন সেটাই করে ছাড়বেন। এর কোনো হেরফের হবে না। তিনি সারাদিনে ১০ কথাও বলেন না। তার গ্যাঞ্জাম করার স্বভাব নেই। এই এক ভালো দিক তার। কথা কাটাকাটি, তোষামোদি, আহ্লাদি, ঝগড়া এসব তার ধাতে নেই। সে চুপচাপ নিজের কাজটুকু শেষ করে উঠে চলে যাবেন। এতে কারো কোনো অসুবিধা হলো কি হলো না সেটা তার দেখার বিষয় নয়।

এই যেমন ধরুন সেদিন তিনি তার কর্মস্থলে যাননি। আমি নিজঘরে আধশোয়া হয়ে ফোন টিপছি। তিনি আমার ঘরে এসে ঘরটাকে তছনছ করে কি যেনো খুঁজে চলেছেন। প্রথম দিকে আমি বিশেষ পাত্তা দিলাম না। কিন্তু শেষমেশ পাত্তা না দিয়ে কোনো উপায়ও খুঁজে পেলাম না। যতই হোক রুমটা তো আমার। বিরক্তিতে কপাল কুচকে শুধালাম,

‘কি খুঁজছো?’

‘তোর কাছে আমার একটা সিম আছে না?’

সিমের কথা শুনে আমি উঠে বসলাম। ফোনটা হাত থেকে রেখে ঢোক গিললাম পরপর দুইবার। এই সিম দিয়ে আমি অপরিচিত সেজে শুদ্ধকে রাতে ফোন দিয়ে, মেসেজ দিয়ে জ্বালাতন করি। শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে রাগে ফোন দেওয়া শুরু করলেই সিম বন্ধ করে রেখে দেই। সিম’টা আমার ফোনের কাভারের ভেতরে। আমি ধীরে সুস্থে কাভার থেকে সিমটা বের করে ফুলদানির নিচে রাখলাম। ধ্রুব ভাইকে কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,

‘সিম লাগবে আমাকে বললেই তো পারো৷ এভাবে ঘর তছনছ করার কি মানে?’

‘কথা কম বলে বের করে দে।’

আমি অনেকক্ষণ খোঁজার নাটক করে হয়রান হয়ে বললাম,

‘আজ ক্লান্ত হয়ে গেছি কাল আবার খুঁজবো।’

‘এক থাপ্পড় দিলেই ক্লান্তি ছুটে তরতরা সোজা হয়ে যাবি। সিমে আমার ইম্পোর্টেন্ড একজনের নাম্বার সেভ করা।’

ধ্রুব ভাইয়ের ধমক খেয়ে আমি সত্যি সত্যি সোজা হয়ে গেছি। বিছানায় বসতে গিয়েও সটান দাঁড়িয়ে পরেছি। আমি ধ্রুব ভাইয়ার দিকে ঠোঁট উল্টে অসহায় চোখে তাকালাম। ধ্রুব ভাইয়ের মন গললো। উনি বিছানায় বসলেন সাথে হাত ধরে টেনে আমাকেও বসিয়ে দিয়ে বললেন,

‘তোকে একটা গল্প বলি শোন।’

আমি আগ্রহ নিয়ে তাকালাম। কারোর মুখ থেকে গল্প শোনা আমার এক ধরনের প্রবৃত্তি। আমি শুনতে খুব পছন্দ করি।

‘ওকে, প্রথমে গল্পের খাতিরে আমরা ধরে নেই ছেলেটার নাম অমুক আর মেয়েটার নাম তমুক ।’

‘এটা কোনো নাম হলো? তোমার এই অমুক তমুকের গল্প শুনার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। সরি।’

‘ওকে ঠিকাছে। ধর, আরাফ আর তুবা। তো, তুবা আরাফকে খুব ভালোবাসে। আরাফ তুবাকে একদম পাত্তা দেয় না। বেহায়া তুবা আরাফের পেছন পেছন ছুটে, লুকিয়ে দেখে, প্রত্যাখ্যান পেয়েও বারংবার ভালোবাসার প্রস্তাব নিয়ে ছুটে যায়। আরাফ তবুও তুবাকে ভালোবাসে না। একদিন আরাফকে গিয়ে বলে, ‘এই শেষবার তোমার কাছে এসেছি। আজ প্রত্যাখ্যান করলে কিন্তু আমি আর আসবো না। আরাফ পাত্তা দেয় না। রাগে, অভিমানে চোখ খিচে চলে আসার পথে তুবার একটা বাইকের সাথে এক্সিডেন্ট হয়। মেজর এক্সিডেন্ট নয় এই ছোটখাটো। তবে তুবার কাপড় ছিড়ে হাটুতে, কনুইয়ে আর কপালে গভীর ক্ষত হয়। রক্তে জামা কাপড় ভাসতে দেখে আর সারাদিন না খাওয়া তুবা সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়। আরাফ তাড়াতাড়ি ওকে হসপিটালে নিয়ে যায়। এরপর মায়া জন্মায় তারপর আস্তে আস্তে জন্মায় ভালোবাসা। একদিন তুবা ওর বাবার কাছে ধরা খেলো। বাবার কাছে বেধড়ক মার খেয়েও ছুটেছুটে আরাফের কাছে যেতে চাইতো। পাগলপ্রায় মেয়েকে সামলাতে না পেরে বাবা মেনে নিলেন। মেয়ের বিয়ে ঠিক করলেন আরাফের সাথে। মেয়েটার আরাফের সাথে সংসার করার খুব সাধ ছিলো। কিন্তু বিয়ের প্রায় এক মাস আগে তুবার ধরা পরে ক্যান্সার। সে আর বড়জোর তিন মাস বাঁচবে। এদিকে ক্যান্সারের কথা শুনে আরাফের মা বিয়েতে বেঁকে বসলেন।’

এটুকু বলে থামলেন ধ্রুব ভাই। প্রথমদিকে ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমি যেনো শুদ্ধ আর আমাকে দেখতে পেয়ে একটা ঘোরের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম। ধ্রুব ভাই থামতেই আমি চমকে বাস্তবে স্থির হলাম। কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘তারপর? তুবার সাথে কি আরাফের সংসার টা হয়েছিলো? তুবা মারা গিয়েছিলো নাকি বেঁচে ছিলো?’

ধ্রুব ভাই খুব আয়েস করে মাথার পেছনে দু’হাত দিয়ে বসলেন। আর বললেন,

‘আজ আর বলার মুড হচ্ছে না রে।’

আমি হতবিহ্বল চোখে তাকালাম। ব্যাপারটা বুঝে উঠতেই নাক ফুলিয়ে ফুসে উঠে ধ্রুব ভাইকে লাগালাম এক কিল। ধ্রুব ভাই হাসতে হাসতে উঠলেন। আমার নাক টেনে বললেন,

‘আমার সিম হারিয়েছিস। এটা তোর শাস্তি।’

‘তুমি খুবই অসভ্য ধ্রুব ভাই। তোমার কথায় নাচা আমার ভুল হয়েছে।’

আমি আরো দু চার কিল ঘুষি লাগাতে লাগাতে উনাকে দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে থামলাম। এরপর আরেকবার মারতেই উনি আমার হাত চেপে ধরে ফেললেন। আমি স্থির হলাম। উনি আমার মুখের উপর ঝুকে পরে বললেন,

‘গল্পের ‘কী লাইন’ কি জানিস?’

‘না এবং জানতেও চাই না।’

‘আরাফ আর তুবা কাজিন ছিলো।’

আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আবারও চেঁতে উঠলাম,

‘তোমাকে আমি বলতে বলেছি? অসহ্য! গল্পের এন্ডিং দেও। কুইক।’

ধ্রুব ভাই গল্পটা তো শেষ করলেন-ই না। উল্টো তার হাত আমার চোখের সামনে ধরলেন। আমি সেদিকে তাকিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লাম। উনার হাতে সিম। সেকেন্ড কয়েক পর চোরা গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

‘কোথায় পেলে?’

ধ্রুব ভাই নাটকীয় ভঙ্গিতে উত্তর করলো,

‘ম্যাজিক।’

বলেই চুপচাপ আমার গায়ে আগুনটা ধরিয়ে দিয়ে উনি ঠিকই চলে গেলেন।। ইনি হলেন একজন ঠান্ডা মাথার খুনী। পাঠকগন আমি অতি মাত্রায় দুঃখিত আমি বলেছিলাম এ এক ভালো দিক তার। আদতে ওদের কোনো ভালো স্বভাব নেই। যা আছে সব আমাকে বাঁশ দেওয়ার স্বভাব।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে